• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৬:৩৬ অপরাহ্ন

স্বপ্নের পদ্মা সেতু ভাগ্য বদলে দিবে ঝালকাঠির কৃষকদের

রিয়াজুল ইসলাম বাচ্চু স্টাফ রিপোর্টার / ১০৮ বার পঠিত
আপডেট: শনিবার, ২৫ জুন, ২০২২

স্বপ্নের পদ্মা সেতু ভাগ্য বদলে দিবে ঝালকাঠির পেয়ারা ও আমড়া চাষী তৃণমূল কৃষকদের । পেয়ারা ও আমড়ার রাজ্য হিসেবে পরিচিত ঝালকাঠি সদর ও পিরোজপুরের নেছারাবাদ উপজেলার প্রায় অর্ধশত গ্রাম।যাতায়াত পরিবহন সমস্যার কারণে পচনশীল চনশীল কৃষি পণ্যের সঠিক মূল্য পেত না এ এলাকার চাষীরা। স্বপ্নের পদ্মা সেতু নির্মাণের মাধ্যমে নিজেদের ভাগ্য উন্নয়নের স্বপ্ন দেখছে অবহেলিত ঝালকাঠি তথা দক্ষিণাঞ্চলের কৃষি অর্থনীতি ও পর্যটন শিল্পের সাথে জড়িত কৃষিজীবী সাধানর মানুষ। তৃনমূল পর্যায়ে নিজেদের উৎপাদিত কৃষিপণ্য দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্তে দ্রুতো সরবারহ করে ন্যায্য মূল্য উপার্জনের মাধ্যমে সহসাই তাদের ভাগ্য উন্নয়ন ঘটানোর আশায় তারা বুক বেঁধেছে।

ঝালকাঠিসহ গোটা দক্ষিণাঞ্চলের সঙ্গে পদ্মা সেতু ব্যবহার করে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশের সড়ক যোগাযোগ বৃদ্ধি হলে যেমনিভাবে দক্ষিনাঞ্চলের বিনোদন ও পর্যটন কেন্দ্রগুলি দেশি-বিদেশি পর্যটকে মুখরিত হবে। তেমনি ভাবে কৃষিপণ্য, কুটি শিল্প, মৎস্য ও পর্যটন শিল্পের ক্ষেত্রে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারী বৃদ্ধির মাধ্যমে সবকটি বাণিজ্যিক পথ খুলে যাবে।

ঝালকাঠি চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মনিরুল ইসলাম তালুকদার বলেন, পদ্মা সেতু চালুর মাধ্যমে জেলার ব্রান্ডিং পণ্য শীতলপাটি ও পেয়ারাসহ আমড়া, কাগজী লেবু, নারিকেল, শুপারিসহ দক্ষিণাঞ্চলে উৎপাদিত পণ্য খুব সহজেই দেশের চাহিদা পুরন করে রপ্তাানিতে ভুমিকা রাখবে। কৃষিজাত পণ্যসহ টাটকা শাক-শবজি রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে খুব সহজে ও স্বল্প সময়ে পৌছতে পারলে কৃষকরা সঠিক মুল্যে বিক্রির মাধ্যমে আর্থিক স্বচ্ছলতা অর্জন করবে।পাশাপাশি দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীরা আকৃষ্ট হলে নতুন শিল্পকারখানা গড়ে উঠার সাথে কর্ম সংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে।

ঝালকাঠি বিসিক শিল্পনগরীর উপ-ব্যবস্থাপক মো. শাফিউল করিম জানিয়েছেন, বিসিক মূলত সকল প্রকার শিল্পের পৃষ্ঠপোষক প্রতিষ্ঠান হিসাবে কাজ করে যাচ্ছে। আগামী ২৫ জুন স্বপ্নের পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর ঝালকাঠি জেলায় এর প্রভাব পরবে। ইতিমধ্যেই আমাদের এ শিল্পনগরীর ৭৯ টি প্লটের মধ্যে ৭৫টি প্লট বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। পদ্মা সেতু পুরোপুরি চালু হওয়ার পর এখানে সহসাই শিল্প-কলকারখানা গড়ে উঠবে। এতে ঝালকাঠি বিসিক শিল্প নগরীর দ্রুতো আরো সম্প্রসারন করার প্রয়োজন হবে। সেই সাথে জেলায় ব্যাপক কর্মসংস্থানে সুযোগ সৃষ্টি হবে।

