• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৯:১০ পূর্বাহ্ন

২০ মিনিটে বোমা বানাতে পারে জঙ্গি সদস্য ইউসুফ ! সিরিজ রিপোর্ট-০২

/ ২৪৭ বার পঠিত
আপডেট: সোমবার, ২০ মার্চ, ২০২৩

ক্রাইম রিপোর্টার:-
সাংবাদিক পরিচয় দেওয়া ল্যাংটা ইউসুফের পোস্টে শত ভুল’-শিরোনামে সংবাদ প্রকাশের পর অনুসন্ধানে নামে টিম সাপ্তাহিক অপরাধ বিচিত্রা ও দৈনিক স্বাধীন সংবাদ। এ যেন কেঁচো খুঁড়তে গিয়ে সত্যি সত্যি সাপ বের হয়ে আসলো। মাত্র ২০ মিনিটে নাকি বোমা বানাতে পারেন ইউসুফ! তারপর সেই বোমা সাপ্লাই দেন দেশের স্থানীয় সন্ত্রাস ও জঙ্গি সংগঠনের নিকট। বাংলাদেশকে বিচ্ছিন্ন করার লক্ষ্যে পার্বত্য অঞ্চল রাঙ্গামাটি ও বান্দরবানে ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার’ যে জঙ্গি সংগঠনের উত্থান ঘটেছিল ইউসুফ সে সংগঠনের সদস্য বলেও জানা যায়। র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব) যে অভিযান চালায় তখন নাকি তিনি প্রাণে বেঁচে গিয়েছিলেন। এমনটাই জানিয়েছেন ঐ এলাকার স্থানীয় এলাকাবাসী।

অনুসন্ধানে এসেছে, ইউসুফ কেবল সাংবাদিক হিসেবেই ভুয়া নন, তিনি ভুয়া ওসিও। জানা যায়, বান্দরবান নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ সোহেল রানার সহযোগিতায় নিজেই অলিখিত ইনচার্জের দায়িত্ব পালন করেন ইউসুফ। ফাঁড়ির ভিতরে জোর জবরদস্তি করে বিচার ও অর্থ হাতিয়ে নিতো এই ইউসুফ। তার বিচার না মানলে, এমনি বিচারকার্য চলাকালে তার সাথে বিনয়ী আচরণ না করলে- হ্যান্ডকাপ পরিয়ে চালানো হতো অমানবিক নির্যাতন। কয়েকগুণ বেড়ে যেত তার কথাকথিত জরিমানাও। সাম্প্রতিক সময়ে সাপ্তাহিক অপরাধ বিচিত্রা অফিসে ইউসুফ এর একটি ভিডিও ক্লিপ আসে। যেখানে ফাঁড়ির ভিতর ইউসুফকে ওসি সেজে কথা বলতে শোনা যায়। এমনকি ফাঁড়ির ভিতর আটকানো রিয়াজ নামের এক যুবককে অপহরণ মামলারও হুমকি দেন ইউসুফ। এতে এই যুবক তার ভয়ে স্যার সম্বোধন করে কাপতে থাকে।

কি নেই ইউসুফের? র‍্যাব-পুলিশসহ বিভিন্ন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পোশাক, হ্যান্ডকাপ, ওয়াকিটকি, জ্যাকেটসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম রয়েছে তার। অনুসন্ধান করে যায়, এ সবই কিনতে সহযোগীতা করেছেন নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ সোহেল রানা।  তিনিই মূলত তাকে এ পথে নামিয়েছেন। অনুসন্ধানের শুরুতে আরও একটি ছবি সামনে আসে ইউসুফের। যে ছবিতে ইউসুফের গায়ে একটি কাপড়ের টুকরোও নেই, তিনি পুরাপুরি উলঙ্গ। পাশে উপস্থিত আছেন বিজিবির সদস্যরা। ঠিক সেই মুহূর্তে ইউসুফ জড়িয়ে ধরে রেখেছেন নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ সোহেল রানাকে। সোহেল রানাও তখন ইউসুফের গ্রেপ্তার এড়াতে মোবাইল ফোনে কোন এক ব্যক্তিকে তদবির করছেন। ঐদিনের এই ঘটনার প্রকৃত বিষয়টি জানতে ঐ এলাকার স্থানীয় সাংবাদিকদের মতামত জানতে চাইলে তারা বলেন, এই ঘটনাটি হল ইউসুফ এক নারীর সাথে আপত্তিকর অবস্থায় ধরা পড়ে। তখন এলাকার লোকজন জড়ো হয়ে তাকে গণধোলাই দেয়। কিছুক্ষণের মধ্যেই বিজিবি এসে উপস্থিত হয়। তাকে গ্রেফতার করে যখন নিয়ে যাবে তখন ইউসুফ দেখেন নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ সোহেল রানাকে। তখনই ইউসুফ দৌড়ে গিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরে- স্যার গো, আব্বা গো বাঁচান- বলে চিৎকার করতে থাকেন। সোহেল রানাও তখন তার পক্ষে কাজ করতে থাকে। 

