• রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ০২:২৬ পূর্বাহ্ন

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এর গাফিলতি বর্ষার শুরুতেই হিলি স্থলবন্দর সড়কের বেহাল দশা যেন দেখার কেউ নেই 

/ ৬১ বার পঠিত
আপডেট: শনিবার, ৮ জুলাই, ২০২৩

গোলাম রব্বানী হিলি প্রতিনিধি:- 

দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দরের প্রধান সড়কটি চার লেনে উন্নীতকরণের কাজ এর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এর গাফিলতি ও অবহেলার কারণে বর্ষার শুরুতেই বন্দর সড়কের বেহাল দশা যেন দেখার কেউ নেই। চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে পণ্যবাহী ট্রাক, বাস, মাইক্রোবাস, বাইক, রিকশা, ভ্যান চালকসহ সাধারণ পথচারীদের। রাস্তার কার্পেটিং তুলে ফেলার কারণে রাস্তায় বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। হিলি পানামা পোর্ট জিরো পয়েন্ট, হিলি বন্দরের চারমাথা মোড় দক্ষিণে হাকিমপুর মহিলা কলেজ পর্যন্ত, হিলি সিপি মোড় থেকে (ফকির পাড়া) ধরন্দা পর্যন্ত বন্দরের সব সড়কগুলোর বেহাল অবস্থা। বর্ষার একটু পানিতে ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়ে। এদিকে হিলি-ঘোড়াঘাট সড়কের দীর্ঘ দিন থেকে সংকার কাজ না করায় গুরুত্বপূর্ণ এই সড়কটিও চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। ফলে ভাঙাচোরা সড়ক দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে আমদানীকৃত পণ্যবাহী ট্রাক। সড়ক খুঁড়ে রাখা আর এক ঢালায় কাজ করায় মাঝে মধ্যেই গর্তে পানি জমা হয়ে ট্রাক উল্টে যাওয়ার ঘটনা ঘটছে। এতে ব্যাহত হচ্ছে হিলি বন্দরের স্বাভাবিক আমদানি-রফতানি কার্যক্রম। আবার এক সপ্তাহ বৃষ্টি না হলে সড়কে প্রচণ্ড ধুলার কারণে ভোগান্তির শিকার হয় পথচারী ও স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। ব্যস্ততম স্থলবন্দর সড়কের নির্মাণকাজ মাসের পর মাস থেমে থেমে কাজ করায় ভোগান্তি সৃষ্টির কারণে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের গাফিলতি ও অবহেলাকে দায়ী করছেন বন্দরের ব্যবসায়ী, স্থানীয়রাসহ এ পথ ব্যবহারকারীরা। অন্য দিকে ঠিকাদারি  প্রতিষ্ঠানের সমস্যার কারণে বর্ষার শুরুর আগেই কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও তা এখনো সম্ভব হয়নি দাবি সড়ক ও জনপথ বিভাগের। 

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, হিলি স্থলবন্দরের প্রধান সড়কটি চার লেনে উন্নীতকরণের কাজ শুরু হয় গত বছরের অক্টোবর মাসে। জিরো পয়েন্ট থেকে পানামা ৩নং গেট পর্যন্ত ২ দশমিক ৫৮ কিলোমিটার সড়কের নির্মাণ ব্যয় ধরা হয় ৩৩ কোটি ৯০ লাখ টাকা। এ কাজ পায় ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (এনডিই) নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। অক্টোবরের শেষ দিকে সড়কের কার্পেটিং তুলে ফেলাসহ ভেঙে ফেলা হয় সড়কের দুই পাশের স্থাপনা। এরপর সড়কের একপাশে ঢালাইকাজ শুরু হয়। এভাবে দু-এক সপ্তাহ কাজ করার পরই বিল না পাওয়ার অজুহাতে সরঞ্জামাদি নিয়ে চলে যায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি। তার পর মুখ থুবড়ে পড়ে সড়কের উন্নয়নকাজ। দীর্ঘ প্রায় চার মাস আবার শুরু করে সড়কের উন্নয়ন কাজ। আবার এক সপ্তাহ কাজ করে হারিয়ে যায় ঠিকদার প্রতিষ্ঠানের লোকজন। এভাবে চলে আসে বর্ষা। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন পথচারী শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন যানবাহনের চালক ও যাত্রীরা। খড়া ও রোদে সড়কের প্রচণ্ড ধুলায় নাস্তানাবুদ হচ্ছেন পথচারীসহ স্থানীয়রা। একইভাবে ভাঙাচোরা সড়কের কারণে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে ভারত থেকে পণ্য নিয়ে আসা ট্রাকচালকদের। ব্যাহত হচ্ছে স্থলবন্দরের স্বাভাবিক আমদানি-রফতানি কার্যক্রম। চলতি অর্থবছরের জুনের মধ্যে এ সড়কের কাজ শেষ করার কথা থাকলেও এখনো অর্ধেক কাজ হয়নি। তাই কবে কাজ শেষ করে আর দুর্ভোগ লাঘব হবে তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন স্থানীয়রা। 

