• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ১১:৫৬ অপরাহ্ন

অটো রাইস মিলের বর্জ্য ও ছাইয়ে দূষন মারাত্বক স্বাস্থ্য ঝুঁকি !

/ ১০২ বার পঠিত
আপডেট: সোমবার, ২৪ অক্টোবর, ২০২২

ত্রিশাল(ময়মনসিংহ)প্রতিনিধি:
ময়মনসিংহের ত্রিশালে বেশ কয়েক বছর ধরে গড়ে উঠেছে বাশার অটো রাইস মিল। এ মিলের বর্জ্য, কালো ধোয়া ও ছাইয়ে পরিবেশ দুষন, নদী দুষনসহ মারত্বক ঝুকিতে এলাকার শিক্ষার্থীসহ সাধারন মানুষ।

স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, বাশার রাইস মিলের বর্জ্য, ছাই বেপোরোয়া ব্যবস্থাহীন ধোয়া চারপাশের পরিবেশ নষ্ট করছে। যার ফলে মারাত্বক শ্বাসকষ্টসহ বিভিন্ন রোগে ভোগছে এলাকার মানুষ। এখানে রয়েছে একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। শিশুরাও মারাত্ব ঝুকিতে রয়েছে। মিলের উড়ে যাওয়া ছাই ও বর্জ্যরে কারনে কোমলমতি শিশুসহ সাধারন মানুষ চোখের সমস্যাতেও ভুগছেন। মিলের ছাই সুতিয়া নদীতে ফেলে নদীর পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। বর্জের কারনে ফসলি জমিতেও চাষ বাস নষ্ট হচ্ছে। মিলের মালিককে একাধিকবার বলার পরও সে কোন ব্যবস্থা গ্রহন করেন নাই। এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও পরিবেশ অধিদপ্তর ময়মনসিংহ বারাবর লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে বলে জানান স্থানীয়রা।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পৌর এলাকার বালিপাড়া রোডের পাশেই গড়ে উঠেছে বাশার অটো রাইস মিল। রাইস মিলের ধোয়া ও শব্দে অতিষ্ঠ এলাকার মানুষ। মিলের বর্জ্য ও কালো ছাই নদীতে ফেলে নদী দুষনসহ পরিবেশের ব্যাপক বিপর্যয় নেমে এসেছে। মিলের পাশেই একাধিক মাদ্রাসা, স্কুল ও ফসলি জমি রয়েছে। মিলের দুষিত পানি ড্রেনের মাধ্যমে নেওয়া হয়েছে নদীতে। মিলের পানি ও বর্জ্য ড্রেন দিয়ে সুতিয়া নদীতে যাচ্ছে। পানির রং কালো হয়ে এর ওপর কালো বর্জ্য ভাসছে। ড্রেনটি নদীর যে স্থানে যুক্ত হয়েছে, সেখানকার আশপাশের পানির রংও কালো হয়ে আছে। এ ছাড়া নদীর পানিতে স্থানীয় লোকজনের ফেলা ময়লা-আবর্জনা ভাসছে। অনেক বাসাবাড়ির পানিনিষ্কাশনের লাইনও নদীর সঙ্গে যুক্ত। সুতিয়া নদীতে ছাই ফেলে পাহাড়ের মত তৈরী করা হয়েছে। এ ছাই গিয়ে মিশছে নদের পানির সাথে। এতে নদীর কয়েক কিলোমিটার এলাকার পানি কালো হয়ে গেছে।

স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, কয়েক বছর আগেও নদীর পানি দিয়ে তাঁরা গোসল ও গৃহস্থালির কাজ করতেন। এ নদীতে প্রচুর মাছও হতো। ছাই ফেলার কারনে নদীর কয়েক কিলোমিটার পানি কালো হয়ে আছে। এত কোন ফসলও করা যায়না। দূষণ ও দুর্গন্ধের কারণে এখন নদীর পানি ব্যবহার করা যায় না।

এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা ষাটউর্ধো রমজান আলী বলেন, অনেক বছর ধরে এ এলাকায় বসবাস করছি। আগে নদীর পানিতে গোসল করতাম। মাঝে মাঝে মাছও ধরতাম। এখানে বোর ধান চাষ হতো। এখন আর কিছুই করা যায় না। নদীর সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করছে মিলের ছাই ও দুষিত পানি। রাস্তার নিচ দিয়ে পাইপ দিয়ে নদীতে মিলের পানি নামছে। প্রায় ২৪ ঘণ্টা ওই মিলের দূষিত পানি নদীতে মিশছে। আমরা কয়েকজন মিলের মালিক ও পৌর মেয়রকে বিষয়টি জানিয়েছিলাম। তাতেও কোন ব্যবস্থা হয়নি।

তিনি আরও বলেন, শুকনো মৌসুমে নদীর পাশে পাহাড়ের মত ফেলে রাখা ছাই বাতাসে উড়ে সারা এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। আমাদের মত গরীবের কথা কেউ শুনে না।

স্থানীয় গোলাম মোস্তফা স্বপন সরকার বলেন, এ মিলের বর্জ্য ও ছাইয়ের কারনে এলাকার মানুষকে চরম দুর্ভোগ পুহাতে হচ্ছে। এখানে অনেক কোমলমতী শিক্ষার্থীরা পড়ালেখা করে তাদেরও মারাত্বক ঝুকিতে দিন কাটাতে হচ্ছে। ছাই ফেলে নদীর পানি দুষিত করে ফেলেছে। এতে ফসলও হচ্ছে না। মিলের মালিককে একাধিকবার বলার পরও কোন ব্যবস্থা নিচ্ছেনা। উপজেলা সহকারী কমিশনার ভুমি মিল মালিককে ডেকে অবহিত করেছেন । তিনি বলেছেন পরিদর্শন করে ব্যবস্থা গ্রহন করবেন।

উপজেলা সহকারী কমিশনার ভুমি হাসান আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বলেন, অভিযোগের ভিত্তিতে বাশার রাইস মিলের মালিককে শুনাণির জন্য ডাকা হয়েছি। মালিকের দাবী নিজ¦স জমিতেই ছাই ফেলছেন। আমরা সরেজমিনে ভিজিট করে পরবর্তি ব্যবস্থা গ্রহন করবো। সে যদি নিয়ম না মেনে পরিবেশের ক্ষতি করে তার বিরুদ্ধে আইন আনুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

বাশার অটো রাইস মিলের মালিক খাইরুল বাশার বলেন, সুতিয়া নদীর পাশের লিজ নেওয়া জমিতে ছাই ফেলা হতো। সেখান থেকে ছাই পানিতে মিশেছে। এলাকবাসী অভিযোগ করলে ঐখানে আর ছাই ফেলা হয়না। পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র আছে কিনা? জানতে চাইলে আছে বলে পাশ কাটিয়ে যান তিনি। তিনি ছাড়পত্র দেখাতে রাজি নন। তিনি বলেন, সব কিছু মেনেই ব্যবসা করছি।

পরিবেশ অধিদপ্তরের ময়মনসিংহের উপ-পরিচালক মিহির লাল সরকার বলেন, এ সম্পর্কে আমরা অবগত নই। যদি অভিযোগ দিয়ে থাকে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যদি তার পরিবেশ ছাড়পত্র না থাকে তার বিরোদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। বাশার রাইস মিলের পরিবেশের ছাড়পত্র আছে কিনা প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, এটা চেক করে দেখতে হবে।

তিনি আরও বলেন, প্রত্যেক শিল্পকারখানার বর্জ্য ব্যবস্থাপনা তাদের নিজস্ব গন্ডির মধ্যেই থাকতে হবে। বর্জ্য ড্রেন বা নর্দমায় ফেলা যাবে না। অটো রাইস মিলের ক্ষেত্রে গরম পানি, ছাই ও ময়লা প্রতিষ্ঠানটির চত্বরে নিজস্ব পুকুর বা গর্ত করে রাখতে হবে।


আরো পড়ুন