• শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ০৬:৩৬ অপরাহ্ন

হিলিতে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে নিয়োগ বাণিজ্যসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ

/ ৭৮৭ বার পঠিত
আপডেট: মঙ্গলবার, ২৭ ডিসেম্বর, ২০২২

গোলাম রব্বানী, হিলি, দিনাজপুর প্রতিনিধি:
দিনাজপুরের হাকিমপুর উপজেলার কোকতাড়া দ্বিমুখী উচ্চবিদ্যালয়ে (অফিস সহায়ক, নিরাপত্তা কর্মী ও আয়া) তিনটি পদে কর্মচারী নিয়োগে নিয়োগ বাণিজ্যসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। আয়া পদে নিজের ভাগ্নিকে নিয়োগ দেওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে বিদ্যালয়ের অফিস সহকারী রুমি আক্তার। অন্য দিকে ওই বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ও দাতা সদস্য গঠনে অনিয়মের অভিযোগ এলাকাবাসীর।

জানাগেছে ১৯৭৩ সালে উপজেলার ৩ নং আলিহাট ইউনিয়ন এর কোকতাড়া গ্রামের মরহুম আশকর মন্ডল নিজের গ্রামসহ আশপাশের গ্রামের সাধারণ লোকজনের পড়া লেখার জন্য নিজস্ব জমি দান করে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত করেছেন। সেই থেকে বিদ্যালয়টি গুটি গুটি পায়ে আজকের এই অবস্থানে পৌঁছেছে। সম্প্রতি সময়ে বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি নির্বাচনে পার্শ্ববর্তী সাদুড়িয়া গ্রামের শ্রী সুমন মন্ডল সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন। এরপরে সরকারি বিধি মোতাবেক গত ৩ অক্টোবর দৈনিক যায়যায়দিন পত্রিকা ও দৈনিক তিস্তা পত্রিকায় উপরোক্ত তিনটি পদে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেন কতৃপক্ষ। শুরু হয় নিয়োগ বাণিজ্যর খেলা

এলাকাবাসীর অভিযোগ, কোকতাড়া দ্বিমুখী উচ্চবিদ্যালয়ে তৃতীয় শ্রেণির তিন জনকে টাকার নিয়োগের অভিযোগ উঠেছে। আয়া পদে অত্র বিদ্যালয়ের অফিস সহকারী রুমি আক্তার এর ভাগ্নি (বোনের মেয়ে) বারো লক্ষ্য টাকা, অফিস সহায়ক পদে সাদুড়িয়া গ্রামের জনৈক রঞ্জিত সাহার ছেলে চৌদ্দ লক্ষ্য ও নিরাপত্তা কর্মী মিঠুন সরকার বারো লক্ষ্য টাকার বিনিময়ে নিয়োগের কার্যক্রম চলছে। অভিযোগ রয়েছে, আগামীকাল ২৭ ডিসেম্বর মঙ্গলবার নিয়োগ পরীক্ষার তারিখ নির্ধারণ করা হলেও আয়া পদে আবেদনকারী পার্শ্ববর্তী বিরামপুর উপজেলার সম্পা আক্তার ও শিউলি আরা ২৬ ডিসেম্বর সন্ধ্যা পর্যন্ত পরীক্ষার প্রবেশ পত্র হতে পায় নাই। সম্প্রতি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিপত্র অনুযায়ী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নিয়োগ পরীক্ষা নিজ প্রতিষ্ঠানে করার কথা বলা হলেও নিয়োগ পরীক্ষার ভেনু করা হয়েছে উপজেলা শহরের বাংলাহিলি সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ে।

