• বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ০৭:৫৮ অপরাহ্ন

তরুণ বয়সী দুই পাখি, স্বপ্ন তাদের ভেঙ্গে যায় – ( জীবন গল্প)।।

/ ৩৪১ বার পঠিত
আপডেট: শনিবার, ১৩ জুলাই, ২০১৯

লেখক: মোঃ জাহাঙ্গীর আলম এক গাছে ছিল তরুণ বয়সী দুই পাখি,তারা উঁচু এক বট বৃক্ষে বাসা তৈরী করে, বিভিন্ন খড়কোটা বৃক্ষের লতাপাতা দ্বারা। সেখানে মা পাখিটা ডিম দিয়ে তাতে তা দিতে থাকে। আর তারা দু চোখে কাল্পনিক জাগ্রদবস্থা স্বপ্ন দেখতে থাকে,আর ভাবতে থাকে,একদিন এ ডিম থেকে অনেক বাচ্ছা, জন্ম নিয়ে আসবে আমাদের মাঝে,
তাদের কিচিরমিচির ডাকে প্রকৃতি নব রুপে সেজে উঠবে,,তাদের কচি মুখে আমাদের মা, বাবা বলে ডাকবে,কতই না মজা হবে,
এদিকে বাবা পাখিটা খাবার সংগ্রহ করে, বাসায় এসে তারা তাদের স্বপ্নের কথা আদান–প্রদান করে কত আনন্দ এ যেন স্বর্গের এক নীড়।এ ভাবে কেটে যায় বেশ কিছু দিন,
,আর মাএ কয়েক দিন পর কচিকাঁচা বাচ্ছাগুলো পৃথিবীর আলো দেখবে,এই আনন্দে বাবা পাখিটি আত্মহারা, মা পাখিটির খুব যত্ন করে এখন বাবা পাখি,বাসায় খাবার নেই তাই বাবা পাখিটি,
গান গাইতে গাইতে উড়ে যায় খাবার সংগ্রহে,
পাশেই একটি বিশাল বিল রয়েছে,নতুন জোয়ারের পাানি এসেছে বিলে তাই সেখানে অনেক মাছ শিকার করা যায়,কিন্তু আজ অপ্রত্যাশিত ভাবে বিলে হানা দিয়েছে কিছু পাখি শিকারি মানুষ।

তারা জায়গায় জায়গায় ফাঁদ তৈরি করে রেখেছে পাখি ধরে বাজারে বিক্রি করে।
বাবা পাখিটি তাদের পাতানো ফাঁদ কে -না দেখিয়ে মনের সুখে মাছ শিকারে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। ,হঠাৎ বাবা পাখিটির পা বেঁধে যায় ফাঁদে,চিৎকার করে বাবা পাখিটি — বলে ছেড়ে দাও -গো আমাকে ছেড়ে দাও,বাসায় খাবার না নিয়ে গেলে আমার আদরের সন্তানগুলো পৃথিবীর মুখ দেখতে পাবে না, আমার সাথী না খেয়ে মারা যাবে,,কিন্তু মানুষ জাতি বুঝেনা অবোলা পাখিটির আর্তনাথ।
আটক করে নিয়ে যায় শিকারির দল বাবা পাখিটিকে।

এদিকে- মা পাখি খুব চিন্তিত!আজ দু-দিন তার খবর নেই। না জানি বাবা পাখির কি হয়েছে!তিন দিন চার-দিন এভাবে বেশ কয়েক দিন কেটে যায়, বাবা পাখি আর ফিরে আসে না তার স্বর্গের নীড়ে। এরিমধ্য কচিকাচি বাচ্ছাতে পাখির নীড় ভরে উঠেছে।
কিন্তু মা পাখির কলিজায় যেন শোকের দাগ পড়ে গেছে। এ ভাবে কেটে যায় কয়েক মাস,
কচি বাচ্চা পাখিগুলো বেশ বড় হয়েছে,
আজ তারা উড়তে শিখেছে, নিজেরা নিজের শিকার ও করতে শিখেছে।
তাই তারা খাবার সংগ্রহে বেড়িয়ে পড়েছে বাবা হারিয়ে যাওয়া সেই বিলের পথে,পথেই হঠাৎ দেখতে পেল রাস্তায় কিছু খাবার পরে আছে,সেখানে গিয়ে বাচ্চা পাখিটি দেখতে পায় একটি পিঁপড়া, সে খাবার কে একা-একা নিয়ে যেতে পারছে না,বাচ্ছা পাখিটিকে দেখে বৃদ্ধ পিঁপড়াটি বলে,ভাই পাখি!

