• বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪, ১১:৫০ পূর্বাহ্ন

ঈদ উপলক্ষে হিলি সীমন্তে দর্শনার্থীদের উপস্থিতি চোখে পড়ার মতো

/ ২০১ বার পঠিত
আপডেট: শুক্রবার, ৩০ জুন, ২০২৩

হিলি প্রতিনিধি:-

এপার বাংলাদেশ অপর পাশে ভারত। মাঝখানে সীমানা কাঁটা তারের বেড়া। তবুও ঈদের খুশি আনন্দ ভাগাভাগি করতে ভারতে থাকা স্বজনদের এক নজর দেখতে, দূর থেকে কথা বলতে ও বিভিন্ন স্থান থেকে সীমান্ত দেখতে আসা বিভিন্ন বয়সের দশনার্থীরা দিনাজপুরের হিলি সীমান্তে জড়ো হয়েছিল শতাধিক। সীমান্তে এসে সরাসরি কথা না বলতে পারলেও দুর থেকে স্বজনদের দেখে শান্তি খুঁজে নেন তারা। সীমান্তের জিরো পয়েন্টে ফটোসেশন করে আনন্দ উপভোগ করতে দেখা গেছে অনেক দর্শনার্থীদের। তবে এবার ঈদের ও ঈদের পরের সকালে এ এলাকায় গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি হওয়ায় বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত স্বজনদের চেয়ে দর্শনার্থীদের সংখ্যা চোখে পড়ার মতো। শত শত পার্স পোর্ট যাত্রী কেউবা চিকিৎসা কাজে, কেউবা আত্মীয়র বাড়ি বেড়াতে আবার কেউবা ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে ভারতে যেতে দেখা গেছে। অন্যদিকে ভারত থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ করতে দেখা গেছে শতাধিক পাসপোর্ট যাত্রীদের। ঈদের ছুটিতে ইমিগ্রেশনের অনেক লোকজন চলে যাত্রীদের দীর্ঘ লাইন দেখা গেছে। ফলে ইমিগ্রেশন ওসিকেও পাসপোর্ট এর কাজ করতে হিমসিম খেতে দেখা গেছে। অন্য দিনের তুলনায় আজ পাসপোর্ট যাত্রীর চাপ বেশি বলে জানান ইমিগ্রেশন ওসি।  

শুক্রবার  (৩০ জুন) সকালে এই এলাকায় গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি হওয়ার কারণে বিকেল থেকে সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত হিলি সীমান্তে শুন্যরেখা জড়ো হতে থাকে দর্শনার্থীরা। ঈদের দিন বিকেল থেকেই সীমান্তের শূন্য রেখায় ভিড় করতে থাকে দর্শনার্থীরা।এ এক অন্যরকম দৃশ্য। জড়ো হওয়া দর্শনাথীরা সীমানা ঘেঁষে দূরপাল্লার রেল লাইনে সেলফি তুলছেন।কেউ দুর থেকে দাঁড়িয়ে স্বজনদের সঙ্গে ইশারায় কথা বলছেন। আবার কেউ কাটা তারের বেড়ার এপার থেকে স্বজনদের এক নজর দেখে তৃপ্তি নিচ্ছে। বড়দের সঙ্গে ছোটরাও শামিল হয়েছিলেন এই ভিড়ে। 

হিলি স্থলবন্দরের দু-দেশের সীমান্ত শহরের নামেই হচ্ছে হিলি। দু-দেশের হিলি শহরের মাঝ দিয়ে রয়েছে রেললাইন। রেললাইনের এপার বাংলাহিলি আর ওপার ভারত হিলি।

বাংলাদেশ ও ভারতের নিকটবর্তী শহর হিলি হওয়ায় এই শহর দেখতে ছুটে চলে আসে অনেকেই। ঈদের দিন বিকেল থেকেই হিলি সীমান্তের চেকপোস্ট গেট এলাকায় ভিড় করেন দর্শনার্থীরা। শুধু ঈদের দিন পরের দিন নয় সাপ্তাহিক শুক্রবার ও শনিবার ছুটির দিনেও দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে যাত্রীবাহী বাস, প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস, মোটর সাইকেল, অটোরিক্সা, ভ্যানসহ বিভিন্ন যানবাহনের মাধ্যমে করে তারা এখানে আসেন।অপর দিকে ভারতের অভ্যন্তরের বিভিন্ন স্থান থেকে দর্শনার্থীরা আসেন ভারতের জিরোপয়েন্টে। তবে মুসলিম সম্প্রদায়ের ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা এবং হিন্দু সনাতন ধর্মাবলম্বীদের দুর্গা পূজায় দর্শনার্থী চোখে পড়ার মতো। ঈদের পরের দিন (আজও) তার ব্যতিক্রম কিছু নয়। 

সেখানে কথা হয় দিনাজপুর ফুলবাড়ী থেকে আসা মহাসিন নামের একজনের সঙ্গে। তিনি বলেন, আমার বাবার সাত ভাই। এরমধ্যে বাবা বাংলাদেশে থাকেন, বাকি চাচারা ভারতে। বেশ কিছুদিন ধরে তাদের সঙ্গে সরাসরি কথা হয়নি। ফেসবুক মেসেঞ্জার হোয়াটসঅ্যাপে কথা হয়। আজকে সরাসরি কথা বলতে না পারলেও দুর থেকে এক নজর দেখে নিজেকে খুব খুশি লাগছে।

