• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ০৬:৩১ অপরাহ্ন

দেশে প্রথম ৬ লেনের মধুমতি সেতুর উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী

/ ৭৭ বার পঠিত
আপডেট: মঙ্গলবার, ১১ অক্টোবর, ২০২২

উজ্জ্বল রায়, নড়াইল থেকে:
নড়াইলে দেশের প্রথম ৬ লেনের মধুমতি কালনা সেতু উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আনন্দের জোয়ারে ভাসছে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ
দীর্ঘ দিন পর আরেকটি অপেক্ষার অবসান হলো। স্বপ্নের ‘পদ্মা সেতু’র পর
‘মধুমতি সেতু’র দ্বারও উন্মোচন হলো। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলবাসীর আরেকটি
স্বপ্নপূরণ হলো। উজ্জ্বল রায়, জেলা প্রতিনিধি নড়াইল থেকে জানান, দুপুর ১টা ১০ মিনিটের সময় গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি
মধুমতি সেতু উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেতুটি উদ্বোধনে
দেশের ১০ জেলা তথা দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলবাসীর আরেকটি স্বপ্নপূরণ হলো।
সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সভাপতিত্বে ও প্রধানমন্ত্রীর
কার্যালয়ের মূখ্য সচিব ড.আহম্মদ কায়কাউসের সঞ্চালনায় নড়াইলের লোহাগড়ায়
সেতুর পশ্চিমপ্রান্তে নির্মিত অস্থায়ী মঞ্চে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত
ছিলেন খুলনা বিভাগীয় কমিশনার জিল্লুর রহমান চৌধুরী, খুলনা রেঞ্জ ডিআইজি
ড. খন্দকার মুহিত উদ্দিন,নড়াইল-১ আসনের সংসদ সদস্য কবিরুল হক মুক্তি,
নড়াইল-২ আসনের সাংসদ মাশরাফি বিন মোর্তুজা, নড়াইলের জেলা প্রশাসক
মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান,পুলিশ সুপার মোসাঃ সাদিরা খাতুন, প্রকল্পের
পরিচালক শ্যামল ভট্টাচার্য, সওজ নড়াইলের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ
আশরাফুজ্জামান,নড়াইল জেলা আওয়ামীরীগের সভাপতি এ্যাড. সুবাস চন্দ্র বোস,
সাধার সম্পাদক নিজামউদ্দিন খান নিলু, লোহাগড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ
আজগর আলী, লোহাগড়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শিকদার আব্দুল হান্নান
রুনু,উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি মুন্সি আলাউদ্দিন, সাধারন সম্পাদক সৈয়দ
মসিয়ূর রহমান প্রমুখ।
সোমবার (১০ অক্টোবর) নড়াইল পাড়ে উপস্থিত এনামুল কবীর টুকু জানান, এটি
অবশ্যই আনন্দের সংবাদ। মধুমতি সেতুটি এশিয়ান হাইওয়ের একটি অংশ; যা
রাজধানীকে দেশের বৃহত্তম বেনাপোল স্থলবন্দরসহ দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের
সঙ্গে সংযুক্ত করবে। এর ফলে রাজধানীর সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ
হয়ে যাবে। এর চেয়ে আর আনন্দের সংবাদ কি হতে পারে!