আরও জানা যায়, ওসি সেজে সাধারণ মানুষকে ক্রস ফায়ারের হুমকি, মানুষকে অপহরণ করে চাঁদা আদায়, বিভিন্ন দেশে রোহিঙ্গা নারী পাচার, মাদকের রমরমা ব্যবসা, নিজের অবৈধ রেজিস্ট্রেশনবিহীন গাড়িতে মাদক পরিবহন ও চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্থানে মাদকের সাপ্লাই, নিয়মমাফিক তথ্য সংগ্রহকালে সাংবাদিককে প্রাণনাশের হুমকি, মিথ্যা মামলা দায়ের, সাংবাদিককে মিথ্যা চাঁদাবাজির অভিযোগ দেওয়া, পুলিশ সেজে রাস্তায় চেকপোস্ট বসিয়ে চাঁদা আদায় সহ নানা অপকর্মের ফিরিস্তি রয়েছে তার বিরুদ্ধে। 

মামলার নথি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ইউছুফের বিরুদ্ধে উখিয়া থানায় পাঁচটি এবং নাইক্ষ্যংছড়ি থানায় দুটি মাদক কারবার ও চোরাচালানের মামলা রয়েছে। এর মধ্যে উখিয়া থানায় ২০২১ সালের ১৬ মার্চ তারিখে (এফআইআর নং–২৬/১৭৯) মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা হয়। এ ছাড়া ২০১৪ সালের ১৪ নভেম্বর (জিআর নং–৩৪০/১৪) এবং ২০১৯ সালের ১৮ ডিসেম্বর (এফআইআর নং–২০/৬০৭), তার বিরুদ্ধে উখিয়া থানায় কিছুদিন আগে আরও একটি রাস্তায় বৈধ ভাবে মানুষকে তল্লাশি করায় মামলা হয় তার বিরুদ্ধে। বাকি দুটি নাইক্ষ্যংছড়ি থানায় ২০০৭ সালের ৮ মার্চ তারিখে (জিআরনং–৪২/০৭) বিশেষ ক্ষমতা আইনে এবং ২০১৫ সালের ২২ জুন (জিআর নং–১৩৮/১৫) তারিখে তার বিরুদ্ধে মামলা হয়।

সর্বশেষ মামলাটি হয় গত বছরের ২৬ অক্টোবর উখিয়া থানায়। যার এফআইআর নং- ৮০/১৩৩৯। ধারা: ৩৪১/৩২৩/৩৭৯/৩৬৫/৪২৭/৫০৬/৫১১। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়, মারপিট করিয়া সাধারণ জখম করতো, ভায়ভীতি প্রদর্শন, অপহরণের চেষ্টা এবং চুরি করার অপরাধ।

নাইক্ষ্যংছড়ির কয়েকজন ভুক্তভোগীসহ এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে তার সত্যতা পাওয়া গেছে, উক্ত এলাকার ইউনিয়ন চেয়ারম্যান বলেন, ইউসুফ এলাকায় জনগণের আতঙ্ক। এমন কোন অপরাধ কর্মকাণ্ড নেই যা সে করে না। নিরীহ মানুষদের আটকে সে চাঁদা আদায় করে। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে এলাকাবাসী তাকে এলাকা ছাড়া করে। বেশ কয়েকবার তাকে এলাকাবাসী সহ বিজিবিরা পিটিয়েছে। সর্বশেষ নারী কেলেঙ্কারিতে ধরা পড়ে উলঙ্গ করে পেটানোর পর তাকে সবাই ল্যাংটা ইউসুফ বলে চিনে। কেউ কেউ কানকাটা ইউছুফ বলে জানে। তার কানটাও গেছে অপরাধ সংগঠিত করতে গিয়ে। বর্তমানে তিনি এলাকা ছাড়া।

