• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১১:০৩ অপরাহ্ন

আপত্তিকর ভিডিও’র ভয় দেখিয়ে স্কুলছাত্রীকে একাধিকবার ধর্ষণ

অনলাইন ডেস্ক / ৪৩৭ বার পঠিত
আপডেট: শুক্রবার, ১৮ মার্চ, ২০২২

সাভার আশুলিয়ার আপত্তিকর ভিডিও ধারণ করে ইন্টারনেটে ছেড়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে স্কুলছাত্রীকে (১৮) ৪ বার ধর্ষণ করা হয়েছে। ভুক্তভোগী ওই কিশোরী আশুলিয়ার একটি স্কুলের দশম শ্রেণীর ছাত্রী। অভিযুক্ত ওই যুবকের নাম মো. রনি (২০) । সে আশুলিয়ার নিরিবিলি স্বপ্নবিলাস এলাকার দেলোয়ারা হোসেন ওরফে দিলা মিয়ার ছেলে।

অভিযুক্ত ওই যুবক ভুক্তভোগী স্কুলছাত্রীর বড় ভাইয়ের ছোট বেলার বন্ধু। নির্ভরযোগ্য কয়েকটি সূত্র থেকে জানা যায়, ধর্ষণের শিকার ওই স্কুলছাত্রী বড় ভাইয়ের বন্ধু অভিযুক্ত মো. রনির মা বিদেশে থাকেন। বাবা দিলা মিয়া অন্যত্র বিয়ে করে সংসার করেন। মা বিদেশে এবং বাবা দ্বিতীয় বিয়ে করায় খাবারের সংকট মেটাতে রনি তার মায়ের মাধ্যমে ভুক্তভোগীর মা গার্মেন্টস কর্মীর সঙ্গে ৩ হাজার টাকা মাস চুক্তিতে তিন বেলা খাবার খেয়ে জীবন চালাতেন। প্রথম দিকে টিফিন কেয়ারের বাটিতে দিলেও পরে ভুক্তভোগির বড় ভাইয়ের ছোট বেলার বন্ধু হওয়ায় রনি প্রতিনিয়ত ভুক্তভোগীর বাসায় খাবার খেতো।

ভুক্তভোগী মা ছেলে-মেয়ে নিয়ে আশুলিয়ার নিরিবিলি এলাকার একটি ভাড়া বাসায় বসবাস করেন। এ ছাড়াও স্থানীয় একটি গার্মেন্টসে কাজ করেন। সকালে কাজে যায় এবং ছুটি হয় রাতে। অভিযুক্ত রনি ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে খাবার খাওয়া শুরু করেন। ২০২১ সালের দিকে এসে কৌশলে বন্ধুর ছোট বোন ভুক্তভোগির ড্রেস পরিবর্তন করার সময়ের একটি আপত্তিকর ভিডিও ধারণ করেন।

এরপর থেকে শুরু হয় ওই ভুক্তভোগীকে মানসিক নির্যাতন। বিভিন্ন সময়ে কুদৃষ্টিতে তাকিয়ে ওই শিক্ষার্থী পড়তে বসলে তার স্পর্শ কাতর জায়গায় হাত দিতেন। ভিডিও ইন্টারনেটে ছেড়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে প্রেমের প্রস্তাব দেন। প্রস্তাবে রাজি না হওয়ার ওই শিক্ষার্থীকে ব্লাকমেইল করে ২০২১ সালের শুরুর দিকে প্রথম ধর্ষণ করেন। এরপর বিভিন্ন সময়ে সর্বমোট ৪ বার ওই স্কুল শিক্ষার্থীকে ধর্ষণ করেন। ঘটনার এখানেই শেষ নয়। শুরু হয় অভিযুক্ত রনির অর্থ হাতিয়ে নেয়ার কৌশল। ফেসবুকে ভুয়া আইডি খুলে ওই শিক্ষার্থীর বান্ধবীদের ভিডিও পাঠিয়ে আরো মানসিক চাপ বাড়িয়ে তুলেন।

