• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ০৮:১২ অপরাহ্ন

রোপা আমন চাষে কৃষকের কপালে দুশ্চিন্তার ভাঁজ

মোঃ শাকিল মিয়া, গাইবান্ধা প্রতিনিধি / ২৫৮ বার পঠিত
আপডেট: শনিবার, ২৩ অক্টোবর, ২০২১

কৃষি নির্ভর জেলা গাইবান্ধা। এ এলাকার অধিকাংশ মানুষ কৃষি ফসলের ওপর নির্ভশীল। প্রত্যেক বছরের ন্যায় এ বছরেও কৃষকরা আবাদ করেছেন রোপা আমন ধানের। বিধিবাম! প্রাকৃতিক দুর্যোগ আর পোকার আক্রমণে ক্ষতি হচ্ছে ফসলের। এমন পরিস্থিতির শিকারে কৃষকের কপালে পড়েছে দুশ্চিন্তার ভাঁজ।

সরেজমিনে শনিবার (২৩ অক্টোবর) সকালে গাইবান্ধা জেলার বিভিন্ন মাঠে দেখা যায়, রোপা আমন ধানের ক্ষয়ক্ষতির চিত্র। এসময় জালাল উদ্দিন নামের এক কৃষক তার ক্ষেতের ক্ষতি দেখে চরম হতাশায় ভুগছিলেন।

জানা যায়, চলতি রোপা আমন মৌসুমে কৃষকরা লাভের আশায় ঋণ নিয়ে রোপন করছিলেন আমন ধানের চারা। এ ক্ষেত পরিচর্যা ও সার প্রয়োগ শেষে গাঢ় সবুজে পরিনত হয়। ফলে বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছিল। এরই মধ্যে গত মাসে দেখা দেয় বন্যা। এর প্রভাবে নদীর তীরবর্তী কৃষকদের আমন ক্ষেত পানিতে নিমজ্জিত হয়। তবে উঁচু এলাকায় পড়েনি বন্যার প্রভাব। এ এলাকার ধানগাছ থোর হওয়ার আগ মুহূর্তে টানা খড়ার কবলে ভাইরাস আক্রান্তে গাছের পাতা সবুজ থেকে হলদে রঙে পরিনত হতে থাকে। এরপর সম্পন্ন গাছ থোর হলে শুরু হয় ক্ষতিকর পোকা ও ইঁদুরের আক্রমণ। একই সঙ্গে ধান গাছের গোড়া পঁচা রোগও ধরা পড়ে। এমতাবস্থায় কৃষকদের স্বপ্নের ফসল ঘরে তোলার লক্ষে বিভিন্ন কিটনাশক প্রয়োগ করেও কোনো ফল পায়নি। এরই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি হঠাৎ ঝড়-বৃষ্টিতে দাঁড়িয়ে থাকা ধান গাছগুলো হেলে পানির ওপরে পড়ে যায়। সার্বিক সমস্যায় ফসলের ক্ষতি থেকে কীভাবে রক্ষা পাবেন, এ নিয়ে দুশ্চিন্তা পড়েছে কৃষকরা। বিদ্যমান পরিস্থিতে কৃষকদের গড়ে প্রায় ৩০ ভাগ ধানের ক্ষতি হয়েছে বলে জানা গেছে।

এদিকে, কৃষি বিভাগ সুত্রে জানা যায়, চলতি রোপা আমান মৌসুমে গাইবান্ধার ৭ উপজেলায় প্রায় ১ লাখ ৩০ হাজার হেক্টর জমিতে রোপা আমন আবাদ করেছে কৃষক। এর মধ্যে গেল বন্যায় এক হাজার ২২০ হেক্টর আমন ক্ষেত নষ্ট হয়েছে। আর ঝড়-বৃষ্টিতে নুয়ে পড়েছে আরও শতাধিক হেক্টর জমির ফসল। এর আগে অনাবৃষ্টির ফলেও কিছু পরিমান জমির ধান ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে।
কৃষক জালাল উদ্দিন জানান, এ বছরে এক একর জমিতে বিভিন্ন জাতের আমন ধানের আবাদ করেছে তিনি। এর মধ্যে দেড় বিঘা জমিতে ছত্রাক, পোকা ও ইঁদুর আক্রমণ করেছে। আক্রান্ত এ জমি থেকে ৩০ ভাগ ফসল পাওয়াও সম্ভব নয়।
তিনি আরও বলেন, ফসল ক্ষতির আশঙ্কায় নানা ধরণের সার-কিটনাশক প্রয়োগ করেও কোন কাজ হয়নি। এমনকি এ থেকে রেহাই পেতে কৃষি বিভাগের কোন পরামর্শও পাওয়া যায়নি।

আমন ক্ষেতে রোগবালাই ও ক্ষতিকর পোকার আক্রমণ সম্পর্কে সাদুল্লাপুর উপজেলার উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা রুহুল আমিন মণ্ডল  সাংবাদিক কে জানান, আমন চারা রোপনের সময় কৃষকরা লাইন সুইং না করাটা একটা বড় সমস্যা। রয়েছে জিং-দস্তার অভাব। এছাড়া অধিক পরিমান ইউরিয়া প্রয়োগ করেছে। তবে সুষম সার প্রয়োগ করা হয়নি জমিতে। আর আবহাওয়ার বিরূপ আচারণের কারণে বিআর-১১ ও গুটিস্বর্ণা জাতের ধান ক্ষেতে পোকামাকড়ের আক্রমণ ও রোগবালাই হওয়ার মূল কারণ। এসব বিষয়ে কৃষকদের সার্বক্ষণিক পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, দেশের বিরাজমান আবহাওয়া উপযোগিতে আমন মৌসুমে ব্রি-ধান ৭১, ৭২, ৭৫, ৮০, ৮৭ ও ৯৫ জাতের ধান চারা লাইন সুইং পদ্ধতিতে রোপন করতে হবে। সেই সঙ্গে পরিকল্পনা মাফিক সার-কিটনাশক প্রয়োগ করা হলেও অধিক পরিমানের ফসল ঘরে তুলতে পারবেন কৃষকরা।
গাইবান্ধা কৃষি বিভাগের উপ-পরিচালক বেলাল হোসেন সাংবাদিক -কে জানান, চলতি মৌসুমে আমন ধান ক্ষেতে রোগ প্রতিরোধ ও পোকা দমনে কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। এ জন্য জেলার প্রত্যেক ব্লকে সার্বক্ষণিক কাজ করে যাচ্ছে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা।


আরো পড়ুন