• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১২:২৪ অপরাহ্ন

মঞ্চে শীতবস্ত্র না থাকায় ক্ষুব্ধ মমতা, ভাষণ থামিয়ে বসে থাকলেন প্রায় ১৭ মিনিট

/ ৭৭ বার পঠিত
আপডেট: মঙ্গলবার, ২৯ নভেম্বর, ২০২২

সরকারি পরিষেবা প্রদান অনুষ্ঠান থেকে শীতবস্ত্র বিতরণের কর্মসূচি ছিল পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির। কিন্তু সেই শীতবস্ত্র মঞ্চে থাকার বদলে তা পড়ে রয়েছে ব্লক ডেভেলপমেন্ট অফিসে (বিডিও)। আর তা শুনেই ক্ষোভ উগরে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী। প্রথমে জেলা প্রশাসককে ডেকে তিরস্কার করে বললেন, ‘তোমার কাছ থেকে এটা আশা করিনি’। বিডিও এবং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের উদ্দেশেও কড়া বার্তা দেন মুখ্যমন্ত্রী। এরপর মাঝপথেই ভাষণ থামিয়ে বসে পড়লেন মমতা, বললেন, ‘যতক্ষণ না শীতবস্ত্র আসছে, ততক্ষণ পর্যন্ত আমি মঞ্চে বসে থাকবো’।

মঙ্গলবার দুপুরে উত্তর ২৪ পরগনা জেলার হিঙ্গলগঞ্জের শামশেরনগরে সরকারি পরিষেবা প্রদান অনুষ্ঠান ছিল। সেখানেই ১৫ হাজার শীত বস্ত্র বিতরণ করার কথা ছিল মুখ্যমন্ত্রীর। সেইমতো ওই শীত বস্ত্র আগে থেকেই জেলা প্রশাসকের দফতরে পাঠিয়ে দেয়া হয়। কিন্তু এদিনের অনুষ্ঠান থেকে মমতা শীতের পোশাক চাইতেই মঞ্চে উপস্থিত সরকারি কর্মকর্তারা একে অপরের দিকে তাকান। জেলা প্রশাসক বলেন, সেগুলো বিডিও অফিসে রাখা আছে, আর তা শুনেই ক্ষোভ ফেটে পড়েন মমতা।

অনুষ্ঠান মঞ্চ থেকেই মমতা বলেন, ‘আজকে প্রায় ৬০০ কোটি রুপির প্রকল্প দিয়ে দেওয়া হয়েছে এই জেলায়। শুধু তাই নয়, আমি আজকে আসবো বলে ১৫ হাজার শীত বস্ত্র কিনে এনেছি। ৫ হাজার সোয়েটার, ৫ হাজার কম্বল এবং ৫ হাজার চাদর। এটা যেন মানুষ ঠিকমতো পায়। এ ব্যাপারে আমি নিজেও নজর রাখবো।’
এসময় উত্তর ২৪ পরগনা জেলার জেলা প্রশাসক শরদ কুমার দ্বিবেদীকে ডেকে জিজ্ঞাসা করেন, শীত বস্ত্র কাকে দিয়েছেন? এই শীতবস্ত্র কোথায় রাখা হয়েছে? পরিষ্কার করে বলুন কোথায় রাখা আছে? জেলা প্রশাসক জানান, এই শীতবস্ত্র বিডিও অফিসে আছে।

এরপরই মুখ্যমন্ত্রী জানতে চান ‘কেন এগুলো বিডিও অফিসে পড়ে রয়েছে?’ অনুষ্ঠানে উপস্থিত কয়েক হাজার দর্শক তখন হাত নেড়ে তাদের অভিযোগের কথা জানাতে থাকেন। এরপর জেলা প্রশাসককে নির্দেশ দেন, বিডিওকে এক্ষুণি বলুন ওই শীতবস্ত্র এই মঞ্চে এনে হাজির করতে। আমি এখানে অপেক্ষা করবো।

