• শনিবার, ০৪ মে ২০২৪, ০১:১০ অপরাহ্ন

অযত্ন অবহেলায় পড়ে আছে ত্রিশালের ৪টি রেলওয়ে স্টেশন, দেখার কেউ নেই!

/ ১১৯ বার পঠিত
আপডেট: বুধবার, ৩০ নভেম্বর, ২০২২

ত্রিশাল(ময়মনসিংহ)প্রতিনিধি
ময়মনসিংহের ত্রিশাল অংশেই রয়েছে শতবর্ষী চারটি রেলওয়ে স্টেশন। এ শতবর্ষী রেলওয়ে স্টেশন গুলো দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়ার ফলে পড়ে আছে অযত্ন অবহেলায়। ইতিহাস-ঐতিহ্যের ধারক এ স্টেশনগুলোর বর্তমান অবস্থা খুবই নাজুক ও জরাজীর্ণ। যাত্রী থাকলেও একটি সরকারী লোকাল ট্রেন ও বেসরকারী ট্রেন ব্যতিত স্টপেজ নেই কোন মেইল ট্রেনের।

স্থানীয়দের অভিযোগ, রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা ও অবহেলায় সংস্কার কিংবা আধুনিকায়নের অভাবে স্টেশন গুলোর ভবন এখন ব্যবহার অনুপযোগী ও পরিত্যক্ত। এক সময় এসকল স্টেশনে নিয়মিতই স্টপেজ ছিল ট্রেনের। তারা সহজে ময়মনসিংহ, ঢাকা, চট্রগ্রাম, জামালপুর অঞ্চলে মালামাল আনা-নেওয়া করতো। হঠাৎ বন্ধ হয়ে যায় ট্রেনের স্টপেজ। যতেষ্ট যাত্রী থাকলেও লোকাল ও বেসরকারী দু-একটি ট্রেন ছাড়া স্টপেজ নেই অন্য কোন মেইল ট্রেনের।


সরেজমিনে দেখাযায়, ত্রিশাল উপজেলার অংশেই রয়েছে ফাতেমা নগর, আহাম্মদ বাড়ী, আউলিয়া নগর ও ধলা বাজার নামক চারটি রেলওয়ে স্টেশন। এ শতবর্ষী চারটি রেলওয়ে স্টেশনগুলো মধ্যে ফাতেমা নগর ও আউলিয়া নগর স্টেশন দুটি পুরাতন ভবনেই চালাচ্ছেন তাদের কার্যক্রম। আর বাকী দুই স্টেশনে নেই কোন স্টেশন মাস্টার। পড়ে আছে অযতœ অবহেলায়। কালের বিবর্তনে এই স্টেশনগুলো আসল রুপ-সৌন্দর্য ও জৌলুস হারিয়েছে। এই চার স্টেশনে ভাওয়াল এক্সপ্রেস নামে একটি লোকাল ট্রেন ও মহুয়া কমিউটার, বলাকা কমিউটার নামে বেসরকারী ট্রেন ছাড়া, নেই কোন মেইল ট্রেনের স্টপেজ। স্টেশনে রয়েছে অনেক যাত্রী। শতবর্ষী এ স্টেশন গুলোর মধ্যে ফাতেমা নগর ও আউলিয়া নগর স্টেশন দুটির প্লাট ফরমের সংস্কার করা হলেও পুরাতন জরার্জীন ভবনেই চালাতে হচ্ছে কার্যক্রম।

