• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৩:৩৩ অপরাহ্ন

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের নিরাপত্তায় সর্বাত্মক সহায়তা করে যাবে রোসাটম

/ ৯১ বার পঠিত
আপডেট: বৃহস্পতিবার, ২৭ অক্টোবর, ২০২২

দেশের পাবনা জেলার ঈশ্বরদীতে নির্মাণ করা হচ্ছে দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। এর নির্মাণে কাজ করছে রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় পরমাণু শক্তি সংস্থা-রোসাটম। গত ১৯ অক্টোবর বিদ্যুৎকেন্দ্রটির দ্বিতীয় ইউনিটে চুল্লি বা রিয়্যাক্টর প্রেসার ভেসেল স্থাপন করা হয়। প্রকল্পটির কাজ কতদূর এগিয়েছে, আর কত দিনইবা লাগতে পারে, এটার নিরাপত্তায় কী ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে—এমন নানা বিষয় নিয়ে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন রোসাটমের মহাপরিচালক আলেক্সি লিখাচেভ।

গণমাধ্যমকে দেওয়া লিখাচেভের সাক্ষাৎকারটি নিচে তুলে ধরা হলো।
প্রশ্ন : কেমন চলছে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের নির্মাণকাজ?

আলেক্সি লিখাচেভ : ঠিক একবছর আগে প্রথম পাওয়ার ইউনিটে রিয়্যাক্টর প্রেসার ভেসেল স্থাপনের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। সাইটে এসে আমি ব্যক্তিগতভাবে গত এক বছরের কাজের ব্যাপারে নিশ্চিত হয়েছি। রোসাটম বাংলাদেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে সব ধরনের প্রয়োজন পূরণ করে যাচ্ছে। প্রথম ব্লকে পুরোদমে কাজ এগিয়ে চলছে। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে টারবাইন হলে ওভারহেড ক্রেন স্থাপন করা হয় এবং এপ্রিল মাসে স্থাপিত হয় জেনারেটর স্টেটর। এছাড়া এপ্রিলে নির্ধারিত সময়ের ৮ মাস আগে রিয়্যাক্টর বিল্ডিংয়ের নির্মাণে মূল কংক্রিটের কাজ সম্পন্ন করা সম্ভব হয়েছে। যার মধ্যে থাকছে প্রথম পাওয়ার ইউনিটের প্রযুক্তিগত প্রক্রিয়াগুলো নিয়ন্ত্রণ এবং পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় ডিভাইস। জুনে ইনার কন্টেনমেন্ট ডোমের কংক্রিটিংয়ের কাজ সম্পন্ন হয়। দ্বিতীয় পাওয়ার ইউনিটে ফেব্রুয়ারির শেষে প্রধান সঞ্চালন পাইপলাইনের ঢালাই সম্পন্ন করা হয়। এপ্রিলের শেষে আমরা ইঞ্জিন রুমে টারবাইন ইউনিটের ভিত্তির কংক্রিটয়ের কাজ শেষ করেছি। জুনে ইমারজেন্সি কোর কুলিং সিস্টেমের ইনস্টলেশন সম্পন্ন হয় এবং ইনার কন্টেনমেন্টের ধাতব কাঠামো ইনস্টল করা হয়। চারটি কুলিং টাওয়ারের নির্মাণে কাজ সক্রিয়ভাবে এগিয়ে চলছে। আগামী বছর যাতে পারমাণবিক জ্বালানির প্রথম ব্যাচ আনা যায় তার জন্য সাইটে প্রস্তুতি সম্পন্ন করতে আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করে যাচ্ছি। একইসঙ্গে পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে যে সব বাংলাদেশি কাজ করবেন, তাদের জন্য প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ চালিয়ে যাচ্ছি। সাইটে প্রশিক্ষণকেন্দ্র চালু করা হয়েছে। এখানে বিশেষজ্ঞদের দ্বিতীয় বা চূড়ান্ত ধাপে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। প্রথম ধাপে বিশেষজ্ঞদের রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের রেফারেন্স প্রকল্প রাশিয়ার নভোভোরোনেঝ এনপিপিতে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।

প্রশ্ন : পারমাণবিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সঙ্গে সহযোগিতা অব্যাহত রাখার কোনো পরিকল্পনা আছে কী? বাংলাদেশের দ্বিতীয় পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণ বা অন্যান্য প্রকল্প নিয়ে কোনো আলোচনা চলছে কী?

আলেক্সি লিখাচেভ : রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের নির্মাণ শেষ হওয়ার পরও, আমাদের পারস্পরিক সহযোগিতা শেষ হয়ে যাবে না। বিদ্যুৎকেন্দ্রটির অপারেশন চলাকালীনও আমাদের সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে এবং আমরা বিদ্যুৎকেন্দ্রটির জন্য প্রয়োজনীয় পারমাণবিক জ্বালানি সরবরাহ করে যাবে। বাংলাদেশ সরকার যদি দ্বিতীয় পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে, তখন রূপপুর এনপিপি নির্মাণের সময় আমাদের অর্জিত অভিজ্ঞতা খুবই কাজে আসবে। এছাড়া বাংলাদেশ একটি গবেষণা চুল্লি নির্মাণের বিষয় গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচানা করছে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর কাছে রাশিয়ার ডিজাইন করা একটি গবেষণা চুল্লির ভিত্তিতে একটি নিউক্লিয়ার সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি সেন্টার নির্মাণের প্রস্তাব পেশ করেছি।

প্রশ্ন : এখন পর্যন্ত প্রকল্পের কাজ নির্ধারিত শিডিউল অনুযায়ী এগিয়ে চলছে। কিন্তু, পরিবর্তনশীল রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতি কী কোনোভাবে ভবিষ্যতে প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ হয়ে দেখা দিতে পারে? আপনি কী মনে করেন?