অপেক্ষার অবসান হলো সেতু কর্তৃপক্ষসহ গোপালগঞ্জ, ফরিদপুর, নড়াইল, যশোর,
বেনাপোল, সাতক্ষীরাসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বেশ কয়েকটি জেলার কোটি কোটি
মানুষ। আনন্দে আছেন যাত্রীবাহী বাসসহ অন্যান্য যানবাহন সংশ্লিষ্টরা। সড়ক
ও জনপথ অধিদপ্তরের ক্রস বর্ডার রোড নেটওয়ার্ক ইম্প্রুভমেন্ট প্রজেক্টের
আওতায় জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সির (জাইকা) অর্থায়নে কালনা সেতু নির্মিত হয়েছে।
মধুমতি সেতু চালু হওয়ায় নড়াইল, যশোর, বেনাপোল, নোয়াপাড়া শিল্পনগর,
সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দরসহ আশেপাশের কয়েকটি জেলার লোকজন পদ্মা সেতুর
সরাসরি সুফল পাবেন। কারণ, কালনাঘাটে এসে ফেরি পারাপারের বিড়ম্বনায় পড়তে
হতো সব ধরণের যানবাহনকে। সেতু কর্তৃপক্ষসহ স্থানীয়রা জানান, এপারে
নড়াইলের কালনাঘাট। ওপারে গোপালগঞ্জের শংকরপাশা। মাঝ দিয়ে প্রবাহিত মধুমতি
নদী। এ নদীর ওপরই নির্মিত হয়েছে দেশের প্রথম ছয় লেনের মধুমতি সেতু।
মধুমতি সেতুর প্রকল্প ব্যবস্থাপক এবং সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর (সওজ) নড়াইলের
নির্বাহী প্রকৌশলী আশরাফুজ্জামান বলেন, কালনা দেশের প্রথম ছয় লেনের সেতু।
নেলসন লোস আর্চ টাইপের (ধনুকের মতো বাঁকা) সেতু এটি। সেতুটির দৈর্ঘ্য ৬৯০
মিটার এবং প্রস্থ ২৭ দশমিক ১ মিটার। উভয় পাশে ছয় লেনের সংযোগ সড়ক প্রায়
সাড়ে ৪ কিলোমিটার। সেতু নির্মাণে মোট ব্যয় প্রায় ৯৬০ কোটি টাকা। এশিয়ান
হাইওয়ের ওপর অবস্থিত এটি। সড়ক যোগাযোগের ক্ষেত্রে সিলেটের তামাবিল হয়ে
ঢাকা, ভাঙ্গা, নড়াইল, যশোর, বেনাপোল, কোলকাতা পর্যন্ত সরাসরি ভূমিকা
রাখবে। তবে এতোদিন কালনা পয়েন্টে মধুমতি নদী ধারা বিছিন্ন ছিল। সেতু
নির্মাণের ফলে সেই বিছিন্নতা আর রইল না। মধুমতি সেতু চালুর ফলে জাতীয়
ক্ষেত্রেই নয়, আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখবে। ভারত, কোলকাতা, আসামসহ
দেশের মধ্যে সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দর, বেনাপোল ও নোয়াপাড়া নদীবন্দরের
মধ্যে যোগাযোগের মাইলফলক রচিত হবে। নড়াইলের লোহাগড়ায় ইপিজেড (রপ্তানি
প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল) চালুসহ ব্যবসা-বাণিজ্যের সম্প্রসারণ ও ব্যাপক
কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।
কালনাঘাটে স্থাপিত নামফলক থেকে জানা যায়, ২০১৫ সালের ২৪ জানুয়ারি
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘কালনা সেতু’র ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।
কালনাঘাট থেকে ঢাকার দুরত্ব মাত্র ১০৮ কিলোমিটার। ফলে ঢাকার সঙ্গে নড়াইল,
বেনাপোল, যশোর, খুলনাসহ আশেপাশের সড়ক যোগাযোগ কোথাও ৮৬ কিলোমিটার কমে
যাবে। তবে ঢাকা থেকে ফরিদপুরের ভাঙ্গা পর্যন্ত ‘এক্সপ্রেস ওয়ে’ নির্মাণ
করা হলেও ভাঙ্গা থেকে বেনাপোল পর্যন্ত এ ধরণের সড়ক নির্মিত হয়নি। ফলে এখন
থেকে‘এক্সপ্রেস ওয়ে’র সুফল পাবে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বড় একটি অংশ।
ভাঙ্গা থেকে নড়াইল-যশোর-বেনাপোল পর্যন্ত বর্তমানে দুই লেন সড়ক চালু আছে।
