• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ০৭:৩৪ পূর্বাহ্ন

রাউজান থানার সাবেক ওসির অত্যাচারে অতিষ্ঠে ভুক্তভোগীর অভিযোগ পুলিশ কমিশনার কার্যালয়ে

/ ১৬২ বার পঠিত
আপডেট: রবিবার, ২২ জানুয়ারি, ২০২৩

চট্টগ্রাম প্রতিনিধি:
চট্টগ্রামের রাউজান থানার সাবেক ওসি বর্তমানে সিএমপি-তে কর্মরত পুলিশ পরিদর্শক মো.কেফায়েত উল্লাহকে
সিএমপি থেকে অন্যত্র বদলীর জন্য অভিযোগ করেছেন চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার গহিরা গ্রামের মো.আব্দুল মোনাফের ছেলে মো.আবুল হাশেম বাবু ।

দেশের বহুল আলোচিত ও সমালোচিত চট্টগ্রামের রাউজান থানার সাবেক ওসি বর্তমানে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ পরিদর্শক হিসাবে কর্মরত আছেন। মো.কেফায়েত উল্লাহ রাউজান থানার ওসি হিসাবে কর্মরত থাকাকালে তার অপকর্মের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরনের অভিযোগ উঠে এসেছে।

মেটলাইফ ইন্সুরেন্স কর্মকর্তাকে অবৈধভাবে আটকপূর্বক নির্যাতনের লোমহর্ষক কাহিনী বিগত ৩১-৭-২০১৯খ্রিঃ তারিখ বেলা ১২.৪৫ ঘটিকার সময় চট্টগ্রাম নগরীর আগ্রাবাদস্থ মেটলাইফ ইন্সুরেন্স অফিস হতে রাউজান থানার ওসির নির্দেশে রাউজান থানার পুলিশ ১৫/২০ জন সন্ত্রাসীসহ অভিযোগ/গ্রেফতারী পরোয়ানা ছাড়া মো.আবুল হাশেম বাবু,পিতা-মোহাম্মদ আবদুল মোনাফ,সাং-গহিরা, পোস্ট-দোভাষিরহাট, থানা-আনোয়ারা, জেলা-চট্টগ্রামের ইউনিট ম্যানেজার, আমেরিকান লাইফ ইন্সুরেন্স কোম্পানী (মার্টিন এজেন্সি), ৩৭, আগ্রাবাদ, চট্টগ্রাম কার্যালয় থেকে অফিস চলাকালীন কর্মরত অবস্থায় সন্ত্রাসী কায়দায় তুলে নিয়ে রাউজান থানায় নিয়ে যায়।

থানায় নিয়ে যাওয়ার পর ওসি কেফায়েত উল্লাহর নেতৃত্বে একদল সন্ত্রাসী ঐ দিন দুপুর ০২.৩০ ঘটিকা থেকে মধ্যযুগীয় কায়দায় উপর্যোপরী নির্যাতন করে। সন্ত্রাসীদের নির্যাতনের মাত্রা এমন ছিল যে, পশুর মত তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে কামড়িয়ে রক্তাক্ত জখম করে এবং কান কামড়ে ছিড়ে ফেলা হয়েছে। তাকে নির্যাতন করে কিছু মানুষের ছবি দেখিয়ে তাদের পরিচয় জানতে চায়।

কিন্তু সে চিনেনা বললে তাদের নির্যাতনের মাত্রা আরো বাড়িয়ে দেয়। তাদের এই অমানবিক ও অমানষিক নির্যাতন ০১-৮-২০১৯ খ্রিঃ তারিখ বেলা ১.৩০ ঘটিকা পর্যন্ত চলে এবং ওসি তার নিকট এক লক্ষ টাকা চাঁদা দাবী করে। থানায় ২৪ ঘন্টা রাখার নিয়মের কারণে ২টি পুরাতন মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে মুমূর্ষু অবস্থায় তাকে কোর্টে চালান করে দেয়। প্রায় এক মাস সাতাশ দিন সে চট্টগ্রাম জেলা কারাগারে থাকার পর জামিনে মুক্ত হয়। জেল থেকে বের হয়ে দীর্ঘ দিন ডাক্তারের চিকিৎসার পর সুস্থ হয়। ওসি‘র রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে সে থানায় বা কোর্টে মামলা দাখিল করতে পারেনি। এই ঘটনায় একাধিক দৈনিক পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হয়।

রাউজানের সংখ্যা লঘুদের ক্রস ফায়ারের ভয় দেখিয়ে সম্পত্তি লিখে নেওয়ার চেষ্টা রাউজান থানাধীন পূর্ব গুজরা ইউনিয়নের আধারমানিক গ্রামের জনৈক সুনিল দাস নামের এক ব্যক্তির কাছ থেকে ৬১ শতক জমি ক্রয় করেন একই গ্রামের বাসিন্দা রাজ গোলাল চৌধুরী। পরে জমি বিক্রেতা সুনিল দাস এর ছেলে রাজীব দাস জোরপূর্বক উক্ত জমি ফিরিয়ে নিতে চেষ্টা করেন।

