• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৮:৪৩ অপরাহ্ন

অরক্ষিত মিয়ানমার সীমান্ত অতঃপর আমাদের নিরাপত্তা

/ ২৯৩ বার পঠিত
আপডেট: সোমবার, ৫ আগস্ট, ২০১৯

এইচ.এম নজরুল ইসলাম:
জননেত্রী শেখ হাসিনা টানা তৃতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী থাকা অবস্থায় , ২০১৭ সালে ১২ সেপ্টেম্বর কক্সবাজারে অষ্টম বারের মতো সফর ছিল। আর প্রথম বারের মতো রোহিঙ্গা শরনার্থী ক্যাম্প দেখতে যাওয়া ছিল প্রধানমন্ত্রীর সর্বশেষ সফর। জানিনা বাংলাদেশের আর কোন জেলার মানুষের কক্সবাজার জেলাবাসীর মতো সুভাগ্য হয়েছে কিনা, প্রধানমন্ত্রী বঙ্গকন্যা শেখ হাসিনাকে অতবার কাছে পাওয়ার বা দেখার মতো। সমুদ্রের ঢেউয়ের প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভালোবাসার প্রকাশ যেমন মেরিন ড্রাইভ সড়কের উদ্বোধনের সময়ে বিশ্ববাসী দেখেছে নুনা জলে পা ভেজানোর মতো অপুরূপ দৃর্শটি। ঠিক তেমন করে প্রধানমন্ত্রীর সু-দৃষ্টিতে এগিয়ে যাচ্ছে কক্সবাজারের উন্নয়ন প্রকল্প। বলতে গেলে নন্দিত শহরে পরিনত হচ্ছে প্রতিমুহুর্তে আমার প্রিয় সমুদ্র শহর কক্সবাজার।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনার নেতৃত্বাধীন সরকারের টানা তৃতীয় মেয়াদে কক্সবাজারে প্রায় তিন লাখ কোটি টাকা উন্নয়ন প্রকল্প কাজ চলছে। এসব প্রকল্পের মধ্যে মাতারবাড়ি কয়লাবিদ্যুৎ কেন্দ্র হচ্ছে দেশের ইতিহাসের সবচেয়ে মেগা প্রকল্প। এছাড়াও এক হাজার ৪০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত বিশ্বের দীর্ঘতম কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়ক। বিমানবন্দরের সম্প্রসারিত রানওয়েতে সুপরিসর ৭৩৭-৮০০ বোয়িং বিমান চলাচলের উদ্বোধন। শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম, মহেশখালী এলএনজি টার্মিনাল, মেডিকেল কলেজ, নাফ ট্যুরিজম পার্ক প্রকল্পও বাংলাদেশের অন্যতম শীর্ষ প্রকল্প। এসব প্রকল্পের অর্ধেক বাস্তবায়ন হয়েছে। অবশিষ্টগুলো বাস্তবায়নে আলোর মুখ দেখতে পাচ্ছে জেলাবাসী।
বলতে গেলে উন্নয়নের মহাসড়ক যেন কক্সবাজার দিয়ে চলছে। তবে এখন বলতে হয় কক্সবাজার জেলাব্যাপী চলা প্রায় তিন লাখ কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্পের মহাসড়কটি শেষ পর্যন্ত রোহিঙ্গাদের জ্যামে আটকে যাবে না তো?
