• বুধবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ০১:৩৬ পূর্বাহ্ন

বীরচন্দ্র গণপাঠাগার ও নগর মিলনায়তন ( কুমিল্লা টাউন হল ) প্রসঙ্গে ।

নিজস্ব প্রতিবেদক / ৪৫১ বার পঠিত
আপডেট: বুধবার, ৯ ডিসেম্বর, ২০২০

এটি আমাদের শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত, বহু বছরের পুরোনো ঐতিহ্যে লালিত স্থাপত্যশৈলীর অনন্য নিদর্শন।

এটি ভেঙে নতুন করে বহুতলবিশিষ্ট আধুনিক স্থাপনা নির্মাণ করার প্রস্তাব করেন (ডিও ) কুমিল্লা সদর আসনের মাননীয় সাংসদ জনাব আ ক ম বাহাউদ্দিন, সংস্কৃতি মন্ত্রনালয়ে । যার পরিপ্রেক্ষিতেই সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় গণপূর্ত বিভাগকে কুমিল্লা টাউন হল নিয়ে একটি নকশা করার জন্য বলেন ।

কথা হচ্ছে এই ভবন ভাঙ্গা হবে কেন ?
এবং কি ধরনের আধুনিক সুযোগ সুবিধা সহ স্থাপনা নির্মিত হবে সেখানে, এইসকল বিষয়ে খোলামেলা জবাব এবং আলোচনা করেন মাননীয় সাংসদ জনাব বাহার আমাদের সাথে আজ দুপুর সাড়ে তিনটায় কাওরান বাজারের জনতা টাওয়ারে অবস্থিত উনার অফিসে ।

তিনি বলেন ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের রাজপরিবারের স্মৃতি বহন করা টাউন হলটি কুমিল্লাবাসীর গৌরব ও প্রাচীন ঐতিহ্যের প্রতীক ।
আরও বলেন, প্রথমে ছোট একটি ছনের ঘরে লাইব্রেরিটি স্থাপিত হয়, পরে টিনের ঘর করে লাইব্রেরি চালু থাকে।
১৯৩৩ সনে অনেকের সহায়তা নিয়ে চুন সুরকির দেয়ালের উপর টিনের ছাউনি দিয়ে এ হল তৈরি করা হয়।
এটি দুই অংশে বিভক্ত, পূর্ব দিকের অংশটি একতলা দুতলা মিলে গনপাঠাগার এবং পশ্চিম অংশটি একতলা দুতলা মিলে মিলনায়তন হিসাবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে যুগ যুগ ধরে ।

ভবনটি ভাঙ্গা হবে কেন ?
==============
১) এটি অতি পুরাতন জরাজীর্ণ ঝুঁকিপূর্ণ ভবন । নেই কোন গ্রিন রুম, মহড়া কক্ষ, প্রক্ষালন কক্ষ( ওয়াশ রুম ) । বৃষ্টি হলে স্টেজের তিন/ চার জায়গায় ও হলের ছাদ দিয়ে পানি পড়ে, দেয়াল খসে পড়ছে , এবং পানি পড়ে দেয়াল বেয়ে ।
স্টেজেও কয়েক জায়গায় ছাদ থেকে পানি পড়ে, ফলে অনুষ্ঠান চালনায় বিব্রত পরিস্থিতি হয়।

“এই অবস্থায় যে কোন সময় ডেকে আনতে পারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলের টিভি রুমের ( অযোগ্য ঘোষিত অ্যাসেম্বলী ভবন ) মত আরেকটি ট্র্যাজেডি এইদেশে । ”

২) বর্তমান স্থাপনার দোতালার বারান্দায় তিন / চার জন একসাথে হাঁটলে বারান্দা কাঁপতে থাকে– এটা এমনই নাজুক ও পড় পড় অবস্থায় আছে।

৩) মাঠ ও সামনের চত্বর থেকে হলের ফ্লোর অনেক নীচু বিধায় বৃষ্টি হলেই ভাঙ্গা ছাদ, ফাটা দেয়ালের গা বেয়ে এবং ফাটা ফ্লোরের বিভিন্ন অংশ দিয়ে নিচ থেকে পানি উঠে এসে ফ্লোরে ২/৩ ইন্চি পানি জমে যায়। অনুষ্ঠান চলাকালীন সে পানি বের করার জন্য পাপ্ম ভাড়া আনতে হয়। মটর পাম্পের শব্দে অনুষ্ঠানে বিঘ্ন হয় বিধায় অনেক ক্ষেত্রেই অস্বস্তির কারণে অনুষ্ঠান বন্ধ রাখতে হয়।

