• রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ০৩:৪১ পূর্বাহ্ন

হিলি বন্দর সড়কের দ্রুত সংস্কার ও ঢাকাগামী ট্রেনের যাত্রা বিরতির দাবিতে মানববন্ধন

/ ১০০ বার পঠিত
আপডেট: সোমবার, ১০ জুলাই, ২০২৩

হিলি প্রতিনিধি:-
দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দরের চার লেন সড়কের কাজ দ্রুত বাস্তবায়ন, স্থায়ী বাস, ট্রাক টার্মিনাল এবং ব্রিটিশ আমলের হিলি রেলস্টেশনের আধুনিকায়ন ও ঢাকাগামী আন্তঃনগর ট্রেন থামানোর দাবিতে ঘন্টাব্যাপী বন্দরের প্রধান সড়ক অবরোধ করে হাকিমপুর হিলি নাগরিক কমিটির আয়োজনে মানববন্ধন করেছে হাকিমপুর হিলি উপজেলার সাধারণ ছাত্র, মুক্তিযোদ্ধা, সাংবাদিকসহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার শত শত মানুষ। এতে প্রায় ২ ঘন্টার জন্য বন্ধ থাকে বন্দরের আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম। সড়কের দুইধারে যানবাহন আটকে সুষ্টি হয় যানজট। মানববন্ধন থেকে তাদের দাবি দ্রুত বাস্তবায়ন না করা হলে হিলিকে অচল করে দেওয়া সহ ট্রেন থামানোর ঘোষণা দেন বক্তারা।

সোমবার (১০ জুলাই) বেলা ১১টায় হিলি স্থলবন্দরে প্রধান সড়কের চারমাথা মোড়ে আন্দোলনে নামে সাধারণ মানুষ। এতে ব্যবসায়ী, আমদানি-রপ্তানিকারক, মুক্তিযোদ্ধা, শ্রমিক ও শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার কয়েকশ লোক ব্যানার ও ফেস্টুন হাতে সড়ক অবরোধ ও মানববন্ধন করে।
দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তর স্থলবন্দর হিলি। ব্রিটিশ আমলে এই বন্দরের জিরো পয়েন্ট সংলগ্ন এলাকায় একটি ট্রেন স্টেশন তৈরি করা হয়েছে। ইতিপূর্বে পুরাতন এই স্টেশনে আন্তঃনগর সহ সব ধরণের ট্রেন থামত এবং ভারত থেকে আমদানি করা বিভিন্ন পণ্য নিয়ে মালামালবাহী ট্রেন এই স্টেশনে পণ্য খালাশ করতো। তবে দীর্ঘদিন যাবত এই স্টেশনে ট্রেনের এই দুটি কার্যক্রম একেবারে বন্ধ আছে। তবে বরেন্দ্র, রকেট ও তিতুমীর নামক আন্তঃনগর ট্রেন শুধুমাত্র যাবার সময় থামে। তবে আসার সময় আর থামে না।
অপরদিকে গত ২০১৮ সালের আগে এই বন্দরের হিলি চারমাথা হতে মহিলা কলেজ পর্যন্ত ২ হাজার ২০০ মিটার রাস্তা চারলেনে উন্নীত করার অনুমোদন দেয় সরকার। কাজটি বাস্তবায়ন করার দায়িত্ব পায় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেড। গত ২০১৮ সালে সড়ক প্রশস্তকরণ কাজ শুরু করে এই ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। তবে এরমাঝে ৪ বছর অতিবাহিত হলেও শেষ পর্যন্ত সড়কটি আর চারলেনে উন্নীত হয়নি।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কোন কারণ ছাড়াই গত ২০২২ সালে মালবাহী ট্রেন থেকে হিলি স্টেশনে পণ্য খালাশ কার্যক্রম বন্ধ করে দেয় কতৃপক্ষ। এছাড়াও এই স্টেশনে স্টপেজ না থাকায় আন্তঃনগর ট্রেন থামে না। এসবের কারণ হিসেবে নিরাপত্তাজনিত কারণে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)’র আপত্তি থাকায় ট্রেনের এই দুটি সেবা বন্ধ করা হয়েছে বলে স্থানীয়দেরকে জানান রেল কতৃপক্ষ।

