• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ০১:১৫ অপরাহ্ন

বাবা ও মেয়ের ভালবাসা, সাংবাদিক সাইদুর রহমান রিমনের অপূর্ব পরিবার

ডেস্ক রিপোর্ট / ৪০৮ বার পঠিত
আপডেট: সোমবার, ১৩ ডিসেম্বর, ২০২১

আমার একমাত্র মেয়ে (তার ভাষায়: আমি রিমন সাহেবের একমাত্র সন্তান-অর্থাৎ ছেলেও সে, মেয়েও সে) উর্মির আজ জন্মদিন। কোনো কেক কাটার আনুষ্ঠানিকতায় এবারের জন্ম দিনটি পালনের ক্ষেত্রে কেন যেন তারই অনাগ্রহ ছিল। সে দিনটি কাটাতে চেয়েছে তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু-বান্ধবীদের সঙ্গে-আমরাও তাতে অমত করিনি।

বিশেষ দিনটিতে উর্মির অনুপস্থিতিতে মুহূর্তেই ফিরে যাই পেছনে…সেই ১৯৯৬ সালে। তখন আমি দৈনিক ইত্তেফাক এর সাভার প্রতিনিধি। এরমধ্যেই উর্মি এলো মায়ের কোল জুড়ে। রাতারাতি যেন বদলে গেল জীবনযাত্রা। বদলে গেলাম নিজেও। চাকরি জুটলো ঢাকায়, বাংলাবাজার পত্রিকার ক্রাইম রিপোর্টার হিসেবে। তারপর ধারাবাহিকভাবে মুক্তকন্ঠ, মানবজমিন, সংবাদ, মাইটিভি, বাংলানিউজ ঘুরে আজ বাংলাদেশ প্রতিদিনে।

আমার পেশাগত কাজের প্রতিটি ধাপেই তার মায়ের মতোই জড়িয়ে আছে উর্মি। এখনো টানা তিন দিন পত্রিকায় বাই নেইমে কোনো রিপোর্ট ছাপা না হলে তার মাঝে আমি ক্ষোভের ছায়া দেখতে পাই। বলেই উঠে সে- কোথায় কিভাবে সময় কাটাও বাবা? অফিসও যে করছো না তাতো পত্রিকা দেখেই বুঝতে পারছি। তাহলে আমাদের কেন সময় দাও না? তার এটুকু ক্ষোভজড়িত বক্তব্যে আমার বুঝে নিতে কষ্ট হয় না যে- শিগগির স্পেশাল কোনো আইটেম জমা দিয়ে ছাপানোর ব্যবস্থা করতেই হবে। সেখানে অন্য কোনো ব্যাখ্যা আমার মেয়েটির কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না। আমি কাজে মনোনিবেশ করার তাড়া বোধ করি।

সত্যি সত্যিই বলছি, কন্যা সন্তানের বাবা না হলে আমার হয়তো অনেক কিছুই অপূর্ণ থেকে যেতো। আজ নিজেকে অনেক ক্ষেত্রেই স্বার্থক মনে হয়। মেধাবি সন্তানের পিতা হিসেবে যেমন গৌরববোধ করি, তেমনি আমাকে পুরোপুরি বুঝতে তার আপ্রাণ চেষ্টা দেখেও ধন্য মনে হয়। আমি স্বর্গ সুখ অনুভব করি-যখন মাঝ রাতে দরজার লক খুলে বাসায় ঢুকেই উর্মি আর তার মাকে পাশাপাশি তাহাজ্জুতের নামাজ পড়তে দেখি। আমি দুঃসাহসী হয়ে উঠি-যখন উর্মি মোবাইলে বলে ‘বাবা তুমি নিশ্চিন্তে বাসায় চলে আসো-কেউ তোমাকে কিচ্ছু করতে পারবে না। সন্ত্রাসী-জঙ্গি-অপরাধীদের হুমকি ধমকি আর ক্ষমতার চেয়ে আল্লাহর ক্ষমতা অনেক বেশি। আমি আর আম্মু তো শুধু তোমার বিপদমুক্ত জীবনের জন্যই দোয়া করি, প্রার্থনা করি।’ বিশ্বাস করুন তার এটুকু কথা শুনেই শত সহ¯্রগুণ সাহস ফিরে পাই যেন। সব অপশক্তিকে তখন খুবই তুচ্ছ বলে মনে হয়।

আমি খুব বেশি অবাক হই তার ধৈর্য ক্ষমতা দেখে। আমার সব বিষয়েই তার সন্তষ্টি রয়েছে শতভাগ। প্রায়ই খাওয়া-ঘুমে সীমাহীন অনিয়ম, লাগাতার ছোটাছুটি আর শেষ রাতে বাসায় ফেরা নিয়ে আমার স্ত্রী ত্যক্ত-বিরক্ত হয়ে পড়লে শান্তনার সুর বেজে উঠে উর্মির কন্ঠে। বলে উঠে-বাবাতো শুধু চাকরি করে না, সে বিশেষ দায়িত্ব পালন করে। কাজ ছাড়া এক মিনিটও সে আড্ডা দেয় না, আজ আগেই জানিয়েছে তার দেরি হবে। একটু কৌশলের আশ্রয় নিয়ে তার মাকে ঘুমোতে পাঠালেও আমাকে দেয় কড়া এসএমএস। নাহ্ বাবা তোমাকে নিয়ে আর পারি না। আর কত সামাল দেবো? তোমাকে সেইভ করতে গিয়ে এতো যে বকা শুনি-তাও তুমি বুঝো না। এখ্খন চলে আসো, এখ্খন।

আমার ব্যাপারে অন্ধ পক্ষপাতিত্ব করা, পেশাগত কাজে তৎপর হতে তাগিদ দেয়া, শান্তনার সুর তুলে পারিবারিক শান্তি নিশ্চিত রাখার নিয়ামক-আমার সন্তান উর্মির জন্য সবার শুভ কামনা চাই। তার সফলতার জন্য দোয়া চাই সবার।


আরো পড়ুন