প্লাটফরম উচু করার ফলে ভবনগুলো পড়ে আছে নিচুতে। একটু বৃষ্টি হলেই পানিতে তলিয়ে যায় রুমগুলো। স্টেশনের পাশেই অবৈধ ভাবে দখল করে বসানো হয়েছে অনেক দোকান। কে বসিয়েছে জানেননা স্টেশন মাস্টার। আহাম্মদবাড়ী রেলওয়ে স্টেশনের অবস্থা খুবই নাজুক। দেখে মনে হবে এটি কোন পরিত্যাক্ত ভবন। ভবনে গজিয়েছে লতা,পাতা ও গাছের শেকড়। স্টেশন রুম থাকলেও তা রয়েছে তালাদ্ধ অবস্থায়। নেই কোন স্টেশন মাস্টার। যাত্রী বসার নেই কোন ব্যবস্থা। পাশের দোকানে বসে লোকাল ট্রেনের জন্য অবস্থান করছেন যাত্রীরা। অনেক খোজাখোজির পর পাওয়া গেল রয়েল আহমেদ নামে একজন গেইটম্যানকে সে জানায়, শুনেছি এখানে যে স্টেশন মাস্টার আছেন তিনি ঢাকা বিমানবন্দর স্টেশনে থাকেন। সাইফুদ্দিন খন্দকার চঞ্চল নামে একজন আছেন এখানে তিনি ট্রেনের সময় হলে টিকিট বিক্রি করেন। তিনি রেলওয়ের কেউ কিনা জানেন না তিনি। স্টেশনের নেই কোন প্লাট ফরম। এ স্টেশনের ঢুকার গেইট থেকে পুরো স্টেশন জুড়ে বসানো হয়েছে অবৈধ দোকান।

আরেকটি স্টেশন হলো ধলা বাজার রেলওয়ে স্টেশন। এই স্টেশনেও নেই কোন স্টেশন মাস্টার। লোকাল ট্রেন থামলেও নেই কোন টিকিটের ব্যবস্থা। গত ছয়মাসের বেশী সময় ধরে খোলা হয়না স্টেশন মাস্টারের রুমের তালা। স্টেশনে থাকা যাত্রী বসার চেয়ারগুলো অযতেœ অবহেলায় নষ্ট হচ্ছে দেখার কেউ নেই। এ স্টেশনেও নেই কোন প্লাটফরমের ব্যবস্থা।
স্থানীয়রা জানায়, এক সময় যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি, ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ও পণ্য পরিবহনে এ অঞ্চলের মানুষের কাছে রেলওয়ে স্টেশনের কদর ছিল।  অযতœ-অবহেলায় শতবর্ষী স্টেশন ভবনগুলো ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। স্টেশন মাস্টাসহ প্রয়োজনীয় লোকবল না থাকায় সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে যাত্রীরা। শুধুই কাগজে-কলমে স্টেশন গুলোর অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা হয়েছে। এ স্টেশনগুলো ডিঙ্গিয়ে প্রতিদিন ঢাকা, জামালপুর, ময়মনসিংহ, কিশোরগঞ্জ, মহনগঞ্জ রোডে ৮-১০টি ট্রেন চলাচল করে। কিন্তু এ স্টেশন গুলোতে ভাল কোন ট্রেনের স্টপেজ নেই।

ট্রেনে ঢাকা বা দুরে কোথাও যেতে হলে ট্রেনের জন্য যেতে হয় ময়মনসিংহ বা পাশের উপজেলা গফরগাঁওয়ে। ফলে স্টেশনগুলো জীর্ণদশা ও দুরবস্থায় যাত্রীদেরও পোহাতে হয় চরম দুর্ভোগ। স্টেশনে ওয়েটিং রুম, ওয়াশ রুমসহ যাত্রী সেবার নেই কোন বালাই। পর্যাপ্ত বাতি ও নিরাপত্তা বেষ্টনী না থাকায় রাতের বেলায় স্টেশনে নেমে আসে ভুতুড়ে অন্ধকার ও নিস্তবতা। আধুনিকায়নসহ মেইল ট্রেনের স্টপেজ, স্টেশনগুলোর হারানো সৌন্দর্য ফিরিয়ে আনার দাবি এলাকাবাসীর।

