• মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১১:৫০ অপরাহ্ন

উত্তেজনা বাড়িয়ে যে বার্তা দিতে চান কিম জং উন

/ ১০১ বার পঠিত
আপডেট: বুধবার, ২৬ অক্টোবর, ২০২২

সময় আসে সময় যায়, তবে পরিবর্তন হয় না উত্তর কোরিয়ার কৌশল। উত্তেজনা বাড়ানোই যেন দেশটির কাজ। সবশেষ পাঁচ বছরের মধ্যে বর্তমানে কোরিয়া উপদ্বীপের পরিস্থিতি সবচেয়ে অস্থির। এই অবস্থা আরও খারাপ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

গত মাসে জাপানের ওপর দিয়ে একটি মিসাইল ছোড়ে উত্তর কোরিয়া। এতে করে নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে বাধ্য হন জাপানিরা। উত্তর কোরিয়ার এমন কাজকে শত্রুতামূলক এবং উসকানিমূলক হিসেবেই ধরছেন বিশ্লেষকরা।

শুধু জাপানে নয়, দক্ষিণ কোরিয়ার সীমান্তবর্তী এলাকায় যুদ্ধ বিমান ওড়ানো, ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ ও সাগরে আর্টিলারি শেল ছুড়েছে উত্তর কোরিয়া। কিছু শেল ও ক্ষেপণাস্ত্র পড়েছে বাফার জোনে। শান্তি বজায় রাখতে ২০১৮ সালে দুদেশ এই বাফার জোন তৈরি করে।

সরাসরি সংঘাতে না জড়ালেও এখনো টেকনিক্যাল যুদ্ধ করছে প্রতিবেশী দেশ দুটি।

সোমবার উত্তর কোরিয়ার একটি বাণিজ্যিক জাহাজ দেশটির সমুদ্রসীমা অতিক্রম করে। এর জেরে জাহাজটিকে উদ্দেশ করে গুলি ছোড়ে সিউল। এ ছাড়া সতর্কবার্তা দেয় জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়া। জাহাজটির সমুদ্রসীমা অতিক্রম ইচ্ছাকৃত ছিল বলে দাবি সিউলের।

কেন উত্তেজনা বাড়িয়ে যাচ্ছেন কিম। কি কারণে এমনটা করছেন উত্তর কোরিয়ার শীর্ষ এই নেতা। মূলত এর পেছনে রয়েছে তিনটি কারণ। সেগুলো হলো, নিজেদের প্রযুক্তি দিয়ে তৈরি অস্ত্রের পরীক্ষা ও উন্নত করা, বিশ্বকে একটি রাজনৈতিক বার্তা পাঠানো এবং জনগণকে প্রভাবিত করা ও তার প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করা।

তবে সাম্প্রতিক সময়ের মিসাইল পরীক্ষা নিয়ে ভিন্ন সুর কিমের। তিনি বলছেন, যুক্তরাষ্ট্র, দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপানের যৌথ মহড়ার জেরে মিসাইল উৎক্ষেপণ করা হয়েছে। কোরিয়া উপদ্বীপে উত্তেজনা বাড়ানোর জন্য শত্রুদের দায়ী করছে উত্তর কোরিয়া। শত্রুদের থামাতেই সতর্কবার্তা হিসেবে পিয়ংইয়ং ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে বলে দেশটির রাষ্ট্রীয় সংবাদ মাধ্যমগুলো বলছে।

উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক হামলার প্রতিক্রিয়ায় কতটুকু প্রস্তুতি রয়েছে, তা দেখানোর জন্য গত দুমাস ধরে একাকী কিংবা যৌথ উদ্যোগে সামরিক মহড়া চালিয়েছে ওয়াশিংটন, সিউল ও টোকিও। প্রতিপক্ষের সামরিক মহড়াকে সবসময় আক্রমণের লক্ষণ হিসেবে দেখেন কিম। আর এর জেরেই নিজের শক্তি সামর্থ্য দেখাতে চান তিনি।