এরপর ওই শিক্ষার্থীকে ভিডিও পাঠিয়ে টাকা চেয়ে বিকাশ নাম্বার পাঠাতেন অভিযুক্ত রনি। মায়ের বেতনের গচ্ছিত টাকা থেকে নগদ ১৫ থেকে ২০ বার, বিকাশে কখনো ২ হাজার, কখনো ৫ হাজার আবার কখনো ১০ হাজার টাকা পাঠিয়ে নিস্তারের চেষ্টা করতেন ভুক্তভোগী। সর্বশেষ চলতি বছরের ২৯ জানুয়ারি আবারও ১০ হাজার টাকা চেয়ে নিরিবিলি এলাকার বিকাশ এজেন্ট মুদি দোকানদার শামসুর রহমানের নাম্বার দেয় অভিযুক্ত রনি।

পারিবারিক কাজে টাকা প্রয়োজন হলে গার্মেন্টস কর্মী মা ভুক্তভোগীর কাছে টাকা চাইলে সে দিতে অপারগতা প্রকাশ করে এবং টাকা নেই জানিয়ে দেয়। মা রাগান্বিত হলে ভুক্তভোগী আত্মহত্যার চেষ্টা চালান। পরে ভুক্তভোগী তার মাকে পুরো ঘটনা খুলে বলেন।  এই সূত্র ধরে অভিযুক্ত কে চিহ্নিত করে কৌশলে ওই বিকাশের দোকান থেকে তাকে হাতেনাতে ধরে ফেলা হয়। বিষয়টি এলাকায় জানাজানি হলে অভিযুক্তের বাবা দেলোয়ার হোসেন ওরফে দিলা মিয়া স্থানীয় মাতব্বরদের শরণাপন্ন হন এবং বিষয়টি টাকার বিনিময়ে রফা দফার চেষ্টা করেন।

ভুক্তভোগির মা থানার শরণাপন্ন হলে পরে স্থানীয় মাতব্বর আশুলিয়ার এনায়েতপুর এলাকার আব্দুল বারেক এর ছেলে সাদ্দাম মিয়া, ফাল্গুনী এলাকার আব্দুল খালেকের ছেলে কালাম ওরফে তোতলা কালাম, ফাল্গুনী একটেল টাওয়ার এলাকার জসিম ভুক্তভোগির খালুকে বিষয়টি মীমাংসার জন্য চাপ প্রয়োগ করেন এবং ১ লক্ষ ১০ হাজার টাকার একটি আপোষনামায়া জোরপূর্বক স্বাক্ষর করিয়ে নেন। এমন একটি আপসনামা এবং এনসিসি ব্যাংকের সাভার শাখার ৫০ হাজার টাকা মূল্যের চেক এর কপি প্রতিবেদক এর হাতে আসে। এ ব্যাপারে অভিযুক্তদের কাছে জানতে চাইলে বিষয়টি সংবাদ প্রকাশ না করতে প্রতিবেদককে অনুরোধ জানান।

অভিযুক্তকে শাস্তির আওতায় আনতে বৃহস্পতিবার সকালে আশুলিয়ার থানায় ধর্ষণের শিকার ওই স্কুলছাত্রী মামলা দায়ের করে।  এ বিষয়ে আশুলিয়া থানার পুলিশ পরিদর্শক (অপারেশন) আব্দুর রশিদ নিউজ টোয়েন্টিফোরকে জানান, ভুক্তভোগী স্কুলছাত্রীকে পুলিশের পক্ষ থেকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করা হবে।

এ ব্যাপারে আশুলিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এস এম কামরুজ্জামান নিউজ টোয়েন্টিফোরকে জানান, আমরা অভিযোগ পেয়েছি। এ ঘটনায় মামলা প্রক্রিয়াধীন। আসামিকে গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।


আরো পড়ুন