• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৬:৪২ পূর্বাহ্ন

২০৪১ সালে দেশ হবে স্মার্ট বাংলাদেশ: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

/ ৮১ বার পঠিত
আপডেট: মঙ্গলবার, ২০ ডিসেম্বর, ২০২২

জাতির পিতার ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলার প্রত্যয় ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত বাংলাদেশ হবে। প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রযুক্তির ব্যবহারে ৪১ সালে দেশ হবে স্মার্ট বাংলাদেশ। ২১০০ সালের মধ্যে আমরা ডেল্টা প্ল্যান বাস্তবায়ন করবো। ’

মঙ্গলবার (২০ ডিসেম্বর) সকালে রাজধানীর পিলখানা সদর দপ্তরে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) দিবস ২০২২ উদযাপন অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এ বাহিনীকে (বিজিবি) যুগোপযোগী করে গড়ে তুলতে এর পুনর্গঠন ও আধুনিকায়নের কাজ শুরু করেন। তার পদাঙ্ক অনুসরণ করে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার ‘বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ আইন-২০১০’ প্রণয়নসহ বিজিবিকে একটি বিশ্বমানের আধুনিক, দক্ষ ও শক্তিশালী সীমান্তরক্ষী বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে ‘বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ ভিশন-২০৪১’ এর পরিকল্পনা গ্রহণ করে। এরই ধারাবাহিকতায় বাহিনী পুনর্বিন্যাস করে বিজিবির সাংগঠনিক কাঠামোতে ৫টি রিজিয়নসহ নতুন নতুন সেক্টর ও ইউনিট সৃজন করে কমান্ড স্তরে ভারসাম্য আনাসহ প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগ করা হয়েছে। ’

যেকোনো বাহিনীর এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে চেইন অব কমান্ড খুব গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিজিবি সদস্যদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘শৃঙ্খলা ও চেইন অব কমান্ড যেকোনো বাহিনীর জন্য সব সময় গুরুত্বপূর্ণ। চেইন অব কমান্ড মেনে চলবেন। কখনো শৃঙ্খলার ব্যাঘাত ঘটাবেন না। ’

বাহিনীর শৃঙ্খলা, চেইন অব কমান্ড সম্পর্কে বঙ্গবন্ধুর ভাষণকে উদ্বৃত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘১৯৭৪ সালের ৫ ডিসেম্বর তৎকালীন বাংলাদেশ রাইফেলস সদস্যদের উদ্দেশে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বলেছিলেন, “ঈমানের সাথে কাজ করো, সৎ পথে থেকে দেশকে ভালোবাসো। এই দেশ আমাদের। ” দেশ উন্নত হলে, আপনারা সবাই ভালো থাকবেন, উন্নত জীবন পাবেন। চিকিৎসায় পাবেন। এই কথা সবাইকে মনে রাখতে হবে। ’

সরকারপ্রধান বলেন, ‘করোনা মহামারি ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দা বা সংকট দেখা দিয়েছে। আমাদের এখানে যেন মন্দা বা সংকট না আসে। সে জন্য প্রতিটি মানুষকে নিজ নিজ জায়গা থেকে কিছু না কিছু উৎপাদন করতে আহ্বান করেছিলাম। বিজিবি প্রতিটি বিওপিতে আমার নির্দেশনা মেনেছে, দেখে খুশি হয়েছি। ’

তিনি জানান, ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত ৯২২ জন নারী সৈনিকসহ সৈনিক ও অসামরিক পদে ৩৫ হাজারের অধিক জনবল নিয়োগ করা হয়েছে। আরও ১৫ হাজার জনবল নিয়োগের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এ বাহিনীর জনবল আগামী ২০৪১ সাল নাগাদ ৯০ থেকে ৯৫ হাজারে উন্নীত করার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।

