• মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৮:২৮ অপরাহ্ন

বইমেলা প্রাণের মেলা শিশুতোষ বইয়ের মান নিয়ে অসন্তোষ অভিভাবকদের

/ ২০৩ বার পঠিত
আপডেট: শনিবার, ৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

প্রকৃত বন্ধু বই! এই বন্ধুর সঙ্গে সবচেয়ে বেশি সময় কাটানোর সুযোগ আসে অমর একুশে গ্রন্থমেলায়। প্রতিবছর ভাষা আন্দোলনের এই মাসজুড়ে থাকে এ মেলার আয়োজন। এই সময় বইয়ের গন্ধ আর স্পর্শ বইমেলায় ভিড় জমায় ক্রেতা-দর্শনার্থীরা। পরিবার-পরিজনদের সঙ্গে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান প্রাঙ্গণে শিশুদের আগমনে ফিরেছে উচ্ছ্বাস।

বইমেলার অন্যতম আকর্ষণ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের শিশুচত্বর। বিশেষ করে এ চত্বরে বিক্রি হয় শিশুতোষ বই। তাই মেলায় উচ্ছ্বাস নিয়ে অভিভাবকদের হাত ধরে এসেছে শিশুরা। বাবা-মায়ের বা পরিবার অন্য কোনো সদস্যের হাত ধরে স্টলগুলো ঘুরে ঘুরে বই দেখছে এসব শিশুরা। অভিভাবকরা সন্তানদের হাতে তুলে দিতে চান বই; যাতে শিশুর চিন্তাশক্তি উন্নত ও দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন হয়। কিন্তু শিশুতোষ বইয়ে এখনও গতানুগতিক ধারা রয়ে গেছে বলে অভিযোগ তাদের।

মেলার চতুর্থ দিন শনিবার (৪ ফেব্রুয়ারি) শিশুচত্বরে কথা হয় কয়েকজন অভিভাবকের সঙ্গে। এর মধ্যে একজন ইউনিভার্সিটি অব ইনফরমেশন টেকনোলজি অ্যান্ড সায়েন্সেসের (ইউআইটিএস) সহকারী অধ্যাপক ফেরদস আনাম জীবন। তিনি মেয়েকে বইপ্রেমি করতে নিয়ে এসেছেন মেলায়। শিশুতোষ বইয়ের মান গতানুগতিক উল্লেখ করে তিনি বলেন, এসব বইগুলোতে বৈচিত্র্য আনা দরকার। যাতে শিশুদের চিন্তাশক্তি বিকশিত হয়।

তিনি আরও বলেন, শিশুদের আকৃষ্ট করতে এবং বিক্রি বাড়াতে বইয়ের মলাট দৃষ্টিনন্দন করা হচ্ছে। কিন্তু শিশুদের মেধা বিকাশের জন্য বইয়ের মধ্যে বৈচিত্র্য কম। নতুন নতুন বই দেখে বাচ্চারা উৎফুল্ল হচ্ছে, কিনছে, তারা পড়তে আগ্রহী হচ্ছে। তারা শিখছে রূপকথা, কল্পকাহিনী; এর পাশাপাশি তাদের ইতিহাস ও মূল্যবোধ বৃদ্ধিতে সহায়ক বইও থাকা উচিত। দুঃখজনক হলেও সত্য এ ধরনের বই খুবই কম, নেই বললেই চলে।

 নিজের পছন্দের বই কিনতে ভালোবাসে শিশু-কিশোরেরা। সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, ৪ ফেব্রুয়ারি |

ছেলে-মেয়ে আর স্বামী নিয়ে এসেছেন ফারহানা হাসান। শিশুদের বই নিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, অভিভাবকরা চান শিশুর সৃজনশীলতা বিকাশে বৈচিত্র্যপূর্ণ বই। সেজন্য লেখক ও প্রকাশকদের ভাবা উচিত বলেও মনে করি। আসলে বাচ্চাদের বইয়ের যে ব্যাপারটা দেখা গেছে একই ধরনের বই-ই প্রকাশ হচ্ছে। শিশুদের একই ধাঁচের বই দিতে থাকলে তারা ভিন্নভাবে চিন্তা করতে শিখবে না, সৃজনশীলতা বিকাশ পাবে না। তাই তাদের জন্য লেখক-প্রকাশকদের আরও ভাবা উচিত।

মুন্সিগঞ্জ থেকে ছেলেকে নিয়ে এসেছেন আবু তালেব। শিশুচত্বরে তার সঙ্গে কথা হয় আরটিভি নিউজের। শিশুদের বইয়ের মান নিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, শিশুদের বইগুলো সবসময়ই খুব কমন। ছড়া, গল্প, সায়েন্স ফিকশন, কমিকস, কার্টুন। শিশুদের চতুরমুখী করে তুলতে আরও অনেক বই হতে পারতো। তবে যেগুলো প্রকাশিত হচ্ছে সেগুলোর উপাদানগত মান ভালো। তবে বড়দের বইয়ের তুলনায় দামও অনেক বেশি, আরেকটু কম হওয়া উচিত বলে আমি মনে করি।

শিশুদের বই প্রকাশ করা প্রগতি পাবলিশার্সসহ কথা হয় কয়েকটি প্রকাশকের সঙ্গেও। তারা বলছেন, শিশুদের বইয়ে ফোর কালার ব্যবহার করতে হয়। সাধারণ কাজগে শিশুদের বই প্রকাশক করা যায় না, ভালো, দামী কাগজ ব্যবহার করতে হয়। তবে আশার কথা হচ্ছে কিছু প্রকাশক ও লেখক দায়িত্বটা নিয়েছেন। শিশুদের বয়স উপযোগী, চিন্তা-চেতনা উপযোগী ও নির্ভুল বই প্রকাশ করছেন। কিন্তু এই সংখ্যাটা খুবই কম।

তারা আরও বলেন, শিশুদের বইমুখী করতে অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে। আর সব সময় বড়দের বইয়ের তুলনায় শিশুদের বইয়ে খরচ বেশি পড়ে। শিশুদের বই দিতে হয় বয়স অনুযায়ী। তাহলে বইয়ের প্রতি শিশুর আগ্রহ জন্মায়। পড়া ও জানার প্রতি কৌতূহল তৈরি হয়। তবে শিশুদের বইয়ের মান বাড়াতে এবং বৈচিত্র্যতা আনতে চেষ্টা করছি।


আরো পড়ুন