আমার একটা উপকার করবে! আমি বৃদ্ধ হয়েছি তাই শরীরটা বড্ড ক্লান্ত হয়েছে।
বাচ্ছা পাখিটি বলে কি উপকার পিঁপড়া ভাই,!
পাখি ভাই আমি ফিরে না আসা পর্যন্ত, এই খাবারটা তোমার আমানতে রাখবে,
,আমি আমার দলের সবাই কে নিয়ে এসে খাবারটি নিয়ে যাব,তোমাকে ও কিছু দিব,নিরাস করব না কথা দিলাম। বাচ্চা পাখিটি তার কথায় রাজী হয়ে পিঁপড়ার আমানত নিজের মনে করে পাহারা দিতে থাকে।

এদিকে বাবা পাখিটি এক সাহেবের বাসায় খাঁচায় বন্দী হয়ে আছে,সাহেবের ছোট ছেলে পাখিটিকে খাবার দিতে গিয়ে হঠাৎ সুযোগ পেয়ে খাঁচার ভিতর থেকে দ্রুত পালিয়ে যায় বাবা পাখিটি।
সে খুব ক্ষুধার্থ উড়তে উড়তে ভাবতে থাকে যদি একটু খাবার পেতাম, তা খেয়েই আমার বাসায় ফিরে যাবো। এমনটা ভাবতেই দেখতে পেলো সেই বাচ্চা পাখিটির খাবার। বাবা পাখিটি নেমে আসে খাবারের স্হানে।

বাবা পাখিটি চিনতে পারে না তার কচি বাচ্চা কে! বাবা পাখি খেতে চায় -তার আমানতকৃত খাবারটি বাচ্চা পাখিটি পিঁপিলিকার আমানতের কথা বলে তবু খেতে চায় বাবা পাখি।

বাচ্চা পাখি বলে ,আমার জীবন দিব তবু আমানতের খিয়ানত করব না, না,বাচ্চা পাখি ও বাবা পাখির মধ্য তুমুলঝগড়া বাঁধে।
এক সময় বাবা পাখিটি রাগে ক্রোধে ক্ষিপ্ত হয়ে
খুব জোড়ে বাচ্চা পাখিটির বুকে আঘাত করে।
তার কঠিন বলবন্ত আঘাতে ছোট্র বাচ্চাটি ছটফট করতে করতে মারা যায়।

অবশেষে বাবা পাখিটি খাবার শুরু করতেই,
মা পাখিটি তাকে দেখতে পায়,তারা দু-জন দুজনকে দেখে খুব আনন্দে মেতে ওঠে,
আজ কতদিন পর তাদের সাক্ষাৎ হয়েছে,
বাবা পাখিটি বন্দী হওয়ার সকল ইতিহাস
বলতে থাকে মা পাখিটি কে,মা পাখিটিও তার একাকীত্ব জীবনের কথা বলে,হঠাৎ – মা পাখিটি দেখতে পেল তার বাচ্চা পাখিটির মৃত দেহ।

চিৎকার করে বলে কে মেরেছে আমার সন্তান কে,কে মেরেছে,এমন নিষ্ঠুর আঘাতে।
হায়,বিধাতা একি সর্বনাশ হয়েছে আমার কান্নায় ভেঙে পড়ে মা পাখি, এ দৃশ্য দেখে বাবা পাখিটি অবাক!
নিথর পাথরের মত দাঁড়িয়ে মৃদু কন্ঠে বলে,
সাথী সে আমাদের সন্তান?
আমি তাকে চিনতে পারলাম না- সে আমার শক্ত আঘাতে মারা গিয়েছে।
মা পাখি কেঁদে বলে কেন মারলে তাকে,
আমি রেগে গিয়ে তাকে আঘাত করেছি.
সে আমানতের খিয়ানত কখনো করতে চায় নাই,
আমি বড্ড ক্ষুধার্থ ছিলাম, আমাকে খেতে বারণ করাই আমি ক্রোধে হিংস্র হয়ে তাকে হত্যা করেছি।

আমি অপরাধী, আমি হিংস্র আমি রেগে গিয়ে নিজ সন্তানকে হত্যা করেছি,আমার কোন ক্ষমা নেই। দু- চোখ থেকে অবিরাম অশ্রু ঝড়তে থাকে বাবা পাখির তার কাঁন্নার চিৎকারে থমথমে হয়ে ওঠে ঘটনাস্থল, এমন সময় পিঁপড়ার দল এসে হাজির, দুর হতে শুনতে পায় পাখিদের সব কথা।

বৃদ্ধ বয়সের সেই পিঁপড়া এসে বলে ওরে পাখির দল,আমানত কি ভাবে রক্ষা করতে হয়, বাচ্ছা পাখিটি তার জীবন দিয়ে শিক্ষা দিয়ে গেল আমাদের,তার এ মৃত্যু ইতিহাস হয়ে থাকবে এই জগতে, আমরা ও রক্ষা করব, এমন করেই কারো রেখে যাওয়া আমানত ।

বাবা পাখিটি এক কোণে গিয়ে আক্ষেপ করে কেঁদে কেঁদে বলে,ক্রোধ ধ্বংস কারী,ক্রোধ সর্বনাশী,ক্রোধ আপনপর কিছু বুঝেনা, নিমিষেই কেড়ে নাই সবার জীবন,ঘটে অনাকাঙ্ক্ষিত দৃর্ঘটনা, আমি আমার ক্রোধ কে নিয়ন্ত্রণ করিলে এমন দৃশ্য আমাকে এখন দেখতে হত না।
একটু ধৈর্য্য ধারণ করিলে,এ খাবার সবাই মিলেমিশে খেতে পারতাম,হায় ক্রোধ তোমার কারনে আমি অপরাধী,ঝড়ে গেল ফুলের মত নিষ্পাপ জীবন,৷ অহে ক্রোধ তোমার কুমন্ত্রণায় হারিয়ে ফেলেছি, আমার নিজ সন্তান কে,

অবশেষে এক পাহাড় দুঃখ নিয়ে উড়ে যায়
মা পাখি আর বাবা পাখি,সেই স্বর্গের নামের নীড়ে,,,,,,


আরো পড়ুন