• শনিবার, ০৪ মে ২০২৪, ০৬:৫২ অপরাহ্ন

“যে কারণে অনলাইন জনপ্রিয়তার শীর্ষে “

/ ৭৪ বার পঠিত
আপডেট: সোমবার, ১২ জুন, ২০২৩

সজীব আকবর:

কেনো অনলাইন সৃষ্টি হলো? কেনো অনলাইন মিডিয়া জনপ্রিয়তার শীর্ষে?
ভোগ কেনো তাদের প্রিন্ট ভার্সন বন্ধ করে শতভাগ ডিজিটালাইজড্ করে অনলাইন মুখী হলো?

তার সবটুকু না হলেও দু’একটা সূত্র আপনাদের জানা থাকা দরকার।

আগে মানুষ একটা পত্রিকা বা ম্যাগাজিনের জন্য মাসের পর মাস অপেক্ষা করেছে। কারণ পরিস্থিতি তখন তেমনই ছিলো। স্বদিচ্ছা আর আন্তরিকতা থাকা সত্বেও পরিস্থিতি আমাদের অপেক্ষায় রাখতে বাধ্য করতো।

মনে আছে ১৯৮৬ সালে সীমান্তবর্তী চুয়াডাঙ্গা জেলার নাটুদহ স্কুলের ( হাজার দুয়ারি) ম্যানেজিং কমিটির তৎকালীন কর্মকর্তা জনাব আঃ রাজ্জাক এঁর অনুরোধে রাতে তাঁর বাড়িতে থেকে পরদিন স্কুলের সার্বিক খোঁজখবর নিয়ে ফ্লিমক্যামেরায় স্কুলের ছবি তুলে নিউজ প্রস্তুত করে কুষ্টিয়া, যশোর, খুলনা আর ঢাকার পত্রিকায় ১৫ পয়সা করে প্রত্যেক খামে ডাক টিকিট লাগিয়ে “খোলা ডাক ” লিখে ছাড়া হয়েছিলো। আর সংবাদ ছাপা হওয়ার পর পত্রিকাগুলো হাতে পেতে আমার অপেক্ষা করতে হয়েছিলো প্রায় ৩৫/ ৪০ দিন।।
তারপরও সেসব পত্রিকা হাতে পেয়ে স্কুল কমিটি যারপরনাই উচ্ছ্বসিত হয়েছিলেন, আর আপ্যায়নের কথা তো বললামই না।

কিন্তু বর্তমান সময়ে কী মানুষ এতোটা ধৈর্য্য ধরবে?

এখন একটি ঘটনা ঘটার সর্বোচ্চ আধাঘন্টা বা একঘন্টার মধ্যে পত্রিকা এবং মিডিয়া হাউজগুলো সঙ্গে সঙ্গে তাদের অনলাইন ভার্সনে যদি সংক্ষিপ্ত পরিসরে হলেও এটি আপলোড না করে, তাহলে বর্তমান পাঠক, লাইকার ভিউয়াররা এসব মিডিয়া হাউজগুলোকে একেবারে ঠুঁটোজগন্নাথ বা ঠ্যাংভাঙ্গা গরু মনে করে।।

এই অনলাইন আপডেটের সর্বশেষ প্রাপ্তি হলো ” লাইভ টেলিকাস্ট “।।

যারা লেখালেখি ও সাংবাদিকতার সাথে যুক্ত আছেন তারা দেখেছেন যে, এখন কিন্তু সাংবাদিকরা বাসা/ বাড়ি থেকে রাস্তায় নামার আগেই নোটবুক, কলম, মোবাইল, ক্যামেরা এবং ল্যাপটপের ব্যাগ পিঠে ঝুলিয়ে নেয়।
কারণ কোথাও কিছু ঘটলে সঙ্গে সঙ্গে যেনো সেখানে দাঁড়িয়ে কম্পোজ করে সংবাদ, ছবি, ভিডিও তাৎক্ষণিকভাবে (সবার আগে) পাঠানো যায়।

