• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৮:১৮ অপরাহ্ন

জয়পুরহাটে সরকারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের জাল/নকল ডকুমেন্টস তৈরি চক্রের তিন সদস্য গ্রেফতার

নেওয়াজ মোর্শেদ নোমান, জয়পুরহাট প্রতিনিধি / ২০৬ বার পঠিত
আপডেট: শুক্রবার, ২২ জুলাই, ২০২২

জয়পুরহাটে সরকারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের জাল/নকল ডকুমেন্টস তৈরি চক্রের তিন সদস্যকে গ্রেফতার করেছে জেলা গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) সদস্যরা। বৃহস্পতিবার দুপুরে জেলা পুলিশের কনফারেন্স রুমে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান পুলিশ সুপার মাসুম আহাম্মদ ভূঞা পিপিএম।

গ্রেফতারকৃত তিনজন হলেন- জেলার পাঁচবিবি উপজেলার রসুলপুর গ্রামের মৃত. আমজাদ হোসেন ছেলে আইনজীবি সহকারী আজিজার রহমান ওরফে আজিজার মহুরী (৫০), নওগাঁ চক পিয়ার(মধ্য দূর্গাপুর) এলাকার বর্তমান বাসিন্দা নুরুল ইসলামের ছেলে আবু নাছের মো. মাহফুজুল ইসলাম ওরফে মুরাদ ওরফে আলম বাবু ওরফে নসু বাবু (৪৫), জয়পুরহাট শহরের ধানমন্ডির মৃত. তসলিম উদ্দিনের ছেলে নাজমুল হক (৫৫) বলে জানা গেছে।

লিখিত বক্তব্যে পুলিশ সুপার বলেন, দীর্ঘদিন যাবত জয়পুরহাটে সরকারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে জরুরী কাগজপত্র জাল জালিয়াতীর ডকুমেন্টস তৈরী ও তা ব্যবহার করে অবৈধভাবে একটি সক্রিয় চক্র কাজ করছিল। গত বছরের ২৫ নভেম্বরে সোনালী ব্যাংকে ভূয়া চালান, ভূয়া সীল তৈরি করে ১৪,০৮,০০০/- (চৌদ্দ লক্ষ আট হাজার) টাকার জাল ডকুমেন্টস তৈরি করে তা আইনজীবীর মাধ্যমে বিজ্ঞ আদালতে উপস্থাপন করে বিজ্ঞ য্গ্মু দায়রা ২য় আদালতে সাজাপ্রাপ্ত হাজতী আসামী কালাই উপজেলার পাঁচশিরা গ্রামের মৃত. হারেজ উদ্দীনের ছেলে সোহেল রানা (৪২) প্রতারণামূলকভাবে জামিন করা হয়েছে। জাল ডকুমেন্টের ভিত্তিতে বিজ্ঞ আদালত হতে ওই আসামী সোহেল রানা জামিন নিয়ে এখন পর্যন্ত পলাতক রয়েছে।

পরবর্তীতে বিজ্ঞ আদালতে বিষয়টি জানাজানি হলে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। এ ব্যাপারে জয়পুরহাট থানার অপর একটি মামলা দায়ের করা হয়। মামলাটি তদন্ত শুরু করে জেলা গোয়েন্দা শাখা। এরপর তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করে চলতি ২৭ জুনে এ চক্রের অন্যতম সদস্য পাঁচবিবি উপজেলার রসুলপুর গ্রামের মৃত. আমজাদ হোসেন ছেলে আইনজীবি সহকারী আজিজার রহমান ওরফে আজিজার মহুরীকে গ্রেফতার করে জেলা গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)। তাকে জিজ্ঞাসাবাদে ঘটনার মূল হোতা ২। আবু নাছের মোঃ মাহফুজুল ইসলাম @ মুরাদ @ আলম বাবু @ নসু বাবু(৪৫), পিং-মোঃ নুরুল ইসলাম, স্থায়ী সাং-দুবলহাটি, বর্তমান সাং-চক পিয়ার(মধ্য দূর্গাপুর), থানা ও জেলা- নওগাঁ এর জড়িত থাকার বিষয়টি জানা যায়।

তাকে জিজ্ঞাসাবাদে ঘটনার মূল হোতা নওগাঁর চক পিয়ার(মধ্য দূর্গাপুর) এলাকার বর্তমান বাসিন্দা নুরুল ইসলামের ছেলে আবু নাছের মো. মাহফুজুল ইসলাম ওরফে মুরাদ ওরফে আলম বাবু ওরফে নসু বাবুর বিষয়টা জানা যায। চলতি বছরের ২০ জুলাইয়ে নিজ এলাকা থেকে তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় আবু নাছের মো. মাহফুজুল ইসলাম ওরফে মুরাদ ওরফে আলম বাবু ওরফে নসু বাবুকে গ্রেফতার করে ডিবি। তাকে জিজ্ঞাসাবাদে সে ঘটনায় প্রত্যক্ষভাবে জড়িত থাকার কথা স্বীকারসহ অপর সদস্য জয়পুরহাট শহরের ধানমন্ডির মৃত. তসলিম উদ্দিনের ছেলে নাজমুল হককে একই দিনে গ্রেফতার করে ডিবি।

জালিয়াতির ক্ষেত্রে এ চক্রের সদস্যরা একেকজন ভিন্ন ভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করে। বিশেষ করে এ চক্রের অন্যতম সদস্য আবু নাছের মো. মাহফুজুল ইসলাম ওরফে মুরাদ ওরফে আলম বাবু ওরফে নসু বাবু জেলখানায় গিয়ে কৌশলে হাজতীর সাথে যোগাযোগ করে এবং মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে জামিন করে দিবে মর্মে চুক্তিবদ্ধ হয়। পরবর্তীতে হাজতীর পরিবারের লোকজনের সাথে যোগাযোগ করে অগ্রীম ৫০% টাকা নিয়ে চক্রের অপর সদস্য নাজমুল হকের মাধ্যমে যাবতীয় সিল ও কাগজপত্র তৈরী করে। নাজমুল হকের কাজে একটি সিল তৈরী করতে ১০,০০০/-টাকা নেয়।

অতঃপর সমস্ত কাগজপত্র তৈরী হলে অপর সদস্য আইনজীবি সহকারী আজিজার রহমান ওরফে আজিজার মহুরী এর নিকট হস্তান্তর করে এবং চুক্তি মোতাবেক আজিজার মহুরী আইনজীবির মাধ্যমে বিজ্ঞ আদালতে উপস্থাপন করে বিজ্ঞ আদালতের সহিত প্রতারণা করে আসামীর জামিন করায় এবং জামিনঅন্তে অবশিষ্ট ৫০% টাকা গ্রহন করে। আসামী নসু বাবু নিজেকে বিভিন্ন সময় ভিন্ন ভিন্ন নামে পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন সরকারী/ বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে ফোন দিয়ে প্রতারণা করে থাকে। তাছাড়া সে তার জাল জালিয়াতীর কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতা ও গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের নাম পদবী ব্যবহার করে থাকে। তার কার্যক্রম এ চক্রের সাথে যেকোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান জড়িত থাকার সাক্ষ্য প্রমান পাওয়া গেলে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। এ চক্রের অন্যান্য সদস্যদের সনাক্ত ও গ্রেফতার এর জোর চেষ্টা অব্যাহত আছে।

সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তরিকুল ইসলাম (পুলিশ সুপার পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত), ফারজানা রহমান, সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার ইশতিয়াক আলমসহ জেলা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।


আরো পড়ুন