আহাম্মদবাড়ী রেলওয়ে স্টেশনেবসা আমিরুল ইসলাম, সুরুজ আলী, আবু আনসার বলেন, আগে এ স্টেশনের অনেক নামডাক ছিল। এখান থেকে সারাদেশে গোয়ালরা ট্রেনের মাধ্যমে দুধ নিয়ে ঢাকাসহ সরাদেশে সাপ্লাই দিত। একটি লোকাল ট্রেন ছাড়া এখানে কোন ট্রেনের স্টপেজ নেই। আমরা ট্রেনের স্টপেজের জন্য অনেক আন্দোলনও করেছি। কিন্তু কোন কাজ হয়নি। এখানে অনেক যাত্রী রয়েছে। স্টেশনে প্লাটফরম না থাকায় ট্রেনে উঠতে বা নামতে গিয়ে অনেক বাচ্চা, মহিলা এখানে পড়ে ব্যথা পেয়েছে। এ রেলওয়ে স্টেশন পড়ে আছে অযতœ অবহেলায়। দেখার কেউ নেই। স্টেশনে বসার নেই কোন জায়গা। ওয়াস রুমের কোন ব্যবস্থা নাই। সংস্কার না হলে এক সময় এ স্টেশন হারিয়ে যাবে।

ধলা বাজার রেলওয়ে স্টেশনের ইদ্রিস আলী, রুবের মিয়া, ফাতেমা বেগম বলেন, এ স্টেশন থেকে আমরা কাচামাল ঢাকায় নিয়ে বিক্রি করতাম। এখানো কোন ট্রেনের স্টপেজ না থাকায় ট্রাকে নিয়ে পোষাতে পারিনা। তাই অনেকদিন ধরে ব্যবসা বন্ধ। এখন একটি লোকাল ট্রেন থাকলেও স্টেশনে মাস্টার না থাকায় মাল বুক না করায় তুলতে চায়না। আর স্টেশনে প্লাট ফরম না থাকায় অনেক মহিলা, শিমুরা নামতে গিয়ে পড়ে ব্যথা পেয়েছে। আমাদেও মালামাল তোলতেও অনেক কষ্ট হয়। এ স্টেশনের কোন উন্নতি নেই। মান্ধাত্যা আমলেই পড়ে আছে। স্টেশনের সংস্কারসহ ট্রেনের স্টপেজ দিলে াামাদেও জন্য ানেক ভাল হতো। কাচামাল সহজে ঢাকায় নিয়ে যেতে পারতাম। আর স্টেশনে অনেক যাত্রী থাকলেও এখানে ট্রেনের স্টপেজ নেই। তাই পাশের উপজেলা গফরগাঁও থেকে ট্রেনে উঠতে হয়।

ফাতেমা নগর রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার কামাল আহমেদ বলেন, এ স্টেশনে প্রচুর যাত্রী রয়েছে। কিন্তু লোকাল ট্রেন ছাড়া আর কোন মেইল ট্রেন এখানে দাড়াইনা। আর স্টেশনের অবস্থা অনেক খারাপ। বহু বছর পর নাম মাত্র রিপিয়ারিং করা হয়েছে। ভবনের অবস্থা নাজুক। আর স্টেশনের জায়গায় অবৈধ দোকানপাটে ভরে গেছে। কতৃপক্ষ অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করলেও তারা আবার এসে বসেছে। মেইল ট্রেনের স্টপেজ এখানে দিলে অনেক যাত্রী উপকৃত হবে।

আউলিয়া নগর রেলওয়ে স্টেশনের সহকারী  স্টেশন মাস্টার রায়হান চৌধুরী বলেন, এ স্টেশনের ভবন অনেক পুরাতন। নতুন করে শুধূ প্লাটফরম সংস্কার করা হয়েছে। প্লাট ফরম উচু করার ফলে মেইন ভবন নিচু হয়ে গেছে। এতে একটু বৃষ্টি হলেই পানি জমে থাকে। আর স্টেশনের পাশ দিয়েই ত্রিশাল-নান্দাইল সড়কের রেলগেইটের বেড়িয়ার অনেক দিন ধরেই নষ্ট। লোহার চেইন দিয়ে বেড়িয়ারের কাজ চলছে। রেল কতৃপক্ষকে বিষয়গুলো জানানো হয়েছে। এ স্টেশনে প্রচুর যাত্রী রয়েছে সরকারী একটি লোকাল ট্রেন ও বেসরকারী দুটি ট্রেন ছাড়া অন্য কোন মেইল ট্রেনের স্টপেজ নাই।


আরো পড়ুন