• মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪, ০৮:৫৭ পূর্বাহ্ন

বাংলাদেশকে সোনা জেতানো কুড়িগ্রামের সেই নারী অ্যাথলেট এখন ‘ডক্টর’!

/ ৮৯ বার পঠিত
আপডেট: সোমবার, ৩ এপ্রিল, ২০২৩

মেরিনা আক্তার মেরী, নিজস্ব প্রতিবেদক:-
উচ্চ মাধ্যমিকে পড়ার সময় ফৌজিয়া হুদা জুইয়ের মনে জেদ চাপে। অ্যাথলেটিকসের ট্র্যাকে ব্যস্ত থাকার কারণে তখন ক্লাসরুমে তার নিয়মিত উপস্থিতি কঠিন হয়ে পড়েছিল। ঠিক সেইসময় ক্লাসের একজন ম্যাডাম অন্য শিক্ষার্থীদের শুনিয়ে বলতেন, ‘জুইয়ের মতো শুধু খেলাধুলাই করবে, পড়াশোনার আর দরকার নেই!’ সহপাঠীদের মাধ্যমে শোনা ম্যাডামের বলা সেই কথা জুইয়ের মগজে এমনভাবে গেঁথে গিয়েছিল যে, এরপর থেকে অ্যাথলেটিকসের ওপর উচ্চতর ডিগ্রি নেওয়ার পণটা একপ্রকার করে রেখেছিলেন।

কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ চুকিয়ে একপর্যায়ে বিকেএসপির কোচ হলেন। এখন সবশেষ জুইয়ের নামের আগ ‘ডক্টর’ উপাধি যোগ হয়েছে! ইউনিভার্সিটি সায়েন্স মালয়েশিয়া থেকে এক্সারসাইজ এন্ড স্পোর্টস সায়েন্সের ওপর পিএইচডি ডিগ্রি নিয়েছেন ৩৮ বছর বয়সী সাবেক কৃতী অ্যাথলেট।

জুইয়ের অ্যাথলেটিকস ক্যারিয়ার বেশ সমৃদ্ধ। দুইবার এসএ গেমসে লং জাম্পে রুপার পাশাপাশি জিতেছেন একটি ব্রোঞ্জ পদকও। ইরানে ইসলামিক ইনডোর গেমসে রয়েছে সোনার পদক। জাতীয় আসরে লং জাম্পে ১৩ বারের চ্যাম্পিয়ন। এর মধ্যে তিনটি রেকর্ডও রয়েছে। লং জাম্পের পাশাপাশি দুবার দ্রুততম মানবী হয়েছেন।

খেলা ছেড়ে বিকেএসপিতে কোচ হয়ে কাজ করছেন এক যুগ হলো। কোচিংয়ের পাশাপাশি কুড়িগ্রাম থেকে উঠে আসা জুই প্রায় ৫ বছর আগে মালয়েশিয়াতে পিএইচডি ডিগ্রি ক্লাসে ভর্তি হন। সেখানে কয়েক বছর থেকে ক্লাস করতে গিয়ে প্রায় ১৫ লাখ টাকা খরচ হয়েছে।

গত বছরের জুনে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জনের খবর ই-মেইলে আসে। কিছু পর্যবেক্ষণের পর এই বছরের ফেব্রুয়ারিতে কুরিয়ারে করে সার্টিফিকেটও হাতে পৌঁছে গেছে। অনেক আরাধ্যের ডিগ্রি অর্জন করে কুড়িগ্রাম থেকে উঠে আসা সাবেক অ্যাথলেট বেশ খুশি। উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে বলেছেন, ‘করোনার কারণে ডিগ্রি পেতে সময় লেগেছে। ডিগ্রির জন্য আমাকে ওখানে প্রায় চার বছর থাকতে হয়েছিল। ওখানে থেকে ক্লাস করতে হয়েছে। নিজের পরিশ্রম ছাড়াও ব্যক্তিগতভাবে ১৫ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে। অবশেষে সবকিছু সার্থক হয়েছে। আমি অনেক খুশি।’

জুই অ্যাথলেটিকসের প্রথম কোনও নারী, যিনি পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করলেন। এর আগে মেয়েদের মধ্যে কেউ তা পায়নি। মালয়েশিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ে থেকে অর্জন করে আসা উচ্চতর ডিগ্রি নিজের কোচিংয়ে কাজে লাগছে বলে জানালেন সাবেক অ্যাথলেট, ‘আমি বিকেএসপিতে কোচিং করাই। যা শিখেছি তা এখানকার ছেলে মেয়েদের কাজে লাগানোর সুযোগ রয়েছে। শেখানোর চেষ্টাও করছি। আমি যতদূর জানি নারী ক্রীড়াবিদ ও কোচদের মধ্যে আমিই প্রথম যার স্পোর্টসের ওপর এমন ডিগ্রি রয়েছে।’

অ্যাথলেটিকস ও কোচিংয়ে ব্যস্ততার কারণে বিয়েটাও করা হয়নি জুইয়ের। তবে এটা নিয়ে কোনও আক্ষেপ নেই। নিজেও অ্যাথলেট ছিলেন। খেলোয়াড়ি জীবন শেষে কোচিংয়ে জড়িয়ে আছেন। তাতেই আনন্দ খুঁজে নিচ্ছেন। তবে কোচিংয়ে উচ্চতর ডিগ্রির জন্য অনেকের কাছ থেকে কটু কথাও শুনতে হতো। জুই নিজেও বলছিলেন, ‘অনেক প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হতে হয়েছে। অনেকে বলতো মেয়ে হয়ে পিএইচডি করে কী করবে? কোচিং করে কী করবে? বেশি লেখাপড়া করে কী হবে? কোথায় কাজে লাগবে? এসব শুনে আমার অনেক খারাপ লেগেছে। কিন্তু গা করিনি। দুর্মুখরা তো বলবেই। তবে আমার পরিবারের অনেক সহায়তা পেয়েছি।’

এই সুসংবাদ বিকেএসপিকে জানিয়েছেন কি না প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আমার এই খুশির খবর বিকেএসপি কর্তৃপক্ষকে এখনও জানাইনি। রবিবার আনুষ্ঠানিকভাবে জানাবো আশা করছি।’

উচ্চতর ডিগ্রি প্রাপ্তির পর ‘ডক্টর’ জুই বড় স্বপ্ন দেখেন, দেশের অ্যাথলেটিকসের মান আরও বাড়বে। আগের মতো আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আসবে সোনার পদক। সেই স্বপ্ন নিয়েই এখন এগিয়ে চলা।


আরো পড়ুন