সৈয়দপুর নীলফামারী থেকে আসা পাসপোর্ট যাত্রী আশিক বাবু বলেন, ঈদের ছুটিতে ওপারে (ভারত) যাচ্ছি মামার বাড়িতে। দীর্ঘ দিন থেকে যাওয়া হয়নি। আত্মীয় সম্পর্কটা মজবুত হবে সেই সাথে ভারতীয় অনেক দেখার মতো জায়গা আছে সেগুলো দেখবো। দশ বারো দিন থেকে নিজ বাংলাদেশে চলে আসবো। 

ভারতে চিকিৎসা নিতে যাওয়া বাংলাদেশী  পাসপোর্ট যাত্রী খুরশিদ আলম বলেন, আমার বাবার চিকিৎসার জন্য ভারতের চেন্নাই শহরে গিয়েছিলাম। সেখানকার চিকিৎসা সেবায় আমার বাবা অনেকটা সুস্থ। পনের দিন থেকে আজ বাবাকে নিয়ে দেশে ফিরলাম। এবারে ভারতে ঈদ করায় অভিজ্ঞতা ও আনন্দটা একটু অন্য রকম। 

পলাশবাড়ী থেকে আসা আসমতি রানী সীমান্তের কাটা তারের বেড়ার এপারে বাংলাদেশ অংশে দাঁড়িয়ে বলছে ও মাসি তুমি কেমন আছো। কতো দিন তোমাকে দেখতে পাই না। 

তিনি বলেন, আমার মাসি পিষি দুজনই স্ব পরিবারে ভারতে থাকে। অনেক দিন পর ঈদের ছুটিতে দূর থেকে হলেও মাসিকে  দেখতে ও কথা বলতে এসেছি। কাছে গিয়ে কথা বলতে পারলাম না দুর থেকে দেখেও ভালো লাগলো।

জয়পুরহাট এর আক্কেলপুর ও বগুড়া থেকে আসা দশনার্থী মাসুদ রানা ও সজল আহমেদ বলেন, ঈদের ছুটিতে ছেলে মেয়েদের বিনোদনের উদ্দেশ্যেই হিলি সীমান্ত এলাকা দেখতে এসেছি।এতদিন শুনেই এসেছি আজ অনেক কাছ থেকে আমরা ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত এলাকা ঘুরে দেখলাম পরিবারের সদস্যদের নিয়ে। সেখানে ঘুরে বেড়িয়েছি ও ছবি তুলেছি, সব মিলিয়ে খুব ভালো লাগলো এখানে এসে।

হিলি আইসিপি ক্যাম্পের ক্যাম্প কমান্ডার সুবেদার ইয়াসিন বলেন, সীমান্ত রক্ষার দায়িত্বে রয়েছি। দুই দেশের লোকজন ঈদের ছুটিতে দুপাশে ভিড় করে। তারা স্বজনদের সঙ্গে দেখা করতে আসে। কিন্তু নিরপাত্তার কারণে কাছে গিয়ে কথা বলার কোনো সুযোগ দেওয়া হয় না। দুর্যোগ পূর্ণ আবহাওয়া ও থেমে থেমে বৃষ্টি হওয়ায় দর্শনার্থী সংখ্যা কম মনে হচ্ছে। আগামীকাল ১ জুলাই থেকে ভ্রমণ ফি এক হাজার টাকা কার্যকর হওয়ার কথা রয়েছে। সেই ক্ষেত্রে পাসপোর্ট যাত্রী সংখ্যা কমে যেতে পারে বলে মনে করছেন তিনি। 

দর্শনার্থীরা বলেন, সীমান্তের কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে দুই বাংলাকে ভাগ করে দিলেও আমাদের মনকে তো আর ভাগ করা যায়নি। আগে তো দুই বাংলা একই ছিল। তাই ভালোবাসার টানে, প্রাণের টানে, নাড়ির টানে তারা ছুটে এসেছেন সীমান্তের জিরো পয়েন্টে। এ ছাড়াও তাদের অনেক আত্মীয়স্বজন রয়েছেন ভারতে। সীমন্তে  কাঁটাতারের ফাঁক দিয়ে দূর থেকে আত্মীয়স্বজনকে দেখছেন দর্শনার্থীরা।

হিলি ইমিগ্রেশন চেকপোস্টের অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শেখ আশরাফ বলেন, ঈদুল আযহা উপলক্ষে হিলি ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট দিয়ে দু-দেশের মধ্যে পাসপোর্ট যাত্রীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। তা ছাড়া অনেক আত্মীয়স্বজন আসছে যাত্রীদের সঙ্গে।

তিনি বলেন, দুদিন থেকে লক্ষ করছি রেললাইনের দুপাশে অনেক দর্শনার্থী দাঁড়িয়ে থেকে দূর থেকে আত্মীস্বজনের সঙ্গে কথা বলেন। আবার বিভিন্ন বয়সের ছেলে মেয়েরা ফটোসেশান ও সেলফি তুলতে ব্যস্ত। এমন দৃশ্য নিজেকে খুব মুগ্ধ করে। দেখে মনে হয়, জিরো পয়েন্টের এপার বাংলা-ওপার বাংলা মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে। শতাধিক দর্শনার্থীতে মুখরিত দুপাশ। আজ ৩০ জুন সন্ধ্যা ৭:১৫ মিনিট পর্যন্ত পাসপোর্ট যাত্রী পারাপারের সঠিক সংখ্যা বলতে না পারলেও অন্য দিনের তুলনায় আজ পাসপোর্ট যাত্রীর চাপ একটু বেশি মনে হচ্ছে বলে জানান ইমিগ্রেশন ওসি।


আরো পড়ুন