আক্রমণ থেকে নিজেদের রক্ষার্থের জন্য পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করেছিল উত্তর কোরিয়া। তবে কি নিজেদের রক্ষার্থেই এই মানব বিধ্বংসী অস্ত্র ব্যবহার করবে তারা, নাকি অন্য পথে যাবে। তবে প্রতিপক্ষদের ওপর চাপ বাড়াতে এই অস্ত্রকে ব্যবহার করছে পিয়ংইয়ং। এমনকি ছোট আকারের পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করতে পারেন কিম।

গত বছর নতুন নতুন সমরাস্ত্র তৈরির ইচ্ছা প্রকাশ করেন কিম। ওই সময় সামরিক সরঞ্জাম নিয়ে পাঁচ বছরের একটি পরিকল্পনার ঘোষণা দেন তিনি, যার মধ্যে ছিল ছোট ধরনের পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি। এরপরেই তিনি পারমাণবিক অস্ত্র কর্মসূচি এগিয়ে নেওয়ার প্রতিশ্রুতি করেন। পিয়ংইয়ংয়ের সাম্প্রতিক পরীক্ষাগুলো কিমে প্রতিশ্রুতির একটি অংশ।

অস্ত্র পরীক্ষার জেরে উত্তর কোরিয়ার ওপর একের পর এক নিষেধাজ্ঞা দিয়ে আসছে পশ্চিমারা। অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হলেও কমেনি দেশটির ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা।  

নিষেধাজ্ঞাগুলো হ্রাসে আলোচনা করে যাচ্ছে উত্তর কোরিয়া। তবে এতে কোনো লাভ হচ্ছে না; বরং আলোচনা দীর্ঘস্থায়ী হচ্ছে। বৈশ্বিক এজেন্ডা থেকে পিছিয়ে পড়ছে পিয়ংইয়ং।

ইউক্রেন যুদ্ধ ও চীনের উত্থান নিয়ে অনেক বেশি উদ্বিগ্ন পশ্চিমারা।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলছেন, উত্তর কোরিয়ার ওপর অর্পিত নিষেধাজ্ঞাগুলো তখনই শিথিল করা হবে, যখন কি না তারা সমস্ত পারমাণবিক অস্ত্র পরিত্যাগে রাজি হবে।

ইতোমধ্যে ওয়াশিংটন ও সিউল কোরীয় উপদ্বীপে নিজেদের শক্তিশালী করতে একমত হয়েছে। নিজেদের শক্তি দেখাতে সামরিক মহড়া চালাচ্ছে তারা। তবে এই মহড়ার প্রতি ঘৃণা জানিয়ে নিজেদের শক্তি দেখিয়ে উসকানির জবাব দিচ্ছে পিয়ংইয়ং।

গত মাসে নিজেদের পারমাণবিক অস্ত্রধারী রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা করে একটি আইন পাস করেছে উত্তর কোরিয়া। দেশটির শীর্ষ নেতা কিম এ সিদ্ধান্তকে ‘অপরিবর্তনযোগ্য’ বলে অভিহিত করেছেন এবং পরমাণু নিরস্ত্রীকরণের বিষয়ে কোনো আলোচনার সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়েছেন।

যুক্তরাষ্ট্র ও দক্ষিণ কোরিয়ার বিশ্বাস, উত্তর কোরিয়ার সপ্তম পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষার প্রস্তুতি সম্পূর্ণ করেছে। এটি পরীক্ষার জন্য উপযুক্ত রাজনৈতিক মুহূর্তের খোঁজে রয়েছে তারা। চীনের কমিউনিস্ট পার্টির সম্মেলন শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এবং আমেরিকার মধ্যবর্তী নির্বাচনের সময় তারা এ পরীক্ষা চালাতে পারে।

সূত্র: বিবিসি


আরো পড়ুন