• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৪:২৬ পূর্বাহ্ন

রামগতি পৌরসভা নির্বাচন আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের হাতে হাতে ইভিএম!

অ আ আবীর আকাশ, লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি / ৩৮৭ বার পঠিত
আপডেট: মঙ্গলবার, ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২১

লক্ষ্মীপুর-রামগতি পৌরসভা নির্বাচনের নামে ইভিএম হাতে নিয়ে নৌকা প্রার্থীর নেতাকর্মীদের ভোট প্রদানসহ নানা অভিযোগে নির্বাচন প্রশ্নবোধক হয়ে পড়েছে। হাতেনাতে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ইভিএমসহ ধরে প্রিসাইডিং অফিসার, দায়িত্বপ্রাপ্ত ম্যাজিস্ট্রেটকে জানিয়েও কোনো ফল হয়নি। এ বিষয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত ম্যাজিস্ট্রেটের বক্তব্য নেয়ার চেষ্টা করলেও তারা ক্যামেরার সামনে বক্তব্য দিতে রাজি হননি। ফলে এই নির্বাচন বয়কট করেছেন ধানের শীষ প্রতীকের মেয়র প্রার্থী শায়েদ আলী পটু, লাঙ্গল প্রতীকের মেয়র প্রার্থী মোঃ আলমগীর হোসেন, হাতপাখা প্রতীকের মেয়র প্রার্থী আব্দুর রহিমসহ অন্যন্যরা।
সকাল দশটার দিকে আলেকজান্ডার পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, আওয়ামীলীগ নেতা কামাল হোসেন ও মোঃ শাহাবুদ্দিন নিজ হাতেই ইভিএমে ভোটারদের আঙ্গুলের ছাপ নিয়ে নিজেই নৌকায় ভোট দিচ্ছেন। দুপুর আড়াইটার দিকে পূণরায় এসে আবারো আওয়ামী লীগ নেতা মোঃ ফয়েজ ইভিএম মেশিন নিয়ে নিজেই নৌকায় ভোট মারার দৃশ্য এ প্রতিবেদকের ক্যামেরাবন্দী হয়।
ভিডিওচিত্রসহ আমরা এ বিষয়ে প্রিসাইডিং অফিসার মোঃ আহসান ও কর্মরত ম্যাজিস্ট্রেট মনিরা খাতুনকে জানিও কোন সুফল হয়নি। এমনকি তারা কোনো বক্তব্য দিতেও রাজি হননি।
বিভিন্ন ভোট কেন্দ্র ঘুরে দেখা গেছে, ইভিএম বাইরে রেখে নৌকা প্রতীকে ভোটারদের ভোট দিতে বাধ্য করছে নেতাকর্মীরা।
সরেজমিনে ওই কেন্দ্রের নারী ও পুরুষ বুথে ৬ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ নেতা কামাল হোসেনসহ প্রত্যেকটি বুথে একই রকমভাবে নৌকায় ভোট দিতে বাধ্য করতে দেখা গেছে।
সহকারী প্রিসাইডিং অফিসারদের ভাষ্য, তারা দেখেননি। ইভিএম নিয়ে বসে থাকা আওয়ামীলীগ নেতারা নিজেদের নৌকা প্রতীকের এজেন্ট দাবি করেছেন। তবে একেকটি বুথে পাঁচ থেকে আটজন করে এজেন্ট দেখা গেছে। পরিচয় জানতে চাইলে এজেন্ট বলে তারা পরিচয় দিলেও বৈধ কোন কাগজপত্র দেখাতে পারেননি। এই বিষয়ে চর হাসান হোসেন এ আখের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রিসাইডিং অফিসার ও ম্যাজিস্ট্রেটকে জানিও কোন সদুত্তর পাওয়া যায়নি।
এদিকে একটি বুথেও ধানের শীষ প্রতীকের এজেন্ট দেখা যায়নি। তারা আসছে কি না তা-ও বলতে পারছে না সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার মো. ইউসুফ ও আবদুর রাজ্জাক।
ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী শাহেদ আলী পটু রামগতি পৌরসভা নির্বাচনকে তামাশার নির্বাচন বলে আখ্যায়িত করে তিনি বলেন -‘আজকের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ভোট কাটেনি,ভোট কেটেছে রাষ্ট্রযন্ত্র। রাষ্ট্রের কর্মচারীরা যেখানে আওয়ামী লীগ হয়ে যায়, একচেটিয়া ভোট কাটে সেখানে আমরা কাকে অভিযোগ জানাবো? কার কাছে অভিযোগ দেব? সকাল ৯ টার পরে আমার ধানের শীষের এজেন্টদের প্রত্যেক কেন্দ্র থেকে বের করে দেয়া হয়েছে। এটা নির্বাচন না হয়ে একটা তামাশার নির্বাচনে পরিণত হয়েছে।
আবু আব্দুল্লাহ এসময় বলেন ভোট না দিয়ে প্রশাসন একচেটিয়া ঘোষণা করে দিলেই পারতো, আমাদের টাকা পয়সা খরচ হতো না।
জাতীয় পার্টি লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী মোঃ আলমগীর হোসেন সকাল দশটার দিকে নির্বাচন বর্জন করেন। তিনি এ প্রতিবেদককে জানান -‘যেখানে নৌকার প্রার্থীদের রেখে বাকি প্রার্থীদের এজেন্টকে হুমকি-ধামকি দিয়ে বের করে দেয়া হয়। এটা কোনো নির্বাচনই নয়, এটি একটি প্রহসন, আওয়ামী লীগ নেতারা ইভিএম বাহিরে নিয়ে এসেছেন। তারা ভোটারদের নৌকা মার্কায় ভোট দিতে বাধ্য করছেন। এগুলো আমরা প্রিসাইডিং অফিসার, ম্যাজিস্ট্রেটকে জানিয়েও কোনো ফল পাইনি। এ জন্য আমরা রাগে ক্ষোভে দুঃখে নির্বাচন বর্জন করেছি।
হাতপাখার মেয়র প্রার্থী আবদুর রহিম বলেন, ইভিএম কালো পর্দার ভেতরে থাকার কথা থাকলে এখন বাইরে। আওয়ামী লীগের নেতারা প্রভাব খাটিয়ে বাইরে ইভিএম রেখে নৌকা প্রতীকে ভোট দিতে বাধ্য করছে। এ নিয়ে প্রিসাইডিং ও সহকারী প্রিসাইডিং নীরব ভূমিকা পালন করছেন।
প্রিসাইডিং অফিসার মো. আহসান জানান, বুথের কালো পর্দার ভেতরে ইভিএম থাকবে সেখানে ভোটাররা গোপনে ভোট দেবেন। বাইরে ইভিএম রেখে ভোট দেওয়ার বিষয়ে তিনি অবগত ছিলেন না। এ নিয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেবেন বলে জানান তিনি।
নির্বাচন কার্যালয় সূত্র জানায়, এই প্রথম লক্ষ্মীপুরে ইভিএমে ভোটগ্রহণ চলছে। রামগতি পৌরসভায় ২০ হাজার ৯০৫ জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করছেন। এখানে নৌকা প্রতীকে বর্তমান মেয়র মেজবাহ উদ্দিন মেজু ও ধানের শীষে রামগতি পৌর বিএনপির সভাপতি সাহেদ আলো পটুসহ ছয়জন মেয়র প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ৯ ওয়ার্ডের ১০টি কেন্দ্রে ৯ জন ম্যাজিস্ট্রেটের অধীনে পুলিশসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নিরাপত্তায় রয়েছে।


আরো পড়ুন