৪) ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার কারণে যোগানের সাথে চাহিদার সামঞ্জস্য খুবই অপ্রতুল । স্থানের অভাবের কারণে বর্তমানে লাইব্রেরিতে বই , আলমারি , পড়ার জায়গা চাহিদা অনুযায়ী বৃদ্ধি করা অসম্ভব হয়ে পরেছে ।
৫) বিরাট সমস্যা হয়ে পরেছে মান্ধাতা আমলের ব্যবস্থা নিয়ে সীমিত এই মিলনায়তনে চাহিদা অনুযায়ী দর্শকদের স্থান সংকুলান করা ।

৬) এছাড়া দিনাজপুরের কান্তজীর মন্দির বা কুমিল্লার শালবন বিহারের মত সে সময়ের সামাজিক, সাংস্কৃতিক,ধর্মীয় আচারের উপাখ্যান, জীবনাচরণ নিয়ে নির্মাণ শৈলীতে বিশেষ বিশেষত্ব, কোন টেরাকোটা বা বিশেষ অর্থবহ নক্সা বা কারুকাজ নেই বলে দর্শক/ পর্যটক আকর্ষণের জন্য এ ভবন তেমন কোন প্রত্নতাত্ত্বিক ঐতিহ্যগত ভ্যালু ও গুরুত্ব বহন করে না , তাই নতুন স্থাপনা নির্মাণে সহায়ক হবে এই জরাজীর্ণ ঝুঁকিপূর্ণ ভবনটি ভেঙ্গে।

৭ ) কোন ক্রমেই সম্ভব নয় জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক কোন সভা, সমাবেশ , কনফারেন্স, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করা এই নিন্মমানের মিলনায়তনে।

বহুতলবিশিষ্ট আধুনিক স্থাপনায় কি থাকবেঃ
==============================
১) বর্তমান হলের উপরের অংশের নাম উৎকীর্ণ অংশের পূর্ব- পশ্চিমে প্রলম্বিত ডিজাইনটির আদলেই হবে নতুন স্থাপনার উপরের অংশের আদল।
এবং যেখানে বর্তমানের মতই লেখা থাকবে ” বীর চন্দ্র গনপাঠাগার ও নগর মিলনায়তন”
২) আধুনিক এবং বৃহৎ ডিজিটাল পাঠাগার ।
৩) অত্যাধুনিক সুযোগ সুবিধা সহ একাধিক মিলনায়তন ।
৪) সবচেয়ে বড় মিলনায়তনটিতে সাত শতাধিক দর্শকের বসার ব্যবস্থা থাকবে।
৫) এছাড়া ১৫০ থেকে ২০০ আসনবিশিষ্ট মিনি হলের বন্দোবস্ত করার পাশাপাশি আধুনিক নাট্যমঞ্চ করার পরিকল্পনা রয়েছে ।
৬) থাকবে কুমিল্লার কৃতি সন্তান, স্বাধীনতা সংগ্রামী , বীর মুক্তিযোদ্ধা , এবং শহীদদের কীর্তি ও অবদানের কথা , ছবি এবং নাম সহ ।
৭) আধুনিক গ্রিন রুম, মহড়া কক্ষ, প্রক্ষালন কক্ষ( ওয়াশ রুম ), ভিআইপি লাউঞ্জ, অতিথি কক্ষ ইত্যাদি।
৮ ) মিনি থিয়েটার এবং সিনে কমপ্লেক্সও থাকবে।
৯ ) প্রায় শতাধিক গাড়ির জন্য দ্বিতল গাড়ি পার্কিং,
১০) থাকবে অত্যাধুনিক ডিজিটাল ল্যাব ।
১১ ) প্রবেশ ও বাইরের আলাদা সড়ক।
১২ ) ফুড কোর্টসহ নানা ধরনের কক্ষ ।
১৩ ) এছাড়া জাতীয় এবং আন্তর্জাতিকমানের যে কোন অনুষ্ঠান করা যাবে প্রস্তাবিত এই মিলনায়তনে ।

ধন্যবাদ ।


আরো পড়ুন