• বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৯:২৪ পূর্বাহ্ন

স্ত্রী’কে যৌতুকের দাবিতে লাগামহীন নির্যাতন কাস্টমসের রবিন ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে

/ ২১১ বার পঠিত
আপডেট: মঙ্গলবার, ৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

মোহাম্মদ জুবাইর, নিজস্ব প্রতিবেদক:
মামলার ধারা এক হলেও আইনের প্রয়োগ দুই রকম বলে মন্তব্যই করেছেন কাস্টমসে চাকুরীজীবি রবিন বড়ুয়ার স্ত্রী শ্রাবনী বড়ুয়া (২৮)। মামলার নথি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, যৌতুকের দাবিতে শশুর বাড়ির লাগামহীন নির্যাতন সইতে না পেরে গত বছরের ২৮ জুন স্বামী-রবিন বড়ুয়া, ভাসুর- শ্যামল বড়ুয়া, জা-ববি বড়ুয়া ও শাশুড়ী রুনু বড়ুয়ার বিরুদ্ধে বিজ্ঞ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল ১ এ একটি মামলা দায়ের করা হয়। যার মামলা নং ৩১৪/২০২২ ইংরেজী (চন্দনাইশ) ও ধারাঃ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ (সংশোধিত ২০০৩) এর ১১ (গ)/ ৩০ ধারা।

বিচারক মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব দেন প্রবেশন অফিসার জেলা সমাজসেবা অফিস চট্টগ্রামকে। পরে প্রবেশন অফিসার পারুমা বেগম এর স্বাক্ষরিত অনুসন্ধানপূর্বক অনুসন্ধান প্রতিবেদনটি গত ১৭ জুলাই বিচারক বরাবর প্রেরণ করেন। যেখানে অভিযোগকারীনি শ্রাবণী বড়ুয়ার অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। বাদীনি শ্রাবনী বড়ুয়ার সাথে নির্মম অত্যাচারের ঘটনা উঠে আসে এই প্রতিবেদনে।

প্রতিবেদনে বলা হয় অভিযোগকারীনি সংশ্লিষ্ট থানায় পুলিশ কর্মকর্তার নিকট অভিযোগ দাখিল করতে গিয়ে ব্যর্থ হয়েছেন। থানার পুলিশ কর্মকর্তা অভিযোগকারীনিকে পরামর্শ দেন থানায় মামলা না করে কোর্টে মামলা করতে। তাই অভিযোগকারীনি বিজ্ঞ ট্রাইব্যুনালে সরাসরি মামলা করেছেন। অভিযোগকারীনির অভিযোগের ভিত্তিতে জবানবন্দী গ্রহণ ও অনুসন্ধান কালে আসামীদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের বিষয়ে সংঘটিত ঘটনাবলীর প্রাথমিক সাক্ষ্য প্রমাণের সত্যতা পরিলক্ষিত হয়েছে।

এরপর বিচারক গত ৩ আগস্ট উক্ত মামলার রিপোর্ট গ্রহণ করে মামলা আমলে নিয়ে রবিন বড়ুয়ার বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারির নির্দেশ দেন। কিন্তু এই নির্দেশের পর গ্রেফতার এড়াতে আসামী শ্যামল বড়ুয়া ও ববি বড়ুয়া গত ১৪ আগস্ট এবং রবিন বড়ুয়া ২২ আগস্ট স্বেচ্ছায় আত্মসমর্পন পূর্বক আপোষের শর্তে অন্তর্বর্তীকালীন জামিনে মুক্তি লাভ করে। কিন্তু জামিনে গিয়ে আপোষের কোন পদক্ষেপ গ্রহণ না করে বরং আসামীগণ মামলার বাদিনীকে মামলা তুলতে হুমকি প্রদান করেন। উক্ত বিষয় বিবেচনা করে বিচারক জনাব মুরাদ-এ-মওলা সোহেল গত ১০ অক্টোবর এক আদেশে আসামীর জামিন বাতিল করেন এবং তাকে জেল হাজতে প্রেরণ করার নির্দেশ দেন। পরে মামলার প্রধান আসামী (বর্তমানে অডিট ভবন নাসিরাবাদ সার্কেলে কর্মরত উচ্চমান সহকারী) রবিন বড়ুয়া ও তার বড় ভাই দক্ষিণ দিয়াকুল কে.এম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক শ্যামল বড়ুয়া গ্রেফতার হয়ে দীর্ঘদিন চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে ছিলেন।