নিরাপত্তার স্বার্থে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক যুবক বলেন, ইউসুফ আমাকে রাস্তা থেকে ধরে এনে ওসি পরিচয় দিয়ে এক লক্ষ টাকা দাবি করেন। অন্যথায় আমাকে আদালতে চালান দিবে অথবা ক্রস ফায়ার দিয়ে হত্যা করবে বলে জানান। একপর্যায়ে আমাকে সিএনজির ভিতর বেঁধে পাহাড়ের বিভিন্ন রাস্তায় ঘুরাতে থাকেন। ভয়ে তাকে হাজার বার বাপ ডাকছি তবুও আমাকে ছাড়েনি। শেষে ৮৫ হাজার টাকা দিয়ে নিজেকে ছাড়িয়েছি।

ভুক্তভোগী আরেক রিকশাচালক বলেন, গাড়ি চালানো অবস্থায় ইউসুফ আমাকে হ্যান্ডকাপ পড়ায়। তারপর বাবাকে কল দিলে বাবা ও ভাই আসে। তখন ভাইকেও হ্যান্ডকাপ পড়ায় এই কথিত ওসি কানকাটা ইউসুফ। বলেন, ১ লক্ষ টাকা না দিলে তোর ভাইকেও চালান দিব। আমি টাকা দিতে সম্মতি না দিলে আমার মাথার উপর আঘাত করেন। যা আমার কেয়ামত পর্যন্ত মনে থাকবে। 

সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসার সাথে সাথে রাতের শুরুতে কক্সবাজার টেকনাফ আরকান সড়কের উখিয়া টিভি রিলে কেন্দ্রের সামনে ও উত্তর দক্ষিণ পাশে রাস্তায় চেক পোস্ট বসিয়ে পুলিশ পরিচয় দিয়ে চাঁদাবাজিতে লিপ্ত হয় বান্দরবান জেলার নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নের তুমব্রু উত্তর পাড়া এলাকার বদিউর রহমানের ছেলে ইউছুফ আলী।

সেই দীর্ঘদিন ধরে নাইক্ষ্যংছড়ি, উখিয়া ও টেকনাফে পুলিশের নাম ভাঙিয়ে এবং সোর্স পরিচয়ে প্রতি মাসে হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা। তার বিরুদ্ধে রয়েছে এমনটি অভিযোগ। বর্তমানে কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন ইউছুফ আলী। তার রয়েছে গণিত সম্পদ। বর্তমানে তার মোট ১৩ টি অবৈধ মাইক্রো রয়েছে। প্রতিটি গাড়ি মাদক পরিবহনে ব্যবহার করা হয়। প্রতিটি গাড়ির সামনে দৈনিক আমাদের মাতৃভূমি পত্রিকার বড় করে স্টিকার সাটিয়েছেন। নুন আনতে পান্তা ফুরানো ইউসুফের রয়েছে ব্যাংক ভর্তি টাকা। তার ঘনিষ্ঠ সূত্রে জানা যায়, এবারের ঈদুল আযহায় তিনি ৫ কোটি টাকার গরু কিনবেন ব্যবসার উদ্দেশ্যে। তার রয়েছে দুইটি বিলাসবহুল বাড়ি। যা এমপি মন্ত্রীর বাড়িকেউ হার মানিয়ে দিবে। 

