• বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ০৫:৪২ অপরাহ্ন

দস্যু মুক্ত সুন্দরবনে ফের দস্যুদের অপতৎপরতা!

/ ২৭৯ বার পঠিত
আপডেট: শনিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৯

মোল্লা রনি বাগেরহাট প্রতিনিধি:-
সুন্দরবন দস্যু মুক্ত ঘোষণার পরও খুব বেশি স্বস্তিতে নেই বন নির্ভরশীল জেলে-বাওয়ালীরা-মৌয়ালেরা। নতুন দস্যু বাহিনীর আর্বিভাবে আবারো জেলেদের মধ্যে নতুন করে আতংক ছড়িয়ে পড়েছে। আগের মতই সুন্দরবনে শুরু হয়েছে জেলে অপহরণ ও মুক্তিপণ আদায়। বৃহস্পতিবারও (২৬ সেপ্টেম্বর) জেলে অপহরণের ঘটনার পর অপহৃত জেলেসহ দুই বনদস্যুকে আটক করা হয়েছে। কোস্টগার্ড সদস্যরা ওই দস্যুদেরকে আটক করে থানা পুলিশে হস্তান্তর করেছে। আটক দস্যুরা হলো খুলনা জেলার দিঘলিয়া উপজেলার হোসেন শেখ (২৮) ও রুবেল শেখ (২১)।

এদিকে সুন্দরবনকে দস্যু মুক্ত ঘোষণার পরও র‌্যাব ও কোস্ট গার্ডের সাথে বন্দুক যুদ্ধে কয়েকজন দস্যু নিহত হয়েছে। আত্মসমর্পন ও বন্দুক যুদ্ধে নিহত হওয়ার পরও নতুন বাহিনীর আত্মপ্রকাশ ঘটায় শূণ্যের কোঠায় আসছেনা দস্যুতা। গত ৮, ৯ ও ১০ সেপ্টম্বরও সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জের কলাগাছি ও দোবেকি এলাকা থেকে অন্তত ১৪ জন জেলেকে অপহরণ করে বনদস্যু আমিরুল বাহিনী। এসব জেলেরা সুন্দরবনে মাছ আহরণ করতে গেলে মুক্তিপণের দাবীতে তাদেরকে অপহরণ করা হয়।

র‌্যাব-৮ এর সুত্র জানায়, আইনশৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানে টিকতে না পেরে একাধিক ভয়ংকর দস্যুরা আত্মসমর্পণের পথ বেছে নেয়। আত্মসমর্পণের সুযোগ নিতে নিতে কয়েকটি বাহিনীর দস্যুরাও বন্দুক যুদ্ধে নিহত হয়। ২০১৬ সালের ৩১ মে বনদস্যু মাষ্টার বাহিনী তার ১০ সদস্যদের নিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী আসাদুজ্জাম খাঁন কামালের হাতে ৫২ টি দেশি-বিদেশি অস্ত্রসহ চার হাজার ৫’শ রাউন্ড গুলি জমা দিয়ে আতœসমর্পন করে। এ পর্যন্ত সর্বশেষ ৩২টি দস্যু বাহিনী আত্মসমর্পন করেছে। ওই সময়টুকু সুন্দরবনে কয়েকদিন স্বস্তির বাতাস বইলেও আবারো দস্যুদের উৎপাত শুরু হয়েছে। এতে নতুন করে ভীতি দেখা দিয়েছে জেলে-মহাজনদের মাঝে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে সুন্দরবন উপকূলের কয়েকজন জেলে-মহাজন জানান, গত দেড়-দুই মাসের মধ্যে দস্যুরা সুন্দরবনের বিভিন্ন এলাকা থেকে অন্তত ৫০ জন জেলেকে অপহরণ করে নিয়ে গেছে। আমরা খুবই আতংকের মধ্যে আছি, স্বস্তিতে মাছ ধরতে পারছিন না।

এরই মধ্যে সম্প্রতি সুন্দরবন পরিদর্শনে এসে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রনালয়ের মন্ত্রী শাহাব উদ্দিন বলেছিলেন, ‘এখনও যে সকল দস্যু বাহিনীগুলো আছে তাদেরকেও আইনের আওয়াতায় এনে বিচার করা হবে’।

তবে দস্যুরা বসে নেই, প্রতিনিয়তই তারা মুক্তিপণ আদায়ে জেলেদের অপহরণ করে চলেছে। এদের মধ্যে রফিক, আমিনুল, জিয়া, রবিউল ও জোনাব বাহিনী অন্যতম। বনদস্যু রফিক ছাড়া বাকি সবার বাড়ি সাতক্ষীরায় বলে জানা গেছে।

বাগেরহাটের কোষ্টগার্ড পশ্চিম জোন সদর দপ্তর’র (মোংলা) অপারেশন কর্মকর্তা লে. ইমতিয়াজ আলম বলেন, এসব বাহিনীদের ধরতে আইনশৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনী তৎপর রয়েছে। তিনি আরো বলেন, প্রধানমন্ত্রী যখন সুন্দরবনকে দস্যু মুক্ত ঘোষণা করলো, তার আগে বেশ কয়েকটি দস্যুবাহিনী আতœসমর্পন করে। তবে সে সময় কিছু কিছু দস্যু আতœসমর্পন করেনি। তারাই এখন সংগঠতি হয়ে সুন্দরবনে অপতৎপরতা চালাচ্ছে। কিন্তু আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে।

লে. ইমতিয়াজ আলম জানান, বৃহস্পতিবার (২৬ সেপ্টেম্বর) বিকেলে কোস্ট গার্ডের টহল দলের সুন্দরবনে নিয়মিত অভিযান চলাকালে জেলেদের মাধ্যমে ৩ জেলে দস্যুদের হাতে অপহৃত হওয়ার খবর পান। এমন খবরের ভিত্তিতে হাড়বাড়িয়া ফরেস্ট অফিসের অদূরে ডাকাতিয়া খালে তল্লাশী চালিয়ে একটি সন্দেহভাজন নৌকা চ্যালেঞ্জ করা হয়। এ সময় দস্যু গ্রুপের সদস্যরা পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে ধারালো অস্ত্রসহ দুই দস্যুকে আটক ও জিম্মি ৩ জেলেকে উদ্ধার করা হয়।

আটক দস্যুরা হলো খুলনা জেলার দিঘলিয়া উপজেলার হোসেন শেখ (২৮) ও রুবেল শেখ(২১)। আর উদ্ধার হওয়া জেলেরা হলো বাগেরহাটের মোংলা উপজেলার সোনাইলতলা গ্রামের শাহজাহান (৬০), একই উপজেলার দক্ষিণ চিলা গ্রামের আশরাফ (৬০) ও পার্শ্ববর্তী রামপাল উপজেলার অজিত মজুমদার (৫৫)। এ তিন জেলেকে ৬০ হাজার টাকা মুক্তিপণের দাবিতে চারদিন আগে অপহরণ করে আটক বনদস্যু রফিক বাহিনীর সদস্যরা।


আরো পড়ুন