• মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪, ০৪:৫১ অপরাহ্ন

ইউক্রেনের চার অঞ্চল সংযুক্তির পর উভয় সংকটে ন্যাটো !

/ ১০৫ বার পঠিত
আপডেট: সোমবার, ৩ অক্টোবর, ২০২২
ইউক্রেনের চার অঞ্চল সংযুক্তির পর উভয় সংকটে ন্যাটো

ইউরোপের দেশ ইউক্রেনকে ১০ বিলিয়ন ডলারের সামরিক সহায়তা দিয়েছে নিরাপত্তা জোট ন্যাটো। এতে ইউক্রেন রাশিয়া যুদ্ধের পরিবর্তন হবে এমনটিই আশা করেছিল তারা। তবে ইউক্রেনের খেরসন, জাপোরোঝিয়া, দনেৎস্ক ও লুহানেস্ক অঞ্চল গণভোটের মাধ্যমে নিজেদের ভূখণ্ডের সঙ্গে সংযুক্ত করে যুদ্ধের মোড় ঘুরিয়ে দেয় পুতিন।

সাত মাসেরও বেশি সময় ধরে ইউক্রেনে চলমান রাশিয়ান সামরিক অভিযান এখন দু’দেশের সামরিক বাহিনীকে এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি করেছে যা তাদের পছন্দের পদক্ষেপ পরিবর্তন করতে বাধ্য করে। প্রথম দিকে কিয়েভের বিরুদ্ধে রুশ ‘বিমুখতা’ পূর্ব ইউক্রেনে তাদের বাহিনীকে শক্তিশালী করতে বাধা দেয়। সম্প্রতি ইউক্রেনীয় পাল্টা আক্রমণ খারকভের পূর্বে অধিকৃত ইউক্রেনীয় ভূখণ্ডের উল্লেখযোগ্য অংশ থেকে রাশিয়ান সৈন্যদের দ্রুত প্রত্যাহার করতে বাধ্য করে।
এদিকে রাশিয়ার সাথে শান্তি আলোচনা থেকে সরে আসার জন্য ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকে রাজি করার জন্য এপ্রিলে কিয়েভ উড়ে যান বরিস জনসন। এরপর ন্যাটো ইউক্রেনকে কয়েক বিলিয়ন ডলারের সামরিক সহায়তা দেওয়ার একটি কর্মসূচি ঘোষণা করে। এতে আর্থিক সহায়তা, আধুনিক ভারী অস্ত্র হস্তান্তর এবং পশ্চিমের মাটি ব্যবহারসহ সেখানে হাজার হাজার ইউক্রেনীয় সৈন্যকে রাশিয়ার হস্তক্ষেপের ভয় ছাড়াই প্রশিক্ষণ ও সংগঠিত করার কথা বলা হয়।

ইউক্রেনে ন্যাটো অস্ত্র প্রবেশের পেছনে উদ্দেশ্য ছিল ইউক্রেনকে ক্ষমতায়ন করা। এবং এ সংঘাত দীর্ঘায়িত না করে কিয়েভ এবং তার সমর্থকরা দনবাস এবং ক্রিমিয়াসহ অধিকৃত ইউক্রেনীয় ভূখণ্ড থেকে রাশিয়াকে উচ্ছেদ করা। এই ধারাবাহিকতায় সেপ্টেম্বরের গোড়ার দিকে খারকভের পাল্টা আক্রমণ ন্যাটোর কর্মকাণ্ডের গুরুতর পরিণতির ওপর জোর দিয়েছিল। ফলে খারকেভ অঞ্চল থেকে রাশিয়ান সৈন্যরা পিছু হটে।

