• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৫:৫৯ অপরাহ্ন

সংসদ ভবনের ভিতরে স্থানীয় এমপির কিলঘুষিতে আহত উপজেলা চেয়ারম্যান

নিজস্ব প্রতিবেদক / ১৫১ বার পঠিত
আপডেট: রবিবার, ১৭ জুলাই, ২০২২

জাতীয় সংসদের মেম্বারস ক্লাবে দেবীদ্বার উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির সভায় ইউনিয়ন কমিটি ঘোষণা নিয়ে কুমিল্লা-৪ (দেবীদ্বার) আসনের এমপি রাজী মোহাম্মদ ফখরুল ও দেবীদ্বার উপজেলা চেয়ারম্যান, আওয়ামী লীগ কুমিল্লা (উ.) জেলার সাংগঠনিক সম্পাদক আবুল কালাম আজাদের মধ্যে হাতাহাতির অভিযোগ পাওয়া গেছে।
আজ শনিবার বিকেলে সভা চলাকালে এ ঘটনা ঘটে বলে প্রাথমিকভাবে জানা যায়। এ ঘটনায় চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ ঢাকার একটি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন বলেও এলাকায় খবর আসে। এর পরই দুই গ্রুপের মধ্যে দেবীদ্বারে উত্তেজনা ছড়ায় ও সংঘর্ষ বাধে।
সন্ধ্যা থেকে চেয়ারম্যান সমর্থকরা ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করে রাখেন। রাত সাড়ে ৮টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত অবরোধ চলছিল। একই ঘটনার জেরে ‘দেবীদ্বার-চান্দিনা সড়ক অবরোধ’ হওয়ারও খবর এসেছে। রাত পৌনে ৮টায় চেয়ারম্যান সমর্থকরা দেবীদ্বার সদরে মিছিল বের করলে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া শুরু হয়। এতে উভয় পক্ষের মাহবুবুর রহমান, আবদুর রাজ্জাক, সাইফুল ইসলাম বাবু, সুমনসহ অজ্ঞাতনামা অন্তত ১০ জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া যায়। এ সময় একের পর এক ককটেল বিস্ফোরণেরও আওয়াজ শোনা যাচ্ছিল। পুরো দেবীদ্বারে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে।
২৬ বছর পর আগামী ২১ জুলাই দেবীদ্বার উপজেলা সম্মেলন হতে যাচ্ছে। সম্মেলনকে কেন্দ্র করে আজ জাতীয় সংসদ ভবনের দ্বিতীয় তলায় পার্লামেন্ট মেম্বারস ক্লাবে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে জেলার সভাপতি ম. রুহুল আমিনসহ জেলা এবং উপজেলার প্রায় ২৬ নেতা উপস্থিত ছিলেন।
দলীয় সূত্রে জানা যায়, সভার একপর্যায়ে উপজেলার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মতিন সরকার দাবি তোলেন এলাহাবাদ ইউনিয়ন কমিটি ঘোষণা দেওয়ার। এ সময় সব সদস্য এক বাক্যে তা সমর্থন করলে কুমিল্লা (উ.) জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হাজী রোশন আলী মাস্টার সাবেক ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম সরকারকে সভাপতি হিসেবে এবং সাধারণ সম্পাদক হিসেবে আক্তারুজ্জামান স্বপনের নাম ঘোষণা করেন। এ সময় কুমিল্লা-৪ (দেবীদ্বার) এমপি রাজী মোহাম্মদ ফখরুল ‘কমিটি মানি না’ বলে ঘোষণা দেন। তখন পাশে বসা দেবীদ্বার উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ ‘কমিটি সুন্দর’ হয়েছে বললে এ নিয়ে এমপি ও উপজেলা চেয়ারম্যানের মধ্যে হাতাহাতি হয়।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এ কে এম সফিকুল আলম কামাল বলেন, একজন জনপ্রতিনিধির কাছ থেকে এমন ন্যক্কারজনক আচরণ আশা করি নাই।
