• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ০২:১৪ অপরাহ্ন

হিলিতে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে কর্মচারী নিয়োগঃ প্রকাশিত সংবাদের অভিযোগ সত্য প্রমাণিত হয়েছে

/ ১৫৫ বার পঠিত
আপডেট: বৃহস্পতিবার, ১২ জানুয়ারি, ২০২৩

গোলাম রব্বানী হিলি প্রতিনিধি:
দেশের শীর্ষ স্থানীয় ও পাঠক প্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল ” সংবাদ টিভি” এ ( হিলিতে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে নিয়োগ বাণিজ্যসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ) শিরোনামে গত ২৬ ডিসেম্বর-২০২২ সালে সংবাদ প্রকাশের পরে দিনাজপুরের হাকিমপুর (হিলি) উপজেলার কোকতাড়া দ্বিমুখী উচ্চবিদ্যালয়ের নিয়োগ পরীক্ষা নিয়ে শুরু হয় লুকোচুরি খেলা। পাতানো নিয়োগ পরীক্ষা সম্পূর্ণ হওয়ার মধ্যে দিয়ে সবশেষে প্রকাশিত সংবাদের অভিযোগ সত্য প্রমাণিত হয়েছে।

জানা গেছে, বিদ্যালয়টিতে গত ৩ অক্টোবর-২০২২ নিয়োগ বিজ্ঞপ্তী ও ম্যানেজিং কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক (অফিস সহায়ক, নিরাপত্তা কর্মী ও আয়া) তিনটি পদে গত ২৭ ডিসেম্বর মঙ্গলবার নিয়োগ পরীক্ষা নিয়ে শুরু হয় লুকোচুরি খেলা এবং বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকসহ সংশ্লিষ্টদের ভিন্ন ভিন্ন বক্তব্য। সবশেষে প্রকাশিত সংবাদে অভিযুক্ত ব্যক্তিরা বিদ্যালয়ের অফিস সহায়ক পদে সাদুড়িয়া গ্রামের জনৈক রঞ্জিত সাহার ছেলে (চৌদ্দ লাখ, নিরাপত্তা কর্মী পদে ভাটরা গ্রামের আব্দুস সাত্তার এর ছেলে মিঠুন সরকার (বারো লাখ) ও আয়া পদে বিদ্যালয়ের অফিস সহকারী রুমি আক্তারের ভাগ্নী ত্বাকী আক্তার (১২ লাখ) টাকার বিনিময়ে চূড়ান্ত নিয়োগ পেয়ে বিদ্যালয়ে যোগদান করেছেন। এলাকার সচেতন মহল এই পাতানো নিয়োগ পরীক্ষা বাতিলসহ সরজমিনে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন।

অভিযোগ রয়েছে গত ২৭ ডিসেম্বর বিদ্যালয়টির কর্মচারী নিয়োগ পরীক্ষার ভেনু নির্ধারণ করা হয়েছিল উপজেলার বাংলাহিলি সরকারি বালিকা বিদ্যালয়। সেই মোতাবেক আবেদনকারীদের প্রধান শিক্ষক স্বাক্ষরীত চিঠি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু ওইদিন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শহিদুল ইসলাম ও সভাপতি সুমন মন্ডলের পছন্দের প্রার্থীদের চুড়ান্ত নিয়োগ দেওয়ার জন্য গোপনে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সভা কক্ষে পাঠানো নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়।

নিয়োগ পরীক্ষা বিষয়ে হাকিমপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. শ্যামল কুমার দাসের নিকট জানতে চাইলে তিনি জানান, কোন বিদ্যালয়ের নিয়োগ পরীক্ষা হাসপাতালের সভা কক্ষে অনুষ্ঠিত হওয়ার কোন সুযোগ নেই এবং নিয়োগ বিষয়ে পূর্বে কেউ আমাকে জানা- ইনি। তবে ঘটনার দিন হাসপাতালের সভা কক্ষে অপরিচিত লোকজন বসেছে এমন খবর পেয়ে আমার বিশ্বস্ত লোক এর মাধ্যমে খবর নেই। সে আমাকে বলে হাসপাতালের সাথে সংশ্লিষ্ট একজনের সহযোগিতায় আমার অজান্তেই কিছু অপরিচিত লোক বসে ছিলো এবং তারা অল্প সময়ের মধ্যে সেখান থেকে চলে যায়। এর বেশি কিছু আমি বলতে পারবো না বা জানি না।