ইউছুফের রয়েছে একাধিক স্ত্রী। বর্তমানে এক রোহিঙ্গা মেয়েকে বিয়ে করে উখিয়ার কুতুপালংয়ে একটি বাসায় থাকছেন। ওই রোহিঙ্গা মেয়ে তার তৃতীয় স্ত্রী। তার দ্বিতীয় স্ত্রীও রোহিঙ্গা। তিনি বর্তমানে রোহিঙ্গা ক্যাম্প-৭-এ অবস্থান করছেন বলে জানা যায়৷ তার প্রথম স্ত্রী তাদের বড় ছেলেকে নিয়ে বর্তমানে চট্টগ্রাম বদ্দারহাটে থাকছেন। চার বউ চার যায়গায়, তাও ভিন্ন ভিন্ন ফ্লেটে। সচেতন মহলের প্রশ্ন কোন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান কিংবা কাজ না করা ইউসুফের আয়ের উৎস কি? প্রতিদিনের এত খরচ সে কিভাবে যোগান দেয়।

আরও জানা যায়, পঞ্চম শ্রেণী পাস না করা ইউছুফ কখনো নিজেকে পুলিশ কখনোবা সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে প্রতিনিয়ত উখিয়াসহ বিভিন্ন জায়গায় চাঁদাবাজি ও মাদকের কারবার চালিয়ে যাচ্ছেন। তার এসব কর্মকাণ্ডে প্রশাসনের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তাও জড়িত আছেন বলে গোপন সূত্রে জানা গেছে।

জানা যায়, সকল কুখ্যাতি আড়াল করতে নিজ জেলা বান্দরবান থেকে সমাজচ্যুত হয়ে বসবাস শুরু করেন কক্সবাজার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে। সেখানেও নিজ অপকর্মের ভার সইতে না পেরে স্থান পরিবর্তন করে চলে আসেন চট্টগ্রাম বদ্দারহাটে। কিন্তু চট্টগ্রামেও শান্তি মিলছে না এই লোকের। বিভিন্ন মিডিয়ার জ্বালাতনে অতিষ্ঠ তার জীবন। তাইতো সকল সাংবাদিকদের চোখ ভিন্ন দিকে প্রভাবিত করতে নিজেই সাংবাদিক হিসেবে বনে গেছেন। অবৈধ অর্থের জোরে তিনি এখন মস্ত বড় সাংবাদিক। তার অপকর্মের বিষয়ে সাংবাদিকরা জানতে চাইলে দেন চাঁদাবাজির অপবাদ। দেখান সাংবাদকিতার ক্ষমতাও। 

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ইউছুফ অনেকদিন ধরে নিজ এলাকার (তুমব্রু) বাইরেও বসবাস করে। প্রশাসনের সোর্স পরিচয়ে চাঁদাবাজি ও সীমান্তে চোরাচালানে লিপ্ত থাকার কারণে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছেও পিটুনি খেয়েছেন বলে জানান উখিয়ার সিএনজির ড্রাইভার হারুন। জানা যায়, মূলত এরপর থেকেই প্রায় সময় এলাকার বাইরে থাকেন ইউছুফ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক বৃদ্ধা বলেন তার দালালির কারণে এলাকাবাসী অতিষ্ঠ হয়ে তাকে এলাকা ছাড়া করেন।

উখিয়ার কুতুপালং স্টেশনে ইউছুফের একাধিক দোকান আছে বলে সূত্রে জানা গেছে। চাঁদাবাজি, হয়রানি ও মানুষকে জিম্মি করে ইউছুফ এখন কোটি টাকার মালিক। একাধিক ব্যাংকের একাধিক অ্যাকাউন্টে তার টাকা জমা হয়। প্রশাসন এসব খতিয়ে দেখলে সঠিক তথ্য বেরিয়ে আসবে বলে মনে করছেন সচেতন মহল।

সূত্র জানায়, ইউছুফ আলী ট্রাফিক পুলিশ ও হাইওয়ে পুলিশেরও দালালি করে থাকেন। দালালি এবং মানুষকে ব্ল্যাক-মেইল করে সম্পদের পাহাড় গড়েছেন ইউছুফ। সাধারণ মানুষের পাশাপাশি বিভিন্ন যানবাহনের চালকও তার বিরুদ্ধে ‘হয়রানির’ অভিযোগ করেছেন।

উক্ত অভিযোগের বিষয়ে ইউছুফের সাথে মুঠোফোনে একাধিক বার যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। 