আপনারা জানেন এখন মানুষের হাতে হাতে মোবাইল বা স্মার্ট ফোন। তাই কোথাও কিছু ঘটলেই দেখবেন পাবলিক ওই জায়গায় দাঁড়িয়ে লাইভ করে অথবা যা পারে তাই লিখে ছবি আপলোড করে দেয়। এতে শঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। কারণ এতে সংবাদের গুরুত্ব কিন্ত একটুও কমেনা।

কারণ আমজনতার ক্ষমতা নেই আপনার মতো করে ঘটনার পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণ কাব্যিক ও নিয়মতান্ত্রিক সংবাদীয় ভাষায় পাঠকের সামনে বিষয়টি তুলে ধরা।

আর একটা কথা সবসময় মনে রাখবেন। ফেসবুকে আমজনতা যতো কিছুই ছাড়ুক না কেনো তা কখনই রাষ্ট্র সংবাদ হিসেবে গণ্য করেনা।
কারণ যা এডিট হয়না, তা কখনোই সংবাদ নয়।

একজন ফেসবুক ইউজার তার ফেসবুকে যা ইচ্ছে লিখতেই পারে কিন্তু সেটা গণ্য হয় ” ব্যক্তিগত অভিমত হিসেবে “। তা কখনোই সংবাদ নয়।

আর আপনি সাংবাদিক, আপনি যতো ভালো করেই সংবাদ পাঠান না কেনো– সংবাদটি নিউজ রুমে এডিট হয়ে ” হেড অব নিউজ” ফাইনালি এডিট বা সম্পাদনা করে সেটা সম্পাদকের হাত ঘুরে তার পর প্রকাশ বা আপলোড করা হয়।।

তাই ফেসবুকের ব্যক্তিগত আস্ফালন কখনোই সংবাদ নয়। তবে ফেসবুকে ব্যক্তিগত আক্রোশ, নোংরামি, ভুলভাল তথ্য দিয়ে সমাজ ও রাষ্ট্রকে বিভ্রান্ত করার অপচেষ্টার দায়ে ফেসবুকে কূৎসা রটনাকারী হাজার হাজার ব্যক্তি আইসিটি মামলায় সাজা ভোগ করেছে।

যা বলছিলাম, বর্তমান সময়ের পাঠকের আর মাসিক বা সাপ্তাহিক পত্রিকা পড়ার জন্য একমাস বা সাতদিন অপেক্ষা করার মতো সময় নেই। এমন কি দৈনিক পত্রিকার জন্য অপেক্ষা করাটাও সে বিলাসিতা মনে করে।

ফলে দৈনিক পত্রিকার পাঠকেরাও এখন সময় পেলেই বিভিন্ন পত্রিকার ওয়েবসাইটে ঢুকে তাৎক্ষণিক সর্বশেষ সংবাদ এবং গুরুত্বপূর্ণ সংবাদগুলোতে চোখ বুলিয়ে নেয়।
আর বর্তমান সময়ে পাঠকদের ধৈর্য্য নেই বলেই সার্কুলেশনে বিশ্বের অন্যতন সেরা হওয়ার পরও ভোগ পত্রিকা তাদের প্রিন্ট বন্ধ করে দিয়ে শতভাগ ডিজিটালাইজড্ হয়ে গেছে। তার এখন শুধুই অনলাইন ভার্সন চালাচ্ছে।।
এখন এটুকু পড়ার পর, পেশাদার- অপেশাদার এবং মৌসুমি সাংবাদিকরা তাদের লেখা সংবাদ ঘটনা ঘটার কতোদিন, কতো ঘণ্টা বা কতক্ষণ পর মিডিয়া হাউজে পাঠাবে তা বিচারের ভার কলম যোদ্ধাদের উপরেই ছেড়ে দিলাম।

লেখক: সাংবাদিক সজীব আকবর।

পেশাদার সংবাদকর্মী, কবি, সাহিত্যিক ও ছড়াকার।

ঢাকা-বাংলাদেশ।


আরো পড়ুন