স্থানীয় বাসিন্দা সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার লিয়াকত আলী বলেন, বন্দর সড়কের সংস্কার কাজ  করার জন্য পাকা রাস্তার কার্পেটিং তুলে ইট দিয়ে হেয়ারিং করা হয়। পরে চার লেন সড়কের উন্নয়ন কাজ শুরু করার রাস্তা খুঁড়ে মাটি ফেলে রেখে ঠিকাদার পালিয়ে যায়। পরে এক পাশের ঢালায় কাজ শুরু হলে কিছুদিন পরে ঠিকাদারের লোকজন সব হারিয়ে যায়। দীর্ঘ চার মাস পরে আবার শুরু করে এখন এক সপ্তাহ কাজ করলে আর এক সপ্তাহ নাই। এর মধ্যে চলে বর্ষা দুই দিন বৃষ্টি হতেই হিলি পানামা পোর্ট থেকে জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত রাস্তার এমন গর্ত হয়েছে পণ্যবাহী ট্রাক ও যাত্রীবাহী বাস চলাচল দায় হয়ে পড়েছে। এতে আমাদের সমস্যার মধ্যে পড়তে হচ্ছে।

ট্রাক চালক রকি মিয়া বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে ভাঙাচোরা থাকার পর রাস্তার কাজ শুরু হলে আমরা আশায় বুক বেঁধেছিলাম। কিন্তু কাজ শুরুর কিছু দিন পরে দেখি কাজ বন্ধ হয়ে যায়। কয়েক মাস পরে আবার শুরু করে। এখন দেখি কাজ হচ্ছে এই দেখি নাই। এতে করে ভাঙাচোরা সড়ক দিয়েই পণ্যবাহী ট্রাক চালাতে গিয়ে নানা সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। গত দুই দিন একটু বৃষ্টি হওয়ায় ভারত থেকে খৈল বোঝাই একটি উল্টে গিয়ে চালক ও হেলপার আহত হয়। এভাবেই ঝুঁকি নিয়ে আমাদের চলতে হচ্ছে। 

স্থানীয় দোকানি রফিকুল ইসলাম বলেন, আগে যে রাস্তা ছিল, সামান্য ভাঙাচোরা থাকলেও সেটিই ভালো ছিল আমাদের জন্য। এখন রাস্তার এক পাশ ঢালায় কাজ করতে বর্ষা শুরু হয়েছে। একপাশ আর একপাশে কাজ করার আমাদের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। আবার ঠিকাদাররা ঠিক মতো কাজ করে না। এখন সামান্য বৃষ্টি হলে আমাদের দুর্ভোগের শেষ নাই। তাই দ্রুত এই রাস্তার শেষ করার দাবি জানাচ্ছি।

হিলি বন্দরের আমদানিকারক রবিউল ইসলাম সুইট বলেন, স্থলবন্দরের একমাত্র সড়কটির এ দুরবস্থার কারণে ভারত থেকে আমদানীকৃত পণ্য নিয়ে আসা ও বন্দরে পণ্য নিতে আসা বাংলা ট্রাকগুলোর প্রতিনিয়ত হয় পাতি ভেঙে যাচ্ছে না হয় চাকা ফেটে যাচ্ছে। যার কারণে অনেক ট্রাকচালক হিলি স্থলবন্দরে আসতেই চাচ্ছেন না। তাই রাস্তার কাজ দ্রুত সম্পূর্ণ করা না হলে আমাদের দুর্ভোগের শেষ থাকবে না। 

