• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৯:২৯ পূর্বাহ্ন

ভুতুরে অনুষ্ঠানের নামে সাকি সিন্ডিকেটের ডিজিটাল প্রতারণা।

/ ৩৭২ বার পঠিত
আপডেট: সোমবার, ১৬ নভেম্বর, ২০২০

গোষ্ট হান্টার নামে ভুতুরে এক অনুষ্ঠানের নামে এক মহা প্রতারক সিন্ডিকেটের নানা অপকর্মের তথ্য পাওয়া গেছে।  ভুত নিয়ে মানুষের মধ্যে অনেক কৌতুহল রয়েছে, রয়েছে নানা জল্পনা কল্পনাও।  কাব্যকথার ভুত নিয়ে মানুষের আগ্রহের যেন কোন কমতি নেই।  আর সেই সুযোগটাকেই কাজে লাগিয়ে গোষ্ট হান্টার ইনভেস্টিগেশন (Ghost Hunter Investigators
(qq G,H,I) এর নামে ইউটিউব ও ফেইসবুক পেইজ খুলে সাকি সিন্ডিকেট খুলে বসেছে ডিজিটাল প্রতারণার এই বাজার।

মধ্যরাতে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের নির্জন স্থানে গিয়ে এই ফেইসবুক পেইজের মাধ্যমে লাইভ করে ভুতুরে অনুষ্টান সম্প্রচার করে আসছে সাকি, জনি, মিলন ও সুজনসহ আরও কয়েকজন। তার মধ্যে ভারতে বসে লিড দিচ্ছে সোমা ভট্টাচার্য নামে ভারতীয় নাড়ী, বাংলাদেশে মূল চাবিকাঠি নাড়ছেন তার একান্ত সহোযোগী আবু নাইম সাকি খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সাকি সিন্ডিকেট এই ভুতুরে অনুষ্ঠানের মাধ্যমে মানুষকে আকৃষ্ট করে বিভিন্ন ফাঁদে ফেলে অর্থ আত্মসাৎ করে আসছে দীর্ঘদিন সোমা ভট্টাচার্য ভৌতিক কিছু গল্প কথা শুনিয়ে বিভিন্ন মানুষের সাথে বন্ধুত্ব সম্পর্ক তৈরি করে সম্পর্ক তৈরি করার পর দেশে থাকা তার মেইন সহোযোগি সাকির সাথে যোগাযোগ করিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করে এরপর শুরু হয় তাদের নতুন ফাঁদ যে ফাঁদে একবার ঢুকলে আর কেউ বের হতে পারে না
ইতিমধ্যে তাদের ব্যবহৃত গোষ্ট হান্টার ইনভেস্টিগেশন ঘি (Ghost Hunter Investigators (TEAM G,H,I) ফেসবুক পেইজটি বেশ জনপ্রিয়তাও অর্জন করেছে। ফেসবুক পেইজটির বর্তমান লাইক সংখ্যা ৩ লাখের কাছাকাছি আর তাদের ফলোয়ারের সংখ্যা প্রায় ৫ লাখের দিকে যাচ্ছে।

বিশ্বস্ত সুত্র জানায়, ২০১৭ সালে টেরট বাবা রাদবি রেজা “ডর” নামক রেডিও প্রোগ্রাম এ একটি হন্টেড লাইভ শুরু হয়, তার হাত ধরেই আবু নাইম সাকি এবং আরো কয়েকজন তার ভক্ত বা অনুসারি একটি ফেসবুক পেজ ওপেন করে ঘোস্ট হান্টার ইনভেস্টিগেটরস বা ঘি নাম দিয়ে শুরু করে তাদের প্রতারণার হাতিয়ার। যার মূলে ছিল আবু নাইম সাকি, আবির হোসাইন জনি, মাহমুদুর রহমান চৌধুরী, সোমা ভট্টাচার্য।

২০১৮ তে বাবা এক্সপসড নামের একটি অনুসন্ধানী টিম যখন রাদবি রেজার ভণ্ডামি ফাস করে একের পর এক এক্সপসড ভিডিও প্রকাশ করে তখন প্রশাসন সেই প্রতারকদের অপরাধের প্রমাণ পেয়ে তাকে এরেস্ট করে এবং তার কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু ঘি এর কাজ তখন বাড়তে থাকে। প্রথম দিকে তারা শুধু বিনোদন মূলক লাইভ করলেও পরবর্তীতে তারা ধান্দামি ও অপরাধ মূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়তে থাকে যেমন ২০১৮ সালের আগস্ট মাসে ঘি এর টিম লিডার তাদের এক নারী ভক্তের সাথে ফেসবুকে যোগাযোগ করে তার নানান গুরুতর মিথ্যা সমস্যার কথা বলে টাকা চায়।

