• শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ০১:৪৭ পূর্বাহ্ন

১৬ দিনেও মামলা হয়নি সাভারে প্রাইভেটকার চালকের রহস্যজনক মৃত্যু, গোপনে সমঝোতার চেষ্টা!

ইব্রাহীম খলিল, ঢাকা, সাভার প্রতিনিধি / ১৩৬ বার পঠিত
আপডেট: শুক্রবার, ৬ আগস্ট, ২০২১

সাভারে ঈদের দিন রাতে গোবিন্দ চন্দ্র সুত্রধর (২০) নামে এক প্রাইভেটকার চালকের রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে। খবর পেয়ে পুলিশ নিহতের মরদেহটি উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপালে পাঠায়। বিষয়টি সড়ক দূর্ঘটনা হিসেবে বলা হলেও গত ১৬ দিনেও মামলা নেয়নি পুলিশ। তবে দূর্ঘটনা কবলিত প্রাইভেটকার ও পাঁচটি মোটরসাইকেল ঘটনাস্থলে পড়ে থাকে দীর্ঘদিন।

নিহত গোবিন্দ চন্দ্র সুত্রধরের গ্রামের বাড়ি নেত্রকোনায়। সে বাবা-মায়ের সাথে আশুলিয়ার কুমকুমারি এলাকার বাবুল মৃধার বাড়িতে ভাড়া থেকে পার্শ্ববর্তী খাগান এলাকার এ্যাপালে ভিলেজ লিমিটেড (কাজল গার্মেন্টস) কারখানার এজিম জাহাঙ্গীর আলম মোহনের গাড়ি চালাতো।
অভিযোগ উঠেছে প্রাইভেটকার চালক গোবিন্দ চন্দ্র সুত্রধর ঈদের রাতে সাভারের বিরুলিয়া ইউনিয়নে অবস্থিত আমিন মোহাম্মদ গ্রুপের আশুলিয়া মডেল টানউনের ভিতরে থেমে থাকা কয়েকটি মোটরসাইকেলে ধাক্কা দেয়। এসময় মদ্যপ অবস্থায় থাকা মোটরসাইকেলের চালক ও সহযোগীরা মিলে গোবিন্দকে পিটিয়ে হত্যা করে।

সরেজমিনে দূর্ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে দেখায় একটি পাকা রাস্তার শেষ প্রান্তে মাঠের মধ্যে রাস্তা থেকে অনেক দুরে একটি প্রাইভেটকার ও পাঁচটি মোটরসাইকেল ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে। স্থানীয়দের বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে অনেকেই বলেন শুনেছি সড়ক দূর্ঘনায় এখানে একটি ছেলে মারা গেছে। কিন্তু বাস্তব চিত্র দেখে কেউই ঘটনাটিকে সড়ক দূর্ঘটনা হিসেবে মানতে নারাজ।

বিষয়টি জানতে তিন দিন গোবিন্দ চন্দ্র সুত্রধরের বাড়িতে গিয়ে তার পরিবারের কাউকে পাওয়া যায়নি। অন্য লোকের মাধ্যমে মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও পরিবারের সদস্যরা মুখ খুলেনি। তবে তাদের স্বজনরা দাবি করেন গোবিন্দকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। আমরা এ ঘটনার সুষ্ঠ তদন্ত পূর্বক ন্যায় বিচার চাই।
জানতে চাইলে নিহতের বড় ভাই আনন্দ চন্দ্র সুত্রধর বলেন, ঘটনার পরে আমরা থানায় মামলা দায়ের করতে যাই। কিন্তু পুলিশ বলেছে ময়না তদন্তের রিপোর্ট না আসা পর্যন্ত মামলা নেয়া যাবেনা।

তবে এরই মাঝে থানা পুলিশ আশুলিয়া মডেল টাউনের নিরাপত্তাকর্মী, মোটরসাইকেল চালকসহ স্থানীয় অনেকেই থানায় ডেকে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। অভিযোগ উঠেছে যারা গোবিন্দকে হত্যা করেছে তাদের স্বজনরা স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও আওয়ামী লীগ নেতাদের সাথে নিয়ে নিহতের পরিবারকে চাপ দিয়ে এবং ভূল বুঝিয়ে মামলা করতে দিচ্ছেনা। বিনিময়ে পুলিশকে ম্যানেজ করে ভুক্তভোগীর পরিবারকে কিছু নগদ টাকা আদায় করে দেয়ারও আশ্বাস দিয়েছে তারা।

এলাকাবাসীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, বিরুলিয়া ইউনিয়নের ৪ নং ওয়ার্ড ইউপি সদস্য আব্দুল আলীমের ছেলে মোঃ সোহন বন্ধুদের নিয়ে ঈদের দিন রাতে আশুলিয়া মডেল টাউনের পিছনের দিকে রাস্তায় পাঁচটি মোটরসাইকেল দাড় করে রেখে আড্ডা দিচ্ছিলো। সেখান দিয়ে যাওয়ার সময় প্রাইভেটকার চালক গোবিন্দ মোটরসাইকেলগুলো ধাক্কা দেয়। এঘটনায় প্রাইভেটকার চালক গোবিন্দ মারা গেলেও কিছুই হয়নি মোটরসাইকেল চালকদের।

ইউপি সদস্য আব্দুল আলীম ছেলেকে বাঁচাতে সাভার উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি আমিরুল হাসান কামাল, আশুলিয়া ইউনিয়নের ৪ নং ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি সদস্য বিল্লাল হোসেনসহ এলাকার মাদবরদেরকে নিয়ে ঘটনাটি ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করছেন।
মীমাংসার বিষয়ে অভিযুক্ত উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি আমিরুল হাসান কামাল বলেন, তারা যদি মিলে যায় আপনার কি? আপনার সমস্যা কোথায়। থানায় যান, আমাকে ফোন করছেন কেন? গত ২১ তারিখের ঘটনা, পুলিশ কি করে? মামলা নেয় না কেন?

এব্যাপারে সাভার মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী মাইনুল ইসলাম বলেন, নিহতের মরদেহটি ময়না তদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে। তবে এঘটনায় আমাদের কাছে কেউ অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এছাড়া নিহতের পরিবার কাদের সাথে বসে মীমাংশা করবে সেটি তাদের বিষয়।


আরো পড়ুন