• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৪:১৭ অপরাহ্ন

কুমিল্লা কোতয়ালী থানার ওসি’র বিরুদ্ধে- চাঁদাবাজি সহ স্ত্রী”র পৃথক ২ মামলা!

/ ৩৪৪ বার পঠিত
আপডেট: সোমবার, ২ ডিসেম্বর, ২০১৯

কুমিল্লা প্রতিনিধিঃ একাধিক নারীর সাথে অবৈধ সম্পর্কের এবং থানায় এক ব্যবসায়ীকে আটক রেখে জোরপূর্বক দেড়কোটি টাকার চেক লেখার অভিযোগে কুমিল্লা কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি (তদন্ত)মোঃসালাহ উদ্দিনের বিরুদ্ধে আদালতে পৃথক দুটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।
প্রথম মামলা প্রকাশঃ নারী নির্যাতন ও পরকীয়ার অভিযোগে মামলা করেছেন প্রথম স্ত্রী সামসুন নাহার সুইটি। গত বৃহস্পতিবার দুপুরে কুমিল্লার নারী ও শিশু আদালতে মামলাটি দায়ের করা হয়। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে কুমিল্লার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটকে তদন্তের জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন।

মামলার বাদী শামসুন নাহার সুইটি বলেন,বিয়ের সময় সালাহ উদ্দিন সিএমপিতে পিএসআই পদে কর্মরত ছিলেন। সেই সময় তার বাবার কাছে থেকে বিভিন্ন সমস্যার কথা বলে সে পাঁচ লাখ টাকা ঋণ নেয়। সেই টাকা আজও পরিশোধ করেনি। এছাড়া ৩০ ভরি স্বর্ণলংকারও নিয়ে গেছে সে। ২০১৪ সালে ৬ ফেব্রুয়ারি তাহমিনা আক্তার পান্না নামে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার এক মেয়েকে আমার অজান্তে বিয়ে করে। সেই সংসারে একটি সন্তান রয়েছে। আদালতে সেই বিয়ের নিকাহনামা দাখিল করেছি। আট থেকে নয় মাস ধরে কুমিল্লা কোতোয়ালি থানার চান্দপুর এলাকার আজমিরি খন্দকার ওরফে পপি আক্তার মেরি নামে এক মেয়ের সঙ্গে পরকীয়া সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে সে। এখন শুনছি তাকেও নাকি বিয়ে করেছে। এভাবে একাধিক নারীর সঙ্গে তার পরকীয়ার সম্পর্ক রয়েছে। গত কয়েক মাস ধরে মারধর করে ১১ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করে আসছে সালাউদ্দিন। সে বলছে ১১ লাখ টাকা দিলে দ্বিতীয় স্ত্রী পান্নাকে বিদায় করে দেবে। আর টাকা না দিলে সন্তানসহ বাসা থেকে বের করে দেবে। এখন বাচ্চাদের ও সংসারের কোনো খরচও দেয় না সে। এ জুলুমের বিচার দাবি করছি।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে শামসুন নাহার সুইটি আরো বলেন, সালাহ উদ্দিনের কারণে পুলিশের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে। পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অনুরোধ করবো তাকে যেন চাকরিচ্যুত করা হয়। কারণ সে নিজেইতো একজন জুলুমবাজ। সে কিভাবে মানুষের ন্যায় বিচার পেতে কাজ করে?
সুইটির বাবা মোঃবজলুর রহমান বলেন, চার মাস ধরে মেয়েকে নিয়ে যেতে বলছে সালাহউদ্দিন। না নিলে মেয়েকে মেরে ফেলবে। তার রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক দু’টো পাওয়ারই আছে। বেশি বাড়াবাড়ি করলে আমাদের খবর করার হুমকি দিয়েছে।

মামলাটির বাদীপক্ষের আইনজীবী বলেন, আমরা আদালতের কাছে কৃতজ্ঞ। কারণ আদালত শুনানি শেষে মামলাটি জুডিশিয়াল তদন্তের জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। আশা করছি, এই তদন্তে বাদীপক্ষ ন্যায় বিচার পাবে।
আদালতে দায়ের করা মামলার তথ্য ও বাদীপক্ষের লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০০৬ সালের ১৮ নভেম্বর চট্টগ্রামের হাটহাজারীর উত্তর মাদাশা গ্রামের মো. সামশুল আলমের ছেলে মো. সালাহ উদ্দিনের সঙ্গে ঢাকা শ্যামপুর কদমতলী থানার পূর্ব দোলাইরপাড়ের মো. বজলুর রহমানের মেয়ে শামসুন নাহার সুইটির বিয়ে হয়। তাদের সংসারে নয় বছর বয়সী এক ছেলে ও পাঁচ বছর বয়সী এক মেয়ে রয়েছে। দুই সন্তান নিয়ে শামছুন নাহার সুইটি কুমিল্লা নগরীর পুরাতন চৌধুরী পাড়ার ভাড়া বাসায় বসবাস করছেন।

এসব অভিযোগ প্রসঙ্গে কুমিল্লা কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি (তদন্ত) মো.সালাহউদ্দিন বলেন, আমি এখনো আদালতের নোটিশ বা মামলার কপি হাতে পাইনি। আদালতের আদেশের কপি পেলে এ বিষয়ে কথা বলবো। তবে এখন কোনো কিছুই বলতে চাই না।

