• বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৭:৪০ অপরাহ্ন

এইচএসসি পরীক্ষা, স্কুল খোলা আর পুলিশের ভাবমূর্তি নিয়ে প্রশ্ন

/ ২৫৯ বার পঠিত
আপডেট: বুধবার, ২৬ আগস্ট, ২০২০
এইচএসসি পরীক্ষা, স্কুল খোলা আর পুলিশের ভাবমূর্তি নিয়ে প্রশ্ন
এইচএসসি পরীক্ষা, স্কুল খোলা আর পুলিশের ভাবমূর্তি নিয়ে প্রশ্ন

আমাদের পাঠকদের আগ্রহ যেমন আছে কক্সবাজারে অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা রাশেদ খানের হত্যার পরবর্তী ঘটনাবলীর দিকে, তেমনি উদ্বেগ বাড়ছে এইচএসসি পরীক্ষা আর স্কুল খোলার উদ্যোগ নিয়ে।

করোনাভাইরাস মহামারি চলাকালে যাতে উচ্চ মাধ্যমিক বা এইচএসসি পরীক্ষা না হয়, সে দাবি জানিয়ে লিখেছেন মোহাম্মদ জারিফ জিহাদ:

”এইচএসসি অনিশ্চয়তা আমাদের কত কষ্ট দিচ্ছে সেটা শুধু আমরাই জানি। জানি না কী করবো। হুট করে পরীক্ষা শুরু হলে। মানসিক দুশ্চিন্তায় শুধু আমরা না, আমাদের পরিবারও ভুগছে। অনেক ক্যান্ডিডেট আমাদের থেকে শতগুণ খারাপ অবস্থায় আছে। মিডিয়া নিজেদের প্রচারের জন্য ভুয়া নিউজ করে আমাদের আরো চাপে ফেলে দিচ্ছে।

”আমরা অটো পাশ চাই না, আমরা পরীক্ষা দিব। তবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পর। আমরা বাঁচতে চাই, আমাদের পরিবারকে বাঁচাতে চাই। শনাক্তের হার কত কমলে পরীক্ষা নেওয়া হবে, এরকম কিছু জানা থাকলে আমাদের জন্য খুব সুবিধা হতো। আমাদের পরীক্ষার চেয়ে আমাদের জীবন বড়। আমাদের বাসায় অসুস্থ মা, বাবা, দাদা, দাদি থাকেন। নিজেরা আক্রান্ত হইলেও যতটা না চিন্তা লাগবে তার থেকে শতগুণ বেশি খারাপ লাগবে আমার নিজের জন্য উনারা কেউ আক্রান্ত হয়ে পড়লে।”

এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করার পর রাজউক উত্তরা মডেল কলেজের ছাত্রীদের আনন্দ, ১৮-০৮-২০২০।

ছবির ক্যাপশান,পরীক্ষার ফল ভাল হলে সবাই মিলে আনন্দ উৎসব এখন শুধু মাত্র অতীতের স্মৃতি।

একই মতামত প্রকাশ করে লিখেছেন ইফ্ফাত সাজিদ:

”শিক্ষা মন্ত্রী বললেন, এতটা স্বাস্থ্য ঝুঁকির মাঝে কোনো ভাবেই এক্সাম নেওয়ার পরিস্থিতি নেই। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে এক্সাম নিবে। এখন কি স্বাভাবিক? সেপ্টেম্বর / অক্টোবর মাসে এখন পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত কীভাবে নেয়া হয়? নাকি প্রধানমন্ত্রীর কথার সাথে তাল মিলিয়ে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বন্ধ রাখা হয়েছে?

”এক্সামটা মূল বিষয় না। আমারা না হয় এক্সাম দিলাম এবং করোনায় আক্রান্ত হলাম। তাতেও সমস্যা নেই। কিন্তু আমাদের বাসায় বাবা,মা, নানা নানী,দাদা দাদি আছেন। তারা কি প্রতিরোধ করেতে পারবেন? এমনও হতে পারে আমার পরীক্ষার জন্য আমি আমার বাবা মাকে হারাবো। এর দায় ভার নিবে কে?”