ঝালকাঠি জেলা বাস ও মিনিবাস মালিক সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন আহমেদ তার প্রতিক্রিয়ায় জানান, পদ্মা সেতু ব্যবহার করে ঝালকাঠিবাসীর স্বল্প সময়ে ও নিরাপদে ঢাকা, চট্টগ্রামসহ উত্তরাঞ্চলে যাতায়াতের দ্বার উম্মোচন হবে। এতে ঢাকা থেকে আরো অনেক নতুন বিলাসবহুল পরিবহন সরাসরি ঝালকাঠিসহ বিভিন্ন উপজেলা পর্যায়ে চলাচলে এগিয়ে আসবে। ফলে যাত্রী সেবার মান উন্নত ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের পাশাপাশি অনেক বেকার শ্রমিকের কর্মসংস্থানের সুযোগ হবে।

ঝালকাঠির ভীমরুলী ও শতাদশকাঠি এলাকার কয়েকজন কৃষিজীবী জানায়, আমাদের জেলাসহ এ অঞ্চলের সরকারী বা বেসরকারী কোন হিমাগার না থাকায় প্রতিবছর উৎপাদিত কৃষি পণ্য নিয়ে কৃষকদের হিমশিম খেতে হয়। সেইসাথে যোগাযোগ ও পরিবহন ব্যবস্থা অনুন্নত হওয়ায় উৎপাদিত কৃষি পণ্য দ্রুতো সরবরাহ বা বাজারজাতকরন করা সম্ভব হয়না। এঅবস্থায় আমাদের চাষীদের উপাদিত পেয়ারা-আমড়াসহ শাকসবজি অর্ধেকের বেশী বাগানেই নষ্ট হয়ে যায়।

এসব পেয়ারা ও সবজি সহজে পচনশীল হওয়ায় অনেকটা পানির দরে বিক্রি করতে বাধ্য হওয়ায় বাগান মালিকরা উৎপাদন খরচ উঠাতে হিমশিম খায়। ঝালকাঠির ভীমরুলী ও পার্শ্ববর্তী স্বরূপকাঠি উপজেলার আটঘর-কুরিয়ানাসহ কয়েকটি ইউনিয়ন জুড়ে গড়ে ওঠা দেশের বৃহৎ এই পেয়ারা ও আমড়া বাগানে থেকে পদ্মা সেতু চালুর পর কম সময়ে সকল পণ্য ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে পৌছাবে। এরফলে তারা দীর্গ দিনের আর্থিক ক্ষয়ক্ষতির কাটিয়ে লাভের মুখ দেখতে পারবে বলে সন্তোষ প্রকাশ করেন।

ঝালকাঠি জেলা প্রশাসক মো. জোহর আলী বলেন, পদ্মা সেতু নির্মানে যোগাযোগ ব্যবস্থায় ঝালকাঠির অভূতপূর্ব উন্নয়ন সাধন হবে। ঢাকাসহ উত্তরাঞ্চলের যাতায়াতে সময় অনেক কম লাগবে। ব্যবসা বাণিজ্য সম্প্রসারনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। দ্রুত সময়ে গুরুতর রোগীদের নিয়ে ঢাকায় উন্নত চিকিৎসা দেয়া সম্ভব হবে। পদ্মা সেতুর কারণে ঝালকাঠিসহ এ অঞ্চলে ব্যবসা বাণিজ্যের প্রসার ও বিপ্লব ঘটবে। উদ্যোক্তারা এ জেলায় শিল্পকারখানা স্থাপনে আগ্রহী হবে। এতে জেলায় কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে। এতে জেলার মানুষের ভাগ্যের দুয়ার খুলে যাবে।


আরো পড়ুন