এ সময় ইউক্রেনীয় সেনাবাহিনী একটি ন্যাটো সেনাবাহিনীতে রূপান্তরিত হয় তবে ইউক্রেনীয়রায় এটির পরিচালনা করেছে। মার্কিন নেতৃত্বাধীন ব্লক এ যুদ্ধকে রাশিয়া-বনাম-ইউক্রেন থেকে বিশেষ সামরিক অভিযান রাশিয়া-বনাম সম্মিলিত পশ্চিমা সংগ্রামে রুপ দেয়। ফলে যুদ্ধের জন্য বরাদ্দে টান পড়ে মস্কোর।

এর পরপরই রাশিয়ার প্রেডিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন সামরিক শক্তি বৃদ্ধির ঘোষণা দিয়ে ন্যাটো-চালিত যুদ্ধ যুদ্ধ খেলাটির মোড় ঘুরিয়ে দেয়। সম্প্রতি ইউক্রেনে তিন লাখ সেনা মোতায়েনের পাশাপাশি গণভোটের মাধ্যমে ইউক্রেন নিয়ন্ত্রিত চারটি অঞ্চল নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেয় পুতিন। এই গণভোটে এই চারটি অঞ্চলের নাগরিকদের একটি সহজ প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করা হয়: আপনি কি রাশিয়ার অংশ হতে চান?

ভোটের পাঁচ দিন পর, চারটি অঞ্চলের ফলাফলে দেখা যায় গণভোটে অপ্রতিরোধ্য সংখ্যাগরিষ্ঠা পেয়ে রাশিয়ায় যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে এই অঞ্চলের বাসিন্দারা। এরপর খুব অল্প সময়ের মধ্যেই, তারা রাশিয়ান ফেডারেশনে অন্তর্ভুক্ত হয়। এক সময় যা ছিল ইউক্রেন এখন সেটি রাশিয়ায় পরিণত হয়েছে।

ইউক্রেন যুদ্ধে পাশার দান পাল্টে যায়। কেবল যুদ্ধের নিয়ম পরিবর্তন করেনি রাশিয়া একইসাথে যুদ্ধে নতুনত্ব এনেছে পুতিন। চার অঞ্চল যোগ দেওয়ায় ইউক্রেন বাহিনী তাদের ভূখণ্ডে রাশিয়ান সেনাদের সাথে যুদ্ধ করার পরিবর্তে, নিজেদের বাসিন্দাদের সাথেই যুদ্ধে জড়াতে হবে। যার নেতৃত্ব দেবেন পুতিন।

ন্যাটো ব্লকের নেতৃত্ব প্রথম দিন থেকেই স্পষ্ট করে দিয়েছে যে তারা রাশিয়ার সাথে সরাসরি সংঘাত চায় না। যদিও এর সদস্যরা ইউক্রেনে তার সামরিক পুনর্গঠনে সহায়তা করার জন্য কয়েক বিলিয়ন ডলার অনুদানের ঘোষণা দিয়েছিল। যুদ্ধে ইউক্রেনকে গুরুত্বপূর্ণ রসদ, বুদ্ধিমত্তা এবং যোগাযোগ সহায়তা প্রদান করার কথা বলেছিল। তবে সরাসরি রাশিয়ার সাথে যুদ্ধ করার কোন ইচ্ছা প্রকাশ করেনি ন্যাটো। বিপরীতে ইউক্রেনে ন্যাটো বিরোধী অভিযানের কথা শুরু থেকেই সরাসরি বলে আসছে রাশিয়া।

ফলে বলাই যায়, ইউক্রেনকে সমর্থন করার ক্ষেত্রে ন্যাটো অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক উভয় দিক থেকেই সর্বস্ব হারিয়েছে। এতোকিছুর পরও এখন পর্যন্ত ইউরোপীয় রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অভিজাতরা ইউক্রেনকে দৃঢ়ভাবে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। তবে এ যুদ্ধে শেষ পর্যন্ত রাশিয়া জয় লাভ করলে এখন থেকে বহু বছর পরেও আধুনিক ইতিহাসের অন্যতম প্রধান উদাহরণ হিসেবে পুতিনের নাম উচ্চারিত হবে।


আরো পড়ুন