বড় ভাই শিক্ষক শ্যামল বড়ুয়ার কারাভোগের বিষয়টি জানতে পারলে নড়েচড়ে বসেন চট্টগ্রাম জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ শহিদুল ইসলাম। এই শিক্ষকের বিরুদ্ধে নেওয়া হয় বিভাগীয় ব্যবস্থা। গত ০১ ডিসেম্বর মোঃ শহিদুল ইসলামের স্বাক্ষরিত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের কার্যালয়। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, শিক্ষক জনাব শ্যামল বড়ুয়া গ্রেপ্তার হয়ে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে ছিলেন। তাই উক্ত সহকারী শিক্ষককে অবিলম্বে চাকুরী হতে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা প্রয়োজন। এবং জনাব শ্যামল বড়ুয়াকে সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা ২০১৮ এর ১২(১) ধারা মোতাবেক সাময়িকভাবে সরকারি চাকুরী হতে বরখাস্ত করা হলো। সাময়িকভাবে বরখাস্তকালীন সময়ে তিনি বিধি মোতাবেক খোরপোষ ভাতা প্রাপ্য হবেন। যা এ আদেশ গত ১২ আগস্ট ২০২২ হতে কার্যকর হয়েছে বলে জানা যায়।

তবে দ্বিতীয় আসামীর ক্ষেত্রে সরকারি চাকরি আইন ২০১৮ কার্যকর হলেও প্রথম আসামীর ক্ষেত্রে এই আইন যেন অনিয়মে পরিণত হয়েছে। আসামী রবিনের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা তো দূরের কথা বরং এই নারীকে কাস্টমস্ এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট কর্মকর্তা ও কর্মচারী দ্বারা হয়রানি হতে হয়েছে বহুবার। একাধিকবার মামলার অনুলিপি এবং আবেদনপত্র সহ ফাইল জমা দিয়েছেন কর্তৃপক্ষের নিকট। তাতে কোনো উদ্যোগ গ্রহণ না করায় তিনি কমিশনারের সাথে দেখা করতে চাইলে রবিনের সহকর্মীরা তাকে অকথ্য ভাষায় অপমান করে। তারা বলেন, এর আগেও একজনের বউ আসছিল, কিছুই হয়নি। রবিনেরও কিছু হবে না। তাদের সিন্ডিকেটের বাধায় কমিশনারের সাথে সাক্ষাৎ করতে না পেরে বাংলাদেশ পোস্ট অফিসের মাধ্যমেও দরখাস্ত পাঠান এই নারী।

এ বিষয়ে জানতে কাস্টমস্ এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট চট্টগ্রাম কমিশনার সৈয়দ মুশফিকুর রহমানকে তার মুঠোফোনে একাধিকবার কল দিলে তিনি কল রিসিভ করেননি। তাই এ বিষয়ে কোন মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

মামলার বাদীনি শ্রাবণী বড়ুয়া বলেন, তার বিরুদ্ধে আমার আনীত অভিযোগ সত্য প্রমাণিত হয়েছে। সে গ্রেপ্তার হয়ে জেল হাজত খাটায় মামলা চূড়ান্তভাবে নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত তাকে মামলা স্বাধীনভাবে পরিচালিত হওয়ার স্বার্থে তাকে চাকরি থেকে সাময়িক দরখাস্ত করার জন্য আমি জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার কার্যালয় চট্টগ্রাম ও কাস্টমস্ এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট বরাবর চিঠি প্রেরণ করেছিলাম। প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার সাথে সাথে উদ্যোগ গ্রহণ করলেও কোন পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি কাস্টমস কর্তৃপক্ষকে। বরং তাদের গার্ডদের দ্বারা আমি অপমানিত হয়েছি এবং লাঞ্ছিত হয়েছি।

ঘন্টার পর ঘন্টা একটু সাক্ষাতের জন্য গেইটে দাঁড়িয়ে ছিলাম। আমি এ পর্যন্ত প্রায় ২০ বারের মতো চিঠি প্রেরণ করেছি। আমি একজন অসহায় শিশুর মা হিসেবে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে বিনীতভাবে অনুরোধ করবো আপনারা যেন আমাকে সহযোগিতা করেন। আমি চিঠির মাধ্যমে প্রয়োজনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সহযোগিতা চাইবো। রবিন বড়ুয়ার সাথে এ বিষয়ে কথা বলতে চাইলে তাকে মুঠোফোনে পাওয়া যায়নি।


আরো পড়ুন