• রবিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ০১:৩৮ পূর্বাহ্ন

ঝালকাঠিতে অর্থের অভাবে নিজ সন্তানকে কিডনি দান করতে পারছেন না “মা”

/ ৩৫৪ বার পঠিত
আপডেট: শুক্রবার, ২৬ জুলাই, ২০১৯

রিপোর্ট,ইমাম বিমান:ঝালকাঠিতে যাযাবর পরিবারের এক হতভাগা মা মাকসুদা বেগম অর্থের অভাবে কিডনিরোগে আক্রান্ত সন্তানকে কিডনি দান করতে পারছেন না। জেলার সদর উপজেলাধীন বিনয়কাঠি ইউনিয়নস্থ কালিয়ারঘোপ গ্রামের ভিটাবাড়ী হীন যাযাবর পরিবারের মানষিক প্রতিবন্ধি আলী হোসেন যার পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি তার ছোট ছেলে হায়দারের দুটি কিডনিই নষ্ট। আর এই কিডনি পূর্নস্থাপন করতে প্রায় সাত লক্ষ টাকা প্রয়োজন।

এ বিষয় হতভাগা মা মাকসুদা জানান, আমার স্বামী একজন মানষিক রোগী তিন ছেলে ও এক মেয়ে। তাদের মধ্যে স্বামীর মত বড় দুই ছেলেও মানষিক রোগে আক্রান্ত।আমাদের থাকারমত কোন স্থান না থাকায় সাবেক ইউপি সদস্য সৈয়দ আলী তার বাড়ীতে আমাদের স্থান দেয়। সেখানে কোন রকম বাঁশের খুটি দিয়ে টিনের ছাউনির একটি ঘর তুলে থাকতাম কিন্তু বড় ও মেঝ ছেলেটিও মানষিক রোগে আক্রান্ত হওয়ায় তারা ঘর দুয়ার ভেঙ্গে ফেলতো। তাই আমরা রাত হলে এ বাড়ী ও বাড়ী গিয়ে ঘুমাই। সংসারে একমাত্র উপার্জনক্ষম ছোট ছেলেটি ভালো ছিলো ঢাকায় একটি হোটেলে কাজ করতো আর সেখানে যা বেতন পেতো সেই টাকা দিয়েই আমাদের সংসার চলতো। প্রায় ছয় মাস আগে হঠাৎ আমার ছেলে তার কর্মস্থলে অসুস্থ হয়ে পরে। পরে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হলে অনেক পরীক্ষা নিরীক্ষার পর ধরা পরে তার দুটি কিডনিই নষ্ট। এরপর থেকে প্রতি সপ্তাহে দুইবার করতে হয় ডায়ালাইসিস আর দুই বারে প্রায় ছয় হাজার টাকা খরচ হয়। পরে ডাক্তারের কাছে ছেলেকে বাচাতে তাদের হাতে পায়ে ধরি কিভাবে তাকে বাঁচাতে পারি ডাক্তার বলেন ওকে যদি একটি কিডনি নতুন করে স্থাপন করা যায় তাহলে ওকে বাঁচানো সম্ভব। কিডনিতো সংগ্রহ করা আমাদের মত ভিটাবাড়ীহীন যাযাবর পরিবারের সম্ভব না। তাই আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমার ছেলেকে বাচাতে আমার কিডনি দান করবো আর কিডনি দান করতেও লাগবে প্রায় ৭ লক্ষ টাকা যা আমার পক্ষে সম্ভব না, তাই আমি আমার সন্তানকে বাচাতে দেশের সকলের প্রতি সাহায্যের আবেদন জানাচ্ছি।