এই দুটো চিঠি ছাড়াও আরো অনেক মেইল এসেছে যেখানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত এইচএসসি পরীক্ষা না নেয়ার অনুরোধ জানানো হয়েছে। সবারই আশঙ্কা, শত শত প্রার্থীকে এক সাথে হলে বসতে হবে। এর ফলে সংক্রমণের ঝুঁকি প্রবলভাবে বাড়বে। তারপর বাংলাদেশে করোনাভাইরাস পরীক্ষা অনেক কমে যাওয়ায় কেউ ভরসা করে বলতে পারছে না পরিস্থিতি আসলে উন্নত হচ্ছে নাকি তার অবনতি হয়েছে। এই অনিশ্চয়তার মাঝে কেউই পরীক্ষা নেবার ঝুঁকি নিতে চাইছে না। সরকারকে সব কিছু বিবেচনা করেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

বছরের শুরুতে শিশুরা নতুন বই পেলেও বেশি দিন স্কুলে যাবার সুযোগ হয়নি।

ছবির ক্যাপশান,বছরের শুরুতে শিশুরা নতুন বই পেলেও বেশি দিন স্কুলে যাবার সুযোগ হয়নি

তবে শুধু এইচএসসি পরীক্ষা না, স্কুল খোলা নিয়েও অনেকের মনে উদ্বেগ আছে, যেমন বলছেন খুলনার কপিলমুনি থেকে মোহাম্মদ শিমুল বিল্লাল বাপ্পি:

”আমি গণ মাধ্যমে দেখলাম দেশের প্রাথমিক বিদ্যালয় গুলি চালু করার একটা প্রাথমিক সিদ্ধান্ত সরকার নিতে যাচ্ছে। গণ মাধ্যমে দেখেছি আমেরিকাতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেবার পর করোনা সংক্রমণের হার বেড়ে গিয়েছে। আমাদের প্রতিবেশি দেশ ভারতে এখনও স্কুল কলেজ বন্ধ। আমার জানা মতে বাংলাদেশে সরকারি বেসরকারি অনেক স্কুল কলেজে স্বাস্থ্য বিধি মেনে ক্লাস করবার ব্যবস্থা নাই।

”আমি মনে করি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলবার আগে সরকারি ভাবে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে করোনা ঝুঁকিমুক্ত করা উচিত। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বেশ কয়েক ঘণ্টা ছাত্র এবং শিক্ষকদের অবস্থান করতে হয়। সেখানে দূরত্ব বজায় রাখা কীভাবে সম্ভব? আমি মনে করি প্রতিবেশি রাষ্ট্রগুলিতে কীভাবে লেখাপড়া চলছে, সে বিষয়টি যদি আমরা অনুসরণ করি, তাহলে আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং ছাত্ররা উপকৃত হবে।”

স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত সরকার এখনো নেয়নি মি. বিল্লাল। তবে পর্যালোচনা চলছে এবং একটি সিদ্ধান্ত শীঘ্রই জানা যাবে বলে মনে হচ্ছে। তবে আপনি যে কথা বলছেন, সরকার নিশ্চয়ই সেসব কিছু বিবেচনা করেই তাদের সিদ্ধান্ত নেবে। তবে আসল কথা হচ্ছে, মা-বাবারা যদি তাদের ছেলে-মেয়েদের স্কুলে না পাঠান, তখন সরকারের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ চলে আসবে। কাজেই, সরকার যে সিদ্ধান্তই নিবে, সেটা শুধু ছেলে-মেয়েদের নিরাপত্তা নয়, পরিবারের কথা মাথায় রেখেই নিতে হবে।

ঢাকায় লকডাউন নিয়ম ভঙ্গের অভিযোগে একজন পথচারীকে শাস্তি দিচ্ছে পুলিশ, ২০-০৪-২০২০।

ছবির ক্যাপশান,বাংলাদেশ পুলিশের ভাবমূর্তি এখন প্রবল সঙ্কটের মুখে।

সম্প্রতি কক্সবাজারে অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খানের হত্যার পর বাংলাদেশ পুলিশ যে ভাবমূর্তির সংকটে পড়েছে, তা নিয়ে মন্তব্য করে লিখেছেন রংপুরের কাউনিয়া থেকে মোহাম্মদ শাহিন আলম:

”গত সপ্তাহে বিবিসি বাংলা পুলিশের ভাবমূর্তি উন্নতির জন্য যে ফোন-ইন অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করল এবং পরিক্রমা অনুষ্ঠানে যে বিশেষ আলোচনা হল তাতে এটা স্পষ্ট যে, পুলিশ রাজনৈতিক পরিস্থিতির শিকার এবং তারা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের এ্যাজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে গিয়ে জনগণের কাছে তাদের ভাবমূর্তি কিছুটা হলেও হারিয়ে ফেলে।

সত্যিকার অর্থে পুলিশকে যদি রাজনৈতিক দলের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা না হয় এবং তাদেরকে যদি স্বাধীন ও নিষ্ঠার সহিত নিরপেক্ষভাবে কাজ করার অগ্রাধিকার দেওয়া হয়, তাহলে তারা দেশের আইন অনুযায়ী এদেশের জনগণের সেবা করতে পারবে এবং তাদেরও ভাবমূর্তি জনগণের কাছে অক্ষুণ্ণ থাকবে।”


আরো পড়ুন