এ প্রেক্ষিতে ২৭ জুলাই/২০২০ তারিখ জমি ক্রেতা রাজ গোপাল চৌধুরীর বিরুদ্ধে রাউজান থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন। জমি বিক্রেতা সুনিল দাস এর ছেলে রাজীব দাস। এ অভিযোগের সূত্র ধরে ১৪ আগস্ট/২০২০ তারিখ সকালে রাজ গোপাল চৌধুরী ও তার ভাইদের রাউজান থানায় উপস্থিত হওয়ার জন্য নোটিশ প্রদান করেন সাবেক রাউজান থানার ওসি। নোটিশ পেয়ে রাজ গোপাল চৌধুরী থানায় গেলে রাউজান থানার ওসি কেফায়েত উল্লাহ রাজ গোপাল চৌধুরীকে থানায় আটক করে রাখেন।


এ সময় তার পকেটে থাকা ৭ হাজার টাকাও নিয়ে ফেলে এবং ক্রস ফায়ারের ভয় দেখিয়ে উক্ত সম্পত্তি
অভিযোগকারী রাজীব দাসের নামে মোটা অংকের ঘুষের বিনিময়ে লিখে দেওয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করেন। এ সংক্রান্তে রাজ গোপাল চৌধুরী থানায় আটক রেখে ক্রস ফায়ারের ভয় দেখিয়ে সম্পত্তি লিখে নেওয়ার চেষ্টার অভিযোগে ওসি কেফায়েত উল্লাহসহ চার জনের বিরুদ্ধে চট্টগ্রাম চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা
দায়ের করেন। ঘটনাটি সে সময় বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় ঢালাওভাবে সংবাদ প্রচার করে।

ওসি কেফায়েত উল্লাহর বিরুদ্ধে আরেক সংখ্যা লঘুকে ক্রস ফায়ারের ভয় দেখিয়ে টাকা আদায়ের অভিযোগে মামলা দায়ের।ক্রস ফায়ারের ভয় দেখিয়ে আড়াই লাখ টাকা আদায়ের অভিযোগে রাউজান থানার সাবেক ওসি কেফায়েত উল্লাহসহ চার জনের বিরুদ্ধে গত ২৪ আগস্ট তারিখ চট্টগ্রামের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শহীদুলাহ কায়সারের আদালতে মামলা দায়ের করেন রাউজান পৌরসভার ৩নং ওয়ার্ডের পূর্ব গহিরা গ্রামের কুন্ডেশ্বরী এলাকার বাসিন্দা হরিদাশ চৌধুরীর পুত্র কাঞ্চন চৌধুরী।


গত ২০১৮ সালের ১০ জুলাই রাত ১১টার পর চট্টগ্রাম নগরী হতে রাউজান পৌরসভার ৩ নং ওয়ার্ডে অবস্থিত নিজ বাড়ীতে যান কাঞ্চন চৌধুরী। সে দিন রাত ১ টার দিকে পুলিশ হঠাৎ তার বাড়ী ঘেরাও করে ফেলে। ঘরের ভেতর থেকে ওসি কেফায়েত উল্লাহর পরিচয় পেয়ে তিনি ঘরের বাহিরে আসার পর ওসির সাথে আসা এসআই সাইফুল ওসি‘র নির্দেশে তার মাথায় পিস্তল ধরেন। তার ঘরে অবৈধ অস্ত্র আছে বলে ওসি কেফায়েত উল্লাহ ঘর তল্লাশী করতে বলেন। পুলিশ ঘর তল্লাশীর নামে তার আলমারীতে মেয়ের বিয়ের জন্য জমি বিক্রির দুই লক্ষ টাকা, একটি স্বর্ণের চেইনসহ একভরি ওজনের স্বর্ণালংকার নিয়ে যায়। যাওয়ার সময় তারা কাঞ্চন চৌধুরীকে থানায় নিয়ে যায় এবং ক্রস ফায়ারের ভয় দেখিয়ে টাকা দাবী করে। পরে ৫০,০০০/- টাকা নিয়ে তাকে একটি পুরাতন মামলায় কোর্টে চালান করে দেয়। এ ঘটনাটিও বিভিন্ন দৈনিক পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হয়।

বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়,ওসি কেফায়েত উল্লাহ একজন মদ্যপায়ী, ড্রাগ এডিকটেড ব্যক্তি। তার চেহারায় কোন ভদ্রলোকের চিহ্ন নেই। সে খারাপ কাজ করতে করতে নিজেই একজন খারাপ লোকে পরিনত হয়েছে। এ ধরণের একজন পুলিশ অফিসার মেট্রোপলিটন এলাকার থানার অফিসার ইনচার্জ এর যোগ্য নয়। সে যে থানায় চাকুরী করেছে সেখানে স্থানীয় প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় থেকে নিরীহ মানুষকে মিথ্যা মামলা- মোকদ্দমা দিয়ে হয়রানী করাই ছিল তার কাজ।