আলেক্সি লিখাচেভ : করোনা মহামারির কারণে সৃষ্ট জটিলতার পরও প্রকল্প নির্মাণ কাজ যাতে নির্ধারিত শিডিউল অনুযায়ী এগিয়ে যেতে পারে তার জন্য সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালিয়েছি। অবশ্যই আমরা বুঝতে পারছি যে, পরিবর্তনশীল রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও লিজিস্টিক অবস্থায় সামান্য ঝুঁকি হয়তো সৃষ্টি করতে পারে, কিন্তু এগুলো মোকাবেলায় আমরা সদা সচেষ্ট।

প্রশ্ন : রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র পরিচালনার মতো কোনো জ্ঞান বা অভিজ্ঞতা বাংলাদেশের নেই। অতএব স্বাভাবিকভাবেই এমন একটি জল্পনা-কল্পনা রয়েছে যে, কবে নাগাদ আমরা এই প্রকল্পটি নিজেরাই কারো সাহায্য ছাড়া পরিচালনা করতে সক্ষম হবো। আপনার মতে প্রকল্পটি চালু হওয়ার পর এটির পরিচালনার দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিতে বাংলাদেশি বিশেষজ্ঞদের কতো সময় লাগতে পারে?

আলেক্সি লিখাচেভ : পূর্বে পারমাণবিক শক্তি ব্যবহার করার অভিজ্ঞতা নেই- এমন অনেক দেশে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের যথেষ্ট অভিজ্ঞতা রয়েছে আমাদের। আমরা অবশ্যই জানি যে, বিদ্যুৎকেন্দ্রটি হস্তান্তর করার পর এর নিরাপদ কার্যক্রম নিশ্চিত করা কতটা গুরুত্বপূর্ণ এবং একইসঙ্গে বিদ্যুৎকেন্দ্রের পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত এমপ্লয়িদের পেশাদারিত্বের ওপরে এটি কতটা নির্ভরশীল। অতএব, নির্মাণ চুক্তি স্বাক্ষরের সময় রোসাটমের সহায়তায় মূল বিশেষজ্ঞদের তৈরির ব্যাপারটি বিবেচনায় নেওয়া হয়। জেনারেল কন্ট্রাক্ট অনুসারে অপারেশনের সঙ্গে যুক্ত থাকবে এমন ১ হাজার ১১৯ জন মূল বিশেষজ্ঞ তৈরি করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং রিজার্ভ হিসেবে আরও ৩০৫ জনও তৈরি করার দায়িত্ব নিয়েছি আমরা। দুই ধাপে বিশেষজ্ঞ তৈরির কাজ এগিয়ে চলছে।

প্রথম ধাপে রূপপুর প্রকল্পের রেফারেন্স প্রকল্প রাশিয়ার নভোভারোনেঝ এনপিপিতে এবং দ্বিতীয় ধাপে রূপপুর সাইটের সাইন্টিফিক ট্রেনিং সেন্টারে; যা আজকে আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করলাম। ২০১৮ সাল থেকে এখন পর্যন্দ ৬৬০ জনের অধিক বাংলাদেশিকে প্রশিক্ষণের আওতায় আনা হয়েছে। রাশিয়ায় ইতোমধ্যে প্রস্তুতি লাভ করেছেন ২৪০ জন, যারা প্রথম ইউনিটের পরিচালনার কাজে যুক্ত থাকবেন। সম্পূর্ণ প্রস্তুতি লাভ করেছেন প্রায় ৩০০ জন এবং প্রায় ১৩০ জন এখনো প্রশিক্ষণ গ্রহণ করছেন। নির্মাণ কাজ চলাকালীন আমরা সায়েন্টিফিক ট্রেনিং সেন্টার চালু করেছি, যাতে বিশেষজ্ঞরা গুরুত্বপূর্ণ ইন্সটলেশনের কাজে যুক্ত হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি গ্রহণ করতে পারেন, যার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে কমিশনিং, পারমাণবিক জ্বালানির সরবরাহ এবং ফিজিক্যাল স্টার্ট-আপ। পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রটি চালু হওয়ার পর আরও ৩-৪ বছর আমরা বাংলাদেশি সহকর্মীদের সর্বোচ্চ সহাযোগিতা প্রদান করে যাবো, যাতে বিদ্যুৎকেন্দ্রটির নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়। আমাদের অভিজ্ঞতা থেকে এটা বলতে পারি, এই সময়ের মধ্যে প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত স্থানীয় বিশেষজ্ঞরা প্রয়োজনীয় দক্ষতা অর্জনে সমর্থ হবেন। যেকোনো অবস্থাতেই আমরা এই প্রকল্পটিকে অসহায় অবস্থায় ফেলে দেবো না।


আরো পড়ুন