পরিস্থিতি গম্ভীর দেখে ততক্ষণে মুখ্যমন্ত্রীর সামনে এসে দাঁড়ান মুখ্য সচিব এইচ কে দ্বিবেদী, স্বরাষ্ট্র সচিব বিপি গোপালিকা। তারা সকলেই মুখ্যমন্ত্রীর মান ভাঙানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীও নাছোড়বান্দা।

মুখ্যমন্ত্রী বলেন, জিনিস দিয়েও যদি না পৌঁছায় আমার খুব গায়ে জ্বালা করে। পুলিশে একটা অন্যায় করলে দোষটা পরে আমার ঘাড়ে। সরকার একটা অন্যায় করলে গালাগালি খাই আমি। অথচ আমার কোনো দোষই নেই। আমি এখানে আসবো বলে গত তিনদিন ধরে কম্বল, চাদর ও সোয়েটারগুলো কিনে এনেছি। আর এসে দেখছি ফাঁকা।

এরপর জেলা প্রশাসককে নির্দেশ দেন, আমি তোমায় বলছি এগুলো নিয়ে এসো। আমরা বলেছিলাম এই শীত বস্ত্রগুলো সরাসরি মানুষের হাতে পৌঁছে দেব কিন্তু তারা কেন শোনেনি আমি বিডিও অফিসে রাখার জন্য এগুলো পাঠায়নি। আমি তোমার কাছে এটা আশা করিনি। আমি এটা দিতে এসেছিলাম। যদি ডিএম, বিডিও, থানার কর্মকর্তারা ঠিকমতো কাজ না করেন, তবে আমি বলতে বাধ্য হচ্ছি তাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

মমতা বলেন, ১৫ হাজার শীতবস্ত্র একসঙ্গে দিতে হয়তো অসুবিধা হয়, সেজন্য ক্যাম্প করে এগুলো দেওয়া যেতে পারত। যদি কম পড়ে থাকে তবে আমি দেখে নিতাম। এখান থেকে কয়েকটি শীতবস্ত্র দেওয়া যেতেই পারতো…।

এরপরই অনুষ্ঠানে উপস্থিত দর্শকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, যতক্ষণ এই শীতবস্ত্র না আসছে আপনারাও বসুন আমিও বসলাম। মমতার এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে দর্শক আসন থেকে তখন হাত নাড়িয়ে সমর্থন জানানো হয়। এরপর প্রায় ১৭ মিনিট মঞ্চে বসে থাকেন মমতা।

এদিকে মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশনায় সরকারি কর্মকর্তাদের মধ্যে ব্যস্ততা শুরু হয়ে যায়। মমতার পাশে থাকা রাজ্যের বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক, বসিরহাটের সাংসদ নুসরাত জাহান রুহি, অশোকনগরের বিধায়ক নারায়ণ গোস্বামী, হিঙ্গলগঞ্জের বিধায়ক দেবেশ মণ্ডল, সন্দেশখালীর বিধায়ক সুকুমার মাহাতোসহ দলের অন্য নেতাদের মধ্যে তৎপরতা শুরু হয়ে যায়।

প্রায় ১৭ মিনিট পর অবশেষে প্রায় ১ হাজার শীতবস্ত্র মঞ্চে নিয়ে আসা হয়। এরপর একে একে বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষের হাতে তা তুলে দেয়া হয়। এবং এই শীত বস্ত্র প্রদানের সূচনা করেন মুখ্যমন্ত্রী। সেই সঙ্গে মমতা এও ঘোষণা দেন, কিছু শীতবস্ত্র আমি দিয়ে গেলাম, বুধবার বেলা ১২টার সময় যারা শীতবস্ত্র চান, এখানে শিবিরে এসে লাইন দিয়ে নিয়ে যাবেন। যদি ১৫ হাজারের জায়গায় ২০ হাজার শীত বস্ত্র লাগে তাও আমি দেব। গোটা বিষয়টি দেখার জন্য স্থানীয় বিধায়কদের নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী।


আরো পড়ুন