• মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১২:৪১ অপরাহ্ন

বরগুনা হাসপাতাল থেকে সাংবাদিক নির্যাতন প্রতিরোধ কমিটির জেলা সম্পাদক করোনাক্রান্ত!

/ ৩৬১ বার পঠিত
আপডেট: রবিবার, ৩০ আগস্ট, ২০২০
বরগুনা হাসপাতাল থেকে সাংবাদিক নির্যাতন প্রতিরোধ কমিটির জেলা সম্পাদক করোনাক্রান্ত
বরগুনা হাসপাতাল থেকে সাংবাদিক নির্যাতন প্রতিরোধ কমিটির জেলা সম্পাদক করোনাক্রান্ত

সোহেল হাফিজের লেখা হুবহু…
বিধাতার পছন্দের রঙ নিশ্চয়ই শুভ্র সাদা। তাইতো এখানকার সবকিছুই সাদা। ভবনের রং সাদা। বিছানার চাদর, বালিশের কাভার, মশারি সবই সাদা। কারারক্ষীসহ জেলার, জেল সুপার সকলের পোশাকই সাদা।
পার্থিব সব কারাগারের চেয়ে অনেকটাই উল্টো নিয়ম রহস্যময় এই কারাগারে। এখানে নবীনদের চেয়ে প্রবীনদের দন্ড বেশি। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বিনা দোষেই দণ্ড দেয়া হয় এখানে। এই কারাগারে অধিকাংশই বন্দি হয় স্বেচ্ছায়। মৃত্যুদণ্ডও নেয় স্বেচ্ছায়।
কারাকর্তৃপক্ষ বিধাতার অনুমতি সাপেক্ষে যে কাউকে যখন-তখন মুক্তি দিতে পারেন। চাইলে আমৃত্যু দণ্ডাদেশ দিতে পারেন। সশ্রম-বিনাশ্রম কারাদন্ড, মৃত্যুদন্ড এবং অর্থদণ্ড সবই আছে। আছে টর্চার সেলও। এই কারাগারে কেউ হাসতে হাসতে এসে হাসতে হাসতেই বেরিয়ে যান। কেউবা কাঁদতে কাঁদতে এসে কাতরাতে কাতরাতেই মৃত্যুদন্ড গ্রহন করেন।
এই কারাগার থেকে সাধারণত কেউ পলায়ন করেন না। তারপরও এক শ্রেণির সহায় সম্বলহীন অসহায় কিছু মানুষ এখান থেকে পলাতে বাধ্য হন। তবে পালিয়েও কোন লাভ হয় না। এখানকার আদালতে যে রায় চূড়ান্ত হয় তা পালিয়ে যেখানেই যিনি যান না কেন, তা তাকে ভোগ করতেই হয়।
বিধাতার সরাসরি নির্দেশেই সবকিছু নির্ধারিত হয় এখানে। বিধাতার অদ্ভুত খেয়ালে এখানে নিষ্পাপ, নিষ্কলুষ, নিরহংকার, নির্দোষ মানুষও কারাভোগ করেন। গ্রহন করেন মৃত্যুদন্ড। আবার জঘন্য খারাপ মানুষও কারাভোগ করে, মৃত্যুদন্ডও নেয় স্বেচ্ছায় সজ্ঞানে। যদিও তাদের সে সংখ্যাটি তুলনামূলকভাবে অনেক কম।
বিনা দোষে এখানে কারাদণ্ড ভোগ করে এক দিনের শিশু থেকে শুরু করে ১০০ বছরের প্রৌঢ়। এক কথায় এখানে কারনে-অকারণে বিধাতার সরাসরি নির্দেশে কারাদন্ড, অর্থদণ্ড কিংবা মৃত্যুদন্ড গ্রহন করেন আবাল বৃদ্ধবনিতা। এই কারাগারে থেকে জামিনের, আপিলের কিংবা দন্ড মওকুফের কোন সুযোগ নেই। নেই কোন আইনজীবীও।
ডান হাতে স্যালাইন। নাকে অক্সিজেন। নিন্মাঙ্গে ক্যাথিটার। হুঁশ-বেহুশের মাঝামাঝি। যন্রনার কথাও মুখ ফুটে বলার শক্তি নেই। বিধাতার শুভ্র শাদা তেমনই একটি কারাগারের এক কক্ষের একটি বিছানায় এভাবেই বন্দি আমার বাবা। একই কারাগারে বন্দি আমিও। আমার শাস্তি একমাত্র অসহায় ছেলে হিসেবে রাত জেগে বসে বসে বাবার নির্মম দন্ডভোগের অসহ্য যন্ত্রণার চিত্র প্রত্যক্ষ করা।
গত ১৬ আগস্ট স্বেচ্ছায় বিধাতার এই কারাগারে অন্তরীণ হয়েছিলাম আমরা। আজও আছি। কবে মুক্তি মিলবে বাবার, তা অনিশ্চিত। কবে মুক্তি মিলবে আমার, তাও অনিশ্চিত। বাবার দন্ডাদেশের পরিমাণ এতটাই নির্মম যে জীবদ্দশায় তাঁর মুক্তি মিলবে কিনা তা অনুমান করাও দুস্কর। মুক্তি মিললেও সত্তোরোর্ধ আমার বাবার ভাগ্যে চুড়ান্ত কী দন্ড নির্ধারণ করা হয়েছে তাও অনিশ্চিত।
খেয়ালী বিধির রহস্যময় এই কারাগার থেকে মুক্তি পেতে সকল বন্ধু, স্বজন, শুভাকাঙ্ক্ষীসহ সকল অগ্রজ ও অনূজদের কাছে দোয়ার প্রার্থনা রইলো।
[ বিএমএসএফ’র শর্ট নোট: তিনি সোহেল হাফিজ এবং তার পিতা দুজনই করোনাক্রান্ত। একই হাসপাতালে সাংবাদিক নির্যাতন প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি ইত্তেফাক প্রতিনিধি আব্দুল আলিম হিমু ভাইও স্ত্রীসহ করোনাক্রান্ত। আপনারা সকলে তাদের জন্য দোয়া করবেন]
সোহেল হাফিজ
বরগুনা জেনারেল
হাসপাতালের করোনা ইউনিট
৩০ আগস্ট ২০২০।


আরো পড়ুন