এই অংশে ‘এক্সপ্রেস ওয়ে’ সড়ক নির্মাণের বিষয়টি প্রকল্পাধীন বলে জানিয়েছেন
মধুমতি া সেতুর প্রকল্প ব্যবস্থাপক আশরাফুজ্জামান। তিনি বলেন, মধুমতি
সেতু চালুর ফলে যানবাহনের চাপ বেড়ে যাবে। তাই আপাতত যশোরের মনিহার সিনেমা
হল চত্বর থেকে নড়াইলের কালনাঘাট পর্যন্ত ৫২ কিলোমিটার সড়ক প্রশস্ত করার
উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বর্তমানে সড়কটি ১৮ফুট প্রশস্ত থাকলেও তা বাড়িয়ে ২৪
ফুট করা হবে। দরপত্রের কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। দরপত্র অনুমোদন হলে দুই
সপ্তাহের মধ্যে ওয়ার্কঅডার দিব। নড়াইল অংশে প্রায় ৪৭ কোটি এবং যশোর অংশে
৩২ কোটি টাকা ব্যয়ে সড়ক প্রশস্তকরণ করা হবে। এক বছরের মধ্যে কাজ শেষ করা
হবে। এ লক্ষ্যে সড়কের দুই পাশে গাছকাটার কাজ শুরু হয়েছে।
বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবী লোহাগড়ার সন্তান অ্যাডভোকেট
ফরিদুজ্জামান ফরহাদ বলেন, পদ্মা সেতুর সঙ্গে মধুমতি সেতুর অবিচ্ছেদ্য
সম্পর্ক রয়েছে। এ দু’টি সেতু (পদ্মা ও মধুমতি ) রাজধানী ঢাকার সঙ্গে
দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সড়ক যোগাযোগের ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রাখে। ফেরিঘাটের
অপেক্ষা আর যন্ত্রণা সহ্য করতে হবে না। যাত্রীসাধারণের পাশাপাশি কৃষিপণ্য
বেচাকেনার ক্ষেত্রেও সহজ হবে। পাশাপাশি পদ্মা ও কালনাঘাট এলাকায়
শিল্প-কলকারখানা গড়ে উঠবে। ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।
বাসসহ অন্যান্য যানবাহন চালকেরা জানান, ফেরিঘাট মানেই ভোগান্তি। তাদের
আশা মধুমতি সেতু চালু হওয়ায় সেই কষ্ট আর থাকবে না।
‘নড়াইল জেলার অতীত ও বর্তমান’ গ্রন্থের লেখক সিনিয়র সাংবাদিক
আকরামুজ্জামান মিলু বলেন, মধুমতি সেতুর জন্য নড়াইল, লোহাগড়া, গোপালগঞ্জের
কাশিয়ানী, যশোর ও বেনাপোলের সড়ক যোগাযোগ, কৃষিপণ্য, শিল্পকলকারখানার
ব্যাপক গুরুত্ব বেড়ে গেছে। অনেক উদ্যোক্তা এখনই কালনাঘাট এলাকায় শিল্প
প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার চিন্তা-ভাবনা শুরু করেছেন। এ লক্ষ্যে অনেকে জমিও
কিনেছেন।
লোহাগড়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি
সিকদার আব্দুল হান্নান রুনু বলেন, সরকারের উন্নয়ন ধারাবাহিকতার বড় সাফল্য
পদ্মা সেতু। সেই সঙ্গে মধুমতি সেতুও। সড়ক পথে যোগাযোগের ক্ষেত্রে এ
অঞ্চলের মানুষের নদ-নদীর আর কোনো প্রতিবন্ধকতা রইল না। ফলে দেশের
অর্থনৈতিক উন্নয়নে অবদান রাখবে মধুমতি সেতু। এজন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী
জননেত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানাই।
যশোর জেলা পরিবহন সংস্থা শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক ও বাংলাদেশ সড়ক
পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের খুলনা বিভাগীয় আঞ্চলিক কমিটির যুগ্মসাধারণ
সম্পাদক সেলিম রেজা মিঠু বলেন, মধুমতি সেতু চালুর ফলে যশোর, বেনাপোল,
সাতক্ষীরা, মেহেরপুর, মাগুরাসহ পাশের জেলাগুলোর সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা
বদলে যাবে। খুব সহজেই রাজধানী ঢাকার সঙ্গে যাতায়াত করা যাবে।আমরা ভীষন খুশি।


আরো পড়ুন