গোপনে নিয়োগ বোর্ড ও পরীক্ষার বিষয়ে মুঠো ফোনে (০১৭৩৮১৮৫৪৩৪) উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার বোরহান উদ্দিনের নিকট জানতে চাইলে তিনি জানান, ওইদিন (২৭ ডিসেম্বর) দুপুর দুইটা পর্যন্ত বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও সভাপতি কেহ আমার সাথে যোগাযোগ করে নাই। সেহেতু নিয়োগ বোর্ড ও পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার প্রশ্ন আসে না এবং আজকে নিয়োগ বোর্ড ও পরীক্ষা হওয়ার কোন সুযোগ নেই আপনি নিশ্চিত থাকেন। পরবর্তীতে তিনি তার নিজ অফিস বসে নিয়োগ বোর্ড ও পরীক্ষার যাবতীয় কাগজে স্বাক্ষর করে দেন বলে অভিযোগ রয়েছে। গত ২৯ ডিসেম্বর তার শেষ অফিস এবং ৩১ ডিসেম্বর (শনিবার) তিনি চাকুরী থেকে অবসর গ্রহণ করেন। পরবর্তীতে তাকে আর মুঠো ফোনে পাওয়া যায়নি এবং তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

গোপন ও পাতানো নিয়োগ বোর্ড ও পরীক্ষা বিষয়ে বাংলাহিলি সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক (ডিজি প্রতিনিধি) গোলাম কিবরিয়ার নিকট জানতে চাইলে তিনি জানান, ওই দিন (২৭ ডিসেম্বর) বিকেল সাড়ে চারটা পর্যন্ত তিনি বলেন, আজকে এই বিদ্যালয়ে কোন নিয়োগ বোর্ড বা পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় নাই। এরপর ওই দিন সন্ধ্যায় মুঠোফোনে (০১৭১৪-৬০০৭৫৬) নিয়োগ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, আমি তো বলেছি কোন পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় নাই। দুই দিন পরে অর্থাৎ ২৯ জানুয়ারি মুঠোফোনে তার নিকট সর্বশেষ খবর জানতে চাইলে তিনি জানান, সব উপরের নির্দেশে হয়েছে! তবে আমি চুড়ান্ত শীটে স্বাক্ষর করি নাই। পরীক্ষা কেন্দ্র বিষয় জানতে চাইলে তিনি সঠিক উত্তর না দিয়ে ফোন বন্ধ করে দেন। মজার বিষয় হলো তিনিও ২৯ জানুয়ারি চাকুরী থেকে অবসর গ্রহণ করেন। তাই পরবর্তীতে আর তাকে মুঠো ফোনে পাওয়া যায়নি এবং বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি!

এবিষয়ে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শহিদুল ইসলামের নিকট মুঠোফোনে (০১৭১৫-১৩৮৪১০) জানতে চাইলে তিনি জানান, নিয়োগ বোর্ড ও পরীক্ষা এসব জিনিস থেমে থাকে না। উপরের নির্দেশে সব কিছু সিষ্টেমে হয়েছে। নিয়োগ পরীক্ষা ভেনু সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি জানান, আমি তো বললাম! উপরের নির্দেশে সব কিছু সিষ্টেমে হয়েছে! আপনি দয়া করে বিদ্যালয়ের সভাপতি ও উপর মহলের সাথে কথা বলুন! আমি আর কিছু বলতে পারবো না।

বিদ্যালয়ের সভাপতি শ্রী সুমন মন্ডল নিকট নিয়োগ বোর্ড ও পরীক্ষা সম্পর্কে মুঠোফোনে (০১৭৪৫৮৫৬৩০৫) অনেক চেষ্টা করে তাকে পাওয়া যায়নি (শুধু ফোন সুইস অপ) দেখার কারণে তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয় নাই।
গোপনে এবং নিয়োগের পূর্বেই পাতানো নিয়োগ পরীক্ষা বাতিলসহ সরজমিনে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য শিক্ষামন্ত্রী, শিক্ষা সচিব ও জেলা শিক্ষা অফিসারসহ সংশ্লিষ্টদের সুদৃষ্টি কামনা করছেন এলাকার সচেতন মহল।


আরো পড়ুন