• শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৯:২৪ পূর্বাহ্ন

নির্যাতন ও প্রতারণার বর্ণনা দিলেন বিদেশফেরত শ্রমিকরা

/ ১১৪ বার পঠিত
আপডেট: শুক্রবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০২২

সৌদি আরব, দুবাই, ও লেবানন থেকে ফেরত আসা ১২ শ্রমিক তাদের ওপর নির্যাতনের ভয়াবহ অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিয়েছেন। বৃহস্পতিবার (২২ ডিসেম্বর) জাতীয় প্রেস ক্লাবে ‘মজুরি চুরি বিষয়ে অভিবাসী শ্রমিকদের গণসাক্ষ্য’ অনুষ্ঠানে বিদেশফেরত শ্রমিকরা তাদের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন।

রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্ট রিসার্চ ইউনিট (রামরু) এবং মাইগ্র্যান্ট ফোরাম ইন এশিয়া (এমএফএ) এ গণসাক্ষ্য অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।

অনুষ্ঠানে শ্রমিকরা স্থানীয় দালাল ও রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে প্রতারিত হওয়ার অভিযোগ করেন। বিদেশ যাওয়ার পর নিয়োগের শর্ত অনুযায়ী ছুটি না দেওয়া, যখন-তখন বেতন কমানো, বিমা, চিকিৎসা, পরিবহন খরচ ও দক্ষতা বাড়ানোর প্রশিক্ষণের নামে বেতন কাটার কথা জানান তারা।

এ সময় শ্রমিকরা জানান, মালিকরা চাকরি, মজুরি ও সুযোগ-সুবিধার ক্ষেত্রে প্রবাসী শ্রমিকদের যেসব শর্ত রয়েছে তা মানেননি। শারীরিক নির্যাতন, না খেয়ে দিন কাটানো, আট ঘণ্টার জায়গায় ১৮ থেকে ১৯ ঘণ্টা কাজ, মাসের পর মাস বেতন না পাওয়া, পরিবারের কাছ থেকে টাকা নিয়ে দেশে ফিরে আসার ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা জানান তারা।

অনুষ্ঠানে বিদেশ ফেরত এক নারী শ্রমিক কষ্টের কথা তুলে ধরে বলেন, আমাকে মেডিকেল ভিসার কথা বলে কুমিল্লা ওভারজিসের মাধ্যমে সৌদি আরবে পাঠানো হয়। দেড় লাখ টাকা খরচ করে সেখানে গিয়ে গৃহকর্মীর কাজ করেছি। মাসের পর মাস কাজ করে বেতন পাইনি। মালিক আমাকে ঠিকমতো খাবার ও ঘুমাতে দিত না। আমাকে ১৮ ঘণ্টা পর্যন্ত কাজ করতে হয়েছে।

তিনি বলেন, অনেক কষ্টে দেশে ফিরে আসি। এরপর কুমিল্লা ওভারসিজের মালিকের বিরুদ্ধে বিএমইটিতে অভিযোগ করি। কিন্তু ক্ষতিপূরণ হিসেবে মালিক মাত্র ৩০ হাজার টাকা দিয়েছেন। আজও বাকি টাকা পাইনি।

আর এক নারী কর্মী বলেন, ২৫ হাজার টাকা খরচ করে বিদেশে গিয়ে এক মাস কাজ করেছিলাম। কোনো বেতন পাইনি। দিনে মাত্র দুটি রুটি খাবার দিতো। দালাল চক্রের সদস্যরা আমাকে একটি কক্ষে আটকে রেখে নির্যাতন করেছে। পরিবারের কাছে ফোন করে তিন লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেছে। পরিবার থেকে ২৫ হাজার টাকা নিয়ে বিমানের টিকিট কেটে দেশে ফিরে এসেছি।

অনুষ্ঠানে প্রবাসী শ্রমিকদের মজুরি চুরি ধারণাপত্র পড়ে শোনান অভিবাসন বিষয়ক গবেষণা প্রতিষ্ঠান রামরুর নির্বাহী পরিচালক সি আর আবরার।

তিনি বলেন, ২০২১ ও ২০২২ সালে ফিলিপাইন, ভারত, নেপাল, শ্রীলঙ্কা ও বাংলাদেশে বিভিন্ন সংস্থার করা গবেষণায় প্রবাসী শ্রমিকদের মজুরি চুরির বিষয়টি উঠে এসেছে। গবেষণার ভিত্তিতে আমরা বলছি, এটা একটা কাঠামোগত মজুরি চুরি। ২০২১ সালে গ্লোবাল কমপ্যাক্ট অন মাইগ্রেশন স্বাক্ষরিত হয়, যা এখন পর্যন্ত অভিবাসনের সবচেয়ে বড় চুক্তি। সেখানে প্রতিবেদনের দুটি জায়গায় মজুরি চুরির বিষয় উঠে আসে, যা একটা সমস্যা হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে।

ধারণাপত্রে বলা হয়, মৃত্যুর পরও প্রবাসী শ্রমিকদের মজুরি এবং প্রাপ্য অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়। এ ধরনের অভিযোগ করতে যে আইনি খরচ প্রয়োজন, সেটি তারা বহন করতে পারেন না। এ জন্য অনেকেই অভিযোগ করেন না।

আলোচনায় অংশ নেন প্রেস কাউন্সিলের চেয়ারম্যান অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি নিজামুল হক নাসিম। তিনি বলেন, ঢাকায় ২০ হাজার টাকা বেতনের চুক্তিতে বিদেশে গিয়ে তিনি বেতন পান মাত্র ১০ হাজার টাকা। কম টাকায় কাজ করতে না চাইলে পাসপোর্ট কেড়ে নেওয়া হয়। পরে ওই শ্রমিককে অবৈধ হয়ে গ্রেপ্তার হতে হয়। সরকারের এ বিষয়ে চিন্তা করতে হবে।


আরো পড়ুন