• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১১:৫৯ অপরাহ্ন

সিলেট শাবিপ্রবি শিক্ষাঙ্গন টি যুদ্ধস্থানে পরিনত অতপর অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ

মোঃ আক্তার হোসেন সিলেট প্রতিনিধি / ১৬২ বার পঠিত
আপডেট: মঙ্গলবার, ১৮ জানুয়ারি, ২০২২

শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ও সংঘর্ষের পর সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
রবিবার (১৬ জানুয়ারি) রাতে জরুরি সিন্ডিকেট সভা শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ আনোয়ারুল ইসলাম সাংবাদিক কে জানিয়েছেন।
তিনি জানান, সোমবার দুপুর ১২টার মধ্যে শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া সিরাজুন্নেসা হলের প্রাধ্যক্ষ জাফরিন আহমেদ লিজা পদত্যাগ করেছেন। তার জায়গায় নতুন দায়িত্ব পেয়েছেন পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক নাজিয়া চৌধুরী।
এদিকে রবিবার রাত সোয়া নয়টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান বিশ্ববিদ্যালয়ের মুল ফটকে বিক্ষোভ করছে শিক্ষার্থীরা। তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের পদত্যাগ দাবি করে কাল হল না ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছেন।
এর আগে রবিবার (১৫ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় অবরুদ্ধ অবস্থা থেকে সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদকে তালা ভেঙে উদ্ধার করে পুলিশ। সন্ধ্যা পৌনে ৬টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. এমএ ওয়াজেদ মিয়া আইআইসিটি ভবনের তালা ভেঙে পুলিশি নিরাপত্তায় ভিসিকে বের করে আনা হয়। এ সময় বাধা দিলে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর লাঠিচার্জ করে পুলিশ।
এসময় আইআইসিটি ভবনের সামনে অবস্থান নেয়া শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ লাঠিচার্জ করে। শিক্ষার্থীরাও ইট-পাটকেল ছুড়তে শুরু করেন। একপর্যায়ে পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করলে শুরু হয় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া। শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে কয়েকটি রাবার বুলেটও ছোড়া হয়। এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রকল্যাণ উপদেষ্টা অধ্যাপক জহির উদ্দিন আহমেদ গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ, পুলিশ ও শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীসহ অন্তত ৪০ জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। পরে অ্যাম্বুলেন্সে করে আহত অন্তত পাঁচজনকে হাসপাতালে নিতে দেখা গেছে।
জানা যায়, সন্ধ্যা সোয়া ৬টা নাগাদ পুরো ক্যাম্পাসে ছড়িয়ে পড়েন পুলিশ সদস্যরা। বিক্ষোভকারীদের সরে গেলেও ক্যাম্পাসজুড়ে পরিস্থিতি থমথমে।
মহানগর পুলিশের উপকমিশনার আজবাহার আলী শেখ জানান, তিনিসহ পুলিশের অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন। কোষাধ্যক্ষও আহত হন।
আন্দোলনকারী কয়েকজন জানান, তাদের অন্তত ৩০ জন আহত হয়েছেন।
অধ্যাপক জহিরের বিষয়ে উপকমিশনার বলেন, পুলিশের গুলিতে তিনি গুলিবিদ্ধ হননি। ওই গুলি কারা ছুড়েছে তা তিনি জানেন না। অধ্যাপককে মাউন্ড এডোরা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ ঘটনায় এক নারী কনস্টেবলও গুলিবিদ্ধ হয়েছেন।
প্রত্যক্ষদর্শী শিক্ষার্থীরা জানান, আইআইসিটি ভবনে রোববার বেলা ৩টা ১০ মিনিটে অবরুদ্ধ হন উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদ। ভবনের বাইরে অবস্থান নিয়ে প্রাধ্যক্ষের পদত্যাগসহ তিন দফা দাবি আদায়ে স্লোগান দেন বেগম সিরাজুন্নেসা হলের ছাত্রীরা। তাদের সঙ্গে যোগ দেন সহপাঠীরাও। বেলা ৩টার দিকে আন্দোলরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী উপদেশ ও নির্দেশনা পরিচালক জহির উদ্দিন ও শিক্ষক সমিতির সভাপতি তুলসী কুমার দাস। তারা দাবি পূরণের বিষয়ে সময় চাইলে ছাত্রীরা তা প্রত্যাখ্যান করেন।
এরপর নিজ কার্যালয় থেকে বের হয়ে বাসভবনের দিকে যাচ্ছিলেন উপাচার্য। সে সময় তার সঙ্গে কথা বলতে এগিয়ে যান ছাত্রীরা। এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাকে ঘেরাও করে স্লোগান দিতে থাকেন তারা। একপর্যায়ে ছাত্রীদের ধাওয়ায় উপাচার্য আইআইসিটি ভবনে গিয়ে অবস্থান নেন। বিকেল ৪টার দিকে সেখানে পুলিশ সদস্যরা অবস্থান নিলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। তারা ‘ক্যাম্পাসে পুলিশ কেন’ বলে স্লোগান দিতে থাকেন।
এ ঘটনার পর কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক আনোয়ারুল ইসলাম ও অন্য শিক্ষকরা গিয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনার চেষ্টা করেন। উত্তেজনা বাড়তে থাকলে পুলিশ লাঠিচার্জ শুরু করে। এরপর শুরু হয় সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া।
উল্লেখ্য, তিন দফা দাবি আদায়ে চতুর্থ দিনের মতো চলছে সিরাজুন্নেসা হলের ছাত্রীদের এ আন্দোলন। শনিবার মধ্যরাতে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দিয়ে রোববার সকাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফটকের সামনে অবস্থান নেন তারা।


আরো পড়ুন