আরও অভিযোগ রয়েছে অত্র বিদ্যালয়ের সভাপতি শ্রী সুমন মন্ডল অফিস সহায়ক পদের জন্য ওই বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক রতন কুমার সরকারের নিকট চাকুরী দেওয়ার নামে ছয় লক্ষ্য টাকা গ্রহন করে এবং পরবর্তীতে আরও বেশি টাকা পাওয়ায় তার টাকা ফেরত দেয়। এছাড়াও সভাপতি সুমন মন্ডল আয়া পদে অত্র বিদ্যালয়ের অভিভাবক সদস্য আরাফাত হোসেনকে তার স্ত্রীকে নিয়োগ দেওয়ার আশ্বাস দিলেও পরবর্তীতে বেশি টাকার বিনিময়ে বিদ্যালয়ের অফিস সহকারী রুমি আক্তার এর ভাগ্নি ত্বাকী আক্তারকে নিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যদিও ত্বাকী আক্তার এর বাড়ি বিদ্যালয় থেকে চার-পাঁচ কিঃমিঃ দূরে।

এদিকে বিদ্যালয়টি ১৯৭৩ সালে প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠাতা সদস্য আজিজার রহমানের জন্ম ১৯৬০ সালে। মাত্র ১৩ বছর বয়সের নাবালক ছেলে কি করে প্রতিষ্ঠাতা সদস্য হয় এটি এখন সবার প্রশ্ন?
অন্য দিকে দাতা সদস্য গঠনের ক্ষেত্রে মরহুম দছির উদ্দিন মন্ডল স্কুলে দান করা সম্পত্তি তার ছেলে মনিরুজ্জামান মানিক গোপনে পুনরায় (দুই শতক) জমি দুই লক্ষ্য টাকা দলিলে মূল্য তুলে স্কুলের নামে রেজিস্ট্রারি দলিল মূলে দান করে আজীবন দাতা সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। তাই আগামীকাল এর নিয়োগ পরীক্ষা বাতিলসহ অভিযোগের বিষয় সরজমিনে তদন্ত সাপেক্ষে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের জোড় দাবি জানিয়েছেন এলাকার সচেতন মহল এবং অভিযোগকারীগন।

বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক রতন কুমার সরকার জানান, অফিস সহায়ক পদের জন্য আমার কাছ থেকে সভাপতি ছয় লক্ষ্য টাকা অগ্রিম নেয়। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো পরবর্তীতে বেশি টাকা চুক্তি হওয়ায় আমার টাকা ফেরত নিতে বলে এবং চাপ প্রয়োগ করলে তা আমি ফেরত নিতে বাধ্য হই।

বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির অভিভাবক সদস্য জানান, সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার আগে থেকে আমার স্ত্রীকে আয়া পদে নিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন সভাপতি সুমন মন্ডল। তারপরে আমার নিকট দশ লক্ষ্য টাকা দাবি করে। আমি চাকুরির সুবাদে দিতে স্বীকার করলেও পরবর্তীতে আরও বেশি টাকা দিতে চাওয়ায় অফিস সহকারীর ভাগ্নিকে নিয়োগ দেওয়ার প্রস্তুতি চলছে।

মহিলা অভিভাবক সদস্য অভিযোগ করে বলেন, বিদ্যালয়ের সভাপতি তার নিজের ইচ্ছেমতো সব কিছু করছে। আমাদের কিছু বলা যাচ্ছে না। মিটিং এ করাম পূরণ হলে মিটে গেলো। কোন কিছু বলা যাবে না।

এবিষয়ে জানতে চাইলে কোকতাড়া দ্বিমুখী উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শহিদুল ইসলাম বলেন, কত টাকার বিনিময়ে কাকে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে এটা আমার জানার বাহিরে। ম্যানেজিং কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক স্কুলের তিনটি পদে নিয়োগের জন্য পত্রিকায় আবেদনের আহবান করা হয়। শেষ সময় পর্যন্ত আয়া পদে আট জন (৮) অফিস সহায়ক পদে চার জন (৪) ও নিরাপত্তা কর্মী পদে চার জন (৪) প্রার্থীর আবেদন পাওয়া গেছে। আবেদন পত্র যাচাই-বাছাই কমিটি কাঙ্ক্ষিত বয়স এর চেয়ে কম হওয়ায় নিরাপত্তা কর্মী পদে একজনের আবেদন পত্র বাতিল ঘোষণা করেছেন। কমিটির সভাপতি ও সদস্যদের সিদ্ধান্ত মোতাবেক আগামী ২৭ ডিসেম্বর নিয়োগ পরীক্ষার দিন ঠিক করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, অফিস সহকারী বিরুদ্ধে আমার নিকট কোন সুনির্দিষ্ট অভিযোগ কেউ করে নাই। তাই এবিষয়ে আমি বলতে পারবো না।

বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ এর আগে থেকে আজিজার রহমান মন্ডল প্রতিষ্ঠাতা সদস্য হিসেবে আছেন এবং অদ্য তিনি প্রতিষ্ঠাতা সদস্য আছেন। আজিজার রহমানের জন্ম সাল জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি যতটুকু জানি তার জন্ম ১৯৬০ সালে। নাবালক কি করে স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য হয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, এবিষয়ে আমি বেশি কিছু বলতে পারবো না। আগের থেকে তিনি আছেন এখনো তিনি প্রতিষ্ঠাতা সদস্য হিসেবে আছেন।

অন্যদিকে বিদ্যালয়ের দাতা সদস্য গঠন সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিদ্যালয়টির আগের দাতা সদস্য দছির উদ্দিন মন্ডল মৃত্যু বরন করলে কিছুদিন দাতা সদস্য পদটি শুণ্য থাকে। পরবর্তীতে আজীবন দাতা সদস্য হতে চাইলে দুই লক্ষ্য টাকা বা সমপরিমাণ জায়গা স্কুলে দান করতে হবে এবং একটা কমিটির সময় পর্যন্ত দাতা সদস্য হতে চাইলে বিশ হাজার টাকা স্কুলে জমা দিতে হবে মর্মে নোটিশ দেওয়া হয়। পরে মৃত দছির উদ্দিন মন্ডল এর ছেলে মনিরুজ্জামান মানিক দুই শতক জমি (দুই লক্ষ্য টাকা) মূল্য তুলে স্কুলের নামে রেজিস্ট্রারি (কবলা) দিয়ে আজীবন দাতা সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন।
মনিরুজ্জামান মানিক এর দেওয়া সম্পত্তি ইতিপূর্বে তার বাবা স্কুলের নামে লিখে দিয়েছেন এবং দুই শতাংশ জায়গার মূল্য কিভাবে দুই লক্ষ্য টাকা হয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, তার বাবা স্কুলের বিল্ডিং তৈরির সময় জায়গা দিয়েছিলেন সত্য কিন্তু তখন রেজিস্ট্রারি (কবলা দলিল) করে দেয়নি। পরবর্তীতে তার ছেলে দলিল করে দিয়েছে। জায়গার মূল্য বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারবো না। তিনি স্কুলের নামে জমি দানের (কবলা দলিল) জমা দিয়েছেন সেই মোতাবেক তাকে আজীবন দাতা সদস্য নির্বাচিত করা হয়েছে এর বেশি কিছু আমি বলতে পারবো না।

অফিস সহকারী রুমি আক্তার তার বিরুদ্ধে অভিযোগের কথা অস্বীকার করেন।
বিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ ও নিয়োগ বাণিজ্য সম্পর্কে জানতে চাইলে সভাপতি সুমন মন্ডল বলেন, উপর মহলের সিদ্ধান্ত মোতাবেক বিদ্যালয়ের তিনটি পদে কর্মচারী নিয়োগ দেওয়ার জন্য নিয়োগ পরীক্ষার সকল কার্যক্রম সম্পূর্ণ করা হয়েছে। আগামীকাল ২৭ ডিসেম্বর নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। নিয়োগ বাণিজ্য এবং নানা অনিয়মের অভিযোগের বিষয়ে তিনি অস্বীকার করে বলেন, এসব আমি কিছুই জানি না।


আরো পড়ুন