সরকারপ্রধান বলেন, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশকে একটি যুগোপযোগী ও আধুনিক সীমান্তরক্ষী বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে স্বতন্ত্র এয়ার উইং সৃজন করে এরই মধ্যে অত্যাধুনিক এমআই-১৭১-ই প্রযুক্তির হেলিকপ্টার সংযোজনের মাধ্যমে এ বাহিনীকে একটি ‘ত্রিমাত্রিক বাহিনী’ হিসেবে গড়ে তোলা হয়েছে। বিজিবি এখন জল, স্থল ও আকাশ পথে দায়িত্ব পালনে সক্ষম। দেশের সীমান্ত এলাকায় নিশ্ছিদ্র নজরদারি ও আন্তঃরাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় ঝুঁকিপূর্ণ সীমান্তে ‘স্মার্ট ডিজিটাল সার্ভেইল্যান্স অ্যান্ড ট্যাকটিক্যাল বর্ডার রেসপন্স সিস্টেম’ স্থাপন করা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিজিবির সাংগঠনিক কাঠামোতে অত্যাধুনিক আর্মাড পার্সোনেল ক্যারিয়ার (এপিসি), রায়ট কন্ট্রোল ভেহিক্যাল, অল ট্যারেইন ভেহিক্যাল (এটিভি), আধুনিক ও যুগোপযোগী এন্টি ট্যাংক গাইডেড উইপন, উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন বিভিন্ন সিরিজের হাইস্পিড বোট এবং এয়ার বোট সংযোজন করা হয়েছে। বিজিবিতে এসব অত্যাধুনিক ও যুগোপযোগী অস্ত্র ও সরঞ্জামাদি যুক্ত হওয়ায় এ বাহিনীর আভিযানিক সক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি সৈনিকদের মনোবল ও কর্মোদ্দীপনা বহুগুণ বেড়েছে।

তিনি বলেন, বর্তমান সরকার পার্বত্য সীমান্তের নিরাপত্তা বৃদ্ধি এবং দুর্গম পার্বত্য এলাকায় বসবাসকারী জনসাধারণের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের লক্ষ্যে সর্বমোট ১ হাজার ৩৬ কিলোমিটার সীমান্ত সড়ক নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। প্রথম পর্বে ৩১৭ কিলোমিটার সীমান্ত সড়ক নির্মাণের কাজ চলমান রয়েছে। এর ফলে সীমান্ত সুরক্ষার পাশাপাশি পার্বত্য অঞ্চলে স্থিতিশীলতা বজায় রাখার ক্ষেত্রে বিজিবির আভিযানিক কর্মকাণ্ড সহজতর হবে।

শেখ হাসিনা জানান, ভারত এবং মিয়ানমার সীমান্তে ৪টি ব্যাটালিয়ন এবং সুন্দরবন এলাকায় ২টি ভাসমান বিওপিসহ মোট ৬২টি বিওপি সৃজনের মাধ্যমে প্রায় সাড়ে ৫শ’ কিলোমিটার অরক্ষিত সীমান্তের মধ্যে অধিকাংশ সীমান্তই এরই মধ্যে নজরদারির আওতায় আনা হয়েছে। এছাড়াও সীমান্তে বিজিবির সক্ষমতা বৃদ্ধি, অপারেশনাল কার্যক্রমে গতিশীলতা আনয়ন এবং নজরদারি জোরদার করার জন্য বিওপির দায়িত্বপূর্ণ এলাকা কমানোর লক্ষ্যে ২৪২টি নতুন বিওপি সৃজন এবং সীমান্ত হতে অধিক দূরত্বে স্থাপিত ১২৬টি বিওপি সীমান্তের সন্নিকটে স্থানান্তরের কার্যক্রম চলমান রয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিজিবি সৈনিকদের জীবনমান উন্নয়নে বর্তমান সরকার বিভিন্ন ধরনের কল্যাণমুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। বিজিবি সদস্যদের নতুন র‌্যাংক ব্যাজ প্রবর্তন, যোগ্যতার ভিত্তিতে পদোন্নতি, সীমান্ত ভাতা বৃদ্ধি, জুনিয়র কর্মকর্তা ও হাবিলদার পদবির সদস্যদের বেতন স্কেল উচ্চ ধাপে উন্নীতকরণ, অগ্রিম বেতনসহ বাৎসরিক ২ মাসের ছুটি প্রদান, পারিবারিক রেশন ও ৩ বছরের নিচে সন্তানদের পূর্ণস্কেল রেশন প্রদানসহ বিজিবি সদস্যের প্রতিবন্ধী সন্তানদের অবসরের পূর্ব পর্যন্ত নগদমূল্যে রেশন প্রদান এবং জ্বালানি, মসলা, চুলকাটা ও পোশাক ধোলাই ভাতাসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা পূর্বের তুলনায় বহুগুণ বৃদ্ধি করা হয়েছে।

