• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ০৩:৩১ পূর্বাহ্ন

মেঘনা নদী চোখের সামনে গিলে নিচ্ছে বাজার-ভিটেমাটি-কবর

/ ৭৪ বার পঠিত
আপডেট: সোমবার, ১০ অক্টোবর, ২০২২

লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি:
যুগ যুগ ধরে ভাঙছে মেঘনা নদী। প্রতিদিনই মেঘনায় বিলীন হয়ে যাচ্ছে বাজার-বসতঘরসহ ভিটেমাটি ও পূর্ব পুরুষের কবর। সব হারিয়ে এখন হাজারো বাসিন্দা নিঃস্ব হয়ে পড়েছে। যাদের ঠাই হয়েছে অন্যের জমিতে অথবা রাস্তার পাশের নিজেদের তৈরি ঝুপড়ি ঘরে। সবশেষ নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেল উপকূলীয় জেলা লক্ষ্মীপুর কমলনগর উপজেলার চরকালকিনি ইউনিয়নের নাসিরগঞ্জ বাজারটি। গত কয়েক বছরে এই ভাঙনে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেল কাদিরপন্ডিতের হাট, লুধুয়া বাজার, বাঘা বাজারসহ সরকারি বেসরকারি বহু স্থাপনা।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, প্রায় দু’মাস আগেও কমলনগরের নাসিরগঞ্জ বাজারটি ছিল জমজমাট। মানুষের পদচারনায় প্রতিদিনই বাজারটি জমে উঠতো। ভাঙন ঠেকিয়ে বাজারটি রক্ষায় স্থানীয়দের সহযোগীতায় সেখানে জঙ্গলা বাঁধও দেওয়া হয়েছিল। পরে লক্ষ্মীপুর-৪ (রামগতি ও কমলনগর) আসনের সংসদ সদস্য মেজর (অবঃ) আবদুল মান্নানের সহায়তায় সেখানে জিও ব্যাগও ডাম্পিং করা হয়েছিল। কিন্তু সম্প্রতি ভয়াবহ ভাঙনে বাজারটির এখন আর অস্তিত্ব নেই। ভাঙন এসে ঠেকেছে বাজারের টিনসেটের মসজিদের কাছে। যে কোন সময় মসজিদটিও নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাবে ভাঙন খেলায়।

স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, নাসিরগঞ্জ বাজারের উত্তর পাশে ভাঙন দেখা দেবে, এমনটি কেউ কখনো ভাঙেনি। এখন উত্তর দিকে ভাঙন শুরু হয়ে গেছে। নদী তীর রক্ষা বাঁধ দ্রুত সময়ের মধ্যে বাস্তবায়ন না হলে অচিরেই বসতভিটা ও সরকারি বেসরকারি বিভিন্ন স্থাপনাসহ নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাবে বিস্তির্ণ জনপদ। গেল জানুয়ারি মাসে সাহেবেরহাট, লুধুয়া বাজারসহ বিভিন্ন এলাকায় বাঁধ নির্মাণের জন্য বালুভর্তি জিওব্যাগ ডাম্পিং করা হয়। কিছুদিন না যেতেই কাজ বন্ধ করে দেয় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানগুলো।

সূত্র জানায়, বালু সংকট ও বরাদ্দের টাকা ছাড় না পাওয়ায় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ বন্ধ করে রেখেছে। টাকা ছাড় পেলে ও বালু সংকট কাটলেই তারা কাজ শুরু করবে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, ২০২১ইং সালে একনেকের সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রামগতি ও কমলনগর উপজেলার ৩১ কিলোমিটার নদী তীর রক্ষা বাঁধের জন্য প্রায় ৩১শ’ কোটি টাকার প্রকল্পের অনুমোদন দেন। সেই লক্ষ্যে কমলনগরের সাহেবেরহাট ইউনিয়নের মেঘনা এলাকায় গত ৯ জানুয়ারি পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী কর্ণেল (অবঃ) জাহিদ ফারুক কাজের উদ্বোধন করেন।

চরলরেন্সের গ্রামের আনোয়ার হোসেন বলেন, নদীর ভাঙনে তার ফসলী জমি তলিয়ে গেছে। একসময় নিজের জমিতে চাষাবাদ করতাম। এখন অন্যের জমিতে শ্রমিক হিসেবে কাজ করতে হয়।

নাসিরগঞ্জ এলাকার আবদুর রশিদ, মাহবুবুর রহমান, ফজলে করিম (ছদ্মনাম) জানায়, এই পর্যন্ত নদী ভাঙন রোধে তীর রক্ষা বাঁধের জন্য অনেকবার বক্তব্য দিয়েছে। এখন আর বক্তব্য দিতে ইচ্ছে হচ্ছে না। বক্তব্য দিলে বলে সরকারের বিপক্ষে যায়। এজন্য সরকারি দলীয় নেতাকর্মীরা এসে হুমকি-ধমকি দেয়। কিন্তু চোখের সামনেই বসতভিটা-ফসলি জমি, পূর্ব পুরুষের কবর গিলে নিচ্ছে মেঘনা। নির্বাক হয়ে চেয়ে থাকা ছাড়া আর কোন কিছু করার থাকে না।

চরকালকিনি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ছায়েফ উল্যাহ বলেন, জঙ্গলা বাঁধ ও বালু ভর্তি জিও ব্যাগ পেলেও ঐতিহ্যবাহী নাসিরগঞ্জ বাজারটি রক্ষা করা গেলো না। পুরো বাজার নদীর গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এখন বাজারের মসজিদটির কাছেই ভাঙন চলে আসছে। তীব্র ভাঙনে যেকোন সময় মসজিদটিও নদী গর্ভে হারিয়ে যেতে পারে। ভাঙনরোধে বাঁধ নির্মাণ কাজ দ্রুত করা না গেলে চরকালকিনি অধিকাংশ এলাকা নদীতে হারিয়ে যাবে।

কমলনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ কামরুজ্জামান বলেন, নদীতে তীব্র স্রোতে ভাঙন বেড়েছে। বাঁধ নির্মাণ কাজ বন্ধ ছিল। পাটারিরহাট এলাকাসহ কয়েকটি স্থানে ভাঙন ঠেকাতে জরুরীভাবে জিওব্যাগ ডাম্পিং চলছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃক কাজটি করা হচ্ছে।

লক্ষ্মীপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী ফারুক আহমেদ বলেন, বালু সংকট ও বরাদ্দের টাকা ছাড় পাওয়া না যাওয়ায় দীর্ঘদিন কাজ বন্ধ ছিল। বরাদ্দটি সি ক্যাটাগরি থেকে এখন বরাদ্দটি বি ক্যাটাগরিতে আনা হয়েছে। এখন টাকা পাওয়া যাবে। চলতি মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে ফের কাজ শুরু হবে ।


আরো পড়ুন