সে রাউজান থানায় দীর্ঘ দিন কর্মরত থাকায় সেখানকার নোংরা রাজনীতির প্রভাবে প্রভাবিত হয়ে নানা অপকর্ম চালায়। সে সুযোগ পেলেই সংখ্যা লঘুদের মিথ্যা মামলা মোকদ্দমা দিয়ে হয়রানি করতো। তারা রাউজান থানার বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ করার সাহস পায় না। কেউ অভিযোগ করলে তার বিরুদ্ধে দমনপিড়নের মাত্রা আরো বৃদ্ধি পাইত। তিনি অপরাধীদের সমাজ থেকে নির্মূল করার কথা কিন্তু তিনি তা না করে সন্ত্রাসী কায়দায়, চাঁদাবাজি টাকার বিনিময়ে জমি দখল-বেদখল ইত্যাদিতে লিপ্ত ছিল।

তার চেহারা দেখলেই বুঝা যায় যে, সে একজন খারাপ চরিত্রের লোক। মেট্রোপলিটন এলাকায় শিক্ষিত, এলিট শ্রেণীর লোকের বসবাস। এখানে গ্রামগঞ্জে চাকুরী করা একজন নিকৃষ্ট চরিত্রের কর্মকর্তাকে সিএমপি‘র মত মেট্রোপলিটন এলাকার থানায় ওসি হিসাবে দায়িত্ব দেওয়া হলে সে রাউজানের মত এখানেও অপকর্ম করে মেট্রোপলিটনের ইমেজ নষ্ট করে দিবে।

এলাকায় মদ, গাঁজা, ইয়াবার রমরমা মাদকের হাট বসাবে। ওসি কেফায়েত উল্লাহ এতো নিম্নমানের মানুষ যে, চার বছর, চার মাস রাউজান থানায় কর্মরত থাকার পর রাউজান থানা হতে বদলী হয়ে যাওয়ার সময় সে থানার যে রুমে বসতেন সে রুমের এসি ও কাঁচের দরজা খুলে নিয়ে যায়। যা নিয়ে চট্টগ্রামের স্থানীয় পত্রিকা ঢালাওভাবে সংবাদ প্রকাশ করে । তাকে সিএমপিতে ওসি করা হলে সে রাউজানের মত রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় থেকে কাজ করবে। সিএমপির উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে কোন তোয়াক্কা করবে না।

রাউজানের সাবেক ওসি কেফায়েত উল্লাহ্র নির্যাতনে অতিষ্ঠ ভুক্তভোগীরা বলেন, উপরে উল্লিখিত ঘটনাগুলি বিবেচনা করে উক্ত ওসি কেফায়েত উল্লাহকে সিএমপির কোন থানায় বদলী না করে, তাকে সিএমপি হতে অন্যত্র বদলীর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ জানান।

ইন্সুরেন্স এর কর্মকর্তা আবুল হাশেম বাবুকে গ্রেফতারি পরোয়ানা ছাড়া কেন আটক করেছেন জানতে চাইলে,চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিবি) বন্দর জোনের উপ-পরিদর্শক, রাউজান থানার সাবেক ওসি কেফায়েত উল্লাহ আমাদের প্রতিবেদকের প্রশ্নের উত্তরে বলেন, এ বিষয়টি আমার মনে নেই। জমি সংক্রান্ত বিষয়ে রাউজান উপজেলার গহিরা গ্রামের রাজ গোপাল চৌধুরীকে গ্রেফতার ও নির্যাতনের দায়ে আদালতে আপনি সহ চারজনের বিরুদ্ধে চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ভুক্তভোগী একটি মামলা দায়ের করেছিলেন।এ বিষয়ে জানতে চাইলে, তিনি বলেন এটি আদালতের মাধ্যমে নিষ্পত্তি হয়েছে।

আরেক সংখ্যালঘু আপনার নির্যাতনের দায়ে ভুক্তভোগী কাঞ্চন চৌধুরী চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আপনিসহ চারজনকে অভিযুক্ত করে আরেকটি চীফ জুডিশিয়াল আদালতে মামলা দায়ের করেছিলেন, এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন এটিও আদালতের মাধ্যমে নিষ্পত্তি হয়েছে। তিনি আরো বলেন, এ বিষয়গুলোর বিশদ জানতে চাইলে, বর্তমানে দায়িত্বরত রাউজান থানার অফিসার ইনচার্জকে কল দিতে পারেন। রাউজান থানার সাবেক ওসি কেফায়েত উল্লাহ বলেন, এ বিষয়গুলো দিয়ে আমাকে ছোট এবং খেয় প্রতিপন্ন করার জন্য একটি মহল অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।


আরো পড়ুন