দ্বিতীয় মামলা প্রকাশঃ
এদিকে হোটেল ব্যবসায়ীকে থানায় আটকে দেড় কোটি টাকার চেক লিখে নেওয়ার অভিযোগে কুমিল্লা কোতোয়ালী মডেল থানার ওসি (তদন্ত) মোঃসালাহউদ্দিনকে প্রধান আসামি করে দুইজনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা দায়ের করা হয়েছে।রোববার দুপুরে কুমিল্লা নগরীর মনোহরপুর সদর হাসপাতাল রোড এলাকার আব্দুল হামিদের ছেলে মোঃ মহি উদ্দিন বাদী হয়ে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলাটি করেন।
এ মামলার অপর আসামি হলেন নগরীর মনোহরপুর উজির দীঘির পাড় এলাকার রতন মিয়ার ছেলে মেসার্স এম আলমের মালিক মোঃমাহাবুব আলম,সে বাদীর চাচাতো ভাই।

সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ১নং আমলি আদালতের বিচারক জালাল উদ্দিন মামলাটি আমলে নিয়ে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) কুমিল্লার অ্যাডিশনাল এসপিকে তদন্তের জন্য নির্দেশ দেয়। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বাদী পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট সালাউদ্দিন মাহমুদ।

বাদীর অভিযোগ সূত্রে জানা যায়,ব্যবসায়িক প্রয়োজনে তৃতীয় পক্ষকে গ্যারান্টার দেখিয়ে বাদী মহিউদ্দিনের জমি বন্ধক রেখে মাহাবুব আলম ব্যাংক থেকে ঋণ গ্রহণ করে। সময় মতো ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ করতে না পারায় অর্থ ঋণ আদালতে মাহাবুবের বিরুদ্ধে মামলা করে ব্যাংক।

ওই ব্যাংক কর্তৃপক্ষ মামলা করার পর থেকে আসামি মাহাবুব বাদীর কাছ থেকে টাকা আদায়ের চেষ্টা করলে ব্যাংকের আদেশ ছাড়া কোনো টাকা দেবেন না জানান মহিউদ্দিন।

পরবর্তীতে কুমিল্লা কোতোয়ালী মডেল থানার ওসি (তদন্ত) মোঃসালাহউদ্দিন এবং আসামি মাহাবুব আলম যোগসাজশে টাকা আদায়ের উদ্দেশ্যে চলতি বছরের ৩ আগষ্ট রাত ১০টার সময় ৩-৪ জন পুলিশ সদস্য এবং মাহাবুব নগরীর হোটেল সালাউদ্দিনের ক্যাশে বসা অবস্থা থেকে মহিউদ্দিনকে থানায় তুলে নিয়ে যায়।
থানায় নিয়ে মোঃসালাহউদ্দিন বাদীকে তার রুমে আটক রাখে। বাড়ি থেকে চেক বই নেয়ার জন্য বাদীকে চাপ দেয় ওসি সালাউদ্দিন ও মাহাবুব। চেক বই না দিলে মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে দেয়া হবে ভয় দেখায়।পরবর্তীতে বাদী বাড়ি থেকে ছোট ভাইয়ের মাধ্যমে থানায় চেক বই নেয়ার পর ১ কোটি ৫০ লাখ টাকার চেক লিখে দিতে চাপ দেয়। হুমকির মুখে পড়ে একটি চেকে ১কোটি ৫০ লাখ টাকা লিখতে বাধ্য হয় বাদী এরপর ওসি সালাউদ্দিন চেকটি গ্রহণ করেন।

বাদী মহিউদ্দিন বলেন,থানায় তুলে নিয়ে দেড়কোটি টাকার চেক লিখে দিতে ওসি সালাউদ্দিন আমাকে হুমকি,মিথ্যা মামলার ভয় এবং নানা চাপ প্রয়োগ করেছেন। আইন অনুসারে কোনো পুলিশ কর্মকর্তা তা করতে পারে না। ঘটনার পর এসপির কাছে আমি অভিযোগ করে আদালতে মামলা করেছি।

ওসি মোঃসালাহউদ্দিন বলেন,চেকের সমস্যা বাদীর চাচাতো ভাই মাহাবুবের সঙ্গে। এখানে আমি জড়িত নয়। মামলার বিষয়ে এখনো আমি আদালত থেকে কোনো কাগজপত্র পাইনি।
মামলার দ্বিতীয় আসামি মাহাবুব আলমের মোবাইলে যোগাযোগের জন্য একাধিকবার চেষ্টা করে তাকে পাওয়া যায়নি।

উল্লেখ্য বহু বছর ধরে কুমিল্লা কোতয়ালি মডেল থানায় কর্মরত ওসি তদন্ত সালাউদ্দিনের বিরুদ্ধে গত ২৮ নভেম্বর ওসি সালাউদ্দিনের স্ত্রী কুমিল্লার আদালতে নারী নির্যাতন ও পরকীয়ায় আসক্ত অভিযোগ এনে মামলা করেছেন।


আরো পড়ুন