বিজিবি সদস্য ও তাদের পরিবারের উন্নত চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করার জন্য বর্ডার গার্ড হাসপাতাল, ঢাকায় ক্যাথ ল্যাব, সিসিইউ, আরটিপিসিআর ল্যাব, ডায়ালাইসিস মেশিন স্থাপনসহ আরও অত্যাধুনিক চিকিৎসা সরঞ্জামাদি সংযোজন করে বিজিবি হাসপাতালসমূহকে ডিজিটালাইজেশনের আওতায় আনা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

আরও পড়ুন… বিজিবিকে চেইন অব কমান্ড মেনে চলার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর

প্রশিক্ষণের ওপর গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যেকোনো পেশাদার বাহিনীর জন্য প্রশিক্ষণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একটি সুশৃঙ্খল ও দক্ষ বাহিনীর জন্য প্রশিক্ষণের কোনো বিকল্প নেই। বিজিবি সদস্যদের উন্নত প্রশিক্ষণের জন্য সাতকানিয়ার ‘বর্ডার গার্ড ট্রেনিং সেন্টার এন্ড কলেজ’ এর পাশাপাশি চুয়াডাঙ্গায় অত্যাধুনিক প্রশিক্ষণ সুবিধা সংবলিত আরও একটি প্রশিক্ষণ সেন্টার স্থাপনের কার্যক্রম চলমান রয়েছে।

তিনি বিজিবির মনোমুগ্ধকর কুচকাওয়াজ বিশেষ করে নারী সৈনিকদের ড্রিল দেখে অত্যন্ত মুগ্ধ হন এবং বিজিবিতে বীরত্ব ও কৃতিত্বপূর্ণ কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ পদক প্রাপ্তদের অভিনন্দন জানান।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জাতির পিতা এ বাহিনীকে যুগোপযোগী করে গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন। বর্তমান সরকার এ বাহিনীকে আধুনিক ও যুগোপযোগী করে পুনর্গঠন করেছে। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে বর্তমান সরকারের আন্তরিক প্রচেষ্টা এবং সহযোগিতা সবসময়ই অব্যাহত থাকবে। ’

জাতির পিতার প্রত্যাশিত আধুনিক সীমান্তরক্ষী বাহিনী হিসেবে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ তার অভীষ্ট লক্ষ্যে এগিয়ে যাবে এবং বাংলাদেশের মানুষের আস্থার প্রতীক হয়ে ‘সীমান্তের অতন্দ্র প্রহরী’ হিসেবে বিজিবি একদিন বিশ্বের শ্রেষ্ঠতম সীমান্তরক্ষী বাহিনী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবে বলে তিনি প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন।

দিনরাত নিরবচ্ছিন্ন আভিযানিক কার্যক্রম এবং নজরদারির মাধ্যমে দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা, সীমান্ত সুরক্ষা, চোরাচালান প্রতিরোধ, মাদক ও নারী-শিশু পাচার রোধের পাশাপাশি বিভিন্ন জাতীয় ও স্থানীয় নির্বাচনে দায়িত্ব পালনসহ দেশের অভ্যন্তরীণ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তা প্রদান, বাংলাদেশে আশ্রয় গ্রহণকারী বলপূর্বক বাস্তচ্যুত মায়ানমার নাগরিকদের ক্যাম্পের নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলা রক্ষা এবং অবৈধ মায়ানমার নাগরিকদের বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ রোধে বিজিবির ভূমিকার ভূয়সী প্রশংসা করে প্রধানমন্ত্রী সব বিজিবি সদস্যের প্রতি ধন্যবাদ জানান।

ভবিষ্যতে এ সফলতা আরও বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিজিবি সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, বিজিবি প্রধানসহ মন্ত্রিপরিষদ সদস্যরা এবং সামরিক-অসামরিক পদস্থ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।


আরো পড়ুন