• শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৫:৪৯ পূর্বাহ্ন

রাশিয়ার তেল রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ কতটা সম্ভব?

/ ৯৩ বার পঠিত
আপডেট: মঙ্গলবার, ৬ ডিসেম্বর, ২০২২

সোমবার থেকে জি-সেভেন রাশিয়ার তেল রপ্তানি বাবদ আয় কমাতে যে পদক্ষেপ কার্যকর করেছে, সে বিষয়ে নানা সংশয় দেখা দিচ্ছে৷ ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট রাশিয়াকে নিরাপত্তার গ্যারেন্টির প্রস্তাব দিয়েছেন৷

গত ফেব্রুয়ারি মাসে ইউক্রেনের ওপর হামলা শুরুর পর থেকে পশ্চিমা বিশ্ব রাশিয়ার ওপর একের পর এক নিষেধাজ্ঞা চাপিয়ে এসেছে৷ কিন্তু এবার রাশিয়ার পেট্রোলিয়াম বিক্রি বাবদ আয় কমাতে শাস্তিমূলক পদক্ষেপ বাস্তবে কতটা কার্যকর করা সম্ভব, সে বিষয়ে সংশয় দেখা দিচ্ছে৷ সোমবার থেকে জি-সেভেন গোষ্ঠী সমুদ্রপথে রাশিয়ার অপরিশোধিত তেল রপ্তানির ওপর ‘প্রাইস ক্যাপ’ চাপানো সত্ত্বেও সে দেশ এমন পদক্ষেপ গ্রাহ্য করবে না বলে জানিয়েছে৷ এমনকি প্রয়োজনে পেট্রোলিয়াম উৎপাদন কমাতেও প্রস্তুত মস্কো৷ তবে ইইউ রাশিয়ার তেল আমদানি পুরোপুরি বন্ধ করায় রাশিয়ার রাজস্ব কমতে বাধ্য৷ উল্লেখ্য, রাশিয়ার প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ তেল এতকাল ইইউতেই রপ্তানি করা হতো৷

জি-সেভেন, ইইউ ও অস্ট্রেলিয়ার চাপানো এই ‘প্রাইস ক্যাপ’ নিয়ে এমন পদক্ষেপের প্রবক্তাদের মধ্যেও অন্য বিতর্ক দানা বাঁধছে৷ ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভোলোদিমির জেলেনস্কির মতে, ব্যারেলপ্রতি ৬০ ডলারের ঊর্ধ্বসীমা একেবারেই গুরুত্বহীন এবং এর ফলে রাশিয়া মোটেই যুদ্ধ বন্ধ করার কোনো চাপ অনুভব করবে না৷ বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম তেল রপ্তানিকারী দেশ হিসেবে শেষ পর্যন্ত রাশিয়া সমস্যায় পড়লে ক্ষোভ দেখিয়ে পেট্রোলিয়াম উৎপাদন কমিয়ে দিলেও বিশ্ববাজারে তেলের দাম আবার বেড়ে যাবার আশঙ্কাও রয়েছে৷ বাজারের স্থিতিশীলতা আরও বিপন্ন হবে বলে রাশিয়া আগেই সতর্ক করে দিয়েছে৷ শাস্তি এড়াতে সে দেশ গোপনে কিছু তেল বিক্রির চেষ্টাও করতে পারে বলেও আশঙ্কা বাড়ছে৷

জি-সেভেন ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোতে নথিভুক্ত তেলবাহী ট্যাংকার জাহাজগুলোকে রাশিয়ার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক পদক্ষেপ মেনে চলতে হবে৷ বিমা কোম্পানি ও ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোও এই সিদ্ধান্তের আওতায় পড়ছে৷ রাশিয়া থেকে অন্য কোনো দেশে তেল সরবরাহের সময়ে মূল্য ব্যারেলপ্রতি ৬০ ডলারের কম স্থির করা হলে তবেই এসব প্রতিষ্ঠান এমন পরিবহন প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে পারবে৷ গোটা বিশ্বের জলপথে জি-সেভেন ও ইইউ দেশগুলোর ট্যাংকারের আধিপত্য থাকায় এমন পদক্ষেপ অন্তত আংশিকভাবে সফল হবে বলে ‘প্রাইস ক্যাপ’-এর প্রবক্তরা আশা করছেন৷ তবে শাস্তি এড়াতে রাশিয়া অন্যান্য দেশের জাহাজ ব্যবহার যতটা সম্ভব ব্যবহার করতে পারে বলেও অনুমান করা হচ্ছে৷

যুদ্ধ বন্ধ করতে রাশিয়ার ওপর আরও চাপ সৃষ্টির পাশাপাশি কূটনৈতিক উদ্যোগের লক্ষণও দেখা যাচ্ছে৷ সপ্তাহান্তে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাক্রোঁ ইউক্রেন যুদ্ধ শেষ করার মূল্য হিসেবে রাশিয়ার নিরাপত্তার গ্যারেন্টির প্রস্তাব দিয়েছেন৷ ইউক্রেন ও বাল্টিক অঞ্চলের দেশগুলো এমন প্রস্তাবের তীব্র বিরোধিতা করেছে৷ ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির উপদেষ্টা মিখাইলো পদোলইয়াক বলেন, রাশিয়ার কাছ থেকেই বরং বিশ্বের নিরাপত্তা গ্যারান্টির প্রয়োজন রয়েছে৷ ইউক্রেন উলটে ইইউর প্রস্তাবের ওপর ভিত্তি করে ভ্লাদিমির পুতিনের যুদ্ধাপরাধের বিচারের জন্য জাতিসংঘের বিশেষ আদালত গঠনের ওপর জোর দিচ্ছে৷ তবে নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্যের বিরুদ্ধে এমন উদ্যোগ কতটা সফল হবে, সে বিষয়ে যথেষ্ট সংশয় রয়েছে৷
রাশিয়ার ক্রমাগত হামলায় বিপর্যস্ত ইউক্রেনে বিদ্যুৎ পরিষেবা এখনও মারাত্মক চাপের মধ্যে রয়েছে৷ প্রশাসন ও পরিষেবা কোম্পানিগুলো নানা প্রচেষ্টা চালিয়ে সরবরাহ যতটা সম্ভব স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করছে৷ রাজধানী কিয়েভসহ একাধিক শহর ও অঞ্চলে ব্ল্যাকআউটের মাধ্যমে চাপ কমানোর চেষ্টা চলছে৷ শীতে তাপমাত্রা হিমাঙ্কের অনেক নিচে থাকায় সাধারণ মানুষের দুর্দশা বাড়ছে৷ দেশের দক্ষিণে খেরসন ও অন্যান্য কিছু এলাকায় রুশ বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষের ফলে বিদ্যুৎ সরবরাহ আরও বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে৷


আরো পড়ুন