• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ০১:০৭ অপরাহ্ন

করোনায় অভাব আর ঋণে নিম্ন আয়ের মানুষেরা জর্জরিত!

/ ২৩৫ বার পঠিত
আপডেট: মঙ্গলবার, ১০ নভেম্বর, ২০২০

মোঃ আনোয়ার হোসেন গণমাধ্যম ও মানবাধিকার কর্মী:- করোনায় নিম্ন আয়ের মানুষেরা অভাবে, ঋণে আর সংকটে জর্জরিত বলে অভিমত ব্যক্ত করেছেন নাগরিক সংলাপে ব্ক্তারা। করোনা দুর্যোগ ও নগরে নিম্ন আয়ের মানুষদের সংকট ও করণীয় শীর্ষক নাগরিক সংলাপটি আজ ১০ নভেম্বর ২০২০ পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা) ও বারসিক-এর উদ্যোগে সমাজসেবা বিভাগীয় কার্যলয় মোহাম্মদপুর, ঢাকার কনফারেন্স রুমে সকাল ১১ টায় অনুষ্ঠিত হয়। পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা)’র সাধারণ সম্পাদক ও পরিবেশ অধিদপ্তরের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক প্রকৌশলী মো: আব্দুস সোবহান এর সভাপতিত্বে ও পরিবেশ বার্তার সম্পাদক ফেরদৌস আহমেদ উজ্জলের সঞ্চালনায় সংলাপে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সমাজসেবা বিভাগীয় কার্যলয়ের পরিচালক মিনা মাসুদুজ্জামান, অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাপা’র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও বুড়িগঙ্গা বাঁচাও আন্দোলনের আহবায়ক মিহির বিশ^াস, সমাজসেবা কর্মকর্তা এ কেএম শহীদুজ্জামান, বারসিকের সহযোগী কর্মসূচী কমকর্তা সুদীপ্তা কর্মকার, নিম্ন আয়ের মানুষের প্রতিনিধি নুরুজ্জামান, আব্দুল কুদ্দুস, রাফেজা বেগম, ঝুমুর বেগম প্রমূখ। অনুষ্ঠানে ধারণাপত্র উত্থাপন করেন বারসিকের সমন্বয়ক মো: জাহাঙ্গীর আলম।

অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, করোনাকালে বস্তিবাসীরা হাজারটা সমস্যার মধ্যে দিন যাপন করে যাচ্ছে। তাদের আয় নেই, খাবার নেই, চিকিৎসা নাই। সরকার তার মতো করে চেষ্টা করে গেলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল।

নি¤œ আয়ের মানুষদেরকে আরও গুরুত্ব দিয়ে সরকারের সকল উন্নয়ন পরিকল্পনায় যুক্ত করার আহবান জানান বক্তারা। সংলাপে বক্তারা আরও বলেন, বেসরকারী তথ্যমতে মোট বস্তিবাসীর সংখ্যা ৪০ লক্ষের অধিক, যা ঢাকার মোট জনসংখ্যার প্রায় ৩৭.৪%। এই মানুষগুলো জলবায়ু পরিবর্তনজনিত নানাবিধ প্রাকৃতিক আপদ বন্যা, নদীভাঙ্গন, জলাবদ্ধতা, ঘূর্ণীঝড়, জলোচ্ছাস, খরা, শৈতপ্রবাহ, লবনাক্ততা কারণে জীবিকার তাগিদে গ্রাম ছেড়ে শহরে ভীড় করছে। ফলে সহজলভ্যতার কারণে তাদের অধিকাংশেরই জায়গা হচ্ছে শহরের অপরিকল্পিত এবং অপরিচ্ছন্ন বস্তিতে ও ফুটপাতের খোলা জায়গায়। তাছাড়াও গ্রাম এবং শহরের মধ্যে অর্থনৈতিক বৈষম্য তাদেরকে শহরে আসতে বাধ্য করছে।

২০২০ সালের আগষ্টের প্রথম সপ্তাহে বারসিকের গবেষণায় দেখা গেছে করোনার কারণে এখন পর্যন্ত ৫০% ভাগ গ্রহকর্মী এখনও তাদের কাজ ফিরে পায়নি। যারা কাজ করছে, তারা আগে তিনটি বা চারটি কাজ করলেও এখন করছে মাত্র একটি বা দুটি। ফলে শুধু গ্রহকর্মীদের আয় কমেঠে ৬৬ ভাগ। যার প্রভাব পড়েছে তাদের খাদ্যাভ্যাস সহ অন্যান্য জীবনযাত্রায়। এবং কি ৮৫ ভাগ বস্তিবাসী মানুষ ৫ হাজার টাকা থেকে ১ লক্ষ টাকার ঋণে জর্জরিত।

পাওয়ার এন্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টার (পিপিআরসি) এবং ব্র্যাক ইন্টিটিউট অব গভনেন্স এ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (বিআইজিডি) তথ্য মতে করোনাকালে পারিবারিক খরচ চালাতে না পেড়ে ঢাকা শহর ছেড়ে ১৫.৬৪ শতাংশ মানুষ গ্রামে চলে গিয়েছে এবং রিকশা চালকদের আয় কমেছে ৫৩%। এর মধ্যে নগরে সরকারের নগদ সহায়তা পেয়েছেন ১৬% মানুষ। করোনার এই নিদানকালে নগরের এই বিরাট দরিদ্র জনগোষ্টিকে যে কোন ভাবেই হোক বাঁচানোর উদ্যোগ নিতে হবে সরকারকে।

এই সমাজসেবা অধিদপ্তর পাইওনিয়ার হাউজিং বস্তিবাসী ৮ জনকে বয়স্ক ও প্রতিবন্ধি ভাতার জন্য নির্বাচন করায় আমরা এই অধিদপ্তরের সকলকে অভিনন্দন জানাই। সরকার ২০২০-২০২১ অর্থ বছর বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচীর জন্য প্রায় ৯৬ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছেন। অন্যান্য খাতের পাশাপাশি সামাজিক নিরাপত্তা খাতে যে ১৪৫ টির মত সেবা খাত-উপখাত রয়েছে, সেখানে নগরের নি¤œ আয়ের মানুষদের যুক্ত করতে পারলে তাদের জীবন জীবিকা কিছুটা হলেও সচল হতে পারত বলে বস্তিবাসীরা মনে করেন।

এই পেক্ষাপট বিবেচনায় সরকারের নিকট নিম্ন আয়ের মানুষদের প্রত্যাশা ও দাবীসমূহঃ
১. সকল নিম্ন আয়ের মানুষদের তাদের স্ব স্ব কাজে ফিরিয়ে নেয়ার জন্য সরকারী উদ্যোগের দাবি জানানো হয়।
২. নগরের নিম্ন আয়ের মানুষদের জন্য গ্রামের ন্যায় সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচী চালু করা। তাদের সকল ঋণ মওকুফের জন্য ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান।৩. করোনায় শহরের নিম্ন আয়ের মানুষদের জন্য সকল ধরণের ভাতার ব্যবস্থা করার দাবি জানান। করোনায় কর্মহীন নিম্ন আয়ের বস্তিবাসী ও পথবাসী মানুষীদের জন্য আয়বর্ধনমূলক কাজের প্রশিক্ষনের ব্যবস্থা করা।
৪. নগরের সব ধরনের বস্তি উচ্ছেদ বন্ধ করা। বস্তিবাসীদের জন্য সরকারী উদ্যোগে আবাসন ব্যবস্থার কাজ শুরু করা।
৫. বস্তিবাসীদের জন্য রেশনিং এর ব্যবস্থার দাবি জানানো হয়।


আরো পড়ুন