হিলি বন্দরের সি এন্ড এফ এজেন্ট এসোসিয়েশন এর সভাপতি আব্দুর রহমান লিটন বলেন, হিলি স্থলবন্দর দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম স্থলবন্দর। এখান থেকে সরকার কোটি কোটি টাকার রাজস্ব আয় পেয়ে থাকে। যার ফলে সরকার বন্দরের চার লেন সড়ক উন্নয়নের কাজ শুরু করেছে। কিন্তু ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের চার লেন সড়ক উন্নয়নের দেরিতে যাচ্ছে। এখন বর্ষা চলে আসায় একটু বৃষ্টিতে সড়কের একপাশে গর্তে পানি জমে থাকছে আর একপাশে ঢালায় কাজ চলছে। ফলে বন্দরের আমদানি রফতানি কাজ ব্যহত হচ্ছে। গত দুই দিন আগে সামান্য বৃষ্টিতে রাস্তার গর্তে পানি জমে থাকায় ভারত খৈল বোঝাই ট্রাক বন্দরের পানামা পোর্ট এর ভিতরে প্রবেশের আগেই রাস্তায় উল্টে গিয়ে ভারতীয় ট্রাক চালক ও হেলপার আহত হয়। পরে আমরা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা করায়। সড়কের কাজ শেষ না হওয়ায় আমদানি রফতানি কার্যক্রম ব্যহত হচ্ছে পাশাপাশি আমাদের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। তাই দ্রুত সড়কের কাজ শেষ করার জন্য সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের নিকট দাবি জানাচ্ছি। 

তিনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন বাংলাদেশের মধ্যে সবচেয়ে ফালতু ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান। এদের লাইন্সেস কালো তালিকা করা দরকার। 

হাকিমপুর হিলি পৌর মেয়র জামিল হোসেন চলন্ত বলেন, আমি নিজেও একজন বন্দরের ব্যবসায়ী ও আমদানি কারক। ভারত থেকে পণ্যবাহী ট্রাক বন্দরে প্রবেশের বিকল্প রাস্তা না থাকায় আমাদের এই একটি মাত্র সড়ক ব্যবহার করতে হয়। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের গাফিলতি ও অবহেলার কারণে চার লেন সড়কের কাজ দ্রুত শেষ না হওয়ায় স্থানীয়সহ ব্যবসায়ীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। আবার আমাদের এই ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। 

তিনি আরও বলেন, আমি ইতিমধ্যে স্থানীয় সংসদ সদস্য শিবলী সাদিক এর মাধ্যমে সরকারের উচ্চ পর্যায়ে সড়কের কাজ দ্রুত সম্পূর্ণ করা জন্য জোড় দাবি জানিয়েছি। খুব অল্প সময়ের মধ্যে চার লেন সড়কের কাজ শেষ হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন।

দিনাজপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী আনফ সরকার  বলেন, হিলি স্থলবন্দরের চার লেন সড়ক এর কাজ শুরুতে রাস্তার কার্পেটিং তুলে ইট বিছিয়ে হেয়ারিং করা হয়েছিল। যার ফলে রাস্তায় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে এবং একটু বৃষ্টিতে পানি জমে থাকছে। চার লেন সড়কের ঢালায় শুরু হওয়ার পরে বাজারে সব জিনিসের মূল্য বৃদ্ধি ও  ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের আরও কিছু সমস্যার কারণে হিলি স্থলবন্দরের সড়কের ফোর লেনের কাজ শুরু হওয়ার পরে বেশ কয়েক মাস বন্ধ ছিলো। ফলে চলতি বছরের জুন মাসে কাজ শেষ করার থাকলেও তা সম্ভাব হয়নি। তার পরে কাজ কাজ চলছে বর্তমানে আর অল্প একটু ঢালায় কাজ শেষ হলে রাস্তা একপাশ দিয়ে ভারি যানবাহ চলাচল করতে পারবে। আর অন্য পাশে দুই লেন এর ঢালায় কাজ দুই এককের মধ্যে শুরু করে দিবো। তবে দুই আগে হঠাৎ একটু টানা বৃষ্টি হওয়ায় সড়কে যানবাহন চলাচলে সমস্যা হয়েছে। আমরা গতকাল ৫ জুলাই বন্দর সড়কে দেখেছি। বন্দর সড়কের যেসব জায়গায় বড় বড় গর্ত ও যেসব জায়গায় পানি জমে থাকছে। সেসব জায়গাগুলো সাথে সাথে সংস্কার কাজ শুরু করে দিয়েছি। দ্রুত সময়ের মধ্যে পানামার ৩ নং গেট থেকে জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত চার লেন সড়কের কাজ শেষ হবে বলে আশা করছি। আর বন্দরের চারমাথা থেকে মহিলা কলেজ পর্যন্ত সড়কের কাজ ভূমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া শেষ না হলে সড়কের কাজ দ্রুত শেষ করা সম্ভব হবে না। সড়কের নির্মাণকাজ বিলম্ব হওয়ার কারণে আমরা আন্তরিকভাবে দুঃখিত।


আরো পড়ুন