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনার থেকে আর কিছুই চাওয়ার নেই জেলাবাসীর। আপনি না চাইতে অনেক কিছু উপহার দিয়েছেন। তারপরও আমরা আজ ততবেশি সুখে নেই! মিয়ানমার ফেরত নিবন্ধিত-অনিবন্ধিত প্রায় ১২ লক্ষ রোহিঙ্গার ভারে ন্যুয়ে পড়েছে আমার-আপনার প্রিয় শহরটি! একদিকে যেমন মিয়ানমার আমাদের ইয়াবা নামক গুটিতে গুটিবাজী করে যুব সমাজকে ধ্বংস করে দিচ্ছে প্রতিদিন,ঠিক তেমনি করে মিয়ানমার আরাকান রাজ্যে সহিংসতার নামে যে নাটকটি মঞ্চায়িত হচ্ছে সেই নাটকরে দর্শক যারা আমার ভূখন্ডে আশ্রয় নিয়েছে সেইসব রোহিঙ্গাদের হাতে আজ প্রতিমূহুত্বে রক্তাক্ত হচ্ছে সবুজে ঘেরা পাহাড়-বনভূমি। শুধু কি তাই রোহিঙ্গাদের নিয়ন্ত্রণে আজ অপরাধ জগত চুরি,ছিনতাই,ডাকাতি,হত্যাসহ এমন কোন কাজ নেই যার সাথে রোহিঙ্গাদের সম্পৃক্ত নেই। আমাদের শ্রম বাজার আজ রোহিঙ্গাদের দখলে।
আজ আপনার কাছে শুধু একটাই চাওয়া রোহিঙ্গা নামক বিষফোঁড়া থেকে জেলাবাসীকে বাঁচান।
রোহিঙ্গাদের কারনে বনজঙ্গল থেকে শুরু করে সমুদ্রের ঝাউবন আজ কেন কিছুই নিরাপদ নেই। নিরাপদ নেই প্রিয় মাতৃভূমি, রোহিঙ্গাদের নিয়ন্ত্রণে কক্সবাজার-বান্দরবানে সক্রিয় আছে রোহিঙ্গা জঙ্গী সংগঠন সহ একধিক উগ্রবাদী সংগঠন। রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতনকে উপজীব্য করে বিভিন্ন দেশীয় ও আন্তর্জাতিক জঙ্গিগোষ্ঠী নতুন করে তৎপর হয়ে উঠছে বলে বিভিন্ন জাতীয় আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে। রোহিঙ্গাদের নির্যাতনের বিভিন্ন ছবি, ভিডিও ইন্টারনেটে শেয়ার করে জঙ্গিগোষ্ঠীগুলো মুসলিম তরুণদের উসকে দেওয়ার চেষ্টা করছে। জেলা জুড়ে আজ অতিরিক্ত মানুষের চাপে এক ধরনের মানবিক বিপর্যয় গড়তে যাচ্ছে।
সম্প্রতি আগত রোহিঙ্গাদের মানবিক বিবেচনায় নিদিষ্ট জায়গায় রাখতে ২ হাজার একরে বেশি জমি বরাদ্ধ দিয়েছে প্রশাসন,কিন্তু জেলার অধিকাংশ স্থানীয় লোকজন ভূমিহীন হিসেবে যুগ যুগ পার করে যাচ্ছে অনিশ্চিত রাত্রী যাপনের মধ্য দিয়ে!! স্থানীয়দের কি সাংবিধানিক অধিকার নেই বাসস্থানের অধিকার দাবী করা? তাই বলছি আমরা ভিক্ষা চাইনা আমরা আমাদের বাসস্থানের অধিকার চাই। আমরা এই বিপর্যয় থেকে মুক্তি চাই। মুক্তি চাই রোহিঙ্গা নামক বিষফোঁড়া থেকে।
কক্সবাজারে পর্যটনে ধস নামার আশঙ্কা
রোহিঙ্গাদের অবস্থান দীর্ঘস্থায়ী হলে কক্সবাজারের পর্যটন শিল্পে ধস নামার আশঙ্কা আছে এখনই রোহিঙ্গা নারীদের কক্সবাজারে অবাধে চলাফেরা করতে দেখেছেন অনেকে। দেহ ব্যবসায়ও অনেক নারীকে সেখানে পাওয়া যাচ্ছে। রোহিঙ্গা নারীদের মাঝে এইডস রোগী সনাক্ত হয়েছে ২ হাজারের বেশি! এ নিয়ে স্থানীয়রা উদ্বিগ্ন, উদ্বিগ্ন প্রশাসনও। এভাবে চলতে থাকলে কক্সবাজারকে অনেকেই পাশ কাটিয়ে অন্য পর্যটনকেন্দ্রে চলে যেতে পারেন। এমনটা হলে কক্সবাজারের পর্যটনে ভয়াবহ ধস নামতে পারে।
রয়েছে নিরাপত্তা ঝুঁকি