তথ্য সুত্রে জানা যায়, ইউছুফ আলীর এসব অপকর্মের বিরুদ্ধে স্থানীয় ও জাতীয়সহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হলেও কোন অদৃশ্য শক্তির কারণে এখনো প্রশাসনের নজরে আসেনি সে চাঁদাবাজ ইউছুফ। 

আমাদের কাছে তথ্য এসেছে, ইউসুফ আলীর নেতৃত্বে ইউসুফের বোনের বাসায় মাদকের আসর,জুয়ার বোর্ড বসানো হয়। যেখানে প্রতিদিন লেনদেন হয় লক্ষ লক্ষ টাকা। ইউসুফের ভয়ে প্রশাসনের লোকজনও নিরুপায় বলে জানা যায়।

নিচে দৈনিক স্বপ্নের বাংলা’য় সাম্প্রতিক প্রকাশিত সংবাদ এর পর

সাংবাদিক পরিচয় দেওয়া ল্যাংটা ইউসুফের পোস্টে শত ভুল ( প্রকাশ: ০৫ মার্চ ২০২৩)

বয়স চল্লিশ কি পঁয়তাল্লিশ। এই জীবনে অর্জণ করেছেন নানা কুখ্যাতি। সকল কুখ্যাতি আড়াল করতে নিজ জেলা বান্দরবান থেকে সমাজচ্যুত হয়ে বসবাস শুরু করেন কক্সবাজার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে। সেখানেও নিজ অপকর্মের ভার সইতে না পেরে স্থান পরিবর্তন করে চলে আসেন চট্টগ্রাম বদ্দারহাটে। কিন্তু চট্টগ্রামেও শান্তি মিলছে না এই লোকের। বিভিন্ন মিডিয়ার জ্বালাতনে অতিষ্ঠ তার জীবন। তাইতো সকল সাংবাদিকদের চোখ ভিন্ন দিকে প্রভাবিত করতে নিজেই সাংবাদিক হিসেবে বনে গেছেন। অবৈধ অর্থের জোরে তিনি এখন মস্ত বড় সাংবাদিক। তার অপকর্মের বিষয়ে সাংবাদিকরা জানতে চাইলে দেন চাঁদাবাজির অপবাদ। দেখান সাংবাদকিতার ক্ষমতাও। বলছি নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নের তুমব্রু উত্তর পাড়া এলাকার বদিউর রহমানের ছেলে ইউসুফ আলীর কথা। যার বিরুদ্ধে একাধিক পত্রিকায় ভিন্ন ভিন্ন সময়ে অপকর্মের সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন হল হঠাৎ ৪৫ বছর পর তিনি কিভাবে সাংবাদিক হলেন? জানা যায়, তার কোন প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নেই। তার সংবাদ লেখা তো দূরের কথা নিজের স্বাক্ষরার জ্ঞানটুকুও নেই। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সাংবাদিক বলেন, ইউসুফ একাধিক মামলার আসামী এবং একাধিক বউয়ের স্বামী। এমনকি তিনি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে রোহিঙ্গা নারী বিয়ে করেছেন। তিনি অবৈধ অর্থের বিনিময়ে নিজেকে সাংবাদিক পরিচয় দেন। এটি লজ্জার। এখনই সময় তাকে প্রশাসনের দোর গোড়া পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া। অন্যথায় তিনি সাংবাদিকদের জন্য বড় ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াবে।

গত ২২ জানুয়ারি এক ফেসবুকে স্ট্যাটাসে বানান ভুল করেছেন ইউসুফ। জানা যায়, তাঁর প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা না থাকায় ভয়েসে লিখেন এসব স্ট্যাটাস। আর এ কারণেই ছোট্ট স্ট্যাটাসে শত ভুল করেন তিনি। এ বিষয়ে তার মুঠোফোনে মতামত জানতে চাইলে তিনি বলেন, তিনি কখনো ভুল লিখেন না। তিনি এসএসসি পাশ করে সাংবাদকিকতা করছেন। তার দাবি তিনি যোগ্যতাবলে দৈনিক আমাদের মাতৃভূমি পত্রিকার বান্দরবান জেলার প্রধান ব্যুরো এবং জাতীয় সাংবাদিক সংস্থা চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক হয়েছেন।

ফেসবুকে দেয়া তার স্ট্যাটাসটি হুবহু তুলে ধরা হলো:

