• শনিবার, ১১ মে ২০২৪, ০৮:৫৭ পূর্বাহ্ন

মানুষের ন্যূনতম চাহিদা পূরণের দায়িত্ব রাষ্ট্রের: প্রধান বিচারপতি

/ ১৬৩ বার পঠিত
আপডেট: সোমবার, ৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

একজন মানুষের ন্যূনতম চাহিদা পূরণ (মিনিমাম রিকুয়্যারমেন্ট ফুলফিল) করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী। রোববার (৫ ফেব্রুয়ারি) প্রয়াত বিচারপতি এফ আর নাজমুল আহসানের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে সুপ্রিম কোর্ট অডিটোরিয়ামে ‘স্বরণসভা ও স্মারক গ্রন্থের প্রকাশনা’ অনুষ্ঠানে তিনি এ মন্তব্য করেন।

হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী বলেন, প্রয়াত বিচারপতি নাজমুল আহসান ছাত্রজীবনে ছাত্র ইউনিয়ন বা কমিউনিস্ট পার্টি করতেন, তা আমরা জানি। ছাত্র ইউনিয়ন বা কমিউনিস্ট পার্টির তাত্ত্বিকতার দিকে আমি যাচ্ছি না।

এটাও বলতে চাচ্ছি না যে, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে যেখানে ৯০ শতাংশ মানুষ মুসলমান, সেখানে কমিউনিজমের গ্রহণযোগ্যতা কতটুকু। সেটাও তাত্ত্বিকতা বা প্র্যাকটিসের ব্যাপার। কিন্তু উনি কেন ছাত্রজীবনে ছাত্র ইউনিয়ন বা কমিউনিস্ট পার্টি করতে গেলেন? আমার কাছে যেটা মনে হয় সাধারণ মানুষের, অতি সাধারণ মানুষের প্রতি তার যে প্রচণ্ড মমত্ববোধ, যদি তাদের জন্য কিছু করা যায়, যদি সমাজে বিবর্তন বা পরিবর্তন আনা যায়। ’
প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘যাতে করে অন্তত মিনিমাম যে রিকুয়্যারমেন্ট (ন্যূনতম চাহিদা বা প্রয়োজনীয়তা) মেটাতে সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কনস্টিটিশনাল (সাংবিধানিক) গ্যারান্টি দেওয়া হোক বা না দেওয়া হোক, একজন মানুষের মিনিমাম রিকুয়্যারমেন্ট ফুলফিল (ন্যূনতম চাহিদা বা প্রয়োজনীয়তা পূরণ) করার দায়িত্ব রাষ্ট্রের। যখন উনি (বিচারপতি নাজমুল আহসান) এসব দেখেছেন, আমার যেটা মনে হয়, রাষ্ট্র এসব বিষয়ে নিশ্চয়তা দিতে পারছে না, আমি আজও পত্রিকায় দেখলাম কতজন পাঁচ হাজার কোটি টাকার মালিক- এ রকম একটি তালিকা। কতজন ব্যক্তি এ রকম কত হাজার কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। ’

হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী বলেন, ‘বিচারপতি নাজমুল আহসান হয়তো ভাবতেন দেশটা এ কারণে স্বাধীন হয়নি। দেশটা স্বাধীন হয়েছে একটা লক্ষ্য নিয়ে, সেটা হচ্ছে গ্রামে-গঞ্জের সাধারণ মানুষ, বস্তির মানুষ, তাদের মিনিমাম যে রিকুয়্যারমেন্ট, তাদের থাকা, খাওয়া, অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থানের সংস্থান করা। এটা যাতে পূরণের ব্যবস্থা রাষ্ট্র করে, কমিউনিজম, সোভিয়েত ইউনিয়নের মতো, চায়নার মতো বা কিউবার মতো বাংলাদেশ সাকসেসফুল হবে কি না, তা আমি জানি না। কিন্তু উনি (বিচারপতি নাজমুল আহসান) ভাবতেন উনার সঙ্গে মিশে আমার যেটা মনে হয়েছে, মানুষের জীবনের জন্য মিনিমাম ব্যবস্থাটাও যদি করা যায়, তাহলে আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রাম, এ রক্তদানটা সাকসেসফুল হবে। এসব ভিউ (দৃষ্টিভঙ্গি) থেকেই তিনি হয়তো ছাত্র ইউনিয়ন বা কমিউনিস্ট পার্টি করতেন। ’

প্রধান বিচারপতি আরও বলেন, ‘আমার বড় দুর্ভাগ্য। ২০২১ সালের শেষের দিকে আমি চট্টগ্রাম যায়, সেটা হয়তো ডিসেম্বরের ২৪ বা ২৫ তারিখ হবে। তার আগে আমি বুঝতে পারছিলাম আমাকে হয়তো ২৩তম প্রধান বিচারপতি করা হতে পারে। যাইহোক আমি প্রধান বিচারপতি হলাম, আর উনার আপিল বিভাগের বিচারপতি হিসেবে জিও (সরকারি আদেশ) হলো। কিন্তু আমি উনাকে শপথ পড়াতে পারিনি। আমি মনে করি, বিচারপতি নাজমুল আহসান একজন সাকসেসফুল মানুষ ছিলেন। উনি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন। একজন মানুষের যা পাওয়া উচিত, আমি মনে করি উনি ততটুকুই পেয়েছেন। আমরা তার রুহের আত্মার মাগফিরাত কামনা করি। তিনি অনেক ঐতিহাসিক জাজমেন্ট (রায়) দিয়েছেন। সেগুলো সম্পর্কে আপনারাও জানেন। তার ঐতিহাসিক জাজমেন্টের মাধ্যমে তিনি আমাদের মাঝে বেঁচে থাকবেন। ’

স্মরণসভার শুরুতে প্রয়াত বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহসানের সহধর্মিণী নিলুফা সামসুন্নাহার সূচনা বক্তব্য উপস্থাপন করেন। এসময় তিনি প্রয়াত বিচারপতি এফ আর নাজমুল আহসানের দেওয়া উল্লেখযোগ্য কিছু রায়ের কথা তুলে ধরেন। সেগুলো হলো- জয় বাংলাকে জাতীয় স্লোগান হিসেবে ঘোষণা, দেশের সব আদালতকক্ষে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি প্রদর্শনের নির্দেশ, ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণকে পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্তিকরণ, নমিনি ও উত্তরাধিকারীদের মধ্যে সৃষ্ট বিরোধ নিরসন (মৃত ব্যক্তির টাকা নমিনি পাবে প্রসঙ্গে), দীর্ঘদিন কারাভোকারী ভুল আসামি জাহালমের মুক্তি ও তার ক্ষতিপূরণ, গ্রিন লাইন বাসের চাপায় পা হারানো রাসেলকে ক্ষতিপূরণ, চোখ হারানো ভিকটিমকে ক্ষতিপূরণ ইত্যাদি। স্মরণসভায় আলোচকরা মরহুম বিচারপতির কর্মময় জীবনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন।

অনুষ্ঠানে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে নিয়োগ পেলেও শপথ নিতে না পারা প্রয়াত হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি এফ আর নাজমুল আহসান স্মরণে স্মারক গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন করা হয়।


আরো পড়ুন