দিন দিন রোহিঙ্গাদের মধ্যে কট্টরপন্থি মনোভাবাপন্ন হয়ে উঠছে। আর এসব কট্টরপন্থি যুবকদের কাছে টানার চেষ্টা করছে বিভিন্ন মৌলবাদী সংগঠন। জঙ্গি সংগঠনগুলো এই সুযোগ কাজে লাগাতে চাইলে ভয়াবহ বিপর্যয় হতে পারে। মৌলবাদী দলগুলোও যে এই সুযোগ কাজে লাগানোর চেষ্টা করছে প্রতিনিয়ত।
“রোহিঙ্গাদের ক্যাম্প থেকে পালিয়ে যাওয়া ঠেকাতে কক্সবাজার-টেকনাফ সড়কে নয়টি তল্লাশি চৌকি স্থাপন করা হয়েছে। কিন্তু ক্যাম্পগুলোর অবস্থান পাহাড়ি এলাকায় হওয়ায় কোনোভাবেই রোহিঙ্গাদের পালিয়ে যাওয়া ঠেকানো যাচ্ছে না। এমন পরিস্থিতিতে রোহিঙ্গাদের পালিয়ে যাওয়া ঠেকাতে উখিয়া-টেকনাফের শরণার্থী ক্যাম্পগুলোতে সীমানা প্রাচীর বা কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে নিরাপত্তা বেষ্টনী তৈরি করা দ্রুত প্রয়োজন। রোহিঙ্গা ক্যাম্প গুলোতে মোবাইল নেটওয়ার্ক বন্ধ করা না হলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের অপপ্রচার বন্ধ করা কঠিন হয়ে পড়বে,এই মুহুর্তে দেশের নিরাপত্তার প্রয়োজনে রোহিঙ্গাদের সাথে আন্তর্জাতিক যে কোন সম্পর্ক ছিন্ন করতে হলে মোবাইল নেটওয়ার্ক বন্ধ করা জরুরী।
অরক্ষিত মিয়ানমারের সীমান্ত অতঃপর আমাদের নিরাপত্তা
বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে ১৭০ মাইল দীর্ঘ সীমান্ত রয়েছে। ইতিপূর্বে মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশে জল ও স্থলসীমান্তে অস্থিরতা ও সংঘাতপূর্ণ পরিবেশের অভিজ্ঞতা রয়েছে। ২০০৮ সালে দুই দেশের মধ্যে সমুদ্রসীমা নিয়ে দ্বন্দ্ব দেখা দিয়েছিল। সে সময়ে মিয়ানমার নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজ বাংলাদেশের জলসীমায় প্রবেশ করেছিল। অন্যদিকে কথায় কথায় মিয়ানমারের উড়োজাহাজ কর্তৃক বাংলাদেশের আকাশসীমা লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটেছে বহুবার।
সীমানা রেখা বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বে এবং মায়ানমারের পশ্চিমে অবস্থিত। সীমান্তের মোট দৈর্ঘ্য ১৯৩ এই সীমান্তে বহু যুগ ধরে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের ওই দুর্গম অঞ্চলের সীমান্ত অরক্ষিত থাকায় ওই অঞ্চল দেশি-বিদেশি দুষ্কৃতকারী, বিভিন্ন সংগঠন এবং মাদক চোরাচালানের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে; যা ওই অঞ্চলে বিজিবির সীমান্তচৌকি ও ঘাঁটি স্থাপনে কিছুটা নিয়ন্ত্রণে ও নজরদারিতে পড়েছে। তারপরও এখনো প্রায় অর্ধেক সীমান্ত সম্পূর্ণ অরক্ষিত রয়েছে।
দেশের নিরাপত্তার স্বার্থে সীমান্তে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা নিয়ে কাটা তারের বেড়া দিয়ে সীমান্ত সীলগালা করে দেওয়া এখন সময়ের দাবী হয়ে উঠেছে।
এইচ.এম নজরুল ইসলাম
সভাপতি রিপোর্টার্স ইউনিটি কক্সবাজার, নির্বাহী সম্পাদক দৈনিক আপন কণ্ঠ ও সাংগঠনিক সম্পাদক কমিউনিটি পুলিশিং সদর উপজেলা শাখা, সদস্য- কক্সবাজার সিভিল সোসাইটিজ ফোরাম।


আরো পড়ুন