• রবিবার, ১২ মে ২০২৪, ০৮:১৪ অপরাহ্ন

নওগাঁয় ধান কাটতে শ্রমিক সংকট, বিপাকে কৃষক; জন প্রতি মজুরি ৭০০-৯০০ টাকা!

রহমতউল্লাহ আশিক, নওগাঁ প্রতিনিধি / ১১৬ বার পঠিত
আপডেট: বৃহস্পতিবার, ১২ মে, ২০২২

নওগাঁর কৃষকেরা শ্রমিক সংকটের কারণে মাঠ থেকে ধান ঘরে তুলতে হিমসিম গুনতে হচ্ছে  অতিরিক্ত মজুরি । এদিকে কিছু দিন ধরে বৈরি আবহাওয়া শিলা বৃষ্টি, ঝড়ে ধান মাটিতে নুইয়ে পড়ার কারনে অতিরিক্ত মজুরি ও শ্রমিক সংকট এ নওগাঁ বিভিন্ন উপজেলার কৃষকেরা।ধান কাটাতে জন”প্রতি মজুরি দিতে হচ্ছে -৮০০ থেকে ৯০০ টাকা”।
ঝড়ে নুইয়ে পড়ায় অধিকাংশ মাঠের ধান। অনেক খেতে পানি জমে গেছে। এ অবস্থায় আকাশে মেঘ দেখলেই মাঠের নুইয়ে পড়া পাকা ধান ঝড়-বৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কায় শঙ্কিত হয়ে পড়ছেন কৃষকেরা। স্থানীয় কৃষকেরা বলছেন, মাঠের ধান পেকে গেছে। কিন্তু শ্রমিকের অভাবে তাঁরা ধান কাটতে পারছেন না।
বিশেষ করে বদলগাছী  নিয়ামতপুর উপজেলার ছাতড়ার বিল, মান্দার ঠাকুরমান্দা, আন্দাসুরা, নওগাঁ সদরের বিল মনসুর, হাঁসাইগাড়ী, সরইল, দিঘলীর বিলসহ বিভিন্ন নিম্নাঞ্চলে যেসব কৃষক ধান আবাদ করেছেন, তাঁরা সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন। কারণ সামন্য বৃষ্টিতেই বিলের ধান ডুবে যায়।জেলায় ঈদের দিন থেকে প্রায় প্রতি দিনই থেমে থেমে বৃষ্টিপাত হচ্ছে। অনেক জমিতে পানি জমে-আরেকটু বৃষ্টি হলেই অনেক মাঠের ধান পানিতে তলিয়ে যাবে বলে শংঙ্কায়  দিন কৃষক দের। এ অবস্থায় আকাশে মেঘের আনাগোনা দেখলেই শঙ্কিত হয়ে পড়ছেন তাঁরা।
নওগাঁ সদর উপজেলার হাঁপানিয়া, বর্ষাইল, দুবলহাটি,মহাদেবপুর,বদলগাছী উপজেলার উত্তরগ্রাম, চান্দাশ, নিয়ামতপুর উপজেলার চন্দননগর, মান্দার ভালাইনসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে জেলার প্রায় সব জায়গায়, এখানো হাজারো একর জমির পাকা ধান মাঠে পড়ে আছে। শ্রমিকের অভাবে এসব ঘরে তুলতে পারছেন কৃষকেরা। অনেক কৃষক পরিবারের সদস্য নিয়ে ধান কাটা ও মাড়াইয়ের কাজ করছেন। গত তিন-চার দিন ধরে নওগাঁর সদরের হাঁপানিয়া বাজার ও দুবলহাটি বাজার, মহাদেপুরের, মাতাজিহাট,  বদলগাছী ও নিয়ামতপুরের ছাতড়া বাজারে গৃহস্থদের ভিড় আর স্থানীয় এবং অন্য জেলা থেকে আসা শ্রমিকদের নিয়ে টানাটানির চিত্র চোখে পড়ে।
নিয়ামতপুর উপজেলার ছাতড়া ‘ছাতড়া বিলে এবার তিনি ১৪ বিঘা জমিতে ধান লাগিয়েছিলাম। এক সপ্তাহ আগে খেতের সব ধান প্যাকে গেছে। কিন্তু শ্রমিক না পাওয়ার কারণে এক বিঘা জমির ধানও ঘরে তুলতে পারিনি। অন্য বছর বাইরের জেলা থেকে অনেক শ্রমিক আসে। গত দুই বছর করোনার সময়েও শ্রমিকের এতো সংকট হয়নি। কিন্তু এবার বাইরের জেলা থেকে শ্রমিক এসেছে খুব কম। স্থানীয় শ্রমিক থাকলেও তাঁরা যেসব কৃষকের ধান কাটার চুক্তি নিয়েছেন সেগুলোই কেটে শেষ করতে পারছে না। এদিকে খেতের ধান ডুবে যেতে বসেছে। ধান নিয়ে এবার মহা বিপাকে পড়েছি।’
বদলগাছী উপজেলা এলাকার বেশ কয়েকজন কৃষকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, “গত বছর ধানকাটা শ্রমিকদের বিঘা প্রতি মোট ধানের ২০-২৫ শতাংশ দিলেই হতো”। এতে প্রতি বিঘা জমির ধান কাটা বাবদ খরচ পড়তো প্রায় আড়াই থেকে তিন হাজার টাকা। কিন্তু এবার এপ্রিল মাঝামাঝি সময়ে হয়ে যাওয়া কালবৈশাখী ঝড়ে খেতের ধানগাছ নুইয়ে পড়ায় ধান কাটতে বেশি শ্রম লাগায় ধানকাটা শ্রমিকেরা মোট “ধানের ৩৫-৪০ শতাংশ  দিতে হচ্ছে”। কৃষকেরা তাঁদের দাবি অনুযায়ী ধান কাটতে চুক্তিবদ্ধ হচ্ছেন। এতে এ বছর এক বিঘা জমির ধান কাটতে প্রায়  পাঁচ  থেকে ছয় হাজার টাকা খরচ হচ্ছে।
জেলার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক শামসুল ওয়াদুদ এর তথ্য মতে- মাঠের ৭০ শতাংশ ধান পেকে গেছে। আমরা কৃষকদের দ্রুত মাঠের ধান কেটে ফেলার পরামর্শ দিচ্ছি। কিন্তু শ্রমিক সংকটের কারণে কৃষকেরা ধান কাটতে পারছেন না এমন কথা শোনা যাচ্ছে। বাইরের জেলার শ্রমিক কম আসায়  এ শ্রমিক সংকট দেখা দিয়েছে। ধান কাটার ভরা মৌসুমে ঈদ উৎসবের কারণে বাইরের শ্রমিকেরা আসতে পারেননি। তবে আশা করা যাচ্ছে, আগামী দুই-তিন দিনের মধ্যে বাইরে থেকে পর্যাপ্ত শ্রমিক চলে আসবে। আগামী এক-দুই সপ্তাহের মধ্যে ঝড়-বৃষ্টি না হলে কোনো ক্ষয়ক্ষতি ছাড়াই মাঠের ধান কাটা হয়ে যাবে।


আরো পড়ুন