• বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ০২:৫৯ অপরাহ্ন

‘মামলার সাক্ষী শালিক পাখি’

/ ১১৫ বার পঠিত
আপডেট: শুক্রবার, ১৯ আগস্ট, ২০২২

সেন্ট্রাল ডেস্কঃ

মেজবাউর রহমান সুমন পরিচালিত প্রথম সিনেমা ‘হাওয়া’। মুক্তির আগে থেকেই গানে গানে আলোচিত এই সিনেমা এখন প্রেক্ষাগৃহগুলোতে হাউজফুল যাচ্ছে। পাশাপাশি বিক্রি হচ্ছে অগ্রিম টিকিটও। তবে এই সিনেমায় একটি শালিক পাখিকে আটকে রাখার দৃশ্য নিয়ে পরিবেশবাদীদের মধ্যে উদ্বেগ তৈরি হয়।

গত ১১ আগস্ট বিকেলে রাজধানীর স্টার সিনেপ্লেক্সের বসুন্ধরা শাখায় ‘হাওয়া’ সিনেমাটি দেখেন বন বিভাগের অপরাধ দমন ইউনিটের চার সদস্যবিশিষ্ট একটি দল। তারা জানান, এতে বন্য প্রাণী আইন লঙ্ঘন করা হয়েছে। এবার নির্মাতার বিরুদ্ধে মামলা করেছে বন বিভাগের বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিট।

এরপর বুধবার (১৭ আগস্ট) ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইন-২০১২ লঙ্ঘনের অভিযোগে মামলাটি করা হয়। বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিটের ওয়াইল্ডলাইফ ইন্সপেক্টর অসীম মল্লিক গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

এ বিষয়ে খুব বেশি একটা কথা না বললেও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মামলা হওয়ার পর একটি অস্পস্ট স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন। এবার তিনি সরাসরি পোস্ট করেছেন এ বিষয়ে। বৃহস্পতিবার (১৬ আগস্ট) তিনি স্ট্যাটাসের মাধ্যমে সবাই বিষয়টি জানিয়ে দেন।

তিনি লেখেন, ‘মামলার সাক্ষী শালিক পাখি’।

“পাঁচ বছর আগে আমার ব্যান্ড মেঘদল এর জন্য নির্মাণ করেছিলাম “এসো আমার শহরে”। সেখানে এই নেক্রপলিস সিটিতে কিছু প্রতীকি বন্যপ্রাণীকে দেখিয়েছিলাম। ওদের শহরের ভেতর নানা জায়গায় দেখা গিয়েছিলো। কিন্তু এই মৃত নগরে মানুষহীন রাস্তাঘাটে বন্যপ্রাণী কেন ঘুরে বেড়াচ্ছে!! তার উদ্দেশ্যই বা কি ? আমি মনে করেছিলাম, এই নগর শুধু মানুষের নয়, অন্য প্রাণীর জন্যও আবাসস্থল হওয়ার কথা ছিল। প্রতিদিন এই শহরে অসংখ্য প্রাণীদের আমরা নিয়ে আসি শুধুমাত্র ভোগের জন্য। হয়তো মানুষের জীবনধারণের জন্য সেটা আমাদের করতেও হয়। কিন্তু মায়া তো নিঃশেষ হবার নয়। এই সর্বপ্রাণের মায়াই ওই মিউজিক ভিডিওতে দেখাতে চেয়েছিলাম। কিছু দিন আগেও “কোথায় পালাবে বলো রূপবান” নামে ওটিটি প্লাটফর্ম চরকির জন্য একটি ছোট ছবি নির্মাণ করি। সেখানে চিড়িয়াখানা থেকে একটি বাঘ পালিয়ে যায়। তাকে কর্তৃপক্ষ খাঁচায় বন্দি করতে চায়। পাশাপাশি এক নারীকেও বন্দি করতে চায় সমাজের কিছু চোখ। সে যাই হোক, আমার পূর্বের এই দুইটি কাজের ভেতর দিয়ে বলতে চেয়েছি, প্রাণ ও প্রকৃতি নিয়ে আমার গল্প বলা নতুন নয়। বরং এই কাজ গুলোতে সর্বপ্রাণের দায় সবসময়ই ছিলো।

এছাড়া তিনি আরও বলেন, “নির্মাতা হিসাবে আমি এটুকুই বলতে চাই, হাওয়া’র পাখিটি রূপক অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে আর এই নির্মাণের জন্য যে সিনেমাটিক রিয়্যালিটি তৈরি করতে হয়েছে সেটা সত্য নয়। ছবির শুরুতে Disclaimer-এ আমরা সুস্পস্ট ভাবে উল্লেখ করেছি। পাখিটির দৃশ্য ধারণের পর আমরা তাকে প্রকৃতিতে মুক্ত করে দিয়েছিলাম। আর নৌকায় যে উড়িয়ে দেওয়ার দৃশ্য দেখিয়েছি সেটা কম্পিউটার গ্রাফিক্সের মাধ্যমে নির্মান করা। আর চানমাঝি যে তার প্রিয় পাখিটিকে খেয়ে ফেলে সেটা কি শুধু ভোগ!!? নাকি সমাজের ভেতর জমতে থাকা হিংস্রতা? আর আমি শুধু ঐ বোধটাকেই ইঙ্গিত করেছি আর সেটা নির্মাণ করেছি সিনেমার ভাষার ভেতর দিয়ে। পৃথিবী সর্বপ্রাণের হোক।“

জানা গেছে, নির্মাতা মেজবাউর রহমান সুমনের বিরুদ্ধে করা মামলায় বাদী হয়েছেন বন্যপ্রাণী পরিদর্শক নারগিস সুলতানা। সাক্ষী করা হয়েছে তদন্ত কমিটিতে কাজ করা অপর তিন সদস্য আব্দুল্লাহ আস সাদিক, অসীম মল্লিক ও রথিন্দ্র কুমার বিশ্বাসকে।

এর আগে ‘হাওয়া’ সিনেমায় শালিককে আটকে রাখার দৃশ্য নিয়ে ৩৩টি পরিবেশবাদী সংগঠন বিবৃতি দিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছিলেন। তারা সিনেমা থেকে দৃশ্যটি বাদ দেওয়ার দাবিও তুলেন।

তারকাবহুল এ সিনেমায় অভিনয় করেছেন চঞ্চল চৌধুরী, নাজিফা তুষি, শরিফুল রাজ, সুমন আনোয়ার, নাসির উদ্দিন খান, সোহেল মণ্ডল, রিজভী রিজু, মাহমুদ হাসান ও বাবলু বোস।


আরো পড়ুন