• মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ০৪:১৯ অপরাহ্ন

মৃত্যুর পরেও তার জনপ্রিয়তা কমেনি এতটুকুও

অনলাইন ডেস্ক / ২৫১ বার পঠিত
আপডেট: মঙ্গলবার, ২ নভেম্বর, ২০২১

পুরো নাম এলভিস প্রিসলি এরন, জন্ম ইস্ট মিসিসিপির টুপেলোতে। তের বছর বয়সে তিনি তার পরিবারের সাথে টুপেলো ছেড়ে টেনেসি অঙ্গরাজ্যের মেম্ফিস শহরে চলে যান। সেখানে তিনি ১৯৫৪ সালে সান রেকর্ডস নামে একটি সংগীত বিষয়ক প্রতিষ্ঠানে গান গাওয়ার মাধ্যমে তার সংগীত জীবন শুরু করেন।

গরীব সংসারের ছেলে এলভিস জীবিকার জন্য ট্রাক চালিয়েছেন এক সময়। কিন্তু গান থামাননি। সেই যে বাবা-মার সঙ্গে চার্চে গিয়ে গান গাইতেন সেটা অন্তরে আগলে রেখেছিলেন। তারপর একদিন নেহাত শখের বসেই মেমফিস স্টুডিওতে গিয়ে নিজের পয়সায় কিছু গান রেকর্ড করেন, মাকে জন্মদিনের উপহার হিসেবে দেওয়ার জন্য।

বছরখানেক বাদে সেই মেমফিস স্টুডিওর মালিক স্যাম ফিলিপস এলভিসকে ডেকে পাঠালেন। এলভিসকে দিয়ে বেশ কিছু গান রেকর্ড করালেন।

‘লাভ মি টেন্ডার’ এই গান দিয়েই এলভিস রক এন্ড রোল সঙ্গীতকে বিশ্বের দরবারে জনপ্রিয় করে তুলেছিলেন। প্রথম একক অ্যালবাম ‘হার্ট ব্রেক হোটেল’ মুক্তির পর পরই বদলে যায় তার জীবন। এলভিসের একটি ব্যান্ডও ছিল- ‘দ্য ব্লু মুন বয়েজ’।

রেকর্ড সংগীতের ইতিহাসে প্রেসলি সর্বাধিক বিক্রিত একক শিল্পী। তিনি বাণিজ্যিকভাবে পপ, দেশীয়, ব্লুজ এবং গসপেল সহ অনেকগুলি ঘরানার সঙ্গীতে বাণিজ্যিকভাবে সফল ছিলেন। তিনি তিনটি প্রতিযোগিতামূলক গ্র্যামি অ্যাওয়ার্ড জিতেছেন, ৩৬ বছর বয়সে গ্র্যামি লাইফটাইম অ্যাচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ড পেয়েছিলেন এবং সঙ্গীতে একাধিকবার “হল অব ফ্রেম” খ্যাতি পেয়েছেন।

আমেরিকার সাদা ও কালোদের মধ্যে সংস্কৃতিগত ফারাক বা দূরত্বকে এলভিসই প্রথম তার গানে এক সুতোয় বাঁধতে চেষ্টা করেন। এলভিসের জন্ম এবং বেড়ে ওঠার সময় আমেরিকায় বর্ণবাদ ছিল চরম। বিশেষ করে এলভিস যেখানে বেড়ে উঠেছেন সেই দক্ষিণাঞ্চলে।

কণ্ঠশিল্পীর পাশাপাশি তিনি একজন চলচ্চিত্র অভিনেতাও ছিলেন। প্রিসলি অভিনীত প্রথম চলচ্চিত্রের নাম “লাভ মি টেন্ডার”। ছবিটি ১৯৫৬ সালের নভেম্বরে মুক্তি পায়।

১৯৫৮ সালে তিনি বাধ্যতামূলকভাবে সেনাবাহিনীতে নিয়োগপ্রাপ্ত হন। ২ বছর পর তিনি সেনাবাহিনী ছেড়ে আবার সংগীত জগতে ফিরে আসেন কিছু তুমুল জনপ্রিয় গানের মাধ্যমে। তিনি সেসময় মঞ্চে গাইতে শুরু করেন। এবং তার সে সময়কার গাওয়া গানগুলো বাণিজ্যিকভাবে প্রচুর সফলতা পায়।

১৯৭৩ সালে এলভিস প্রেসলির স্টেজে করা একটি গান প্রথমবারেরমত স্যাটেলাইট থেকে দেখানো হয়। স্যাটেলাইটের মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী প্রায় দেড় বিলিয়ন দর্শক গানটি সরাসরি উপভোগ করে। তিনি জীবনের শেষদিকে এসে মাদকাসক্ত হয়ে পড়েছিলেন বলে জানা যায়। অনেকেই মাদকদ্রব্যকেই তার মৃত্যুর কারণ হিসেবে অভিহিত করেন।

তিনি ১৯৭৭ সালের ১৬ই আগস্ট হঠাৎ হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়। বাথরুমে অচেতন অবস্থায় পাওয়া গিয়েছিল তাঁকে। তার মৃত্যুর জন্য সে সময় দায়ী করা হয় তার অতিরিক্ত মাদক গ্রহণকে। পরে অবশ্য জানা যায় হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা যান এলভিস প্রিসলি। তবে শেষ পর্যন্ত জানা যায় তার চিকিৎসকের দেয়া ওষুধের কারণে তার মৃত্যু হয়।

২০১২ সালে তাঁর সম্মানে প্যারাডোনিয়া প্রেসলি নামে একটি মাকড়সার প্রজাতির নামকরণ করা হয়েছিল। ২০১৮ সালে, রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁকে মরণোত্তর প্রেসিডেন্সিয়াল মেডেল অফ ফ্রিডম প্রদান করেন।

কিছু কিছু মানুষ আছে যাদের অবদান মানুষ কখনোই ভুলতে পারেন না। যেমনটি ঘটেছে প্রিসলির ক্ষেত্রে। মৃত্যুর পরেও তার জনপ্রিয়তা কমেনি এতটুকুও। এখনো তার বিখ্যাত এলবামগুলোর চাহিদা আগের মতই, তাই কপিও প্রকাশিত হচ্ছে প্রতিবছর।

প্রতি বছর তার মৃত্যুবার্ষিকীর এক সপ্তাহ আগে থেকেই তার শহর মেম্ফিসে তার প্রাক্তন স্ত্রী প্রিসিলা ও মেয়ে লিসা প্রিসলির উদ্যোগে আয়োজিত হয় প্রিসলি উইক। আর তাতে ভীড় জমান হাজারো ভক্ত। মিসিসিপির সেই বাড়িটি যেখানে তিনি জন্মগ্রহন করেছিলেন, সেখানে তার নামে করা হয়েছে মিউজিয়াম ও পার্ক।

লেখাটি শান্তা আনোয়ার -এর ফেসবুক থেকে সংগৃহীত ( লেখাটির আইনগত ও অন্যান্য দায় লেখকের নিজস্ব। এই বিভাগের কোনো লেখা সম্পাদকীয় নীতির প্রতিফলন নয়।)


আরো পড়ুন