এ বিষয় অসুস্থ হায়দারের বাড়ীতে গিয়ে দেখা যায় তাদের মানবেতর জীবন জাপনের দৃশ্য। হায়দারের মা আরেক বাড়ী কাজে গিয়েছেন হায়দারের বড় ভাই মানষিক প্রতিবন্ধি উজ্জলকে (৩০) রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়াতে দেখা যাচ্ছে শুধুই যে মানষিক রোগী তা না উজ্জলও ভুগছে বিরল চর্ম রোগে শরীরের বিভিন্ন অংশের চামড়াগুলো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। বাড়ীর ভিতরে ঢুকতে দেখা পেলাম কিডনি রোগে আক্রান্ত হায়দার উঠানে দাড়িয়ে বার বার চোখের জল মুছছে।

অপরদিকে হায়দারের মেঝ ভাই আরেক মানষিক প্রতিবন্ধী আলম (২৫) তাদের ভাঙ্গা ঘরে বসে আছে। কাছে যেতেই আলম এসে কাছাকাছি দাড়ালো কিন্তু কোন কথাই বলছে না শুধু হেসে যাচ্ছে। হায়দারের স্কুল পড়ুয়া ছোট বোনটির কথা জানতে চেয়ে জানলাম সেও পেটের দায়ে শিশু বয়সে অন্যের বাড়ীতে কাজ করছে। আর হায়দারের বাবা মানষিক প্রতিবন্ধি আলী হোসেনের কোন খবর পাওয়া যায়নি তিনি কোথায় আছেন।

হায়দারকে বাচাতে ইউনিয়নের কয়েকজন স্কুল ও কলেজ পড়ুয়া যুবক একত্রিত হয়ে হায়দারের পাশে দাড়ায়। হায়দারকে বাঁচাতে এগিয়ে আসে এবং লেখাপড়ার ফাকে অবসর সময়ে টিপু, আশিক,শাওন সরদার, মিলন সরদার তাদের বন্ধুদের নিয়ে বিভিন্ন স্থানে গিয়ে আর্থিক সাহায্য এনে প্রতি সপ্তাহে ডায়ালাইসিস করাচ্ছে। শুধু তাই নয় তাদের বন্ধুদের মাধ্যমে প্রতিবার ডায়ালাইসিসের সময় একব্যাগ করে রক্ত দান করে যাচ্ছে। এখন পর্যন্ত এগারো বার ডায়ালাইসিসের সময় এগার ব্যাগ রক্ত তাকে দান করেছে।

এ বিষয় শাওন জানান, আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে হায়দারকে বাঁচাতে তার চিকিৎসার জন্য বিভিন্ন স্থানে গিয়ে হাত পেতে মানুষের কাছে সাহায্য চাচ্ছি। আর সে সাহায্যের টাকা দিয়ে আমরা ওর চিকিৎসা করাচ্ছি কিন্তু ওর দুটি কিডনিই নষ্ট থাকায় নতুন কিডনী প্রয়োজন ওর মা কিডনি দেয়ার জন্য বললে আমরা ডাক্তারের সাথে কথা বলে জানতে পারি নতুন কিডনি স্থাপনের জন্য প্রায় ৭ লক্ষ টাকা প্রয়োজন। আর এ টাকা আমাদের পক্ষে সংগ্রহ করা সম্ভব হবে কিনা তা জানিনা কিন্তু তারপরও আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি। এমতবস্থায় আমরা দেশের বিত্তিবান স্বহৃদ্বয়বান ব্যক্তিদের প্রতি আহবান জানাচ্ছি সকলে একটু একটু করে আর্থিক সাহায্য করলে হয়তো হায়দারকে আমরা বাঁচাতে পারবো। তাই হায়দারকে বাঁচাতে সকলকে এগিয়ে আসার আহবান জানাচ্ছি। হায়দারকে সাহায্য পাঠানোর জন্য তার ব্যক্তিগত মুঠোফোনের বিকাশ ০১৭১৮-৭৩৫১৩৮ নম্বরে যোগাযোগ করে সাহায্য করার অনুরোধ জানাচ্ছি।


আরো পড়ুন