একই ভাবে চারলেন সড়ক দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য স্থানীয় সচেতন মহল বিভিন্ন দপ্তরে দিনের পর দিন ঘুরেছে। তবে সকলে আশ্বাস দিলেও, শেষ পর্যন্ত কথা রাখেনি কেও, এমনটাই অভিযোগ আন্দোলনকারীদের। রাস্তার কাজ শেষ করতে না পারায় হালকা বৃষ্টিতে পানির নিচে ডুবে থাকছে গুরুত্বপূর্ণ এই সড়কের বিভিন্ন অংশ। খানাখন্দে ভরা রাস্তার কারণে ব্যাহত হচ্ছে আমদানি- রপ্তানি কার্যক্রম। এছাড়াও হিলি স্টেশনে ট্রেন থামানোর বিষয়ে রেলমন্ত্রী এবং সাবেক ও বর্তমান বিজিবি মহাপরিচালকের কাছে অনুরোধ জানিয়েছিলেন স্থানীয়রা। তারাও শুধু বিষয়টি দেখবো বলেই আশা দিয়ে  গেছেন।
সড়ক অবরোধ ও মানববন্ধনে সাধারণ ছাত্রদের পক্ষে বক্তব্য রাখেন মোস্তাকিম হোসেন তিনি বলেন, হিলি স্থলবন্দর দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম স্থলবন্দর। সরকার এখান থেকে কোট কোটি টাকা রাজস্
আয় পেয়ে থাকে। এরপরও এখানকার বন্দর রাস্তার যে বেহাল দশা আমার মনে হয় দেশের অন্য কোথাও নেই। এছাড়াও ব্রিটিশ আমলের রেলস্টেশনে ঢাকাগামী সব ট্রেন থামানোর জোর দাবি জানান তিনি। যদি সব ট্রেনের বিরতি দেওয়া না হয় আগামীতে রেললাইনে অবরোধ করে ট্রেন থামিয়ে দাবি আদায়ের ঘোষণা দেন তিনি।

সড়ক অবরোধ ও মানবন্ধন থেকে পৌর সভার নাগরিক আন্দোলনকারী মিশর উদ্দীন সুজন বলেন, আমাদের যৌক্তিক দাবি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্য বাস্তবায়ন না করা হলে হিলি বাসীর ভোগান্তি লাঘবে আমি নিজের শরীরে নিজেই কেরোসিন ঢেলে আত্মহুতি দেব। তবুও এই কষ্ট ও ভোগান্তি আমরা আর সহ্য করবো না।

বীরমুক্তিযোদ্ধা শাসছুল আলম মন্ডল বলেন, দিনের পর দিন সবাই শুধু আমাদেরকে আশ্বাস দিয়ে গেছে। বিনিময়ে কাজের বাস্তবায়নতো হয়নি বরং চরম ভোগান্তিতে আমরা হিলিবাসী। আমাদেরকে যে পরিমাণ অবেহেলার মধ্যে রাখা হয়েছে, তাতে মায়ানমার থেকে আসা রোহিঙ্গারা আমাদের চেয়ে ভালো আছে।

হিলি নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব বীরমুক্তিযোদ্ধা লিয়াকত আলী বলেন, বিজিবি প্রধানের কাছে গিয়েছি, রেলমন্ত্রীর কাছে গিয়েছে। কিন্তু ফলাফল শূন্য। এবার আমাদের যৌক্তিক দাবি না মানা হলে আগামীতে আমরা আরো কঠোর আন্দোলনে নামবো। প্রয়োজনে পুরো হিলিকে অচল করে দেয়া হবে।

এদিকে দিনাজপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) শাকিল আহমেদ বলেন, হিলি স্থলবন্দরের বিষয়ে সরেজমিনে তদন্ত করেছি। চার লেন সড়কের দ্রুত কাজ শেষ করার বিষয়ে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তারা দ্রুত গতিতে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। এছাড়া ভূমি অধিগ্রহণ এর কাজ রয়েছে সেটিও দ্রুত নিষ্পত্তির কাজ চলছে। সড়ক বিভাগের কর্মকর্তারা আজও (সোমবার) সেখানে গিয়েছেন। আমরা সার্বিক বিষয় তদারকি করছি। তবে ট্রেন থামানোর বিষয়ে আমাদের করণীয় কিছু নেই। তবে স্থানীয়দের দাবিটি আমরা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয় ও কর্মকর্তাকে জানাবো।


আরো পড়ুন