কুমিল্লা প্রতিনিধি:
গত ২০/০৪/২০২৪ তারিখ বিকাল অনুমান ০৫.৩০ মিনিটের সময় সংবাদ প্রাপ্ত হয়ে ব্রাহ্মণপাড়া থানার পুলিশ বিকাল ০৬:০০ মিনিটের সময় অত্র থানার ২নং শিদলাই ইউনিয়নের লাড়ুচৌ এলাকায় পৌঁছে শিউলি আক্তার(৩৫) এর মৃত দেহ হাত পা বাধা অবস্থায় জনৈক মাজু মিয়ার কচুরি পানার ডোবায় পেয়ে উপস্থিত সাক্ষীদের সম্মুখে সুরতহাল প্রতিবেদন প্রস্তুত করেন। এ সংক্রান্তে মৃত শিউলি আক্তার এর মা ঝর্ণা বেগম থানায় এজাহার দায়ের করলে ব্রাহ্মণপাড়া থানার মামলা নং-১৭, তাং-২২/০৪/২০২৪, ধারা-৩০২/২০১/৩৪ পেনাল কোড রুজু করা হয় এবং মামলার তদন্তভার এসআই(নিঃ) মিথুন কুমার মন্ডল এর উপর ন্যস্ত করা হয়।
মৃত শিউলি আক্তার(৩৫) এর লাশ পাওয়ার পর পুলিশ সুপার, কুমিল্লা মহোদয়ের সার্বিক দিক নির্দেশনায় সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার শাহ্ মোস্তফা তারিকুজ্জামান, দেবীদ্বার সার্কেল, কুমিল্লার প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে ব্রাহ্মণপাড়া থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) জনাব মোঃ আমিনুল ইসলাম, এসআই (নিঃ) মিথুন কুমার মন্ডলসহ ব্রাহ্মণপাড়া থানা পুলিশের একটি চৌকস টিম তদন্ত কাযক্রম শুরু করেন। নিহতের মা ঝর্ণা বেগম ও বড় ছেলে মোঃ রিয়ান(১৬) এর সাথে কথা বললে তারা স্বামী–স্ত্রীর পারিবারিক কলহের কথা উল্লেখ করেন, যার কারণে স্বাভাবিকভাবেই সন্দেহের তীর যায় মৃতার স্বামী মোঃ সুমনের দিকে। পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত), জনাব মোঃ আমিনুল ইসলাম এবং মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা যথাসময়ে মামলার ঘটনাস্থল পরিদর্শন ও প্রাথমিক তদন্ত শেষে অভিযান পরিচালনার মাধ্যমে আসামী মোঃ সুমন(৪৫)কে গ্রেফতার করে। মৃতার বড় ছেলে মোঃ রিয়ান(১৬) এর জবানবন্দী শুনে তদন্তকারী অফিসারের কিছুটা সন্দেহ হয়। এই সন্দেহ প্রকট হয় যখন মামলাটি তদন্তের একপর্যায়ে পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত), জনাব মোঃ আমিনুল ইসলাম ঘটনার রাতে প্রাইম সাস্পেক্টের ঘটনাস্থলে থাকার বিষয়ে কোন প্রমাণই পাচ্ছিলেন না। এই বিষয়ে সন্দেহ থেকে মৃতার বড় ছেলে মোঃ রিয়ানকে গত ২২/০৪/২০২৪ইং তারিখ পুনরায় ব্যাপকভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করলে বেড়িয়ে আসে চাঞ্চল্যকর তথ্য। জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে এই হত্যা কান্ডের সাথে সে নিজেই জড়িত মর্মে প্রাথমিকভাবে স্বীকার করে।
রিয়ানের জবানবন্দিতে উঠে আসে ঘটনার অচিন্তনীয় ও রোমহর্ষক বিবরণ। এ যেন কোন ক্রাইম থ্রিলার। মৃতার বড় ছেলে মোঃ রিয়ানকে তার মা সিগারেট খাওয়াসহ অন্যান্য বিষয় নিয়ে ঝগড়ার একপর্যায়ে রিয়ানকে ঘর থেকে বের হয়ে যেতে বলে। এতে করে রাগের মাথায় তার মাকে লাঠি দিয়া পিটায় এবং ঘরে থাকা লোহার শাবল দিয়া কপালের উপরে স্বজোরে একাধিক আঘাত করলে শিউলী আক্তার রক্তাক্ত অবস্থায় খাটের উপর পড়ে মারা যান। শিউলী আক্তার কোন নড়াচড়া না করলে রিয়ান ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে। তখন সে রক্তাক্ত বিছানার চাঁদর দিয়ে মৃতার রক্তাক্ত মাথা বাধেঁ এবং ওড়না দিয়ে পা বেধেঁ ফেলে। রক্ত মাখা অন্যান্য কাপড়গুলোসহ রাত আনুমানিক ০১.০০ মিনিটের সময় ঘরের দরজা খুলে মৃত মৃতদেহ ঘর থেকে বের করে ওড়না দিয়ে টেনে ঘরের পিছনে কচুরী পানার ডোবার মধ্যে ফেলে দেয় এবং রক্তমাখা বালিশটি গোয়াল ঘরের টিনের উপরে ফেলে দেয়, লোহার শাবলে থাকা রক্ত ধুয়ে ফেলে এবং দরজা বন্ধ করে ঘরে বসে থাকে। একপর্যায়ে সে তার বাবাকে দোষী করার পরিকল্পনা করে। কিন্তু নিজের মাকে হত্যা ও বাবাকে ফাসানোর এই অভিপ্রায় পরাজিত হয় তার অনুসোচনা, অনুতাপ ও পুলিশের বারংবার জিজ্ঞাসাবাদের কাছে। এসংক্রান্তে গ্রেফতারকৃত আসামী মোঃ রিয়ান ১৬৪ ধারা মোতাবেক বিজ্ঞ আদালতে জবানবন্দী প্রদান করে।
গ্রেফতারকৃত আসামীর নাম, ঠিকানাঃ-
১/ মোঃ রিয়ান(১৬), পিতা: মোঃ সুমন, মাতা: মৃত শিউলি আক্তার, সাং: লাড়ুচৌ, থানা: ব্রাহ্মণপাড়া, জেলা: কুমিল্লা।
উদ্ধারকৃত আলামতঃ-
১/ ০১টি লোহার শাবল, ০১টি লাঠি।
২/ রক্তমাখা বালিশ, বিছানার চাঁদর ও কাপড়।