তার ভয়াবহ সমস্যার কথা শুনে ভিক্টিম নগদ টাকাসহ গহনা সিন্ডিকেটের প্রধান সাকিকে কিছু দিনের জন্য ধার দেন, যাতে সে গহনা বন্দক রেখে আপাতত প্রয়োজন মিটাতে পারে। এক মাসের ভিতর গহনা ফেরত দেয়ার কথা থাকলেও সাকি দিয়েছে এই নারীকে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করে শেষে ভিক্টিম পুলিশের দ্বারস্থ হলে গহনা ফেরত দিতে বাধ্য হয় এবং বাকি টাকা পরের মাসে দিবে বলে অঙ্গিকার করে। কিন্তু সে কথা না রেখে আত্মগোপনে চলে যায় বলেও তথ্য পাওয়া যায়।

২০১৯ সালের অক্টেবর মাসে ঘি এর টিম লিডার সাকি তাদের আরও এক মেয়ে ভক্তের সাথে প্রতারণা সাকি বিবাহিত হয়েও নিজেকে অবিবাহিত হিসেবে পরিচয় দেয় এবং নানা রকম ইমোশনাল কথা বলে ভিক্টিমের সাথে সম্পর্কে জড়াতে চায়। নানা ইমোশনাল ও তার নানাবিধ মিথ্যা সমস্যার কথা বলে যেমন অসুস্থতা, ক্যামেরা, মোবাইল, কে টু মিটার, পারিবারিক সমস্যা ইত্যাদি বলে লক্ষয়াধিক টাকা ( নগদ ও অন্যান্য মিলিয়ে ) আত্মসাৎ করে। এতে সহায়তা করে সাকির অন্য সিন্ডিকেট জনি।

ঘি এর সাবেক এক সদস্যের সাথে কথা বলে জানা যায়, গোষ্ট হান্তার ইনভেস্টিগেশন টিম ঘি এর সাকি সিন্ডিকেট অনেকের কাছ থেকে জিন দিয়ে কাজ করিয়ে নেয়া, জিন তাড়ানো, স্বামী স্ত্রীর মিলন, প্রেমিক প্রেমিকার মিলন প্যারানরমাল ভাবে করিয়ে দেয়ার নাম করে টাকা আত্মসাৎ করে। জানা গেছে, সোমা ভট্টাচার্য নামে এক ভারতীয় নারীর সহায়তা নিয়েই চলে সাকি সিন্ডিকেট।

জানা গেছে, সাকি সিন্ডিকেট গোষ্ট হান্টার ইনভেস্টিগেশন টিম ঘি এর নামে বর্তমানে বিভিন্ন সনাতন ধর্মাবলম্বিদের শশ্মান ঘাটকে নিয়ে ফেইসবুকে ভুতুরে অনুষ্টান লাইভ করে এক বিতর্ক তৈরি করে আসছে। তাদের লাইভে সাকি সিন্ডিকেট শ্মশান ঘাটে ভুতুরে কিছু আছে এমনটাই আক্ষা দিয়ে থাকে। এতে করে এতি মধ্যে শ্মশান ঘাট নিয়ে মানুষের মধ্যে বেশ আতঙ্ক বিরাজ করছে।

এবিষয়ে সনাতন বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোট এর মহাসচিব গোবিন্দ চন্দ্র প্রামানিক বলেন, আমাদের ধর্মে ভুত পেত বা এই ধরনের কোন অদৃশ্য জিনিষের কোন অস্তিত্ব নেই। শ্মশানঘাটকে আমরা পবিত্র মনে করি। এই স্থানকে যারা ভুতুরে বলছে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া উচিত।
এবিষয়ে সাকির সাথে যোগাযোগ করেও তাকে পাওয়া যায় নি।

তাদের বিরুদ্ধে কেউ প্রকাশ্য মুখ খুলতে নারাজ অনেকেই নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি বলেন  তারা বিভিন্ন নেতা মন্ত্রীদের নাম ভাংগিয়ে চলে আর এই নেতা মন্ত্রীদের নাম শুনে ঐ সমস্ত প্রতারনায় শিকার হওয়া মানুষ গুলো ভয়ে চুপ করে থাকে। বলার মতো কিছুই থাকে না তাদের। তাই আজ এই সকি সিইন্ডিকেটের হাতে জিম্মি হয়ে আছেন অসংখ্য জন সাধারণ মানুষ।
এদিকে সাকির কোন বক্তব্য না পাওয়া গেলেও তাদের সিন্ডিকেটের জনি বলেন, ভুত বলতে কিছুই নেই। তারা শুধু মানুষের দেয়া তথ্য অনুযায়ী বিভিন্ন স্থানে গিয়ে লাইভ করে থাকেন। তার ভাষ্যমতে ভুত না থাকলেও তারা জিনের অস্তিত্ব দেখতে পান।


আরো পড়ুন