কুমিল্লা (উ.) জেলার সহ-সভাপতি হাজী আব্দুল মতিন মুন্সী বলেন, ঘটনাটি অত্যন্ত ন্যক্কারজনক। ২৬ বছর পর ২১ জুলাই দেবীদ্বার উপজেলা সম্মেলন হতে যাচ্ছে। সম্মেলনকে কেন্দ্র করে আজ জাতীয় সংসদ ভবনের দ্বিতীয় তলায় পার্লামেন্ট মেম্বারস ক্লাবে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। আমাদের আলোচনার শেষ হতে ২/৩ মিনিট বাকি ছিল। তখন উপজেলার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আব্দুল মতিন সরকার দাবি তোলেন এলাহাবাদ ইউনিয়ন কমিটি ঘোষণা দেওয়ার। এ সময় সব সদস্য এক বাক্যে তা সমর্থন করেন। কুমিল্লা (উ.) জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হাজী রোশন আলী মাস্টার সর্বসম্মতিক্রমে বলেন, ‘কমিটির কাউন্সিলরদের মতের ভিত্তিতে পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা হবে। তবে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নাম ঘোষণা করে দিই।’
এ সময় সাবেক ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. সিরাজুল ইসলাম সরকারকে সভাপতি হিসেবে ঘোষণা দেওয়ার পর সাধারণ সম্পাদক হিসেবে আক্তারুজ্জামান স্বপনের নাম ঘোষণা শেষ না করতেই এমপি রাজী মোহাম্মদ ফখরুল সাহেব বসা থেকে লাফ দিয়ে উঠে বলেন, ‘আমি এ কমিটি মানি না।
এ সময় পাশে বসা দেবীদ্বার উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, আওয়ামী লীগ নেতা আবুল কালাম আজাদ বলেন, কমিটি সুন্দর হয়েছে। এর পরই এমপি সাহেব উপজেলা চেয়ারম্যাকে ঘুষি-কিল মারতে মারতে মেঝেতে ফেলে দেন। চেয়ারম্যানও উঠে এমপির ওপর চড়াও হন বলে জানান আব্দুল মতিন মুন্সী।
এ ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেনে কুমিল্লা (উ.) জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা হাজী আবুল কাসেম সওদাগর ও উপদেষ্টা এ টি এম মেহেদী হাসান। তবে উপজেলা চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেও কথা বলা যায়নি। তিনি ঢাকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন বলে জানানো হয়। প্রাথমিক তথ্য মতে, মুখে আঘাতপ্রাপ্ত হওয়ায় তাঁর কথা বলতে সমস্যা হচ্ছে।
সংসদ সদস্য রাজী মোহাম্মদ ফখরুলের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেও তিনি ফোন রিসিভ করেনি।
কুমিল্লা (উ.) জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ম. রুহুল আমিনের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
রাত সাড়ে ৮টায় সর্বশেষ পরিস্থিতি জানতে দেবীদ্বার থানার ওসি কমল কৃষ্ণ ধরের সঙ্গে কথা বলতে চাইলেও তিনি ব্যস্ততার জন্য কথা বলতে পারেনি।
এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত রাত পৌনে ৯টায় এমপি গ্রুপ উপজেলা সদরে সশস্ত্র মহড়ায় থাকতে দেখা যায়।
এ ব্যাপারে কুমিল্লা (উ.) জেলা সাধারণ সম্পাদক হাজী রৌশন আলী মাস্টার বলেন, আমরা বিগত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের হাতে ২০০৪ সাল থেকে মার খেয়ে আসছি, এখনো মার খাচ্ছি। এমপি সাহেবের এ জঘন্য আচরণের বর্ণনা দেওয়া আমার পক্ষে সম্ভব নয়। একজন জাতীয় সংসদ সদস্য একজন উপজেলা চেয়ারম্যানকে এভাবে লাঞ্ছিত করবেন এটা কেউ প্রত্যাশা করেনি।
আগামী ২১ জুলাই উপজেলা সম্মেলন সম্পন্ন করায় কতটুকু আশাবাদী জানতে চাইলে তিনি জানান, সম্মেলন বানচাল করতেই আজকের এ ঘটনার জন্ম দেওয়া হয়েছে।


আরো পড়ুন