• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০:৪৭ পূর্বাহ্ন

মালদ্বীপে কৃষি শিক্ষা উন্নয়নে বাংলাদেশী উদ্যোক্তার অবদান

মোঃ ওমর ফারুক অনিক, মালদ্বীপ প্রতিনিধি / ৩৫০ বার পঠিত
আপডেট: রবিবার, ১৫ মে, ২০২২

নীল সমুদ্রের মাচ ধরে বিক্রি, আর জনশূন্য মরুভুমিতে বালু বিক্রি, সমুদ্রপাড়ে দাঁড়িয়ে বাতাস বিক্রি, অথবা বরফের দেশে গিয়ে ফ্রিজ বিক্রি করা সহজ কাজ নয়। অথচ এমন কিছু মানুষ আছে যারা শুধুমাত্র আত্মবিশ্বাস আর বুদ্ধিমত্তাকে কাজে লাগিয়ে অসাধ্য কাজটিও করে ফেলে খুব সহজে। সেই মানুষগুলো হুকুমের গোলাম বা চাকুরীজীবি নয়। এরা সাহসী উদ্যোক্তা। যারা শুন্য কে শুন্য দেখে না। যারা শুন্যকে রুপান্তরিত করে অসংখ্য সংখ্যায়। তেমনই অসাধ্য কে সাধ্যতে রুপান্তরিত করা বাংলাদেশী বংশদ্ভূত জনাব আহমেদ মোত্তাকি।
উদ্যোক্তা শব্দটা যদিও আমাদের সবার পরিচিত কিন্তু আমরা অনেকেই এই শব্দের অর্থ ও গুরুত্ব বুঝি না। অনেকেই মনে করেন ব্যবসায়ী বলতেই উদ্যোক্তা, এটা সম্পুর্ণ ভুল ধারণা। মনে রাখবেন সকল উদ্যোক্তাই ব্যবসায়ী কিন্তু সকল ব্যবসায়ী উদ্যোক্তা নয়। ব্যবসা করতে বেশী পরিমাণের মূলধন লাগে কিন্তু উদ্যোক্তা হতে দরকার মেধা, শ্রম, বুদ্ধি আর অদম্য ইচ্ছাশক্তি যার সবটুকুই আহমেদ মোত্তাকি’র ছিলো। আহমেদ মোত্তাকি একজন প্রবাসী উদ্দোক্তার নাম-ই নয় তিনি একজন লেখকও বটে, পাঁচ বছর আগে তার লেখা মিলিয়নেয়ার বই প্রকাশিত হয়েছে কানাডায় এবং যা মুদ্রিত হয়েছিল সিঙ্গাপুরে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া, সরাইল উপজেলার, শাহবাজপুরের মিয়াবাড়িতে বেড়ে ওঠা আহমেদ মোত্তাকী তরুন বয়সে পারিবারিক সূত্রে পাড়ি জমান মালদ্বীপে। প্রথমে তার প্রবাস জীবন শুরু হয় মালদ্বীপের আমিনিয়া স্কুলের ব্যবসায়িক সাবজেক্ট এর প্রধান হিসেবে ১৯৯৪-২০১০ সাল পর্যন্ত। সরকারি স্কুলে শিক্ষকতা করলেও নিজের মধ্যে একটি অস্থিরতা কাজ করতো সবসময়। কারণ শিক্ষকতার পাশাপাশি সময় থেকেই নিজে কিছু করতে চাইতেন। তিনি জানতেন সফলতার জন্য প্রয়োজন দৃঢ় মনোবল এবং কঠোর পরিশ্রম। আর এসবের মাধ্যমেই একজন মানুষ হয়ে ওঠে সেরাদের সেরা। তিনি একজন মালদ্বীপ-বাংলাদেশি উদ্যোক্তা ও সমাজসেবক। গত ৩০টি বছর ধরে অবস্থান করছেন মালদ্বীপে। তিনি একজন সফল ব্যবসায়ী। ২০০৬ সালে মালদ্বীপে নিজ মালিকানায় প্রতিষ্ঠা করেন মিয়াঞ্জ ইন্টারন্যাশনাল গ্রুপ এবং কি তার বাংলাদেশ থেকে আমদানিরকৃত উল্লেখ যোগ্য কয়েকটি কোম্পানি মিয়াঞ্জ ফুডস, স্কয়ার, বেঙ্গল মিট, এসিআই এবং আকিজ বেভারেজ (স্পীড কার্বনেটেড ড্রিংক) এর একমাত্র পরিবেশক ছিলেন মিট স্টিট রেস্টুরেন্ট মিয়াঞ্জ ইনভেস্টমেন্ট প্রাইভেট লিমিটেডের অধীনে।
শুরুর দিকে খুব একটা ভালো করে উঠতে না পারলেও সেসময় অনেকটা ধৈর্যের পরিচয় দিয়েছেন তিনি। ২০০৬ সলের শেষের দিকে এমআই কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন, তার বছর খানেক বাদে ঘুরে দাঁড়ায় তার ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান গুলো। এরপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি আহমেদ মোত্তাকি’কে। বর্তমানে
