• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ০৬:৪৯ পূর্বাহ্ন

দম ফেলার ফুরসত নেই ত্রিশালের কামারদের!

ইমরান হাসান, ত্রিশাল (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি / ২২৯ বার পঠিত
আপডেট: বুধবার, ৬ জুলাই, ২০২২

দগদগে গরম লোহায় দিন-রাত হাতুড়ি পেটানোর টুং টাং শব্দে মুখরিত করে তোলছে ত্রিশালের কামারপল্লীর চারপাশ। কোরবানির পশু জবাই ও মাংস প্রস্তুতের জন্য এখন চলছে ছুরি-চাপাতি কেনার হিড়িক। চাপাতি, দা, বটি, চাকু, ছুরিসহ কোরবানির নানা হাতিয়ার তৈরি ও শাণ দিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন কামাররা। দম ফেলার ফুরসত নেই তাদের । আগুনে তপ্ত লোহাকে হাঁতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে অস্ত্র বানানো কঠিন হলেও সেই তুলনায় পারিশ্রমিক কম বলে অভিযোগ কামারদের।

সরেজমিনে ত্রিশাল উপজেলার  বিভিন্ন কামারপাড়া ও পল্লিতে গিয়ে দেখা যায়, আসন্ন কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে উপজেলার চিকনা মনোহর, পৌর বাজার ধানীখোলা, কানিহারী, বালিপাড়া, পোড়াবাড়ী এলাকায় অনেক ব্যস্ত সময় পার করছেন কামাররা। অনেকেই দা, বটি ও ছুরি শাণ দেওয়ার জন্য নিয়ে এসেছেন কামারদের কাছে। তাই সকাল থেকে রাত পর্যন্ত চলছে তাদের ব্যস্ততা। সার্বক্ষণিক বাতাসে ভাসছে টুং টাং শব্দ। কেউ হাপর টানছেন। কেউবা আগুনে কয়লা দিচ্ছেন। জ্বলন্ত আগুন থেকে লোহা তুলে সমানতালে পেটাচ্ছেন । সেই তপ্ত লোহা থেকে তৈরি হচ্ছে দা, বটি, ছুরি, চাপাতিসহ নানা যন্ত্রপাতি। কথা বলার সময় নেই কারও।

উপজেলা শহরের ধানীখোলা কামারপাড়ার বাবুল হোসেন বলেন, কয়লা, লোহাসহ অন্য জিনিসপত্রের দাম বেশি, তবে ক্রেতারা বেশি দাম দিয়ে কিনতে চান না। সারাদিনে যা আয় হয় তা দিয়ে ঠিক মতো সংসার চলে না। কোরবানির ঈদের সময় এ আয় বেড়ে যায় কয়েকগুণ। আমরা সারা বছর অপেক্ষায় থাকি এই সময়টার জন্য।
কানিহারী ইউনিয়নের কামারপট্টির জুয়েলার  বলেন, ‘কোরবানির ঈদে দুই তিন মাস কাজের চাপ থাকে। বছরের অন্য সময় বলতে গেলে বসেই কাটাতে হয়। সে সময় পরিবার পরিজন নিয়ে বেঁচে থাকা কষ্ট হয়ে যায়।’
উপজেলার বৈলর ইউনিয়নের কামারপল্লীর নিপেন্দ্ররা বর্মণ জানান, বছরের অন্য সময় বাড়ি ও কৃষি কাজে ব্যবহৃত কুড়াল, কাচি, পাচন, শাবল ইত্যাদি কেনেন। তা দিয়ে যা আয় হয় কোনোরকমে সংসার চলে।

শহরের কামারপট্টির জিত্যেন রায় জানান, মূলধনের অভাবে তারা মহাজনের কাছ থেকে চড়া সুদে টাকা নিয়ে বিভিন্ন যন্ত্র তৈরির ব্যবসা করছেন। লভ্যাংশের একটা বড় অংশ চলে যায় মধ্যস্বত্বভোগী দাদন ব্যবসায়ীদের পকেটে।
বাজারে গিয়ে দেখা যায়, আকার ভেদে একশ থেকে পাঁচশ টাকার মধ্যে বিভিন্ন হাতিয়ার বিক্রি হচ্ছে। এর মধ্যে চাপাতি তিন থেকে সাড়ে তিনশ টাকা কেজি দরে, ছুরি আড়াইশ থেকে চারশ টাকা এবং বটি তিন থেকে সাড়ে তিনশ টাকা কেজি দরে পাওয়া যাচ্ছে। এছাড়া বড় ছুরি ৪০ টাকা, চাপাতি ৫০ টাকা, দা ৫০ টাকা ও ছোট ছুরি ২০ টাকায় শাণ দেওয়া হচ্ছে।

ক্রেতা মকবুল মিয়া বলেন, কোরবানির গরুর মাংস কাটার জন্য নতুন চাপাতি কিনতে এসেছি। তৈরি করা তেমন ভালো চাপাতি পাচ্ছি না। তাই এক কেজি ওজনের ইস্পাত কিনে নতুন চাপাতি বানাতে দিলাম। এবছর চাপাতির দাম অনেক বেশি মনে হচ্ছে।


আরো পড়ুন