• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ০৮:০৬ অপরাহ্ন

কৃষকের মেয়ে মারুফা দেশের নারী ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ সম্পদ

/ ১৯২ বার পঠিত
আপডেট: শুক্রবার, ২৭ জানুয়ারি, ২০২৩

দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত অনূর্ধ্ব-১৯ নারী টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে অংশ নিয়েছিল বাংলাদেশের মেয়েরা। যেখানে যুব টাইগ্রেসরা অস্ট্রেলিয়া, শ্রীলঙ্কার মতো দলকে হারিয়ে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে সুপার সিক্সে পা দিয়েছিল। কিন্তু আশা জাগিয়েও সেমিফাইনালে ওঠা হয়নি দিশা বিশ্বাসের নেতৃত্বাধীন নারী দল। টুর্নামেন্ট থেকে বিদায় নিলেও চমক দেখানো বাংলার মেয়েরা দেশ-বিদেশে প্রশংসা কুড়িয়েছে।

বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ নারী দলটির অন্যতম সদস্য পেসার মারুফা আকতার। বিশ্বকাপের মঞ্চে বাংলাদেশের প্রতিটি জয়ে বল হাতে দারুণ ভূমিকা রেখেছেন এই পেসার। প্রত্যেক ম্যাচে বোলিংয়ে উদ্বোধন করে ৫ ম্যাচে ছয়ের নিচে ওভার প্রতি রান দিয়ে ৮ উইকেট শিকার করেছেন দেশের নারী ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ এই কান্ডারি। অথচ এক সময় পরিবারের অভাব-অনটনের কারণে ক্রিকেট সরে দাঁড়ানোর কথা ভেবেছিলেন ১৯ বছর বয়সী এই ক্রিকেটার।

মারুফার এই পর্যায়ে আসার পেছনে রয়েছে এক সংগ্রামী জীবনের গল্প। নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকার দরিদ্র পরিবারে জন্ম তার। বর্গাচাষি কৃষক বাবা ও গৃহিণী মায়ের সংসারে চার ভাই-বোনের মধ্যে সবার ছোট মারুফা। কিন্তু দরিদ্র পরিবারে সংসারের হাল ধরতে একসময় বাবার সঙ্গে কৃষিকাজে জড়িয়ে পড়েছিল সে। সংসারে দুবেলা আহার জোগাতে যিনি এত ত্যাগ স্বীকার করেছেন, সেই মারুফাই এখন বল হাতে হাল ধরে স্বপ্ন দেখাচ্ছেন বাংলাদেশকে।

প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ার সময় ভালো ফুটবল খেলতেন মারুফা। কিন্তু উচ্চমাধ্যমিকের গণ্ডিতে পা দেওয়ার পর পাড়ার ছেলেদের সঙ্গে ক্রিকেট পথচলা শুরু তার। এরপর আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি এই বোলারের। প্রশিক্ষণ নিয়েছেন বিকেএসপিতে, খেলেছেন বিভিন্ন ক্লাব ও দলের হয়ে। অনেক আগেই পেয়েছেন জাতীয় দলের ডাক। অথচ করোনা মহামারির সময় ক্রিকেট খেলা বন্ধ থাকায় পিছিয়ে পড়ে পারিবারিক দুরাবস্থায় ক্রিকেট থেকে নিজেকে সরিয়ে নেওয়ার কথা ভাবেন মারুফা।

২০২১ সালে করোনা মহামারির সময় বাবা আইমুল্লাহর সঙ্গে বর্গা নেওয়া জমিতে হালচাষ করেছিলেন মারুফা। তখন ক্রিকেট খেলা বিলাসিতা মনে হয়েছিল তার। কিন্তু মারুফার হালচাষের সেই ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে এগিয়ে আসে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। তাদের সহযোগিতায় ফিরে যান আগের ঠিকানা বিকেএসপিতে। বছর না পেরোতেই ঘরোয়া ক্রিকেটে ধারাবাহিক নৈপুণ্য দেখিয়ে ১৯ বছর বয়সেই ডাক পান জাতীয় দলে।

দারিদ্র্য আর অভাবে মারুফা আকতার তার ছোট্ট জীবনে, এই শব্দগুলোর সঙ্গে বেশি পরিচিত। তবে মানুষ যে স্বপ্নের সমান বড়। তাই তো শত সীমাবদ্ধতা ও প্রতিকূলতাকে পেছনে ফেলে মারুফাও নিজের স্বপ্নকে তাড়া করে চলেছেন প্রতিনিয়ত। মারুফা আকতারের উৎসাহদাতা ও ক্রিকেট গুরু দুটোই বড় ভাই আলামিন। তার হাত ধরে ক্রিকেট খেলতে যেতেন তিনি। খেলতেন চাচাতো-মামাতো ভাইদের সঙ্গে। মারুফার পেস বোলিং মোকাবিলায় হিমশিম খেত ছেলেরাও।

মারুফা বলেন, ‘অভাব অনটনের কারণে করোনাকালে ক্রিকেট খেলা থেকে নিজেকে সরিয়ে নিতে চেয়েছিলাম। তবে বিসিবির সহযোগিতায় আজ এতদূর আসতে পেরেছি। বিসিবির অনুদান না পেলে করোনার প্রথম ওয়েভের সময়ই থমকে যেত স্বপ্ন। ছোটবেলা থেকে কৃষিকাজে বাবাকে সাহায্য করতাম। করোনাকালে বাড়িতে অবস্থান করায় পুরো সময় বাবাকে কৃষিকাজে সাহায্য করেছিলাম। সেই সঙ্গে আমার বড় ভাই আল-আমিনের সঙ্গে পরিত্যক্ত রেললাইনের পাশে নিয়মিত অনুশীলন করেছি। সবাই দোয়া করবেন দেশকে যেন ভালো কিছু দিতে পারি।’

একসময় মেয়েকে ক্রিকেট খেলতে বারণ করতেন আর এখন সেই মেয়েকে নিয়েই নতুন করে স্বপ্ন দেখছেন মারুফার বাবা-মা। তাদের প্রত্যাশা ব্যাট-বল দিয়ে নিজ গ্রামকে বিশ্বমঞ্চে চেনাবেন মারুফা। মারুফার বাবা আইমুল্লাহ বলেন, ‘ছোটবেলা থেকে অনেক কষ্ট করে আমার মেয়েটা বড় হয়েছে। আশা করি সে দেশের মুখ উজ্জ্বল করতে পারবে। গ্রামবাসীর জন্য সুনাম বয়ে আনতে পারবে।’

আগামী ১০ ফেব্রুয়ারি সেই দক্ষিণ আফ্রিকায় শুরু হবে আইসিসি নারী টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আসর। যেখানে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ১২ ফেব্রুয়ারি শুরু হবে বাংলাদেশের বিশ্বকাপ মিশন। বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ নারী দলের হয়ে যুব বিশ্বকাপে খেলা মারুফা এবার ডাক পেয়েছেন জাতীয় দলের বিশ্বকাপ স্কোয়াডে। তাই এখন পরিবারের মতো দেশবাসীরও আশা, মারুফাদের হাত ধরে হোক নতুন দিনের সূচনা।


আরো পড়ুন