মালদ্বীপের বিভিন্ন দ্বীপে তার এমআই কলেজের ১৭টি শাখা রয়েছে।
এরি ধারাবাহিকতায় গত ১০শে, মে, ২০২২ মালদ্বীপের ঐতিহাসিক আড্ডু শহরে বাংলাদেশী  শিক্ষা উদ্যোক্তা জনাব আহমেদ মুত্তাকি’র উদ্যোগে এমআই কলেজের স্কুল অফ এগ্রিকালচার এর শুভ উদ্বোধন করা হয়। এই আন্তর্জাতিক কলেজের কৃষি ফ্যাকাল্টি হিসেবে আড্ডু শহরে এমআই কলেজ স্কুল অফ এগ্রিকালচার আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যক্রম শুরু করেন| মালদ্বীপে কৃষি শিক্ষা প্রবর্তনের ক্ষেত্রে সরকারি বেসরকারি পর্যায়ে এটায় সর্বপ্রথম উদ্যোগ।এ উদ্যোগে প্রাথমিকভাবে সার্টিফিকেট ইন লেবেল থ্রি গার্ডেন কোর্সটি শুরু করা হয়েছে এবং পরবর্তীতে অন্যান্য কৃষি বিষয় কোর্স সহ কৃষিতে স্নাতক কোর্স শুরু করা হবে বলে জানান জনাব আহমেদ মোত্তাকি। তিনি আরও বলেন যে সংশ্লিষ্ট কোর্সটি পরিচালনা ও সার্বিক কর্যক্রম তদারকির জন্য সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বাংলাদেশ থেকে সম্প্রতি অবসরপ্রাপ্ত দুইজন কর্মকর্তা ডঃ মাহমুদ মিরদাহ এবং ডঃ মোঃ খালেদ কামাল ইতিমধ্যেই আড্ডু কেম্পাস কার্যক্রমে যোগ দিয়েছেন|
এমআই কলেজের স্কুল অফ এগ্রিকালচার এর শুভ উদ্বোধনে আড্ডু শহরের প্রাক্ততন মেয়র ও পরিকল্পনা এবং হাউজিং মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিমন্ত্রী জনাব আব্দুল্লাহ সাদিক উপস্থিত ছিলেন| তিনি মালদ্বীপের এধরনের উদ্যোগকে স্বাগতম জানান এবং এর সফলতা কামনা করে সার্বিক সহযোগিতার আশ্বাস দেন| উদ্বোধনের পর আমন্ত্রিত অতিথিবৃন্দ এর বিভিন্ন স্থাপনা, ল্যাবরেটরি, সংগৃহীত জার্মপ্লাজম ও ব্যবহারিক সুবিধাদি পরিদর্শন করে সন্তুুটি প্রকাশ করেন।
গত কয়েক বছরে মালদ্বীপ সহ বিভিন্ন দেশে মিয়াঞ্জ ইন্টারন্যাশনাল গ্রুপ পরিচালনায় অর্জন করেছেন বেশ কয়েকটি পুরস্কার। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য গত বছরের (১৬ নভেম্বর) ক্রসরোড রিসোর্টে মালদ্বীপের তালিকাভুক্ত শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান হিসেবে গোল্ড হান্ড্রেড গালা বিজনেস অ্যাওয়ার্ড পেলেন এই দ্বীপরাষ্ট্রের সরকার থেকে। এই সফল ব্যক্তির মাতৃভূমি বাংলাদেশকে নিয়েও আছে অনেক পরিকল্পনা। আগামীতে বাংলাদেশেও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান প্রসার করবেন বলে আশা ব্যক্ত করেন তিনি।
সাফল্যের প্রশ্নে তিনি বলেন, সফলতা সব কিছুতেই পেয়েছি। যা চেয়েছি তার চেয়ে বেশিই পেয়েছি।আমার প্রতিষ্ঠানে প্রবাসী বাংলাদেশীদের কর্মসংস্থান তৈরি করতে পেরে আমি খুবই আনন্দিত। ভবিষ্যতে নিজের ব্যবসার সম্প্রসারণের মাধ্যমে আরও অনেক প্রবাসী বাংলাদেশীদের কর্মসংস্থান তৈরি করতে চাই।তিনি আরও বলেন, স্বপ্ন দেখুন, সাহস করুন, শুরু করুন এবং লেগে থাকুন সাফল্য আসবেই’ ইকবাল বাহার স্যারের এই কথাটি যদি কেউ মেনে চলেন আমার বিশ্বাস অবশ্যই আপনিও একদিন উদ্যোক্তা হবেন। ছোটবেলা থেকেই আমার ইচ্ছে ছিল সফল ব্যবসায়িক হবো। বর্তমানে মালদ্বীপ সহ বিভিন্ন দেশে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করছি। আর এ সব কিছু সম্ভব হয়েছে আমার স্ত্রী মিসে’স. জিয়াদা’র সাপোর্টের কারণে।


আরো পড়ুন