• বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৪:৪৮ অপরাহ্ন

২০ কোটি টাকারও বেশীমূল্যের সম্পত্তির খতিয়ান কারসাজি!

নিজস্ব প্রতিবেদক / ১৬৫ বার পঠিত
আপডেট: মঙ্গলবার, ২ আগস্ট, ২০২২

কর্ণফুলী উপজেলার চরপাথরঘাটা ইউনিয়নের ইছানগর গ্রামে কর্ণফুলী নদীর তীরের দীর্ঘদিনের পুরাতন মাহেশরোয়ার জেটি নামে পরিচিত ভূমিটির খতিয়ান পরিবর্তন করে রাতারাতি অজ্ঞাত ব্যক্তির নামে সৃজন করার অভিযোগ উঠেছে।

এতে ভূমিটির মূল মালিক ২০ কোটি টাকারও বেশীমূল্যের সম্পত্তির খতিয়ান মালিকানা হারাতে বসেছেন বলে জানান ভুক্তভোগীরা। ভূমি অফিসের গুটিকয়েক অসাধু কর্মকর্তার কারসাজিতেই ভূমির মূল মালিক প্রবাসী তৌহিদুর রহমান ও ঢাকাই বসবাসকারী তাসলিমা আইয়ুব এই ঘটনার শিকার হতে যাচ্ছেন বলে দাবি করেন তারা।

ক্রয়কৃত ভূমির (খতিয়ান নং ৫০৩ ও ৩৮৭) উপর দীর্ঘ ৩০ বছরেরও অধিক সময় ধরে বন্দরের অনুমতি নিয়ে জাহাজ নোঙ্গর, জেটি সহ মৎস্য ব্যবসা পরিচালনা করে আসছিলেন বলেও জানান। গত কয়েক বছর ধরে মূল মালিকের আসা- যাওয়া কম থাকায় ঐ সম্পত্তির উপর নজর পড়ে স্থানীয় কিছু ভূমিদস্যুদের। উক্ত সম্পত্তি হাসিল করতে বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করেও ব্যর্থ হয়ে ভূমিদস্যুরা ভূমি অফিসের কিছু অসাধু কর্মকর্তাদের যোগসাজশে রাতারাতি বদলে যায় ঐ সম্পত্তির মূল খতিয়ান। ভূমি অফিস থেকে কোনো প্রকার জরিপ বা মূল মালিক কে নোটিশ প্রদান করা ছাড়াই একই তারিখে বারবার শুনানি প্রদানের তথ্য মিলেছে।

তৎকালীন উপজেলা ভূমি অফিস সহকারী কমিশনার শিরিন আক্তার চলতি বছরের ১৫ মে তারিখে তার এক আদেশ বিবরণীতে ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা উজ্জ্বল কান্তি দাস কে জমির বিষয়ে সরজমিনে তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ প্রদান করেন মে মাসের ২২ তারিখের মধ্যে। তবে তথ্য মিলেছে মাত্র একদিনের ব্যবধানে অর্থাৎ ১৬ মে ২০২২ তারিখে হয়তো তা পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন প্রদান করেছিলেন উপজেলা সহকারী কর্মকর্তা বরাবর। উজ্জ্বল কান্তি দাসের দেওয়া প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে তিনি নিজে সরজমিনে গিয়ে ঐ ভূমি প্রতিবেদন করেছেন এবং দখলে রয়েছেন নতুন খতিয়ান পাওয়া ব্যক্তিগণ।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, উক্ত তারিখের পূর্বে জেটির ভিতরে কোনো সার্ভেয়ার প্রবেশ করতে দেখেননি কেউ। এছাড়া নতুন খতিয়ান সৃজনকৃত ব্যক্তিগণ অতীতে বা বর্তমানে কোনো সময় ঐ জমির দখলে ছিলনা।

১৬ মে ২০২২ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আবারো শুনানি করে উভয় পক্ষকে নোটিশ প্রদানের মাধ্যমে পরবর্তীতে ২২ মে তারিখের শুনানির দিন ধার্য করা হয়। তবে বিপত্তি ঘটে তখনই যখন দেখা যায় আদেশ প্রদান পত্রের উল্টো পিঠে একই তারিখে আবারো আরও একটি শুনানির বিবরণ দেখে। যেখানে উল্লেখ করা হয়েছে বিবাদী পক্ষ/ ভূমির মূল মালিককে সঠিকভাবে নোটিশ প্রদান করা হয়েছে কিন্তু বিবাদীগণ শুনানিতে অনুপস্থিত ছিলেন।

এ ব্যাপারে বিবাদীগণ দাবি করেন তারা কোনো ধরনের কোনো নোটিশ পাননি ভূমি অফিস থেকে। এছাড়া আদেশপত্র পর্যালোচনা করে দেখা যায় একই তারিখে দুইবার শুনানির বিষয় এসেছে এবং যেটাতে নোটিশ দেয়ার কথা থাকলেও তা একই দিনে কিভাবে বিবাদীগণের নিকট পৌঁছানো সম্ভব?
বিবাদীগণের দাবি, অনলাইনে ১৬ মে ২২ খতিয়ান পরিবর্তনের আদেশ রয়েছে সেটা উপজেলা ভূমি অফিসের মূল বালাম খাতায় কোনো রেকর্ড নাই। উপজেলা ভূমি অফিস এর নাজির দেবাশীষ, সার্ভেয়ার ইউনুস ও অফিস সহকারী মাহবুবুল ইসলামের যোগসাজশে এটা অনলাইনে এন্ট্রি করা হয়েছে।

এ বিষয়ে বর্তমান উপজেলা ভূমি অফিসের সহকারী কমিশনার পীযূষ কুমার চৌধুরী জানান, উক্ত খতিয়ানের বিষয়ে লিখিত বালাম খাতায় কোনো প্রকার রেকর্ড বা পূর্ববর্তী সহকারী কমিশনারের স্বাক্ষর না থাকলেও অনলাইনে তা রেকর্ড রয়েছে। পূর্বে সরকারি কমিশনার ১৬ মে ২২ তারিখে কর্ণফুলী উপজেলা ভূমি অফিস থেকে বদলি হয়ে অন্য কর্মস্থলে চলে যান। এখন যদি বাদী বিবাদীর কোনো সমস্যা থাকে তবে তারা না-মঞ্জুরী দাবি করে একটি মামলা দায়ের করতে পারেন এবং আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও জানান তিনি।


আরো পড়ুন