আমি ও আমার পরিবারকে নিয়ে যারা মিথ্যা অপবাদ দিয়ে যাচ্ছে তাদের কে আইনের আওতায় আনা হওক। কারণ আমার পরিবার একটি ভাল পরিবার।আমার মা বতমানে ৩ ঘুমধুম১,২,৩ ওয়ড়ের মহিলা মেম্বার। এবং আমি একজন দৈনিক আমাদের মাতৃভূমি পত্রিকার বান্দরবান জেলার প্রধান বুরো চিপ ও দৈনিক একাত্তর সংবাদ পত্রিকার চট্টগ্রাম জেলার বাতা সম্পাদক ও জাতীয় সাংবাদিক সংস্হার চট্টগ্রাম বিভাগের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ও তুমব্রু ভাজাবুনিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহ সভাপতি এবং একজন সিনিয়র ব্যবসায়ি।

নিচের লিংকে ক্লিক করলে সরাসরি ইউসুফের স্ট্যাটাসটি দেখা যাবে: https://www.facebook.com/100089073362351/posts/pfbid0LT9EEnChnet4CrYYUmJF6vgPSeVkRUmKHW2Vd4b38w5wUABkpfoHc4R9YNHD7Sacl/?app=fbl

দৈনিক স্বপ্নের বাংলায় সংবাদ প্রকাশের জেরে সাংবাদিকতা হারালেন ল্যাংটা ইউসুফ!- (১০ মার্চ ২০২৩)

‘সাংবাদিক পরিচয় দেওয়া ল্যাংটা ইউসুফের পোস্টে শত ভুল’-শিরোনামে গত ৫ মার্চ দৈনিক স্বপ্নের বাংলা’তে সংবাদ প্রকাশের পর সংবাদপত্রের সকল পদ হারালেন ইউসুফ আলী। 

জানা যায়, দৈনিক স্বপ্নের বাংলাতে সংবাদ প্রকাশের পর ইউসুফের বিষয়ে তদন্তে নামে দৈনিক একাত্তর সংবাদ ও জাতীয় সাংবাদিক সংস্থা চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিটি। উভয় প্রতিষ্ঠান তদন্তে সত্যতা পেয়েছে। তাই বৃহস্পতিবার (৯ মার্চ) রাতে উভয় প্রতিষ্ঠান তাকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি প্রদান করেন। ইউসুফ আলীর  তথ্য মতে তিনি দৈনিক একাত্তর সংবাদের বার্তা সম্পাদক এবং জাতীয় সাংবাদিক সংস্থা চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিটি সহ-সাংগঠনিক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। কিন্তু আজ উভয় প্রতিষ্ঠান তাকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি প্রদান করেছেন। উভয় প্রতিষ্ঠান বলেছেন, ইউসুফ আলীর অপকর্মের দায় তাদের প্রতিষ্ঠান নিবেন না। ইউসুফ আলীর অপকর্ম ইউসুফ আলীর ব্যক্তিগত।

অপকর্ম ও বহিষ্কারের বিষয়টি সুস্পষ্ট জানতে চাইলে দৈনিক একাত্তর সংবাদের সম্পাদক সুমন সেন বলেন, ইউসুফ আলীর অপকর্ম আমাদের অজানা ছিল। আমি তাকে ভালো ব্যক্তি মনে করেই প্রতিষ্ঠানে কাজ করার সুযোগ দেই, অন্তত যেন ডাল ভাত খেয়ে দিন কাটাতে পারে। কিন্তু দৈনিক স্বপ্নের বাংলা সংবাদ প্রকাশ করার পর আমি বিষয়টি অনুসন্ধান করি। তদন্ত করে দেখলাম তার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ আনা হয়েছে তা শতভাগ সত্যি। আমিও আর দেরি করিনি তাকে সাথে সাথে পত্রিকা হতে বহিষ্কার করেছি।

জাতীয় সাংবাদিক সংস্থা চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিটির সভাপতি ফৌজুল আজাদ চৌধুরী বলেন, আমরা তাকে বহিষ্কার করেছি, এই মুহূর্ত থেকে তার সাথে আর আমাদের কোন সম্পর্ক নাই।


আরো পড়ুন